চোখের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত আদ্রতা। এর ব্যতিক্রম ঘটলে চোখ শুকিয়ে যায়। চিকিৎসকেরা বলছেন, টিয়ার ফিল্মের তিনটি স্তর রয়েছে। যেমন—তৈলাক্ত (বাহ্যিক), জল/জলীয় স্তর (মাঝখানে) এবং প্রোটিন (অভ্যন্তরীণ)। চোখ শুষ্ক হয়ে গেলে এর প্রত্যেক স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুষ্ক চোখের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হচ্ছে দীর্ঘ সময় এয়ার কন্ডিশন বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকা। এয়ার কন্ডিশনের বাতাস তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটায়। এতে শরীরের বড় অঙ্গ - ত্বক থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে। প্রথমে প্রভাবিত হয় শরীরের সূক্ষ্ম অঙ্গ চোখ। এছাড়াও আরও কিছু কারণে ড্রাই আই সিনড্রোম দেখা দেয়। 

১.

দীর্ঘ সময় কম্পিউটার, মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকা
২. নারীদের মেনোপজের সমস্যা 
৩. ডায়াবেটিস
৪. থাইরয়েড
৫. ভিটামিন এ-এর অভাব
৬. অ্যান্টিহিস্টামিনজাতীয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
৭. লেজার আই সার্জারি

বায়ু দূষণ বেশি রয়েছে এমন শহরে বসবাস করলেও চোখ শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। চোখ শুকিয়ে গেলে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। যেমন— অস্বস্তি, চুলকানি, ব্যথা সংবেদন, ভারী হওয়া, চোখ থেকে পানি পড়া এবং দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা। 
 
ড্রাই আই সিনড্রোমের উপসর্গ প্রতিরোধে করণীয়

আরো পড়ুন:

গাড়িতে উঠলেই ‘মোশন সিকনেস’ হয়, কী করবেন

বয়স যখন ত্রিশ
চিন্তা স্মৃতি বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে কী করবেন?

১. শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকতে হলে এসির তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং তার উপরে সেট করতে হবে।  এয়ার কন্ডিশনের দিকে মুখ করে বসা এড়িয়ে চলুন। এয়ার কন্ডিশন চলাকালে যেখানে বসবেন সেখানে একটি বাটিতে পানি রাখুন। এতে চোখ শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
২.রোদে গেলে সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
৩.কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করতে হলে কিছু সময় পর পর বিরতি নিন।

চোখে শুষ্কতা দেখা দিলে সংক্রমণও হতে পারে। এমনকি কর্নিয়ার আলসারও হতে পারে। তাই চোখে শুষ্কতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সূত্র: ডা. আগরওয়াল আই হসপিটাল

ঢাকা/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

স্বল্পসময়ে বিরোধ নিষ্পত্তির পরিবেশ

আর্থিকভাবে বিচারপ্রাপ্তিতে অসমর্থ জনগণকে সহায়তা দিতে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণয়ন এবং এ-সংক্রান্ত একটি সরকারি সংস্থার মাধ্যমে সরকারিভাবে আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়। তৃণমূল পর্যায়ে জনকল্যাণমূলক আইনি সেবার বার্তা পৌঁছে দেওয়া ও সরকারি খরচে আইনি সেবার বিষয়ে অধিকতর জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর ২৮ এপ্রিলকে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে, সমাজে যেন প্রত্যেক মানুষ নিজেদের মধ্যে বিরোধে না জড়িয়ে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও সহমর্মিতা নিয়ে বসবাস করতে পারে।

দেশে বর্তমানে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলো এখন শুধু আইনি সহায়তা প্রদানের কেন্দ্র হিসেবেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি। মামলাজট কমানোর লক্ষ্যে এসব অফিস এখন ‘এডিআর কর্নার’ বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কেন্দ্রস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এ জন্য আইনি পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বিধিমালা প্রণয়ন করে লিগ্যাল এইড অফিসারদের এডিআর বা বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির আইনি ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে একে অনেকাংশে পরিপূর্ণ আকার প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের ক্ষমতাকে আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে দেওয়ানি কার্যবিধির সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধন করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে একজন সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজকে লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তারা আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন 
করে যাচ্ছেন। 

বিদ্যমান আইনে লিগ্যাল এইড অফিস থেকে যেসব আইনি সেবা প্রদান করা হয় তা হলো– যে কোনো ব্যক্তি তার আর্থিক সামর্থ্য যা-ই হোক না কেন, সরকারি আইনগত সহায়তা কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত আইনগত তথ্যসেবা গ্রহণ, আইনগত পরামর্শ গ্রহণ কিংবা বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে আপসযোগ্য বিরোধ বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার সেবা; অসহায় ও দরিদ্র ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মামলার প্রয়োজন হলে সরকারি খরচে মামলা করা ও পরিচালনা; মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবী নিয়োগ; আদালত থেকে প্রেরিত মামলার মধ্যস্থতা; বিনামূল্যে ওকালতনামা সরবরাহ; আইনজীবীর ফি পরিশোধ; মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক সব ব্যয় পরিশোধ; ফৌজদারি মামলার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যয় পরিশোধ; মধ্যস্থতাকারী বা সালিশকারীর সম্মানী পরিশোধ; ডিএনএ টেস্টের যাবতীয় ব্যয় পরিশোধ এবং বিনামূল্যে রায় কিংবা আদেশের অনুলিপি সরবরাহ।
সাধারণ নাগরিকরা জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টারের টোল ফ্রি নম্বর- ১৬৪৩০ এ কল করে, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে এবং বিডি লিগ্যাল এইড অ্যাপ ব্যবহার করে বিনামূল্যে সরকারি আইনি সেবা নিতে পারেন। এ ছাড়া জাতীয় লিগ্যাল এইড দপ্তরের ই-মেইল ও ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগ করেও তা সম্ভব। এমনকি বিদেশ থেকে +৮৮০৯১২৩১৬৪৩০ নম্বরে ফোন করেও বিনামূল্যে সরকারি আইনি সেবা নেওয়া যায়।

দেশে এখন প্রায় ৪৪ লাখ দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন (সমকাল, ১২ নভেম্বর ২০২৪)। এই মামলাজট কমাতে দেশে বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যন্ত লিগ্যাল এইড কমিটির কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হলেও সীমাবদ্ধতার কারণে এ আইনের সুফল দেশের আপামর জনসাধারণ ভোগ করতে পারছে না। 
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে চলমান কার্যক্রম আমাদের নতুন ভাবনা জাগিয়েছে। আমরা চাই মামলাজটমুক্ত বিদেশি বিনিয়োগের অনুকূল স্বল্প সময়ে বিরোধ নিষ্পত্তিপূর্ণ একটি চমৎকার পরিবেশ। দেশে আদালতের বাইরে লিগ্যাল এইড অফিস হোক মামলা নিষ্পত্তির অন্যতম কেন্দ্র।

মহসিনুল হক: স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ), কুমিল্লা
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ