নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে যুবকের পা বিচ্ছিন্ন
Published: 27th, April 2025 GMT
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এক যুবকের ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সীমান্ত পিলার ৪৪–এর পাশে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আহত যুবকের নাম মোহাম্মদ জোবায়ের (৩০)। তিনি নাইক্ষ্যংছড়ির চাকধালা লম্বামাঠ এলাকার আবদুল হকের ছেলে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার খুঁটি কুড়িয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ওই এলাকায় যান জোবায়ের। শূন্যরেখা থেকে প্রায় ৩০০ মিটার মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েন তিনি। এ সময় মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে আহত জোবায়েরকে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকধালা এলাকার বাসিন্দা ফরিদুল আলম বলেন, চাকধালার বড়শনখোলা ভূতেরঝিরি এলাকা দিয়ে জোবায়ের ওপারে গিয়েছিলেন। সেখানে বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সীমান্তের মানুষ নানা প্রয়োজনে শূন্যরেখা পার হয়ে ওপারে যান। সেখানে প্রায়ই মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির চাকধালা ও ফুলতলী সীমান্তে অন্তত ছয়টি মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পা হারিয়েছেন সাতজন। সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ওপারে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এসব মাইন পুঁতে রেখেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসরুরুল হক বলেন, জোবায়ের মিয়ানমারের ৩০০ মিটার অভ্যন্তরে মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের মাইজ্জ্যা সীমান্তফাঁড়ি রয়েছে। ওই ফাঁড়ি আরকান আর্মির দখলে। ধারণা করা হচ্ছে, সীমানার কাছাকাছি আরকান আর্মি মাইন পুঁতে রাখে এবং ওই মাইন বিস্ফোরণে মানুষ হতাহত হচ্ছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ১৭ একরের ধান চিটা
রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়ে অন্তত ১৭ একর জমির ধান চিটা হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত ৩০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ইটভাটার কারণে পাঁচ বছর ধরে এলাকার গাছে ফল ধরছে না বলেও অভিযোগ করছেন স্থানীয় লোকজন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা এর প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
উপজেলার অন্নদা নগর ইউনিয়নের বামন সর্দার গ্রামে রয়েছে এমএসবি ব্রিকস নামের ইটভাটাটি। এর উত্তর পাশের জমিতে এমন অবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষক। তারা বলছেন, সদ্য বের হওয়া বোরো ধানের শীষ ঝলসে চিটা হয়ে গেছে। এতে উৎপাদন কম হওয়ায় লোকসান গুনতে হবে তাদের।
সরেজমিন বামন সর্দার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কিছু ধানের ক্ষেত সোনালি রং ধারণ করেছে। দূর থেকে দেখে পাকা ধান মনে হলেও কাছে গিয়ে দেখা যায়, সব চিটায় পরিণত হয়েছে। যেসব ক্ষেতে এখনও শীষ বের হয়নি, সেগুলোও পুড়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষক বাদশা মিয়া বলেন, ‘তিন বছর ধরে ঘরের ধানের ভাত খেতে পারি না। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় সব শেষ হয়ে যায়। এবারও একই অবস্থা হওয়ায় চিন্তায় আছি।’ কৃষক মদন চন্দ্র, সুরেশ চন্দ্র, ইউসুফ আলী ও রওশন আলীর ভাষ্য, তারা ক্ষতিপূরণ চান না। সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান। প্রতি বছর ধান পুড়ে যাবে, আর তারা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেবে, তা হতে পারে না।
এমএসবি ব্রিকস ইটভাটার মালিক মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘যদি আমার ইটভাটার কারণে ধানের ক্ষতি হয়ে থাকে, তাহলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’ ইটভাটার কারণেই জমিগুলোর এমন অবস্থা হয়েছে বলে ধারণা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের। তিনি বলেন, সরেজমিন তদন্তের পর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইন অনুযায়ী ইটভাটাটি বন্ধ থাকার কথা বলে জানান পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হক সুমন। তিনি বলেন, কৃষক ক্ষতির বিষয়ে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অফিস প্রধান) কমল কুমার বর্মন বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ইটভাটার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে অধিদপ্তর।