ভারতের পানিচুক্তি স্থগিতের প্রতিবাদে পাকিস্তানে হরতাল
Published: 27th, April 2025 GMT
ইসলামাবাদের সঙ্গে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিন ও কাশ্মিরের প্রতি সংহতি প্রকাশের জন্য শনিবার (২৬ এপ্রিল) পাকিস্তান জুড়ে হরতাল পালিত হয়েছে। খবর আনাদোলুর।
বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক সংগঠনের সমর্থনে, মূলধারার ধর্মীয়-রাজনৈতিক দল জামাত-ই-ইসলামি (জেআইপি), যারা গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার, এই হরতালের ডাক দেয়।
দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী করাচিতে এই আহ্বান কার্যকর সাড়া পেয়েছে, যেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং শপিং সেন্টারসহ প্রধান বাজারগুলো বন্ধ ছিল।
আরো পড়ুন:
কাশ্মিরে সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযান, আটক ১৭৫
গুজরাট থেকে আটক পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি
স্থানীয় একাধিক টেলিভিশনের সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, রাজধানী ইসলামাবাদের পাশাপাশি রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর, ফয়সালাবাদ, পেশোয়ার এবং অন্যান্য অনেক এলাকায় বাজার এবং শপিং সেন্টার বন্ধ ছিল। তবে বেশ কয়েকটি এলাকায় ছোট বাজার এবং দোকানপাট খোলা ছিল।
গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগাম এলাকায় ভয়াবহ সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এই ঘটনায় পাকিস্তানকে পরোক্ষভাবে দায়ী করে ভারত।
গত সপ্তাহে ভারত-শাসিত কাশ্মিরে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এ ঘটনায় ভারত, হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের পরোক্ষ সংযোগের অভিযোগ এনে ব্যাপক প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যার মধ্যে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করেছে।
ভারত গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার পাশাপাশি পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করেছে এবং প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ ঘোষণা করেছে।
ভারতের এসব পদক্ষেপের নিন্দা জানাতে করাচি, ইসলামাবাদ, লাহোর এবং অন্যান্য শহরে পাকিস্তানের ব্যবসায়ীরা সমাবেশ করেছে।
ইসলামাবাদ নয়াদিল্লির অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এছাড়া পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে, ভারতীয়দের জন্য ভিসা স্থগিত করেছে, আকাশসীমা বন্ধ করেছে এবং তৃতীয় দেশগুলোর মধ্য দিয়ে লেনদেনসহ বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছে। পাকিস্তান ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিও স্থগিত করেছে, যা দ্বিপাক্ষিক বিরোধ পরিচালনার জন্য তৈরি একটি মূল কাঠামো চুক্তি।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসল ম ব দ ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
রেণু-পোনা পাচারে সক্রিয় পাঁচ আড়ত মালিক
ভোলার চরফ্যাসনে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেণু পোনা নিধন চলছে অবাধে। উপজেলার ২০ ঘাটে পাঁচ আড়ত মালিকের তত্ত্বাবধানে চলছে অবৈধ এ কার্যক্রম। তাদের অধীনে কাজ করছেন সহস্রাধিক ভ্রাম্যমাণ জেলে ও পাইকার। দিনের পর দিন প্রকাশ্যে রেণু পোনা নিধন করে পাচার করা হলেও মৎস্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে তৎপরতা নেই। ফলে বাগদা ও গলদা পোনা নিধনের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে অসাধু চক্রটি।
জানা গেছে, পোনা নিধন চক্রের মূল হোতা হিসেবে রয়েছেন আড়ত মালিক মাদ্রাজ এলাকার ইউপি সদস্য রাসেল, পাঁচ কপাট এলাকার মো. ইউনুস, ঘোষের হাট এলাকার জাহাঙ্গীর, চরমানিকা ইউনিয়নের চর কচ্ছপিয়া এলাকার জাকির ফকির ও মো. ছাবের। প্রতিদিন বেতুয়া, ঘোষেরহাট, বকসি, সামরাজ, গাছিরখালসহ বিভিন্ন ঘাট থেকে পোনা সংগ্রহ করা হয়। আড়তদারদের অধীনে শতাধিক পাইকার কাজ করছেন। তারা আড়তদারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জেলেদের ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দাদন দেন। এ টাকা নিয়ে জেলেরা মেঘনা ও তেঁতুলিয়ায় নেমে পড়েন পোনা নিধনে। সেগুলো তুলে দেন পাইকারদের হাতে। ১০০টি পোনার জন্য জেলেদের দেওয়া হয় ২০ টাকা। পাইকাররা গুনে গুনে পোনা ব্যারেলভর্তি করে আড়ত মালিকদের কাছে নিয়ে যান। এর পর সেগুলো খুলনা, সাতক্ষীরা মোংলা, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করা হয়। মাসে কোটি টাকার রেণু পোনা পাচার হয় এ উপজেলা থেকে।
সরেজমিন মেঘনা নদীর পাড়ে গেলে দেখা যায়, তীরে টংঘর নির্মাণ করে জাল ফেলে বাগদা ও গলদা রেণু-পোনা আহরণে ব্যস্ত মো. বাবুল নামে এক জেলে। পাশেই অন্য জেলেরা সংগ্রহ করা পোনা গুণে গুণে ব্যারেলে ভর্তি করছেন। আড়তদারের বেঁধে দেওয়া দামে পাইকাররা এসে সেগুলো নিয়ে যাচ্ছেন।
মো. বাবুল জানান, পেটের দায়ে পাইকার মনিরের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা দাদন নিয়ে বাগদা ও গলদার রেণু শিকার করছি। সে আমার কাছ থেকে ১০০ পোনা ২০ টাকা দরে কিনে নিয়েছে। আমার মতো অসংখ্য জেলে পাইকারদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে মেঘনা নদীতে রেণু শিকার করছেন।
আরেক জেলে মো. জসিম উদ্দিন পাইকার জাহাঙ্গীর ও হারুনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে দাদন নিয়েছেন। নিজের তিনটি ভাসা জাল দিয়ে প্রতিদিন বাগদা ও গলদার রেণু সংগ্রহ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে রোজ ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করছেন। রেণু সংগ্রহের সময় কখনও প্রশাসনকে অভিযান চালাতে দেখেননি বলে জানান উপস্থিত জেলেরা।
পাইকার মনির হোসেন বলেন, আমার অধীনে ২০ জেলে রয়েছেন। তাদের দাদন দিয়ে রাখা হয়েছে। টাকা দেন আড়ত মালিক। আমি জেলেদের কাছ থেকে রেণু সংগ্রহ করে আড়ত মালিক ইউপি সদস্য রাসেলের কাছে দিয়ে আসি। তিনি বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেন।
আড়ত মালিক ইউপি সদস্য রাসেল জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ব্যবসা চালাতে হয়। পাইকারদের কাছ থেকে বাগদা ও গলদার রেণু কিনে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চালান করতে ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয়। এতে খুব একটা লাভ থাকে না।
নিয়মিত কেন অভিযান চালানো হয় না– জানতে চাইলে সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, এ অভিযোগ সত্য নয়। ছোট ছোট জাল নিয়ে ভ্রাম্যমাণ জেলেরা নদীতে বাগদা ও গলদা রেণু শিকারে নেমে পড়ে। অভিযানে যাওয়ার আগেই জেলেরা পালিয়ে যায়। পোনা নিধন বন্ধে অভিযান জোরদার হবে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এ কর্মকর্তা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, মৎস্য অফিস কেন বাগদা ও গলদা রেণু শিকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, এ বিষয়ে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেব। যারা এই ব্যবসায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি জানান, মৎস্য দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রশাসনকে ম্যানেজের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।