স্যার ফজলে হাসান আবেদের ৮৯তম জন্মদিন আজ
Published: 27th, April 2025 GMT
বিশ্বের শীর্ষ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের ৮৯তম জন্মদিন আজ রোববার (২৭ এপ্রিল)। স্যার ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের এই দিনে হবিগঞ্জের বানিয়াচং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ব্র্যাক এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছে।
ব্র্যাকের জনসংযোগ বিভাগের দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯৬২ সালে ফজলে হাসান আবেদ লন্ডনে অ্যাকাউন্ট্যান্সি বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং কস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট হন। পাকিস্তানে একটি বিলাতি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকাকালে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ নাটকীয়ভাবে তাঁর জীবনের দিক পরিবর্তন করে দেয়। যুদ্ধ শুরুর পর তিনি চাকরি ছেড়ে লন্ডনে চলে যান। সেখানে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ ও ‘হেলপ বাংলাদেশ’ নামে দুটি সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের শুরুর দিকে সুনামগঞ্জের দুর্গম এলাকা শাল্লায় ফিরে আসা শরণার্থীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য ৩৬ বছর বয়সে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। তখন দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। ভারত থেকে ফিরে আসা এক কোটি শরণার্থীর জন্য জরুরিভাবে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার প্রয়োজন ছিল। সংগঠিত করার মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়ন ঘটিয়ে তাদের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটানো ছিল ব্র্যাকের মূল লক্ষ্য।
সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে ব্র্যাক একটি সমন্বিত উন্নয়নকৌশল গড়ে তোলে, যার আওতায় রয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্ষুদ্রঋণ, দক্ষতা উন্নয়ন, কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা, কুটির শিল্প, মানবাধিকার, সড়ক নিরাপত্তা, অভিবাসন এবং নগর উন্নয়নের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি।
ব্র্যাক এখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ এনজিও। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার ১৪টি দেশে পরিচালিত হচ্ছে। প্রভাব, উদ্ভাবন ও টেকসই বৈশিষ্ট্যের বিবেচনায় জেনেভাভিত্তিক গণমাধ্যম সংগঠন ‘এনজিও অ্যাডভাইজার’ ২০২০ সালে টানা পঞ্চমবারের মতো ব্র্যাককে বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ এনজিওর মধ্যে প্রথম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
স্যার ফজলে হাসান আবেদ ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর ঢাকায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
অন্যান্য স্বীকৃতি ও সম্মাননাসামাজিক ক্ষেত্রে অনন্যসাধারণ অবদানের জন্য স্যার ফজলে হাসান আবেদ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে—শিক্ষা উন্নয়নে বিশ্বের সর্বোচ্চ পুরস্কার ইদান প্রাইজ (২০১৯), নেদারল্যান্ডসের রাজা কর্তৃক রয়্যাল নাইটহুড উপাধি (২০১৯), লেগো অ্যাওয়ার্ড (২০১৮), লাউদাতে সি’অ্যাওয়ার্ড (২০১৭), হোসে এডগারডো ক্যাম্পোস কোলাবোরেটিভ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড (২০১৬), টমাস ফ্রান্সিস জুনিয়র মেডেল অব গ্লোবাল পাবলিক হেলথ পুরস্কার (২০১৬), ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ (২০১৫), ট্রাস্ট উইমেন হিরো অ্যাওয়ার্ড (২০১৪), অর্ডার অব সিভিল মেরিট (অর্ডেন ডেল মেরিটো সিভিল, ২০১৪), লেভ তলস্তয় স্বর্ণপদক (২০১৪), ওপেন সোসাইটি প্রাইজ (২০১৩), শিক্ষার জন্য ওয়াইজ প্রাইজ (২০১১), এন্ট্রাপ্রেনিউর ফর দ্য ওয়ার্ল্ড (২০০৯), ডেভিড রকফেলার ব্রিজিং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড (২০০৮), ক্লিনটন গ্লোবাল সিটিজেনশিপ অ্যাওয়ার্ড (২০০৭), হেনরি আর ক্রাভিস প্রাইজ ইন লিডারশিপ (২০০৭), দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সামাজিক উন্নয়নে অবদানের জন্য পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) কর্তৃক আজীবন সম্মাননা (২০০৭), মানব উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য ইউএনডিপি মাহবুবুল হক অ্যাওয়ার্ড (২০০৪), গেটস অ্যাওয়ার্ড ফর গ্লোবাল হেলথ (২০০৪), গ্লেইটসম্যান ফাউন্ডেশন পুরস্কার (২০০৩), দ্য শোয়াব ফাউন্ডেশন সোশ্যাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ অ্যাওয়ার্ড (২০০৩), ওলফ পামে অ্যাওয়ার্ড (২০০১), ইন্টারঅ্যাকশন হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়াার্ড (১৯৯৮), অ্যালানশন ফেইনস্টেইন ওয়ার্ল্ড হাঙ্গার পুরস্কার (১৯৯০), ইউনেসকো নোমা পুরস্কার (১৯৮৫) এবং কমিউনিটি লিডারশিপের জন্য র্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড (১৯৮০)।
‘অশোকা’ ফজলে হাসান আবেদকে অন্যতম ‘গ্লোবাল গ্রেট’ স্বীকৃতিতে ভূষিত করেছে। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের ‘গ্লোবাল একাডেমি ফর সোশ্যাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দারিদ্র্য হ্রাসে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ ক্রাউন ২০০৯ সালে তাঁকে ‘দ্য মোস্ট ডিস্টিংগুইশড অর্ডার অব সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড সেন্ট জর্জ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোয় সহায়তার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ মহাসচিবকে পরামর্শ প্রদানে নিযুক্ত ‘বিশ্বের স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ’ তালিকায় ২০১০ সালে স্যার ফজলে হাসান আবেদ অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১৪ ও ২০১৭ সালে ‘ফরচুন ম্যাগাজিন’ কর্তৃক বিশ্বের ৫০ জন সর্বশ্রেষ্ঠ নেতার তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়।
স্যার ফজলে হাসান আবেদ বহু সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ডক্টর অব লজ’ (২০১৪), যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ডক্টর অব লেটার্স’(২০০৯), যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ডক্টর অব লজ’(২০০৮) এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ডক্টরেট অব হিউমেন লেটার্স’(২০০৭) উল্লেখযোগ্য।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট স য র ফজল ন র জন য প রস ক র অবদ ন র প র ইজ
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর: ভারত সরকার ও মিডিয়া দায় এড়াতে পারে কি
‘পেহেলগাম’ শব্দের অর্থ হলো পশুপালকদের জনপদ। কাশ্মীরি ভাষায় পশুপালকদের বলা হয় ‘পেহেল’ আর ‘গাম’ মানে গ্রাম বা বসতি। প্রাচীনকালে পেহেলগাম ছিল এক শান্ত, মনোরম চারণভূমি। সেখানে পশুপালক পরিবারের কয়েকটি ঘরবাড়ি ছিল। কিন্তু ২২ এপ্রিল ২০২৫ সালের পর থেকে এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা স্থানটি হয়ে গেছে ‘বধ্যভূমি’। শুরু হয়েছে দোষারোপের খেলা।
২২ এপ্রিল দুপুরে পেহেলগামে ২৮ জন ভারতীয় পর্যটককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এটি একটি নৃশংস, নিন্দনীয় ও মানবতাবিরোধী অপরাধ। এ হত্যাকাণ্ড ইসলামি শিক্ষার বিরুদ্ধেও যায়। কারণ, ইসলাম নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা সমর্থন করে না। সন্ত্রাসের কোনো ধর্ম নেই। আমরা যদি বেলুচিস্তানে জাফর এক্সপ্রেসে সাধারণ যাত্রীদের ওপর হামলার নিন্দা করি, তাহলে পেহেলগামে নিরস্ত্র পর্যটকদের ওপর হামলারও সমানভাবে নিন্দা করা উচিত।
আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান নতুন সংঘাতে জড়াচ্ছে?১৯ ঘণ্টা আগেএ ঘটনার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, ঘন জঙ্গলে ঘেরা এই পাহাড়ি জনপদে তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র ও অন্যান্য ভারতীয় রাজ্য থেকে আগত এত বিপুলসংখ্যক পর্যটকের জন্য কেন যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? যাঁরা জম্মু-কাশ্মীরের ইতিহাস ও ভৌগোলিক বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত, তাঁরা জানেন যে পেহেলগাম এলাকাটি বহু দশক ধরেই ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাহলে ভারত সরকার কেন তাদের নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করেনি?
হঠাৎ করেই জঙ্গলের ভেতর থেকে এম৪ মার্কিন রাইফেল ও একে-৪৭ হাতে সশস্ত্র জঙ্গিরা বেরিয়ে আসে। হাসিখুশি ভ্রমণরত পর্যটকদের ঘিরে শুধু পুরুষদের গুলি করে হত্যা করে। নিঃসন্দেহে ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এর দায় এড়াতে পারে না। নারী ও শিশুদের তারা গুলি করেনি। এমনকি এক নারী যখন নিজের স্বামীকে হত্যা করতে দেখে জঙ্গিকে অনুরোধ করেন তাঁকেও গুলি করতে, তখনো জঙ্গি তাঁকে গুলি করে না।
অল্প কিছুদিন আগে জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভায় জানানো হয়েছিল যে ২০২৪ সালে কাশ্মীর রাজ্যজুড়ে ৩৫ লাখ পর্যটক ভ্রমণে এসেছিলেন। এর মধ্যে ৪৩ হাজার বিদেশি পর্যটকও ছিলেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এ সংখ্যার ভিত্তিতে দাবি করেছিল যে কাশ্মীরে ‘আন্দোলনের যুগ শেষ’। কিন্তু আজ বলতেই হয় যে পেহেলগামে নিরস্ত্র পর্যটকদের হত্যার দায় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এড়াতে পারে না। তেমনি এর দায়ভার বর্তায় ভারতীয় সেই নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার ওপরও। তারা জনগণকে জানায়নি যে এ অঞ্চল তাঁদের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।
পেহেলগাম কিন্তু সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ ছিল না। ১৯৯২ সালে যখন উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বাবরি মসজিদে হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়, তার পরের বছর ১৯৯৩ সালে প্রথমবারের মতো পেহেলগামে অমরনাথ যাত্রায় অংশ নিতে আসা হিন্দু তীর্থযাত্রীদের ওপর হামলা হয়। তার আগে পেহেলগাম ছিল ধর্মীয় সহিষ্ণুতার এক দৃষ্টান্ত। মনোরম স্থানটি শ্রীনগর থেকে ৯৬ কিলোমিটার দূরে অনন্তনাগ জেলার অন্তর্গত। ১৬৬৪ সালে তৎকালীন গভর্নর ইসলাম খান একে ‘ইসলামাবাদ’ নাম দিয়েছিলেন।
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের পর ‘মহাজে মুজাহমত’ (মোকাবিলার মোর্চা) নামে আত্মপ্রকাশ করে। এর নেতা শেখ সাজাদ গুল শ্রীনগরের বাসিন্দা। দিল্লির তিহার জেলে চার বছর কারাভোগ শেষে ২০০৬ সালে তিনি মুক্তি পান। ৫ আগস্ট ২০১৯-এর পর তিনি আবার সক্রিয় হন।‘অনন্তনাগ’ শব্দের অর্থ ‘অগণিত প্রস্রবণের শহর’। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, এ এলাকা ছিল বিষ্ণুর আবাসস্থল। হিন্দুদের অতি পরিচিত তীর্থ অমরনাথ মন্দির পেহেলগাম থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে হিমালয়ের উচ্চ ভূমিতে অবস্থিত। প্রতিবছর শ্রাবণের পূর্ণিমায় হাজার হাজার হিন্দু ভক্ত অমরনাথ যাত্রায় অংশ নেন। তীর্থযাত্রীরা তাঁদের যাত্রা শুরু করেন পেহেলগাম থেকে। তারপর তাঁরা পৌঁছান লিদার উপত্যকার গণেশবল এলাকায়। সেখানে তাঁরা পুণ্যস্নান করেন।
এরপর তাঁরা পৌঁছান চন্দনওয়ারি, যেখান থেকে শুরু হয় এক বিপদসংকুল পাহাড়ি চড়াই। সেই চড়াই পার হয়ে তীর্থযাত্রীরা পৌঁছান শেশনাগ হ্রদের তীরে। যেখানে তাঁরা আবারও স্নান করেন। এরপর তাঁরা পৌঁছান ‘পাঞ্জতারনি’ নামের উপত্যকায়, যার মানে পাঁচটি নদীর উপত্যকা। এখানে ঠান্ডা পানিতে স্নান করে, ভক্তিগীতি গাইতে গাইতে যাত্রীরা এগিয়ে যান একটি বিশাল গুহার সামনে পর্যন্ত। যখন সেই গুহার ভেতর থেকে বুনো কবুতর বেরিয়ে আসে, তখন যাত্রীরা মনে করেন, তাঁদের অমরনাথ দর্শন সম্পন্ন হয়েছে, অর্থাৎ ঈশ্বরের দর্শন লাভ করেছেন। এরপর তাঁরা যাত্রা শেষ করে ফিরে যান।
আরও পড়ুনকাশ্মীর: যে হামলা অনেক কিছু বদলে দিতে পারে২৩ এপ্রিল ২০২৫অনন্তনাগে একটি প্রসিদ্ধ ঝরনা রয়েছে, যার নাম নাগহবেল। এ জায়গাই এক অসাধারণ উদাহরণ ধর্মীয় সহাবস্থানের—এখানে হিন্দুদের মন্দির, মুসলমানদের মসজিদ ও শিখদের গুরুদোয়ারা পাশাপাশি অবস্থিত। ধর্মীয় সহনশীলতার আরেকটি দৃষ্টান্ত হলো ‘বাবা দাউদ খাকি’র মসজিদ, যার আঙিনায় হিন্দুদের একটি মন্দিরও রয়েছে। একই অঞ্চলে রয়েছেন আরেক জনশ্রুতিখ্যাত কাশ্মীরি সুফি সাধক রেশা মোল। এই সাধকের মাজারে মুসলমানদের পাশাপাশি বহু হিন্দু ভক্তও আসেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনার পর এ অঞ্চলেও ধর্মীয় সহনশীলতার আবহে চিড় ধরে। ১৯৯৩ সালের ১৫ আগস্ট, এই এলাকাতেই অমরনাথ তীর্থযাত্রীদের ওপর এক হামলায় আটজন নিহত হন। এর পরের বছর ১৯৯৪-এ ৫ জন, ১৯৯৮ সালে ২০ জন, ২০০০ সালে ৩২ জন, ২০০১ সালে ১৩ জন, ২০০২ সালে ৯ জন, ২০০৬ সালে ৫ জন, ২০১২ সালে ৭ জন, ২০২২ সালে ৪ জন এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে ১০ জন তীর্থযাত্রী নিহত হন।
এমনকি গত বছর, ১৯ মে ২০২৪-এ শোপিয়া ও অনন্তনাগে পর্যটকদের ওপর হামলা হয়েছিল। তাই এ বছর পর্যটকদের সতর্ক করাটা খুবই জরুরি ছিল। কিন্তু সুরক্ষা সংস্থা কিংবা ভারতীয় মিডিয়া—কেউই জনগণকে যথাযথভাবে অবহিত করেনি।
পেহেলগামের জঙ্গলে নিয়মিতভাবে সুরক্ষা বাহিনী তল্লাশি অভিযান চালায়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে অনন্তনাগের কুকারনাগ অঞ্চলে পাহাড়ি জঙ্গলে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও স্থানীয় পুলিশের যৌথ অভিযানে ড্রোন ব্যবহার করা হয়। সেখানে কয়েক দিন ধরে তীব্র সংঘর্ষ হয়। সংঘাতে ভারতীয় রাইফেলসের কর্নেল মনপ্রীত সিং, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এসপি হুমায়ুন ভাটসহ কয়েকজন কর্মকর্তা নিহত হন। এ সংঘর্ষ সেই গোষ্ঠীর সঙ্গেই হয়েছিল, যারা পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার দায় স্বীকার করেছে।
গোষ্ঠীটি ২০১৯ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের পর ‘মহাজে মুজাহমত’ (মোকাবিলার মোর্চা) নামে আত্মপ্রকাশ করে। এর নেতা শেখ সাজাদ গুল শ্রীনগরের বাসিন্দা। দিল্লির তিহার জেলে চার বছর কারাভোগ শেষে ২০০৬ সালে তিনি মুক্তি পান। ৫ আগস্ট ২০১৯-এর পর তিনি আবার সক্রিয় হন। এই গোষ্ঠী বহিরাগত হিন্দুদের জম্মু-কাশ্মীরে বসবাসের বৈধতা দেওয়া নীতির বিরোধিতা করে আন্দোলন করছে।
কিন্তু নিরস্ত্র পর্যটকদের ওপর হামলা কোনোভাবেই স্বাধীনতার লড়াই হতে পারে না। এ ধরনের হামলা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে হামলাকারীদের জাতি, ধর্ম, গোষ্ঠী—সবকিছুকেই কলঙ্কিত করে।
উল্লেখ্য, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এ পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ের ওপর হামলার পর ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছিল। এবার ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলার পর আবারও দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধোন্মাদনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে এ কথা স্পষ্ট যে কাশ্মীর সমস্যা কোনো অভিযানের মাধ্যমে নয়, কেবল আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হতে পারে।
হামিদ মির পাকিস্তানি সাংবাদিক ও লেখক
পাকিস্তানের দৈনিক পত্রিকাজঙ্গ থেকে নেওয়া। উর্দু থেকে অনুবাদ: জাভেদ হুসেন