প্রথম প্রান্তিকে লোকসানের ধারায় সিঙ্গার, বেড়েছে অনেকটা
Published: 27th, April 2025 GMT
লোকসানের ধারায় আছে বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার। চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ৩ টাকা ৫০ পয়সা লোকসান হয়েছে। গত বছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি ২১ পয়সা লোকসান হয়েছিল।
অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে লোকসান বেড়েছে শেয়ারপ্রতি ৩ টাকা ২৯ পয়সা বা ১৫৫৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড গত ৩১ মার্চ ২০২৫ তারিখে সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর তা প্রকাশ করা হয়।
প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ ছিল ৪ টাকা ৭৯ পয়সা; আগের বছর একই সময়ে ছিল মাইনাস ৩ টাকা ৮৪ পয়সা।
গত ৩১ মার্চ ২০২৫ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২১ টাকা ৩১ পয়সা। এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর যা ছিল ২৫ টাকা ৮১ পয়সা।
সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
গত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৯১ পয়সা, যেখানে আগের বছর শেয়ারপ্রতি ৫ টাকা ২৪ পয়সা মুনাফা হয়েছিল। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২৫ টাকা ৮১ পয়সা। অর্থাৎ গত অর্থবছরে লোকসানের মধ্যেও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়েছে সিঙ্গার।
গত অর্থবছরের লভ্যাংশ ঘোষণার সময় জানানো হয়, ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানির অর্থায়ন ব্যয় অনেকটা বেড়েছে। ২০২৩ সালে এ বাবদ ব্যয় হয়েছিল ৬০ কোটি ৪০ লাখ টাকা; ২০২৪ সালে যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়া টাকার বিনিময় হার কমে যাওয়ার কারণেও লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। গত বছর এ বাবদ কোম্পানির ক্ষতি হয়েছে ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
গত এক বছরে সিঙ্গারের শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ১৫৪ টাকা ৮০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন দাম ছিল ৯৬ দশমিক ৮০ টাকা। এ ছাড়া কোম্পানিটি ২০২৩ সালে ৩৫ শতাংশ; ২০২২ সালে ১০ শতাংশ; ২০২১ সালে ৬০ শতাংশ ও ২০২০ সালে ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম প র ন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
অতিদরিদ্র বাড়তে পারে ৩০ লাখ
অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ধীরগতি এবং শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসার কারণে বাংলাদেশে চলতি বছর নতুন করে ৩০ লাখ মানুষ অতিদারিদ্র্যের কবলে পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা ব্যবহার করে বিশ্বব্যাংক এই পূর্বাভাস দিয়েছে। ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে দারিদ্র্য পরিস্থিতির এই অবনতির আশঙ্কা করেছে বিশ্বব্যাংক। গত বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ
করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনৈতিক ধীরগতির কারণে পিছিয়ে পড়া মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দারিদ্র্যের জাতীয় হার বেড়ে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। অতিদরিদ্র মানুষের হার বেড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, একজন মানুষের দৈনিক আয় ২ দশমিক ১৫ ডলারের কম হলে তাকে অতিদরিদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সমাজে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া মানে আর্থসামাজিক বৈষম্য আরও বাড়বে। বৈষম্য নির্ণয় সম্পর্কিত জিনি অনুপাত ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হতে পারে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছেছে বলে উল্লেখ করা হয়। গত দু্ই বছর অর্থাৎ ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম হওয়া এবং শ্রমবাজারের পরিস্থিতি খারাপ হওয়াকে এ পরিস্থিতির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। দারিদ্র্য পরিস্থিতি অবনতির অন্য আরও যেসব কারণের কথা বলেছে বিশ্বব্যাংক, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে– দুর্বল ব্যবসা পরিবেশ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে আসা, বিশেষ করে নারীর ক্ষেত্রে এ সুযোগ সীমিত হয়ে আসা ইত্যাদি।
প্রাক্কলন যাই হোক না কেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদনকে চূড়ান্ত হিসেবে ধরে নেয় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। বিবিএসের হিসাবে, গত তিন অর্থবছরের মধ্যে ২০২২ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২৩ সালে ১৯ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে এ হার দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের অনুমান, এ বছর শেষে দারিদ্র্যের হার আরও বেড়ে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। অবশ্য পরের দুই বছর বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমে আসবে। আগামী ২০২৬ এবং ২০২৭ সালে দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ২০ দশমিক ৬ এবং ১৮ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর শ্রমশক্তির হার ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ৫৯ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে। এর প্রাথমিক কারণ হিসেবে শ্রমশক্তিতে নারীর হার কমে আসাকেও কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ হার গত বছর ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসে। একই সময়ে শ্রমশক্তির ২০ লাখ ৬০ হাজার মানুষ কাজের বাইরে ছিল। তাদের ২০ লাখ ১০ হাজারই নারী। অন্যদিকে কর্মংসংস্থান ৭ কোটি ১০ লাখ থেকে ৬ কোটি ৯৪ লাখে নেমে এসেছে। সব খাতেই কাজের সুযোগ কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে সেবা খাতে। এ খাতে কাজ কমেছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। কৃষি খাতে কাজ কমেছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। শিল্প খাতে এ হার শূন্য ৮ শতাংশ। এ কারণে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ২০ হাজার।
বিশ্বব্যাংক জাতীয়ভাবে হিসাব করা দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করেছে। ২০২২ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুসারে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি বছরে তা বেড়ে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। অর্থনৈতিক ধীরগতির কারণে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর ওপর বেশি প্রভাব পড়তে পারে। এ ছাড়া শ্রমবাজার পরিস্থিতি চলতি বছর দুর্বল থাকতে পারে।
এর আগে বিশ্বব্যাংকের দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্যাক্সিং টাইমস’-এর পূর্বাভাসে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
হবে বলে জানিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। নতুন পূর্বাভাসে সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানোর পেছনে দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তাকে অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে। রাজস্ব সংস্কার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আর্থিক খাতের সংস্কার না হলে প্রবৃদ্ধির গতি আরও মন্থর হতে পারে। বিশ্বব্যাংক বলছে, এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহসী ও লক্ষ্যভিত্তিক সংস্কার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।