বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ ঢাবি উপাচার্যের
Published: 27th, April 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরের একটি স্থায়ী শূন্যপদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি কিংবা পরীক্ষা ছাড়াই ফিরোজ শাহ নামে এক কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফিরোজ বর্তমানে উপাচার্যের প্রটোকল অফিসার হিসেবে দায়িত্বরত। এ নিয়োগে সমালোচনা হচ্ছে।
গত নভেম্বরে উপাচার্যের নির্বাহী আদেশে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অফিস সহায়ক ফিরোজকে রেজিস্ট্রারের অধীন প্রশাসন-৮ এর উচ্চমান সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। অনেকে বলছেন উপাচার্য তাঁর বিভাগের পছন্দের ব্যক্তিকে সুযোগ করে দিয়েছেন। তবে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের দাবি, তিনি ফিরোজকে শুধু বদলি করে তাঁর দপ্তরে এনেছেন। ফিরোজ কীভাবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি জানেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির সমমান পদ উচ্চমান সহকারী। এ পদে আবেদনের যোগ্যতা ন্যূনতম স্নাতক পাস। যদি কোনো পদ শূন্য থাকে তাহলে কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তারপর আবেদনকারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক লিখিত, মৌখিক পরীক্ষাসহ কয়েকটি ধাপে উত্তীর্ণ প্রার্থীকেই নিয়োগ দেওয়ার কথা। চাকরিপ্রত্যাশী হৃদয় সাখাওয়াত বলেন, চাকরির জন্য অনেক পড়াশোনা করেও নানা অনিশ্চয়তা থাকে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগেও নিয়োগে নানা অনিয়মের কথা শুনেছি। অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রশাসন থেকে এটি কাম্য নয়।
গত বছর ২৭ আগস্ট উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক নিয়াজ আহমেদ খান উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি নিজ বিভাগের অফিস সহায়ক (গ্রেড-২) ফিরোজ শাহকে বদলি করে প্রটোকল অফিসারের দায়িত্ব দেন। জানা গেছে প্রটোকল অফিসারের দায়িত্ব পাওয়ার পর ফিরোজ উপাচার্যের পিএস আব্দুর রহমান, উপাচার্যের দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মনিরুজ্জামানকে নিয়ে প্রশাসন-৮ দপ্তরের উচ্চমান সহকারী পদে নিয়োগ পেতে উপাচার্যের কাছে তদবির করেন। উপাচার্যের সম্মতি নিয়ে গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান, প্রশাসন-৮ এর ডেপুটি রেজিস্ট্রার সালমা বিনতে হক, একই দপ্তরের কর্মকর্তা গোলাম মোরশেদ মিলে রেজিস্ট্রার মুনশী শামসউদ্দীনের কক্ষে গিয়ে কথা বলেন। পরে ফিরোজকে উচ্চমান সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তবে উপাচার্যের পিএস আব্দুর রহমান নিশাত এবং কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। গত শুক্রবার জানতে চাইলে নিশাত সমকালকে বলেন, ‘আমি এই নিয়োগের ব্যাপারে জড়িত ছিলাম না। এটা রেজিস্ট্রার বলতে পারবেন।’ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এই নিয়োগের ফাইল আমার কাছে আসেনি। আমি এ বিষয়ে অবগত নই। এতটুকু জানি তাঁকে প্লেসমেন্ট দেওয়া হয়েছে।’
পুরো প্রক্রিয়াটি দাপ্তরিকভাবে সম্পন্ন করেন প্রশাসন-৮ এর কর্মকর্তা গোলাম মোরশেদ। তিনি সমকালকে বলেন, উপাচার্য চাইলে নির্বাহী আদেশে এটি দিতে পারেন। এতে কোনো ব্যত্যয় হয়নি।
রেজিস্ট্রারের অধীন দপ্তরগুলো উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশার অধীন। তবে এ নিয়োগের ফাইল তাঁর অফিসে পাঠানো হয়নি। সরাসরি উপাচার্যের অফিস থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুনশী শামস উদ্দীন আহমেদ গত বছর ৩০ আগস্ট নিয়োগ পান। তিনি সমকালকে বলেন, ‘অফিস সহায়ক (গ্রেড ২) হিসেবে ফিরোজ শাহ উচ্চমান সহকারীর সমান বেতন পান। সমমর্যাদার পদ না হলেও বেতন একই হওয়ায় কর্তৃপক্ষের ইচ্ছায় তাঁকে উচ্চমান সহকারী করা হয়েছে।’
ফিরোজ শাহ সমকালকে বলেন, কর্তৃপক্ষ তাঁকে এ পদে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না। উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান শুক্রবার সমকালকে বলেন, ‘আমি ফিরোজকে বদলি করে এখানে এনেছি। আমার দায়িত্ব শেষ হলে সে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে পুনরায় ফেরত যাবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঢ ব উপ চ র য মন র জ জ ম ন উপ চ র য র কর মকর ত র অফ স আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
নিজের পছন্দের হিসাবে সরকারি ভাতার টাকা পাবেন উপকারভোগীরা
সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও অন্য কার্যক্রমের নগদ টাকার উপকারভোগীরা নিজেদের পছন্দের ব্যাংক বা এমএফএস হিসাবে নিতে পারবেন। মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কোনো ভাতা বিতরণে কোনো ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং সেবার (এমএফএস) সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে না এবং নির্বাচন করে দিতে পারবে না। এর ফলে সরকারি ভাতা গ্রহণে উপকারভোগীর স্বাধীনতা আবার আসছে। ১ জুলাই থেকে সরকারি ভাতা বিতরণের নতুন এই নিয়ম কার্যকর হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এ–সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে। সরকারের নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে উপকারভোগীরা তাঁদের পছন্দমতো হিসাবে সরকারি ভাতার টাকা নিতে পারবেন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০২১ সালে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নগদ লিমিটেডকে ৭৫ শতাংশ ভাতা বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক সরকার থেকে ব্যক্তি (জি-টু-পি) পদ্ধতিতে ৪০টি জেলায় বসবাসরত বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রকল্পের উপকারভোগীরা ভাতা পেয়ে আসছেন নগদ–এর মাধ্যমে। বাকি ২৪টি জেলার উপকারভোগীরা ভাতা পাচ্ছেন অন্যান্য এমএফএস ও ব্যাংকের মাধ্যমে। এখন নতুন করে ভাতাভোগীর পছন্দমতো নিজের হিসাবে ভাতা গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে ভাতাভোগীদের নতুন করে কোনো হিসাব খুলতে হবে না।
অর্থ বিভাগের পরিপত্রে বলা হয়েছে, ভাতাভোগীরা নিজের সুবিধামতো এমএফএস প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক নির্বাচন করতে পারবে। ভাতা বিতরণকারী মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর বা সংস্থা এখন থেকে তাদের পছন্দমতো কোনো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে না।
ফলে সারা দেশের যেকোনো জায়গার ভাতাভোগীরা তাঁদের নিজেদের পছন্দের হিসাবে ভাতার টাকা গ্রহণ করতে পারবেন। আগে নির্দিষ্ট জেলার ভাতাভোগীরা সরকারের মনোনীত নির্দিষ্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে খুলে টাকা গ্রহণ করতে হতো। ফলে অনেককে বাধ্য হয়ে ওই নির্দিষ্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে নতুন হিসাব খুলতে হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কিছু এলাকায় সেই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট নেটওয়ার্ক দুর্বল। যে কারণে তাঁদের টাকা উত্তোলনেও ভোগান্তি পোহাতে হতো। সরকারের নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে উপকারভোগীদের এসব ভোগান্তি দূর হবে বলে মনে করছেন খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।