কক্সবাজার শহর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ১০৫ একর জমিতে গোলাপের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে দুই শতাধিক কৃষক পরিবার। ২৪ এপ্রিল দুপুরে বরইতলীতে গিয়ে দেখা গেল, গোলাপবাগানের পাশে অনেকে তামাকের চাষ করছেন। আশপাশের ফসলি জমিতেও চলছে তামাকের চাষ।

কারণ জানতে চাইলে কয়েকজন চাষি জানান, গোলাপবাগান করে বেশির ভাগ চাষি ক্ষতিগ্রস্ত। ক্রেতার অভাবে প্রতিবছর বরইতলীতে ৩০ লাখের বেশি গোলাপ ফুল গাছে নষ্ট হচ্ছে। তাই গোলাপবাগানের পাশাপাশি অনেকে তামাকের চাষ করছেন। তামাক চাষে লাভ থাকে বেশি। চাষের জন্য নগদ টাকাসহ বীজ, সার, কীটনাশকের সহায়তাও পাওয়া যায়।

শুধু বরইতলী নয়, চকরিয়া উপজেলার কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, কৈয়ারবিল, বমুবিলছড়ি, বরইতলী, হারবাং, সাহারবিল, ফাঁসিয়াখালী, পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়ন এবং চকরিয়া পৌরসভা এলাকায়ও এভাবে তামাকের চাষ বাড়ছে। এসব এলাকার অন্তত তিন হাজার একর জমিতে তামাকের চাষ হচ্ছে। উপজেলার মাতামুহুরী নদীর চরেও চলছে তামাকের চাষ। তবে কৃষি কার্যালয়ের দেখানো হিসাবের চেয়ে বাস্তবে তামাকের জমি অনেক বেশি বলে দাবি সংম্লিষ্টদের। চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, পুরো উপজেলায় তামাকের চাষ হচ্ছে ১ হাজার ৬৬২ একর জমিতে। কিন্তু তামাকবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রমে জড়িত বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ)-এর দাবি করেছে, উপজেলায় তামাকের জমির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।

তামাক চাষে চাষিদের নিরুৎসাহিত করার জন্য সরকারি প্রচার-প্রচারণা কাজে আসছে না বলে মনে করেন চাষি ও পরিবেশবিদেরা। এর বড় কারণ হলো, তামাক চাষে বড় কোম্পানিগুলোর আর্থিক সুবিধা দান ও চাষিদের লাভ।

রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ফাক্রিকাটা গ্রামের পাশে বাঁকখালী নদীর তীরেও তামাকের চাষ হচ্ছে। দুই বছর আগেও নদীর ফাক্রিকাটা অংশের ৪০ শতক জমিতে শাকসবজি ও ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন স্থানীয় কৃষক সোনা মিয়া। চলতি ফেব্রুয়ারির শুরুতে সেখানে এলাকার কয়েকজন তামাকের চাষ শুরু করেন। সরকারি জমি বলে তিনি প্রতিকারও চাইতে পারছেন না। এখন তিনি বেকার।

রামুর কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়া, ঈদগড়, জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের অন্তত আটটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সেখানেও অন্তত দুই হাজার একরের বেশি জমিতে তামাকের চাষ চলছে। তামাকের চাষ বেশির ভাগ হচ্ছে নদী ও বনাঞ্চলের পাশের সরকারি জমিতে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বন ও কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর দুই তীর এবং আশপাশের ২৭টি ইউনিয়নের অন্তত ৫ হাজার একর জমিতে তামাকের চাষ চলছে। আগে এসব জমিতে শাকসবজি ও তরকারির চাষ হতো। তামাকের আগ্রাসনে পেশা হারিয়ে দিশাহারা এসব এলাকার অন্তত এক লাখ কৃষক।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিচালক মো.

জমির উদ্দিন বলেন, তামাক চাষ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের করার কিছু থাকে না। তবে তামাকের বিষাক্ত রসে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ স্বাস্থ্যহানির কিছু ঘটলে সে ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, তামাক চাষের জন্য বাঁকখালী নদীর চরভূমি কিংবা বনাঞ্চলের পরিত্যক্ত জমি কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। সরেজমিন দেখে সরকারি জমি থেকে তামাক চাষ উচ্ছেদ করা হবে।

চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক বলেন, তামাক চাষ বন্ধে তিনি চাষিদের নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি করেছেন অনেক, কিন্তু তামাক কোম্পানির ফাঁদে পড়ে চাষিরা তামাক চাষ ছাড়তে পারছেন না।

উবিনীগ কক্সবাজারের আঞ্চলিক সমন্বয়ক মো. জয়নাল আবেদীন খান বলেন, তামাক চাষের কারণে একদিকে জমির উর্বরতাশক্তি কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে চাষিদের পরিবারের সদস্যসহ আশপাশের বহু মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তা ছাড়া চুল্লিতে তামাকপাতা পোড়াতে গিয়ে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। বেশির ভাগ কাঠ সংগ্রহ করা হয় বনাঞ্চল থেকে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব শ চ ষ কর উপজ ল সরক র চকর য়

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি প্রচারণার পরও যে কারণে নদীর তীর ও ফসলের জমি দখল করছে তামাক

কক্সবাজার শহর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ১০৫ একর জমিতে গোলাপের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে দুই শতাধিক কৃষক পরিবার। ২৪ এপ্রিল দুপুরে বরইতলীতে গিয়ে দেখা গেল, গোলাপবাগানের পাশে অনেকে তামাকের চাষ করছেন। আশপাশের ফসলি জমিতেও চলছে তামাকের চাষ।

কারণ জানতে চাইলে কয়েকজন চাষি জানান, গোলাপবাগান করে বেশির ভাগ চাষি ক্ষতিগ্রস্ত। ক্রেতার অভাবে প্রতিবছর বরইতলীতে ৩০ লাখের বেশি গোলাপ ফুল গাছে নষ্ট হচ্ছে। তাই গোলাপবাগানের পাশাপাশি অনেকে তামাকের চাষ করছেন। তামাক চাষে লাভ থাকে বেশি। চাষের জন্য নগদ টাকাসহ বীজ, সার, কীটনাশকের সহায়তাও পাওয়া যায়।

শুধু বরইতলী নয়, চকরিয়া উপজেলার কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, কৈয়ারবিল, বমুবিলছড়ি, বরইতলী, হারবাং, সাহারবিল, ফাঁসিয়াখালী, পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়ন এবং চকরিয়া পৌরসভা এলাকায়ও এভাবে তামাকের চাষ বাড়ছে। এসব এলাকার অন্তত তিন হাজার একর জমিতে তামাকের চাষ হচ্ছে। উপজেলার মাতামুহুরী নদীর চরেও চলছে তামাকের চাষ। তবে কৃষি কার্যালয়ের দেখানো হিসাবের চেয়ে বাস্তবে তামাকের জমি অনেক বেশি বলে দাবি সংম্লিষ্টদের। চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, পুরো উপজেলায় তামাকের চাষ হচ্ছে ১ হাজার ৬৬২ একর জমিতে। কিন্তু তামাকবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রমে জড়িত বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ)-এর দাবি করেছে, উপজেলায় তামাকের জমির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।

তামাক চাষে চাষিদের নিরুৎসাহিত করার জন্য সরকারি প্রচার-প্রচারণা কাজে আসছে না বলে মনে করেন চাষি ও পরিবেশবিদেরা। এর বড় কারণ হলো, তামাক চাষে বড় কোম্পানিগুলোর আর্থিক সুবিধা দান ও চাষিদের লাভ।

রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ফাক্রিকাটা গ্রামের পাশে বাঁকখালী নদীর তীরেও তামাকের চাষ হচ্ছে। দুই বছর আগেও নদীর ফাক্রিকাটা অংশের ৪০ শতক জমিতে শাকসবজি ও ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন স্থানীয় কৃষক সোনা মিয়া। চলতি ফেব্রুয়ারির শুরুতে সেখানে এলাকার কয়েকজন তামাকের চাষ শুরু করেন। সরকারি জমি বলে তিনি প্রতিকারও চাইতে পারছেন না। এখন তিনি বেকার।

রামুর কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়া, ঈদগড়, জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের অন্তত আটটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সেখানেও অন্তত দুই হাজার একরের বেশি জমিতে তামাকের চাষ চলছে। তামাকের চাষ বেশির ভাগ হচ্ছে নদী ও বনাঞ্চলের পাশের সরকারি জমিতে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বন ও কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর দুই তীর এবং আশপাশের ২৭টি ইউনিয়নের অন্তত ৫ হাজার একর জমিতে তামাকের চাষ চলছে। আগে এসব জমিতে শাকসবজি ও তরকারির চাষ হতো। তামাকের আগ্রাসনে পেশা হারিয়ে দিশাহারা এসব এলাকার অন্তত এক লাখ কৃষক।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, তামাক চাষ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের করার কিছু থাকে না। তবে তামাকের বিষাক্ত রসে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ স্বাস্থ্যহানির কিছু ঘটলে সে ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, তামাক চাষের জন্য বাঁকখালী নদীর চরভূমি কিংবা বনাঞ্চলের পরিত্যক্ত জমি কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। সরেজমিন দেখে সরকারি জমি থেকে তামাক চাষ উচ্ছেদ করা হবে।

চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক বলেন, তামাক চাষ বন্ধে তিনি চাষিদের নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি করেছেন অনেক, কিন্তু তামাক কোম্পানির ফাঁদে পড়ে চাষিরা তামাক চাষ ছাড়তে পারছেন না।

উবিনীগ কক্সবাজারের আঞ্চলিক সমন্বয়ক মো. জয়নাল আবেদীন খান বলেন, তামাক চাষের কারণে একদিকে জমির উর্বরতাশক্তি কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে চাষিদের পরিবারের সদস্যসহ আশপাশের বহু মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তা ছাড়া চুল্লিতে তামাকপাতা পোড়াতে গিয়ে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। বেশির ভাগ কাঠ সংগ্রহ করা হয় বনাঞ্চল থেকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ