Prothomalo:
2025-04-27@12:08:59 GMT

জাতীয় ঐকমত্যের বিকল্প নেই

Published: 27th, April 2025 GMT

নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান আলোচনা কত দিন চলবে, আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে কি না, ইত্যাদি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকার ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন ও স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনরাগমন রোধে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সংস্কার নিশ্চিত করা।

সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার অনেকগুলো কমিশন করেছে এবং ইতিমধ্যে সেগুলোর প্রতিবেদনও জমা হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব সমন্বয় করে তা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছিল এবং মতামত চেয়েছিল। অনেক দল লিখিত জবাব দিয়েছে। আবার কোনো কোনো দল প্রশ্নোত্তর আকারে মতামত চাওয়া নিয়ে আপত্তিও জানিয়েছে।

এ ধরনের পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে আলোচনাকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। সমস্যা দেখা দিয়েছে যেখানে তা হলো, ইতিমধ্যে যেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশন আলোচনা করেছে, তাদের কাছ থেকে পরস্পরবিরোাধী মতামত এসেছে। কোনো কোনো দল সংস্কারের চেয়ে নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, আবার কোনো কোনো দল নির্বাচনের চেয়ে সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই দূরত্ব দূর করার কঠিন দায়িত্বই বর্তেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ওপর।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের স্থলে ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলীয় স্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছে। এর পেছনে ভোটের হিসাব–নিকাশও কাজ করেছে, যা হওয়া উচিত নয় বলে মনে করি। এই প্রেক্ষাপটে যেসব বিষয়ে বেশির ভাগ দল ঐকমত্য প্রকাশ করেছে, সেগুলো নিয়েই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে এগোতে হবে। সব বিষয়ে সব দল একমত হবে না। গণতান্ত্রিক সমাজে সেটা আশা করাও যায় না। ভিন্নমত আছে বলেই তারা ভিন্ন দল করেছে। নির্বাচন করতে গিয়ে যেমন সংস্কারকে বাদ দেওয়া যাবে না, তেমনি সংস্কারের নামে নির্বাচনকে অযথা বিলম্বিত করাও সমীচীন হবে না।  

বেশ কিছু সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে সরাসরি নির্বাচনের সম্পর্ক নেই। অনেকগুলো সংস্কার সরকার নির্বাহী আদেশেও বাস্তবায়ন করতে পারে। কিন্তু এসব কমিশনের বাস্তবায়নে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। সংস্কারের প্রশ্নে গোষ্ঠীবিশেষের কাছে সরকারের নতি স্বীকার কিংবা নিষ্ক্রিয় থাকা হবে দুর্ভাগ্যজনক।

নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে বৈঠকের পাশাপাশি মাঠের রাজনীতিও জমে উঠেছে। রাজনৈতিক দলের নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে প্রায়ই বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তঁাদের কারও কারও ভাষাভঙ্গিতে শালীনতার সীমা লঙ্ঘিত হতেও দেখা যাচ্ছে, যা দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন না করে পারে না। যখন কোনো দল অপর দলের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে প্রভাবিত করার অভিযোগ আনে, সরকারের উচিত সেটি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দেখা। প্রশাসন কারও প্রতি রাগ বা অনুরাগ দেখাতে পারে না। 

সম্প্রতি প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড.

মির্জা হাসান আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা আসবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এই শঙ্কা তাঁর একার নয়। আরও অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পণ্ডিতের কথায় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কথা উঠে এসেছে। অস্বীকার করা যাবে না, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

অতএব, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হবে যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। এখানে নির্বাচন ও সংস্কারকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর কোনো সুযোগ নেই।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

সংখ্যানুপাতিক সংসদ চায় জামায়াত

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের সুপারিশে একমত জামায়াতে ইসলামী। উভয় কক্ষে আসন বণ্টন চায় ভোটের অনুপাতে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমাতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনে একমত। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে চায় না। প্রধানমন্ত্রীর পদ দুই মেয়াদের সুপারিশেও একমত। গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এসব মতামত জানিয়েছে দলটি।

নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। পুরোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল চায় জামায়াত। কমিশন সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, নেতারা মনে করে, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার রূপকার জামায়াত। এ পদ্ধতিতে বিদায়ী সরকারের পছন্দের প্রধান বিচারপতিকে উপদেষ্টা বানাতে অতীতে কূটকৌশল হয়েছে। তারপরও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরতে চায় না জামায়াত।

সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে দুপুরের এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বিকেল সোয়া ৫টা পর্যন্ত চলে এই সংলাপ। প্রথম দিন সংবিধান সংস্কারের অর্ধেকের বেশি সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিশন এবং জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, ৬ মের পর সংবিধান সংস্কারের বাকি সুপারিশ নিয়ে বৈঠক হবে। নির্বাচন, বিচার, জনপ্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের সুপারিশ নিয়েও পরে আলোচনা হবে।

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন ১৬৬ সুপারিশ করেছে। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপর আলোচনা চলছে। জামায়াত ৭৭ সুপারিশে একমত, ৩৬ সুপারিশে আংশিক একমত। একমত নয় ৫৩ সুপারিশে। সংবিধান সংস্কারে ৭০ সুপারিশের ৩১টিতে একমত বলে আগেই জানিয়েছে। ১৬ সুপারিশে আংশিক একমত। বাকি ২৩ সুপারিশে একমত নয়। যেসব সুপারিশে একমত নয় এবং আংশিক একমত, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে গতকালের আলোচনায়।

জামায়াতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়া নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের সমকালকে জানান, কমিশনের আরও কিছু সুপারিশ জামায়াত বিবেচনা করছে। আবার জামায়াতেরও কিছু মতামত কমিশন বিবেচনা করার কথা জানিয়েছে। যেমন জামায়াত মতামত দিয়েছে, এনসিসিতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতিকে রাখা উচিত হবে না। রাষ্ট্রপতি দেশের অভিভাবক। তাঁকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে আনার প্রয়োজন নেই। বিচার বিভাগকে দূরে রাখতে প্রধান বিচারপতিকেও রাখা উচিত হবে না। কমিশন জানিয়েছে, এই মতামত তারা বিবেচনা করবে। 

কমিশনের প্রস্তাব ছিল, প্রস্তাবিত দ্বিকক্ষ আইনসভার নিম্নকক্ষে বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। উচ্চকক্ষ আসন বণ্টন হবে নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে।

বৈঠকের পর ডা. তাহের সাংবাদিকদের বলেছেন, জামায়াত উভয় কক্ষ আনুপাতিক ভোটে গঠন চায়। ৬০টির বেশি দেশে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তত শতাংশ আসন পাবে। এতে বাংলাদেশের নির্বাচনে দুর্নীতি, জবরদখল ও টাকার খেলা বন্ধ হবে।

নিম্নকক্ষ আনুপাতিক পদ্ধতিতে গঠন করা হলে উচ্চকক্ষের কী প্রয়োজন– প্রশ্নে নায়েবে আমির সমকালকে বলেন, তাদের প্রধান দাবি, সংসদ নির্বাচন আনুপাতিক পদ্ধতিতে হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদে সীমাবদ্ধতার সুপারিশে জামায়াত একমত জানিয়ে ডা. তাহের ব্রিফিংয়ে বলেন, এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দু’বার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। টানা ১০ বছরের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না।

জামায়াত নায়েবে আমির বলেন, এনসিসি জামায়াত চায়। যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে, সেই সময়ে এনসিসি থাকবে না। ৭০ অনুচ্ছেদ শিথিলের পক্ষে জামায়াত। তবে অর্থবিল, আস্থা প্রস্তাব এবং সংবিধান সংশোধনে দলীয় সিদ্ধান্তে ভোট দিতে হবে এমপিদের।সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ যুক্ত করার প্রস্তাবে দ্বিমত জানিয়েছে জামায়াত। ডা. তাহের বলেছেন, ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপনের প্রস্তাব করেছে জামায়াত। সংসদ ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদ পাঁচ বছর বহাল রাখার প্রস্তাব করেছি।

সংস্কার সুপারিশগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে– এ মতামত দেয়নি জামায়াত। নায়েবে আমির বলেছেন, সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য হলে জামায়াত পরে মত জানাবে কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। তা জুলাই সনদে থাকতে পারে।

জামায়াতের সঙ্গে প্রথম দিনের সংলাপে সংবিধান সংস্কারের স্থানীয় সরকার এবং বিচার বিভাগ-সংক্রান্ত যেসব সুপারিশ রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়নি কমিশনের। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনে রাজি হয়নি দলটি। তবে মৌলিক অধিকারের পরিধি বিস্তারের সুপারিশে একমত। দুদক, মানবাধিকার কমিশনকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশেও একমত।

নিম্নকক্ষে নারীদের জন্য সরাসরি নির্বাচনে ১০০ আসন সংরক্ষিত রাখার সুপারিশে রাজি হয়নি জামায়াত। দলটি বলেছে, আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সরাসরি ভোটের সুযোগ নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ৫০টি নারী আসন ভোটের অনুপাতে বণ্টিত হবে। 

প্রধান উপদেষ্টা আগে জানিয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে যেসব প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে, তা নিয়ে জুলাই সনদ হবে। এতে সব দল সই করবে। সংলাপে সভাপতিত্ব করা কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দ্রুততার সঙ্গে জুলাই সনদ প্রণয়নের দিকে যেতে চাই। স্মরণ রাখা দরকার, আমরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে আছি। শহীদদের রক্ত এই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, তা যেন হাতছাড়া না হয়ে যায়।

১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতাকর্মীরা জীবনবাজি রেখে লড়াই করেছেন বলেও মন্তব্য করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, বিচারিক এবং বিচারবহির্ভূভাবে জামায়াত নেতাকর্মীদের নিপীড়ন করা হয়েছে। অত্যাচার করা হয়েছে। জামায়াত সাহসিকতার সঙ্গে তা মোকাবিলা করেছে, সংগ্রামে অংশ নিয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে জামায়াত ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. ইফতেখারুজ্জামান।

জামায়াতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে নিলে সেটার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে: জোনায়েদ সাকি
  • দ্বিমতের বিষয় নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে: জোনায়েদ সাকি
  • বাহাত্তরের সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের ঐক্যের ভিত্তিকে অস্বীকার করা হয়েছে: জোনায়েদ সাকি 
  • দুই মেয়াদ নয়, দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না
  • সংখ্যানুপাতিক সংসদ চায় জামায়াত
  • রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ সব স্তরের মানুষের কাছ থেকে এসেছে: আলী রীয়াজ
  • রাষ্ট্রপতি ও সংসদের মেয়াদের বদল চায় না জামায়াত
  • রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্য জাতীয় সনদ তৈরি করা: আলী রীয়াজ
  • কিছু সংস্কার প্রস্তাবে অভিন্ন অবস্থান ইসি ও বিএনপির