বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ এখন দেশের অর্থনীতির জন্য খুব বেশি প্রয়োজনীয় নয়। তাদের ঋণের কিস্তি না পাওয়া গেলেও কোনো ক্ষতি হবে না। দেশের অর্থনীতি যেমন আছে, তেমনই চলবে। 

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় গত শুক্রবার আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশ মিশনের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মর্তুজাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার সকালে গোলাম মর্তুজা গভর্নরের সাক্ষাৎকারের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। আহসান মনসুর জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের লক্ষ্য নিজস্ব আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার স্বাধীনভাবে বাস্তবায়ন করা।

চলতি মাসে ঢাকায় আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সফরে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার ছাড়ের বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। মুদ্রার বিনিময় হার অধিকতর নমনীয় করা ও কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের সমঝোতা হয়নি। বর্তমানে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন সভায় অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরসহ সরকারের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

সাক্ষাৎকারে আহসান মনসুর বলেন, বাংলাদেশে চলমান সংস্কার নিয়ে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি নিয়ে বিশ্বে একটা ঝড় বইছে। এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে এবং বাংলাদেশে কতুটুক পড়বে, তা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। এ জন্য আইএমএফও কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। এসব কারণে তাদের সঙ্গে সমাধানের গন্তব্যে এখনও যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিছু জায়গায় তাদের আরও কাজ করতে হবে। তাদের সঙ্গে দরকষাকষি বা নীতি আলোচনা চলছে। কিস্তি পাওয়া গেলে ভালো। না পেলেও কোনো ক্ষতি হবে না। তাদের সঙ্গে এখনও ঐকমত্য পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। পৌঁছাতে না পারলে খুব একটা অসুবিধা হবে, তাও নয়। বাংলাদেশের অবস্থা ভঙ্গুর নয়। যদি ঋণ না হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে।

কোন ইস্যুতে মতপার্থক্য জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘কর রাজস্বের বিষয়ে এখন আর সমস্যা নেই। তবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার। বিনিময় হার ইস্যুতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। বাজার স্থিতিশীল। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার বিক্রি করা লাগছে না। বাজারে হস্তক্ষেপও করা হচ্ছে না। এখন অহেতুক বাজার অস্থিতিশীল করা ঠিক হবে না। এ ক্ষেত্রেই আমরা দোটানায় রয়েছি।’

তিনি বলেন, আমাদের কাছে যেসব শর্ত গ্রহণযোগ্য হবে, সেসব শর্তের ভিত্তিতে ঋণ নেব। আমরা তো শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তান হয়ে যাইনি যে ঋণ নিতেই হবে। ছয় মাস আগে অবস্থা কিছুটা খারাপ থাকলেও এখন ঋণ নিতেই হবে, এমন অবস্থায় নেই। 

আইএমএফ ঋণ থেকে সরে গেলে অন্য দাতা সংস্থা অর্থায়নে সমস্যা হয় কিনা– জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, প্রকল্প ঋণের ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না। বাজেট সহায়তার জন্য আইএমএফের প্রত্যয়ন প্রয়োজন হয়। তবে বাজেট সহায়তা আর না নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। কারণ, প্রকল্প ঋণ বিনিয়োগের মাধ্যমে সামাজিক ও আর্থিক রিটার্ন পাওয়া গেলেও বাজেট সহায়তায় তা পাওয়া যায় না।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইএমএফ আইএমএফ ঋণ আহস ন মনস র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

শুল্ক ইস্যু এবং আইএমএফের ঋণ ছাড়ে অগ্রগতির আশা

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত বাড়তি শুল্ক থেকে রেহাই পাওয়া এবং আইএমএফের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ে ইতিবাচক অগ্রগতি আশা করছে বাংলাদেশ। ওয়াশিংটনে গত বুধবার এ দুই ইস্যুতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছে সফররত বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। বৈঠকে দুই ক্ষেত্রেই ঐকমত্যে পৌঁছার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 
বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্কের বিষয়ে ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সফররত বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছে। দুই পক্ষের নেতৃত্ব দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়-সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের জন্য বাড়তি শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রয়েছে। বাংলাদেশ দেশভিত্তিক এই শুল্ক থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করছে। 

জানা গেছে, ইউএসটিআরের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো– যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয় এমন কিছু পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া, আমদানি করা তুলার জন্য গুদাম সুবিধা দেওয়া ও অশুল্ক বাধা দূর করা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়োজাহাজ, এলএনজি ও তুলা কেনার পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। এ সময় ইউএসটিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই মুহূর্তে পদক্ষেপ নিলে বাণিজ্য ঘাটতি একেবারে কমে যাবে, তা কেউ আশা করে না। তবে বাংলাদেশের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি। এ জন্য বাংলাদেশ কোন কোন পদক্ষেপ নেবে এবং কীভাবে নেবে, তার সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চায় যুক্তরাষ্ট্র। শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা, তাদের কাজের পরিবেশের উন্নতিসহ শ্রম পরিস্থিতি, শ্রম আইন ও মেধাস্বত্ব আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের বিষয়েও জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 
গত ২ এপ্রিল বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন, যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ৯ এপ্রিল। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৭ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চিঠি দেন। ওই দিনই বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে চিঠি দেন। যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা শুল্ক তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে ওই চিঠি দেওয়া হয়। 

আইএমএফের কিস্তি নিয়ে আশাবাদী সরকার
ঢাকায় আসা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ফিরে গেছে। কিন্তু মুদ্রা বিনিময় হার অধিকতর নমনীয় করা ও কর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের সুরাহা হয়নি। বর্তমানে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন সম্মেলনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। শনিবার থেকে প্রতিনিধি দলটি আইএমএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে অংশ নিচ্ছে। 
গত বুধবার আইএমএফের ডিএমডি নাইজেল ক্লার্কের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। বৈঠকের বিষয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রেস মিনিস্টার গোলাম মর্তুজা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। এতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা আলোচনায় আছি এবং একটি ঐকমত্যের কাছাকাছি পৌঁছেছি।’ 
সমকালের পক্ষ থেকে আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের দেরির কারণ জানতে চাইলে গতকাল ওশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, মূলত দুটি বিষয়ে আলোচনা শেষ হয়নি। দুটি বিষয় হলো– বিনিময় হারে অধিকতর নমনীয়তা এবং রাজস্ব আহরণে উন্নতি। এ ছাড়া আর্থিক খাতের দুবর্লতা কাটানোর বিষয়টিও তাদের আলোচনার মধ্যে রয়েছে। এসব বিষয় নিষ্পত্তি হলে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ছাড়ে বিষয়টি পর্ষদে উঠবে। 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী মে মাসে আইএমএফের একটি কারিগরি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করার কথা রয়েছে। তারপর আগামী জুন নাগাদ দুই কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদে উঠতে পারে। দুই কিস্তিতে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার কথা। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে শর্তগুলোর মধ্যে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, রাজস্ব বাড়ানো, ভর্তুকি কমানো এবং আর্থিক খাতের কিছু শর্ত বাস্তবায়ন পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে ছাড় দিলেও প্রতিনিধি দল বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হার অধিকতর নমনীয় করার বিষয়ে অবস্থান নেয়। তাদের প্রস্তাব, বিনিময় হার ‘ক্রলিং পেগ’ থেকে বাজারভিত্তিকের দিকে যেতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাম্প–ঝড়ের পরও বিশ্বব্যবস্থা টিকে আছে, স্বস্তি নীতিপ্রণেতাদের
  • আইএমএফের ঋণের কিস্তি পাচ্ছে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশও আশাবাদী
  • দারিদ্র্য নিরসনে প্রয়োজন জোরদার কর্মসূচি
  • আইএমএফের ঋণের কিস্তি নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ, শর্ত নিয়ে আলোচনা
  • শুল্ক ইস্যু এবং আইএমএফের ঋণ ছাড়ে অগ্রগতির আশা