শৈশবে খেতে পেতেন না, বাবা–মা-ভাইকেও হারালেন, বড় হয়ে জিতলেন বিশ্বকাপ
Published: 27th, April 2025 GMT
সময় পক্ষে না থাকলে কী করতে হয়? সময়কে নিজের পক্ষে নিয়ে আসতে হয়। অর্থাৎ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটাই সেরা সমাধান। সবাই তা পারে না। তবে যাঁরা পারেন, আনহেল কোরেয়াকে তাঁদের কাতারে রাখা যায়। আর্জেন্টিনার হয়ে ২০২২ বিশ্বকাপজয়ী ফরোয়ার্ডের জীবনকে বর্ণনা করা যায় দুই শব্দে—ঘুরে দাঁড়ানো!
আতলেতিকো মাদ্রিদে এখন যে কোরেয়াকে আমরা দেখছি, একসময় তাঁর জীবনটা এমন ছিল না। অর্থ, যশ কিছুই ছিল না। সেটা তাঁর শৈশবের গল্প। দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলে এমন গল্প নতুন কিছু নয়। তবে কোরেয়ার জীবনেও যে এমন দাহকালের গল্প আছে, তা জানতেন কজন! আর্জেন্টিনাইন সাংবাদিক গাস্তন এদুলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই গল্পই বলেছেন ৩০ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
আরও পড়ুনএল ক্লাসিকো: আজ কেমন হবে ফ্লিকের কৌশল, কোথায় বার্সেলোনার দুর্বলতা ১৯ ঘণ্টা আগেশুনুন কোরেয়ার মুখেই, ‘আমরা ছিলাম ১০ ভাইবোন এবং আমাদের খাওয়ার কিছু ছিল না। বাবা মারা যাওয়ার পর মা একা হয়ে পড়লেন, কখনো কখনো আমাদের খাবারই জুটত না, জুটলেও সেটা এক বেলা। ট্যাক্সির দরজা খুলে দিতে এবং গোলাপ বিক্রি করতে আমরা শহরের কেন্দ্রস্থলেও গিয়েছি। দাদির সঙ্গে আমি মাইলের পর মাইল হেঁটেছি, কিছু অর্থের জন্য দরজা থেকে দরজায় কড়া নেড়েছি।’
কোরেয়ার জীবনে সেসব দিন এখন অতীত। সান লরেঞ্জোর বয়সভিত্তিক দল থেকে মূল দল হয়ে ২০১৪ সালে আতলেতিকো মাদ্রিদে যোগ দেন ও খেলছেন সেখানেই। ২০১৫ সালে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার অনূর্ধ্ব-২০ প্রতিযোগিতায় হন সেরা খেলোয়াড়, চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনাও। সে বছরই আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে তাঁর অভিষেক। ২০২১ সালে এসে জেতেন কোপা আমেরিকা, পরের বছর বিশ্বকাপও। তবে আর্জেন্টিনা দলে নিয়মিত হতে পারেননি। সেটা সম্ভবত আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগে লিওনেল মেসি, লাওতারো মার্তিনেজ ও থিয়াগো আলমাদারা থাকায় নিয়মিত হতে পারেননি। এই ১০ বছরে মাত্র ২৭ ম্যাচে ৩ গোল তারই প্রমাণ।
পরিবারের সঙ্গে কোরেয়া.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন
এছাড়াও পড়ুন:
সততা-আবেগ নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখি: সুনেরাহ
সুনেরাহ বিনতে কামাল। অভিনেত্রী ও মডেল। মডেলিংয়ের মাধ্যমে তাঁর শুরুটা হলেও বর্তমানে তিনি অভিনয়ে নিজের আলাদা জায়গা তৈরি করেছেন। ঈদে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত নতুন সিনেমা ‘দাগি’। এই সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন বাকপ্রতিবন্ধী লিখন চরিত্রে। এ চরিত্রে অভিনয় আর অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে–
‘দাগি’ সিনেমায় ‘লিখন’ চরিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
লিখন চরিত্রটি আমার জন্য খুবই আলাদা। কারণ, সে একদিকে প্রতিবাদী, আবার অন্যদিকে তার ভেতরে গভীর এক অনুভূতির টানাপোড়েন আছে। চরিত্রটা শুধু প্রেমিকা নয়–সে একটি গল্প, একটি যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি। এই দ্বৈততা আমাকে খুব টেনেছিল। এই চরিত্র আমাকে ভেতর থেকে নাড়া দিয়েছে। কথা বলতে না পারার যন্ত্রণাটা বোঝাতে গিয়ে, আমাকে শব্দহীন আবেগে ডুবে যেতে হয়েছে। লিখনের প্রতিটি অনুভূতি, প্রতিটি অভিব্যক্তি সবকিছুর প্রকাশ ছিল শুধুই দৃষ্টি, অঙ্গভঙ্গি আর হৃদয়ের স্পর্শে। লিখন আমাকে শিখিয়েছে, শব্দের চেয়েও গভীর একটি ভাষা আছে, অনুভবের ভাষা।
লিখনের মধ্যে কী ছিল, যা আপনাকে আকর্ষণ করেছিল?
লিখনের নীরব পৃথিবী আমাকে মানুষের ভেতরের নীরব কান্না, লুকানো সাহস আর নিঃশব্দ ভালোবাসাকে নতুন করে চিনতে সাহায্য করেছে। তার সাহসী মনোভাব আমাকে দারুণ আকর্ষণ করেছে। প্রত্যেক মানুষের একটি না বলা গল্প থাকে। লিখন সেই সব ‘চুপ থাকা’ মেয়েদের প্রতিনিধি, যাদের কণ্ঠ নেই, কিন্তু হৃদয়ে ঝড় বইছে। সে আমাকে শিখিয়েছে, কখনও কখনও নীরবতা সবচেয়ে গভীর ভাষা। এ চরিত্রে কাজ করতে গিয়ে সূক্ষ্ম আবেগের স্তরগুলো ধরতে হয়েছে, এজন্য আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল।
সিনেমাটি নিয়ে দর্শক প্রতিক্রিয়া কেমন দেখছেন?
কথা বলতে না পারা চরিত্রটি নিয়ে দর্শক বেশ পছন্দ করেছেন। এটি আমার জন্য অনেক বেশি আনন্দের। সিনেমাটি যারা দেখেছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকেই লিখনকে অনুভব করতে পেরেছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চরিত্রটি নিয়ে লিখছেন, চরিত্রটির মায়ায় পড়ে গেছেন তারা। সিনেমা হলে গিয়ে ‘দাগি’ দেখেছি। খুব কাছ থেকে দর্শকের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছি। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েছি, আরেকবার দর্শকের দিকে। দেখেছি আমার চরিত্রটির সঙ্গে দর্শকরা নিজেদের মেলাতে পারছেন। লিখনের সুখে হেসেছেন, তার দুঃখে; কখনও হাসিয়েছেন, কখনও ভাবিয়েছেন। সত্যি বলতে কী, যখন কাজটি করছিলাম, তখন মনে হয়েছিল দর্শকরা চরিত্রটি পছন্দ করবেন। দর্শকদের এতটা পছন্দ হবে ভাবিনি।
দর্শকরা লিখন চরিত্র থেকে কী শিখতে পারেন বলে আপনি মনে করেন?
প্রত্যেক মানুষের একটা না বলা গল্প থাকে। অনেক সময় যারা কম কথা বলেন, আমরা তাদের অনুভব করি না। লিখন সেই ‘চুপ থাকা’ মেয়েদের প্রতিনিধি, যাদের কণ্ঠ নেই, কিন্তু হৃদয়ে ঝড় বইছে। লিখন আমাকে এমন এক ‘চুপ থাকা’ মেয়ের চোখে পৃথিবী দেখতে শিখিয়েছে, যে শব্দ না করে অনেক কিছু বলে দেয়।
সত্যি বলতে কী, আমরা যারা অভিনয়শিল্পী, তাদের বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। তবে সবার অভিনয় জীবনে এক্সপেরিমেন্টাল ধরনের কাজ খুব কমই আসে জীবনে। যেসব চরিত্রে শুধু অভিনয় নয়, একটা অনুভবের জগতে নিয়ে যায়।
‘ন ডরাই’-এর আয়েশা, ‘অন্তর্জাল’-এ প্রিয়াম, ‘দাগি’তে লিখন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কোন চরিত্রটি আপনার কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল?
আমি বলব ন ডরাই সিনেমার আয়েশার কথা। কারণ এ আয়েশা দিয়ে আমার বড়পর্দায় অভিষেক হয়। আয়েশা শুধু একটি চরিত্র ছিল না, ছিল প্রতিবাদের প্রতীক। এ চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে আমাকে সার্ফিং শিখতে হয়েছিল, সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছিল, যেমন আয়েশাকে নিজের জীবনের প্রতিটি বাঁকে যুদ্ধ করতে হয়। এ চরিত্র আমাকে সাহসী করেছে, আমাকে শিখিয়েছে নিজের স্বপ্নের জন্য দাঁড়াতে হয়, কথা বলতে হয়, কখনও কখনও নীরব থেকেও প্রতিবাদ করতে হয়।
আপনাকে হাতে গোনা কয়েকটি চলচ্চিত্রে পাওয়া গেছে। সিনেমা কম করার কারণ…
আমি সংখ্যার চেয়ে মানের ওপর বিশ্বাসী। সব প্রস্তাবে কাজ করতে চাই না। নিজের মনের সঙ্গে যেখানে সংযোগ তৈরি হয়, গল্প আর চরিত্র যেখানে সত্যিকার অর্থে আমাকে নাড়া দেয়, কেবল সেখানে নিজেকে নিঃশর্তভাবে উজাড় করে দিতে চাই। তাই সময় নিয়ে বেছে কাজ করি। ভালো গল্পের অপেক্ষায় থাকতে হয়। অনেক সময় হয়তো কাজের প্রস্তাব আসে, কিন্তু নিজের মন থেকে ‘হ্যাঁ’ বলা হয়ে ওঠে না। আমি চাই, যখন কোনো চরিত্র করব, সেটি যেন শুধু পর্দায় নয়, দর্শকের মনেও রেশ ফেলে যায়।
অভিনয় নিয়ে স্বপ্নটা কেমন?
আমার কাছে অভিনয় মানে শুধু ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো নয়– এটি একটা ভ্রমণ। আমি চাই চরিত্রের ভেতর পুরোপুরি হারিয়ে যেতে, এমনভাবে যে দর্শকরা আমাকে না দেখে কেবল সে চরিত্রকেই অনুভব করে। স্বপ্ন দেখি এমন সব গল্পের অংশ হতে, যেগুলো মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে, যেগুলো দেখার পর কেউ হয়তো একটু ভিন্নভাবে জীবনকে দেখবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের ইচ্ছে আছে। তার চেয়েও বড় স্বপ্ন হলো–নিজের প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে সততা আর আবেগ নিয়ে বাঁচা। অভিনয় আমার কাছে শিল্পের সবচেয়ে মানবিক প্রকাশ। এই পথচলায় আমি শিখতে চাই, ভাঙতে চাই, আবার নিজেকে নতুন করে গড়তে চাই।