মাটি না ফেলেই ২৪ কোটি টাকা বিল তোলার আয়োজন
Published: 27th, April 2025 GMT
সুনামগঞ্জে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের পাশে বা ক্লোজারের ভাটিতে গর্ত ভরাটের মেয়াদ আর এক মাস বাকি থাকলেও কাজ হয়নি সিকি ভাগও। ঠিকাদার ও পাউবো কর্তৃপক্ষের দাবি করা অগ্রগতি প্রতিবেদনের সঙ্গে বাস্তবায়নের কোনো মিল নেই। স্থানীয়রা বলছেন, কয়েক দিন পর পানি এলে কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন বাড়িয়ে প্রকল্পের প্রায় ২৪ কোটি টাকার বেশির ভাগই লুটপাটের আয়োজন করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাওরপারের একাধিক কৃষক জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে মোটেও হাওরের স্বার্থ রক্ষা হয়নি। ইতোমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমাও শেষ প্রায়। গত জানুয়ারিতে নেওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল আগামী মাস পর্যন্ত। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গত বৃহস্পতিবার একাধিক হাওরে সরেজমিন সে বাস্তবতাই চোখে পড়েছে।
জামালগঞ্জের হালি, শনি ও মহালিয়া হাওরের প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি কৃষক ও হাওর আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাওরের বাঁধের পাশের গর্ত (ডিচ ফিলিং) সারতে এই উদ্যোগ ইতিবাচক। তবে পাউবো ও ঠিকাদারের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজ ২০ ভাগও হয়নি। কিছু কিছু গর্তে সামান্য বালু ফেলা হয়েছে। আবার বেশির ভাগ গর্ত আগে যে রকম ছিল, এখনও সে রকমই আছে। প্রায় দেড় বছর মেয়াদের এ প্রকল্পে সময়ক্ষেপণ ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রাক্কলন তৈরির আগে ও পরে পাউবো এ নিয়ে কৃষকের পরামর্শ নেয়নি। টেকসই বাঁধ, জীববৈচিত্র্য ও গোচারণ ভূমি রক্ষাসহ হাওরের নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখতে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। গর্তে বিট বালু না ফেলে অনেকটা চুপিসারে এ কাজের ইতি টানতে চাইছে কর্তৃপক্ষ।
হাওরের কৃষি ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, এসব প্রকল্প দেওয়া হয় মূলত লুটপাটের জন্য। হাওরে গর্ত ভরাটের যে প্রকল্প দেওয়া হয়েছে, স্থানীয় লোকজন তার কিছুই জানে না। বর্ষায় পানি এলে এমনিতেই পলি পড়ে কিছু গর্ত ভরাট হবে, পরে দেখানো হবে অগ্রগতি প্রতিবেদনে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, জরুরি বন্যা পুনর্নির্মাণ সহায়তা প্রকল্পের আওতায় জেলার ১০টি উপজেলায় চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে প্রায় ২৪ কোটি টাকার মাটি ভরাটের কাজ করানো হচ্ছে। এ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ঢাকার এসএস বিল্ডার্স– যাদের কাজ প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার, টাঙ্গাইলের গুডম্যান এন্টারপ্রাইজের কাজ ছয় কোটি ৯২ লাখ টাকার, ঢাকার শাহ ড্রেজারের কাজ প্রায় তিন কোটি টাকার এবং নেত্রকোনার অসীম সিংহ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাত কোটি ৪৮ লাখ টাকার।
নদী থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বিট বালু দিয়ে হাওরের পুরোনো গর্ত ভরাটের কথা উল্লেখ আছে অগ্রগতি প্রতিবেদনে। পাউবোর দায়িত্বশীলরা জানান, এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত মোট বিলের ১৫ থেকে ২০ ভাগ অর্থছাড় হয়েছে।
সবকিছু মিলে কাগজপত্রে কাজের অগ্রগতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে জামালগঞ্জে। কিন্তু এ উপজেলার হালি, শনি ও মহালিয়া হাওরের সরেজমিন চিত্র বলছে, সেখানে ২০ ভাগের বেশি কাজ হয়নি। স্থানীয় কৃষক ও হাওর-সচেতন মানুষও পাউবোর এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ জানিয়েছেন।
বেহেলী ইউনিয়নের আছানপুর গ্রামের কৃষক ও ইউপি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইউছুফ মিয়া বলেন, হালি হাওরের হেরাকান্দি অংশে সামান্য মাটি ফেলা হয়েছে। কোনো গর্তই পুরোপুরি ভরাট করা হয়নি। এতে যারা কাজ করেছে তারাই লাভবান হবে।
মহালিয়া হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি সিরাজুল হক তালুকদার বলেন, যে কাজ হয়েছে তাতে হাওরের কোনো কাজে আসবে না। যে সময় ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে, তখন জিজ্ঞেস করলে তারা জানিয়েছে, হাওরের গর্ত সম্পূর্ণ ভরাট করা হবে। কিন্তু কাজ না করেই তারা সবকিছু নিয়ে চলে গেছে।
বেহেলী ইউপি সদস্য ও মদনাকান্দি গ্রামের কৃষক দেবাশীষ তালুকদার বলেন, ড্রেজিংয়ের পাইপ দিয়ে শুধু পানিই এসেছে, বালু আসেনি। বালু না এলে তো গর্ত ভরাট হবে না। শুধু লোক দেখানো কাজ হয়েছে।
জামালগঞ্জ উপজেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আক্কাছ মুরাদ বলেন, গর্ত ভরাটে কোটি টাকার প্রকল্প হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়েছে লাখ টাকার। দিনের পর দিন এভাবে আমাদের বোকা বানিয়ে ফায়দা লুটছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কোটি কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পের বিপরীতে হাওরের কোনো উপকারই হচ্ছে না।
গুডম্যান এন্টারপ্রাইজ ও অসীম সিংহের কাজের দেখভালকারী (সাব-ঠিকাদার) ভজন তালুকদার বলেন, কাজ করতে গিয়ে নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। আবার কোথাও গিয়ে গর্ত ভরাট করতে নদীর তলদেশ থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি তোলার সময় নদীর ইজারাদার বাধা দিয়েছেন। মাটি তুললে মাছের ক্ষতি হবে জানিয়ে মাটি তুলতে দেয়নি। তিনি দাবি করেন, তাঁর দুটি প্রতিষ্ঠানের ৩২ থেকে ৬২ শতাংশ কাজ হয়েছে। মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হবে।
শাহ্ ড্রেজিংয়ের জিএম আবুল কালাম বলেন, আমরা অনিয়মের চিন্তা করছি না, কাজ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু স্থানীয়ভাবে বাধার কারণে ড্রেজার ও পাইপ এক জায়গায় বসিয়ে, কাজ না করেই আরেক জায়গায় নিতে হচ্ছে।
এসএস বিল্ডার্সের সাইট ইঞ্জিনিয়ার নয়ন মিয়া বলেন, ১৮টি পয়েন্টের মধ্যে ছয়টি পয়েন্টে কাজ করেছি। মোট কাজের ৫০ ভাগের মতো শেষ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, অনেক গর্তই ভরাট হয়েছে। বাকিগুলো করা হবে। পানি এলেও হাওরের এসব গর্তে মাটি ভরাট করা যাবে। হাওরে বিল-বাদাড় আছে, বলা হচ্ছে মাছ মারা যাবে। কৃষকরা বলছেন জমির ফসল নষ্ট হবে। সে কারণে কাজ করা যাচ্ছে না।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ ওর এই প রকল প প রকল প র ক জ হয় ছ দ র বল ন ক জ কর ভর ট ক ও হ ওর হ ওর র ভর ট র
এছাড়াও পড়ুন:
বার্সার কাছে হেরে আনচেলত্তির কণ্ঠে বিদায়ের সুর
মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হতাশাই সঙ্গী রিয়াল মাদ্রিদের। সুপারকোপার ফাইনালে বার্সেলোনার কাছে হার দিয়ে যাত্রা শুরু, আর কোপা দেল রে’র ফাইনালেও বার্সার কাছে ৩-২ গোলে হেরে শিরোপা হাতছাড়া। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে আগেই বিদায় নিয়েছে লস ব্লাঙ্কোসরা। সব মিলিয়ে কোচ কার্লো আনচেলত্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন করে আলোচনা।
দে লা কার্তুহা স্টেডিয়ামে শনিবার রাতে উত্তপ্ত এল ক্লাসিকোয় বার্সেলোনা তাদের ৩২তম কোপা দেল রে শিরোপা নিশ্চিত করে। প্রতিযোগিতার ইতিহাসে কারও নেই এত শিরোপা।
ইতালিয়ান কোচ আনচেলত্তিকে নিয়ে জোর গুঞ্জন, পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল দলে যোগ দিতে পারেন তিনি। কোচ এবং ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ) উভয় পক্ষই তাকে দলে নিতে আগ্রহী। তবে রিয়াল ছাড়ার প্রসঙ্গে এখনই কিছু স্পষ্ট করেননি আনচেলত্তি।
বার্সার কাছে হারের পর ৬৫ বছর বয়সী কোচ বলেন, ‘আমি রিয়াল মাদ্রিদেই থাকতে পারি, আবার ছাড়তেও পারি। দেখা যাক কী হয়। আজ এসব নিয়ে নয়, এ বিষয়ে কথা হবে আগামী সপ্তাহে।’
হার স্বত্বেও শিষ্যদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট আনচেলত্তি যোগ করেন, ‘এটি ভালো একটি ম্যাচ ছিল। আমরা পুরোপুরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে আধিপত্য ছিল আমাদের। ছেলেরা জয়ের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে, তাই তাদের কোনো দোষ দিতে পারি না। তবে হারের কষ্ট অবশ্যই আছে।’
এখন রিয়ালের সামনে আছে কেবল লা লিগার লড়াই। ৫ ম্যাচ বাকি থাকতে বার্সেলোনার চেয়ে ৪ পয়েন্টে পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তারা। আগামী ১১ মে মৌসুমের শেষ এল ক্লাসিকোতে বাংলাদেশ সময় রাত ৮ টায় মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। ওই ম্যাচেই অনেকটা নির্ধারিত হয়ে যেতে পারে লা লিগার শিরোপার ভাগ্য।