‘পলিটিক্যাল কাউন্সিল’ গঠন করছে এনসিপি, ২ মে ঢাকায় সমাবেশ
Published: 27th, April 2025 GMT
সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘পলিটিক্যাল কাউন্সিল’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ ছাড়া দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে ২ মে ঢাকায় সমাবেশ করবে তরুণদের এই দল।
শনিবার রাজধানীতে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে চতুর্থ সাধারণ সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। দলের আহ্বায়ক মো.
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সভায় একটি ‘পলিটিক্যাল কাউন্সিল’ গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই কাউন্সিল সংগঠনের সব নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। পলিটিক্যাল কাউন্সিলের নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একটি ‘নির্বাহী কাউন্সিল’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়নে পাঁচ বা ততোধিক সদস্যের সমন্বয়ে একটি গঠনতন্ত্র প্রণয়ন টিম গঠনের সিদ্ধান্ত সাধারণ সভায় নেওয়া হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এই টিমকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দলের খসড়া গঠনতন্ত্র প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সভায় আওয়ামী লীগের দলগতভাবে বিচার, নিবন্ধন বাতিল এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২ মে এনসিপি ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে একই দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গঠন র স এনস প গঠন ক
এছাড়াও পড়ুন:
নীতির স্বাধীনতা নাকি প্রশাসনিক বিভাজন
বাংলাদেশের রাজস্ব প্রশাসনে একটি ঐতিহাসিক রূপান্তরের সূচনা হতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাঠামোগত পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে সরকার সম্প্রতি একটি অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এ সংস্কারের মূল প্রতিপাদ্য হলো নীতি প্রণয়ন বিভাগকে কর আদায় ও প্রশাসনিক কাজ থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করা। সরকারি মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে, এ পরিবর্তন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ার পাশাপাশি রাজস্বনীতি ব্যবসাবান্ধব হবে।
তাত্ত্বিকভাবে এ উদ্যোগকে অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রগতিশীল পদক্ষেপ হিসেবে মূল্যায়ন করা যায়। যখন কোনো প্রতিষ্ঠান একই সঙ্গে নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও ফলাফল মূল্যায়নের দায়িত্ব একই হাতে পরিচালনা করে রাখে, তখন স্বাভাবিকভাবে স্বচ্ছতার ঘাটতি ও জবাবদিহিতার সংকট দেখা দেয়। একটি স্বতন্ত্রনীতি বিভাগ গঠনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ওপর একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এ সংস্কারের সুফল কতটা বাস্তবে প্রতিফলিত হবে, তা নির্ভর করবে কিছু মৌলিক প্রশ্নের সঠিক সমাধানের ওপর।
নেতৃত্বের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা : সরকারি অধ্যাদেশ অনুযায়ী, নবগঠিত নীতি বিভাগ পরিচালনায় নীতিনির্ধারক হিসেবে সচিব বা জ্যেষ্ঠ সচিব পর্যায়ের একজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। তবে প্রশ্ন হলো– এই ‘অভিজ্ঞতা’ কিসে পরিমাপ করা হবে? কেবল প্রশাসনিক দক্ষতা নয়, রাজস্বনীতির তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান, আন্তর্জাতিক কর কাঠামোর উপলব্ধি এবং দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতা সম্পর্কে গভীর ধারণা থাকা অপরিহার্য। রাজস্ব প্রশাসনের ক্ষেত্রে যেমন মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা অপরিহার্য, তেমনি নীতি বিভাগের নেতৃত্বের জন্য গবেষণায় পারদর্শিতা, বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও দূরদর্শিতা জরুরি।
জনবল কাঠামো ও স্থায়িত্ব : নীতিনির্ধারণ একটি দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল প্রক্রিয়া, যার জন্য প্রয়োজন সুসংহত গবেষণা ও ধারাবাহিক চিন্তার ধারা। খসড়া অধ্যাদেশে নীতি বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে ‘অভিজ্ঞ’ হওয়ার কথা বলা হলেও, এই অভিজ্ঞতার সময়সীমা বা ধরন স্পষ্ট নয়। রাজস্বনীতি বুঝতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবশ্যই অন্তত ১০ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তদুপরি, তাদের কমপক্ষে ৪ থেকে ৮ বছর একই বিভাগে কাজ করার নিশ্চয়তা থাকতে হবে, যেন জ্ঞানের ধারাবাহিকতা ও নীতির স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। চুক্তিভিত্তিক বা অস্থায়ী নিয়োগ হলে তা এ ধারাকে ব্যাহত করবে। নীতি বিভাগে কাজ শেষে আবার যদি কর্মকর্তারা রাজস্ব প্রশাসনে ফিরে যান, তাহলে স্বার্থের সংঘাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। তাই জনবল গঠনে স্বচ্ছ ও টেকসই নীতিমালা জরুরি।
গবেষণা ও উন্নয়ন ইউনিটের অবস্থান : আধুনিক রাজস্বনীতিতে গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রশ্ন হলো– গবেষণা ও উন্নয়ন ইউনিটটি কি নীতি বিভাগের অধীনে থাকবে? যদি না থাকে, তাহলে নীতি প্রণয়ন তথ্য ও বিশ্লেষণ থেকে বঞ্চিত হবে। এ ইউনিট অবশ্যই নীতি বিভাগের অংশ হওয়া উচিত, যাতে তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিশ্চিত হয়।
তথ্য বিনিময় ও সমন্বয় কাঠামো : নীতিমালা বাস্তবায়নে প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত ও সুষ্ঠু তথ্য বিনিময় অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ– কর আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো বাধার সম্মুখীন হলে তা অবিলম্বে নীতি প্রণয়নকারীদের নজরে আসতে হবে। একইভাবে নতুন কোনো নীতি প্রণয়নের আগে সংশ্লিষ্ট খাতের বাস্তবতা ও প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতাগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। রাজস্ব প্রশাসনের হাতে আদায়ের তথ্য থাকবে, কিন্তু সেসব তথ্য নীতি বিভাগে পৌঁছাবে কীভাবে? একটি আধুনিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরের মাধ্যমে দুই বিভাগের মধ্যে নিয়মিত ও দ্বিমুখী যোগাযোগ স্থাপন জরুরি।
উপদেষ্টা কমিটি ও অংশগ্রহণ : কার্যকর নীতিনির্ধারণে খাতভিত্তিক বাস্তবতা বোঝা জরুরি। যেমন– শিল্প খাতের জন্য প্রযোজ্য কর কাঠামো এবং সেবা খাতের কর নীতিমালা একই রকম হবে না। একটি কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির পাশাপাশি শিল্প, সেবা, কৃষি ইত্যাদি বিভিন্ন খাতভিত্তিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করলে, নীতিমালা আরও বাস্তবভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য হবে। এতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে এবং নীতির বৈচিত্র্য বজায় থাকবে।
চূড়ান্ত ভাবনা : নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের পৃথক কাঠামো একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হলেও, এটি কতটা কার্যকর হবে তা নির্ভর করবে পাঁচটি স্তম্ভের ওপর। দক্ষ ও অভিজ্ঞ নেতৃত্ব, স্থায়ী ও অভিজ্ঞ জনবল, গবেষণা কাঠামোর সংযুক্তি, তথ্যপ্রবাহের স্বচ্ছতা এবং অংশগ্রহণমূলক ও খাতভিত্তিক উপদেষ্টা কাঠামো।
যদি এ উপাদানগুলোকে সুদৃঢ় করা যায়, তাহলে নীতির স্বাধীনতা কেবল কাগজে নয়, বাস্তবেও প্রতিফলিত হবে। অন্যথায়, এটি কেবল একটি প্রশাসনিক বিভাজন হিসেবে থেকে যাবে, যা কাঠামো বদলাবে, ফল আনবে না। সরকারের দায়িত্ব হবে এই সংস্কারকে একটি কার্যকর, স্বচ্ছ ও টেকসই রূপ দেওয়া, যাতে সত্যিকারের অর্থে জনগণ এর সুফল ভোগ করতে পারে।