গাজীপুরে শ্রীপুরে বনের জমিতে গড়ে তোলা বাড়িঘরসহ ৫৬টি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। গতকাল শনিবার সকালে শুরু হওয়া এ অভিযান চলে দিনভর। এ সময় বন বিভাগের সাতখামাইর রেঞ্জের সাইটালিয়া, তালতলী, পেলাইদ ও মুরগি বাজার এলাকা থেকে চার একর জমি উদ্ধার করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য, উদ্ধার জমির দাম প্রায় ২০ কোটি টাকা।
অভিযান চালানোর সময় বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই স্থাপনা উচ্ছেদ না করার জন্য অনুরোধ করেন। ভেঙে ফেলা বাড়িঘরের মধ্যে বেশ কয়েকটি বেশ পুরোনো। কয়েক প্রজন্ম ধরে সেখানে বসবাস করেছেন তারা। এসব পরিবারের অনেককে কাঁদতে দেখা গেছে। ভাঙার দৃশ্য দেখে কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
বহু বছর ধরে তালতলীর বনের জমিতে বসবাস করে আসা শারীরিক প্রতিবন্ধী আব্দুল্লাহ আল মামুনের ভাষ্য, মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও বসতবাড়িগুলো রেখে যেতে পারত। যেসব বাড়িঘর নতুন করা হয়েছে, সেগুলো ভাঙলে আপত্তি ছিল না। এখন তারা কোথায় যাবেন? এসব বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। 
একই এলাকার রুহুল আমিনের দাবি, জীবনের সব উপার্জন দিয়ে বাড়ি করেছেন। প্রশাসনের অভিযানে তা শেষ হয়ে গেল। 
শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান রিপনের ভাষ্য, বনের জমি উদ্ধারের আগে বাসিন্দাদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য কয়েক দফা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। লিফলেটও বিতরণ করা হয়েছে। সর্বশেষ মাইকিং করা হয়। কিন্তু তাদের অনেকেই স্থাপনা সরিয়ে নেননি। অনেকে আংশিক সরিয়েছেন। এসব স্থাপনার অনেকগুলোই ৫ আগস্টের পর গড়ে তোলা। 
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ইউএনও ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ বলেন, চার একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। এতে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির প্রায় ৩০০ সদস্য অংশ নেন। 
ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো.

বশির আল মামুন বলেন, ৫ আগস্টের পরপরই বনভূমি দখলের মহোৎসব শুরু হয়। বনের গাছপালা কেটে হাজার হাজার স্থাপনা নির্মাণ করেছিল কয়েকটি চক্র। পর্যায়ক্রমে বনের সব জমি দখলমুক্ত করা হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

পাঠাগারে ‘নাস্তিকদের’ বই, ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে লুটের অভিযোগ

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ‘অভয়ারণ্য’ পাঠাগারের চার শতাধিক বই লুটের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এসময় তারা জাফর ইকবাল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন লেখকের প্রায় চার শতাধিক বই লুট করেন।

গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে উপজেলার বাঁশহাটি এলাকায় অভয়ারণ্য পাঠাগারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাঠাগার কর্তৃপক্ষ প্রশাসন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশ যুব খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ আমীন অভয়ারণ্য পাঠাগার নিয়ে গত ২৪ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন।

আরো পড়ুন:

গোপালগঞ্জে দিনে-দুপুরে যুবককে হত্যা, অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুট  

কক্সবাজারে আবারো গুলি ছুড়ে গরু লুট

সেখানে তিনি লিখেন, ‘ধনবাড়ীতে নাস্তিক্যবাদের কোনো জায়গা হবে না। এটাই ফাইনাল বক্তব্য আমাদের। নাস্তিক বানানোর এক কারখানার সন্ধান পেয়েছি আমরা। অতিদ্রুত আপনাদের কারখানায় তালা লাগিয়ে ধনবাড়ী ছাড়ুন। অনেকদিন অবৈধভাবে সরকারি জায়গা দখল করে ভণ্ডামি করেছেন আপনারা। আর এই সুযোগ পাচ্ছেন না। কথা ক্লিয়ার।’

ওইদিন রাত ৮টার দিকে খেলাফত মজলিসের যুব সংগঠনের ২০-২৫ নেতাকর্মী পাঠাগারে হামলা চালায়। এসময় পাঠাগারটির সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ পাঠাগারে উপস্থিত ছিলেন। তারা পাঠাগারে থাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ, জাফর ইকবালসহ কয়েকজন লেখকের চার শতাধিক বই রিকশায় করে নিয়ে যায়।

পাঠাগার থেকে বই নেওয়ার পর যুব খেলাফত মজলিসের নেতা ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘জয়বাংলা কর্মসূচী। বি:দ্র: যাদের বোঝা দরকার তারা বুঝতে পারছে।’

অভয়ারণ্য পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে ২০-২৫ জন হুজুর পাঠাগারে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়। এসময় তারা ভেতরে ঢুকেই বলে, ওই, সব বই ব্যাগে তুল। এঁনে কোনো বই থাকব না। জাফর ইকবাল নাস্তিক, জাফর ইকবালের সব বই নে। এখান থেকে মানুষ নাস্তিকের বই পড়ে। এসময় মব সৃষ্টিকারী আরেকজন বলে, তোদের এ পাঠাগার থাকবো না। তোদের এখানে জাফর ইকবালের বই থাকবো ক্যা, প্রথম আলোর বই থাকবো ক্যা। এটা উপর থেকে নির্দেশ আছে ভেঙে দেওয়ার, পুড়িয়ে দেওয়ার।’’

দুর্জয় বলেন, “এই বলে বইগুলো সব নিতে থাকে তারা। পুড়িয়ে দেওয়ার কথা বলতে থাকে। তখন থানার কয়েকজন সদস্য সাদা পোশাকে এখানে আসেন। তারাও তাদেরকে নানা প্রশ্ন করেন। তখন হামলাকারীরা বুঝতে পারে তারা থানার লোক। তখন গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতিতে তারা পুড়িয়ে না দিয়ে চার শতাধিক বই লুটপাট করে।”

“এর আগে, ২০২২ সালেও অভয়ারণ্য পাঠাগারে রাতের অন্ধকারে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। তখন বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন আমরা জানতাম না কে আগুন দিয়েছিল। থানা কর্তৃপক্ষ আর বিষয়টি নিয়ে আগায়নি।”- যোগ করেন তিনি।

পাঠাগারের সভাপতি সুপ্তি মিত্র বলেন, “রাতে তারা পাঠাগারের বই লুটপাট করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তারা বইগুলো পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু, পুলিশের উপস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বইগুলো নিয়ে গেছে। এখনও বইগুলো উদ্ধার হয়নি। তবে জানতে পেরেছি বইগুলো ইউএনও অফিসে রয়েছে।”

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা যুব খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ আমীন বলেন, “পাঠাগারটির সদস্যরা ইসলামবিদ্বেষী লেখা ফেইসবুকে পোস্ট করত। পাঠাগারে হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবালসহ বিভিন্ন লেখকের বই ছিল যেগুলোতে নারীদের অধিকার আর ইসলাম বিদ্বেষী লেখা ছিল। সেসব বই নিয়ে ইউএনও অফিসে জমা দিয়েছি।”

এ বিষয়ে ধনবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম শহিদুল্লাহ বলেন, ‘‘কিছু লোকজন পাঠাগার থেকে হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবালসহ কয়েকজন লেখকের বই নিয়ে এসে ইউএনও অফিসে রেখেছে। তাদের দাবি, ওই লেখকরা নাস্তিক। কতগুলো বই নিয়েছে সেটা জানি না। রবিবার ইউএনও কার্যালয়ে বসে বিষয়টির সমাধান করা হবে।’’

ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহীন মাহমুদ বলেন, ‘‘পাঠাগার থেকে বই নিয়ে গেছে এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। রবিবার দুপক্ষকে ইউএনও কার্যালয়ে আসতে বলা হয়েছে।’’

ঢাকা/কাওছার/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ