ধারদেনা করে ৮৫ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন মজিবর রহমান (৬৫)। এ জমির ধান দিয়েই ছয় সদস্যের পরিবারের সারা বছরের খোরাকি হবে– এমন আশা ছিল তাঁর মনে। ঢাকার ধামরাই উপজেলার বাসনা নয়াপাড়ার এই চাষির আশা দুরাশায় পরিণত হয়েছে পাশের একটি ইটভাটার কারণে। গত বুধবারও সুস্থ-সবল ধান ছিল ক্ষেতে। ওই রাতেই পাশের টাটা ব্রিকস থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় বিষাক্ত গ্যাস। এতে বাতাস উত্তপ্ত হয়ে পুড়ে গেছে মজিবরের ক্ষেতের সব ধান। 
গতকাল শনিবার নিজ জমির ধান দেখিয়ে আক্ষেপ করছিলেন মজিবর রহমান। তাঁর প্রশ্ন, ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন, পুরো বছর কীভাবেই বা চালাবেন সংসার খরচ? এই চাষির মতো ক্ষতির শিকার হয়েছেন বাসনা নয়াপাড়া ও নওগাঁহাটি এলাকার আব্দুল খালেক, আব্দুল মজিদ, আব্দুল লতিফ, কালু মিয়া, হানিফ আলী, রকেট, জিয়াউদ্দিন, নজরুল ইসলাম, সালামসহ শতাধিক কৃষক। তাদের অন্তত ২০০ বিঘা জমির আধাপাকা ধান পুড়ে গেছে।
ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে গতকাল শনিবার ও শুক্রবার কৃষকরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে নালিশ করেন। তাঁর নির্দেশনায় শনিবার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরিতোষ বিশ্বাস, তাপস কুমার সরকার ও সুমন হোসেন ধানি জমিগুলো পরিদর্শন করেছেন।
ধামরাই উপজেলায় ফসলি জমির আশপাশে গড়ে তোলা ইটভাটার সংখ্যা দুই শতাধিক। এরই একটি নওগাঁহাটি এলাকার টাটা ব্রিকস। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, গত বুধবারও তাদের জমির বোরো ধানগাছ সবুজ ছিল। সেদিন রাতেই ওই টাটা ইটভাটার কিলিনে জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরই এলাকার বাতাস উত্তপ্ত হয়ে যায়। ওই বাতাস যেদিক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সেই অংশেরই ধান গাছের পাতা পুড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার থেকেই সব ধানগাছ লাল হয়ে চিটা ধরে যায়।
সব মিলিয়ে আশপাশের প্রায় ২০০ বিঘা বোরো ধান ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাসনা নয়াপাড়ার কৃষক নজরুল ইসলাম ও আব্দুল 
খালেক। তারা এ জন্য ওই ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসকেই দায়ী করেন। বিষয়টি তারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত জমি পরিদর্শনের পর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরিতোষ বিশ্বাস বলেন, ইটভাটার মালিকপক্ষ ধানক্ষেত পুড়ে নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। তারা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
টাটা ব্রিকসের ব্যবস্থাপক আব্দুল খালেকও তাদের ভাটা থেকে ছাড়া গ্যাসের আগুনে কিছু জমির ধান নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তাঁর ভাষ্য, উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। তাদের ভাটা মালিক আবুল হোসেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা চেয়েছেন। এ বিষয়ে তাদের (কৃষক) সঙ্গে বসেই সমাধান করা হবে। 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ইটভাটার আগুনে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার বিষয়টি কৃষকদের কাছ থেকে জানতে পারেন তিনি। পরে তিন কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। ইটভাটা মালিক কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। দু-এক দিনের মধ্যে না দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধ নক ষ ত কর মকর ত ইটভ ট র কর ছ ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

রাতের ব্যবধানে শত কৃষকের সর্বনাশ

ধারদেনা করে ৮৫ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন মজিবর রহমান (৬৫)। এ জমির ধান দিয়েই ছয় সদস্যের পরিবারের সারা বছরের খোরাকি হবে– এমন আশা ছিল তাঁর মনে। ঢাকার ধামরাই উপজেলার বাসনা নয়াপাড়ার এই চাষির আশা দুরাশায় পরিণত হয়েছে পাশের একটি ইটভাটার কারণে। গত বুধবারও সুস্থ-সবল ধান ছিল ক্ষেতে। ওই রাতেই পাশের টাটা ব্রিকস থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় বিষাক্ত গ্যাস। এতে বাতাস উত্তপ্ত হয়ে পুড়ে গেছে মজিবরের ক্ষেতের সব ধান। 
গতকাল শনিবার নিজ জমির ধান দেখিয়ে আক্ষেপ করছিলেন মজিবর রহমান। তাঁর প্রশ্ন, ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন, পুরো বছর কীভাবেই বা চালাবেন সংসার খরচ? এই চাষির মতো ক্ষতির শিকার হয়েছেন বাসনা নয়াপাড়া ও নওগাঁহাটি এলাকার আব্দুল খালেক, আব্দুল মজিদ, আব্দুল লতিফ, কালু মিয়া, হানিফ আলী, রকেট, জিয়াউদ্দিন, নজরুল ইসলাম, সালামসহ শতাধিক কৃষক। তাদের অন্তত ২০০ বিঘা জমির আধাপাকা ধান পুড়ে গেছে।
ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে গতকাল শনিবার ও শুক্রবার কৃষকরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে নালিশ করেন। তাঁর নির্দেশনায় শনিবার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরিতোষ বিশ্বাস, তাপস কুমার সরকার ও সুমন হোসেন ধানি জমিগুলো পরিদর্শন করেছেন।
ধামরাই উপজেলায় ফসলি জমির আশপাশে গড়ে তোলা ইটভাটার সংখ্যা দুই শতাধিক। এরই একটি নওগাঁহাটি এলাকার টাটা ব্রিকস। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, গত বুধবারও তাদের জমির বোরো ধানগাছ সবুজ ছিল। সেদিন রাতেই ওই টাটা ইটভাটার কিলিনে জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরই এলাকার বাতাস উত্তপ্ত হয়ে যায়। ওই বাতাস যেদিক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সেই অংশেরই ধান গাছের পাতা পুড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার থেকেই সব ধানগাছ লাল হয়ে চিটা ধরে যায়।
সব মিলিয়ে আশপাশের প্রায় ২০০ বিঘা বোরো ধান ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাসনা নয়াপাড়ার কৃষক নজরুল ইসলাম ও আব্দুল 
খালেক। তারা এ জন্য ওই ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসকেই দায়ী করেন। বিষয়টি তারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত জমি পরিদর্শনের পর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরিতোষ বিশ্বাস বলেন, ইটভাটার মালিকপক্ষ ধানক্ষেত পুড়ে নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। তারা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
টাটা ব্রিকসের ব্যবস্থাপক আব্দুল খালেকও তাদের ভাটা থেকে ছাড়া গ্যাসের আগুনে কিছু জমির ধান নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তাঁর ভাষ্য, উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। তাদের ভাটা মালিক আবুল হোসেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা চেয়েছেন। এ বিষয়ে তাদের (কৃষক) সঙ্গে বসেই সমাধান করা হবে। 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ইটভাটার আগুনে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার বিষয়টি কৃষকদের কাছ থেকে জানতে পারেন তিনি। পরে তিন কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। ইটভাটা মালিক কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। দু-এক দিনের মধ্যে না দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ