Samakal:
2025-04-27@03:04:07 GMT

ঘরে ও বাইরে নারীর সংগ্রাম

Published: 26th, April 2025 GMT

ঘরে ও বাইরে নারীর সংগ্রাম

শিক্ষাজীবনে ডিগ্রি পাস করা আছিয়া বেগম (ছদ্মনাম) বর্তমানে গৃহিণী। স্বামী-সন্তান নিয়ে তাঁর সংসারজীবন। স্বামীরা তিন ভাই হলেও গ্রামের বাড়িতে থাকার কারণে শ্বশুর-শাশুড়িকে দেখার ভার আছিয়ার কাঁধে পড়ে। গত তিন বছর ধরে তাঁর শ্বশুর অসুস্থ। বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন।
প্রথম দুই বছর সংসারের কাজ এবং দেখাশোনার কাজ একাই করতেন। এক সময় তিনি অপারগতা প্রকাশ করলে তাঁর জন্য একজন সাহায্যকারী রাখা হয়। তবুও সংসারের বেশির ভাগ কাজ করতে হয় আছিয়াকে।
২০২৩ সালে আছিয়ার শ্বশুর মারা যান। আছিয়া খোঁজ পান ঢাকার কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ কেয়ারগিভিং এবং টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (বিসিটিটিআই) কেয়ারগিভিং-এর প্রশিক্ষণ এবং জাপানি ভাষা শেখানো হয়। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, এ দুটো কাজ জানা থাকলে তিনি জাপানে চাকরি করতে পারবেন।
আছিয়া বেগমের কাছে কিছু টাকা ছিল। তিনি সে টাকা দিয়ে প্রশিক্ষণ নেন। পরবর্তী সময়ে জাপানে উচ্চ বেতনে কাজ পান। গত তিন বছরে শ্বশুরের জন্য বিনা বেতনে ভালোবেসে যে কাজ করেছেন আছিয়া, সেখানে তিনি সম্মান পাননি। সেই একই কাজ এখন দেশের বাইরে গিয়ে করতে পারছেন। সম্মান এবং টাকা দুটোই মিলছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ-২০২৩ অনুযায়ী, কৃষিতে নারীর অবদান পুরুষের তুলনায় বেশি। নারীর কৃষি কাজে অবদান ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পুরুষের ১৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। অন্যদিকে, শিল্পকারখানা এবং হোয়াইট কলার কাজে নারীর অবদান শূন্যের কোঠায় না হলেও পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ কম। হোয়াইট কলার কাজ হলো, যারা ডেস্কে কাজ করেন।
পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারীরা কাজ করছেন। তবুও নারীর সম্মান অধরা। অর্থনীতিতে কাঠামোগত কী পরিবর্তন করলে নারীর সম্মান বাড়তে পারে। এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, ‘সম্মানের অনেক স্তর রয়েছে। নারীর সম্মান অবশ্যই বেড়েছে। তবে অর্থনীতিতে নারীর যে পরিমাণ অংশগ্রহণ, সে পরিমাণ সম্মান তারা পান না। তাদের এখন কথা বলার অধিকার হয়েছে। তারা মতামত দিতে পারেন। অন্যদিকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কম। অবস্থার পরিবর্তন খুব ক্ষীণ হলেও, পরিবর্তন হচ্ছে। এটি রাতারাতি বেড়ে যাবে, ভাবা ভুল।
নারীর অনেক কাজ এখন জিডিপি এবং জিএসপিতে অবদান রাখছে। যেমন– হস্তশিল্প, কেয়ারগিভার এবং নানা ধরনের কায়িক শ্রমের কাজ। অনেক ক্ষেত্রে নারী রেমিট্যান্সযোদ্ধা হিসেবেও কাজ করছেন। তারা পিছিয়ে পড়ছেন দুটি কাঠামোগত কারণে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী, নারী যে পরিমাণ শিক্ষিত সে অনুযায়ী চাকরিতে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। প্রথমত, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র, নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা কাঠামোগতভাবে আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। ফলে নারী যোগ্য হলেও যথাযথ কাঠামো না থাকার কারণে তাকে সে সব দায়িত্বে ডুবে যেতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের সমাজে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নেই। যেমন ব্যবসাক্ষেত্রে চাঁদাবাজি বা একজন নারী সহজে যেন দোকান ভাড়া পান এবং নিরাপদে ব্যবসা করার পরিবেশ এগুলো নিশ্চিত করলে নারীর অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ আরও বাড়বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার অ্যান্ড উইমেন স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.

সোমা দে বলেন, ‘নারী অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। কিন্তু তাঁকে একটি উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁর শ্রম  অর্থনীতির প্রয়োজনে ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার সেই কাজ ঘরেও বিনামূল্যে বা সহানুভূতিহীনভাবে করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একজন নারী সংসার এবং চাকরি দুটোই সমানভাবে চালান। সে দুই জায়গায় দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে যান। তিনি পরিচিত হন গৃহিণী হিসেবে। তিনি তাঁর মেধার মূল্যায়ন পান না– এটি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যা। এ থেকে উত্তরণের উপায় হলো জেন্ডার সমতা এবং ন্যায্যতা তৈরি করা। যেটি শুরু হবে পরিবার এবং সমাজ থেকে।’
বিশ্বব্যাংকের ‘নারী, ব্যবসা ও আইন-২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সমাজে নারীর আয় এখন আর সেকেন্ডারি বিষয় না, এটি অপরিহার্য। শুধু পারিবারিক ও সামাজিক প্রয়োজনে নয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও দরকার। জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুসারে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৩৪ হাজার বেশি। দেশে সংখ্যায় নারী বেশি হলেও শ্রমক্ষেত্রে সুযোগ কম। অনেক নারী উদ্যোক্তা ব্যবসায় আসছেন। তারা নানাভাবে বৈষম্যের শিকারও হচ্ছেন। তাদের অনেকেই পড়াশোনায় পিছিয়ে আছেন, মূলধন কম, সহজে ঋণ পাচ্ছেন না, আছে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও পারিবারিক চাপ।
অন্যদিকে কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রবেশ বাড়লেও কাজ পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও উপযোগী কাজের পরিবেশের অভাবসহ নানা কারণে নারীরা শ্রমবাজারের বাইরে থেকে যাচ্ছেন। শহরে নারী ও পুরুষের কাজের অসমতার হার আগের চাইতে বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে, কর্মদক্ষ নারীর যতজন শ্রমশক্তিতে থাকার কথা, ততটা নেই।
শহরাঞ্চলে অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান হারানো নারীর একটা বড় অংশ গ্রামে ফিরে গিয়ে নিম্ন মজুরি বা মজুরি ছাড়াই পরিবারের কৃষি ও গৃহস্থালি কাজে যুক্ত হচ্ছেন। তাদের অংশগ্রহণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না।
কৃষিক্ষেত্রে শ্রম কম মূল্যায়িত বলে সেখানে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। অথচ অসমতা দূর করতে হলে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে শিল্প ও সেবা খাতে। নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারলে লিঙ্গভিত্তিক অসমতা থেকে মুক্তি নাই। 
সরেজমিনে দেখা যায়, নারী কর্মক্ষেত্রে নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। কায়িক শ্রমের ক্ষেত্রে নারী বেশি বৈষ্যমের শিকার হন। একই কাজ নারী করলেও পুরুষের তুলনায় কম পারিশ্রমিক পান।
এ প্রসঙ্গে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য কল্পনা আখতার বলেন, ‘নারী আজ শিক্ষা, প্রযুক্তি ও কর্মক্ষেত্রে সমানভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে। তারা দক্ষতা ও মেধার দিক থেকে পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তবুও সমাজে তাদের প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা এখনও অধরা। কর্মক্ষেত্রে নারীর পরিশ্রমকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না; বরং যৌনতা ও শারীরিক গঠনের মাধ্যমে তাদের বিচার করা হয়। নির্মাণকাজ কিংবা ইটভাটার মতো কঠিন শারীরিক পরিশ্রমে অংশ নেওয়া সত্ত্বেও নারী পুরুষের তুলনায় কম মজুরি পান, যা স্পষ্টভাবে বৈষম্যের বহিঃপ্রকাশ।’
এ সমস্যার মূল কারণ হলো– দৃষ্টিভঙ্গির সংকীর্ণতা এবং জেন্ডার সচেতনতার অভাব। নারীর সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমে সমাজে সচেতনতা তৈরি করতে হবে, যেখানে নারীকে কেবল মেধাবী কর্মী হিসেবে নয়, একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে দেখা হবে। কর্মক্ষেত্রে সমান মজুরি ও সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও স্বাস্থ্যজনিত প্রয়োজনকে সহানুভূতির সঙ্গে মূল্যায়ন করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমে নারী অধিকার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এক বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে পারে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দরকার মনোভাবের পরিবর্তন, তবেই নারীর সম্মান নিশ্চিত হবে।
ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস ও ডাইভারসিটি প্রোগ্রামের প্রধান মাসুমা বিল্লাহ বলেন, ‘ছেলেরাও অনেকে শারীরিকভাবে দুর্বল থাকে। তাদের একজন নারীর থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি আমাদের সমাজের সমস্যা। একটি ছেলে দিনে পাঁচবার সিগারেট খেলে সময় নষ্ট হয় না। অথচ নারী মাসে বিশেষ সময়ে অসুস্থ থাকলে প্রতিষ্ঠানের কাজের ক্ষতি হচ্ছে– এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।’ v

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত করত র পর ব ক জ কর র জন য ব যবস অবদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে (এনএসইউ) মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি গভর্ন্যান্সের অধীনে আয়োজিত ‘এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স ইন পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স’ (ইএমপিজি) প্রোগ্রামের সামার সেশন-২০২৫ এর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টাব্যাপী এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রোগ্রামটির পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, “পরীক্ষা চলাকালীন একজন পরীক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ নাম দিয়ে অংশ নেন। পরে জানা যায়, তিনি সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত।”

আরো পড়ুন:

রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

সুপ্রদীপ চাকমা
ভারত ও চীনের অর্থনীতির বাতাসে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে

তিনি আরো জানান, ভর্তি পরীক্ষার ফল এক থেকে দুই দিনের মধ্যে প্রকাশিত হবে এবং উত্তীর্ণদের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই প্রোগ্রামটি নীতি-নির্ধারক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, উন্নয়নকর্মী ও গবেষকদের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত। এতে পাবলিক পলিসি, প্রশাসনিক দক্ষতা, নেতৃত্ব এবং সুশাসন বিষয়ে সমন্বিত জ্ঞান দেওয়া হয়।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শ্রমজীবী নারী সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অবহেলিত
  • আমার নয়, ইন্ডাস্ট্রির ভুল
  • ‘চার্মিং’ থাকার উপায় জানালেন জয়া আহসান
  • রাঙামাটিতে অটোরিকশা-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৫
  • রাঙামাটিতে অটোরিকশা ও পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৫
  • প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলা নারীর মৃত্যু, পরিবার বলছে আত্মহত্যা
  • এক্সপ্রেসওয়েতে ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়লেন দুই মোটরসাইকেল আরোহী, একজনের মৃত্যু
  • প্যারিস জ্যাকসনের জীবনের করুণ অধ্যায় সম্পর্কে জানেন?
  • নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ