৮ মাস পেরিয়ে গেলেও জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়নি
Published: 26th, April 2025 GMT
শেখ হাসিনার পতনের পর শাসকের বদল হলেও শাসকের শ্রেণি চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। অভ্যুত্থানের চেতনা ফিকে হতে বসেছে। অভ্যুত্থানের ৮ মাস অতিক্রম হলেও জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়নি।
গতকাল শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ছাত্রসমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘কোথাও আঘাত ছাড়া অগ্রসর সূর্যালোক নেই’ স্লোগান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এই ছাত্রসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
ছাত্র সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজার সভাপতিত্ব করেন। এটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ।
সভাপতির বক্তব্যে মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর শাসকের বদল হলেও শাসকের শ্রেণিচরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। অভ্যুত্থানের চেতনা ফিকে হতে বসেছে। অভ্যুত্থানের ৮ মাস অতিক্রম হলেও জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়নি। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা৷
শিক্ষা খাতের সংস্কারের কোনো আলোচনা নেই উল্লেখ করে ছাত্র ইউনিয়নের এই নেতা বলেন, শত শত সংস্কারের আলাপের ভিড়ে শিক্ষা খাতের সংস্কারের কোনো আলাপ নেই। এটি মেনে নেওয়া যায় না। ছাত্র ইউনিয়ন তার জন্মলগ্ন থেকেই স্বৈরাচার, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টি মিলিতভাবে ২০ হাজার সদস্যের গেরিলা বাহিনী নিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন লড়াই চালিয়ে এসেছে। ৭৩ বছরের পথচলায় ছাত্র ইউনিয়নকে ধ্বংস করবার বহু প্রচেষ্টা হয়েছে। কিন্তু যারা ছাত্র ইউনিয়নকে ধ্বংসের প্রচেষ্টা চালিয়েছে তারাই ধ্বংস হয়ে গেছে। ছাত্র ইউনিয়ন তার ইতিহাস অর্পিত দায়িত্ব নিয়ে একটি শোষণ-বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, সকলের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মানের লড়াই চালিয়ে যাবে।
ছাত্র সমাবেশের পরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশেই প্রাক্তন পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। প্রাক্তন পুনর্মিলনীতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম এম আকাশ। তিনি বলেন, ছাত্র ইউনিয়ন তার জন্মলগ্ন থেকেই তার নীতি আদর্শ সমুন্নত রেখে তার লড়াই চালিয়ে এসেছে। ছাত্র ইউনিয়ন জুলাই গণ অভ্যুত্থানেও তার স্বকীয় অবস্থা বজায় রেখে লড়াই চালিয়েছে। কিছু ব্যক্তি ছাত্র ইউনিয়নের এই অর্জনকে খাটো করে দেখতে চায়। ছাত্র ইউনিয়ন সব অপশক্তিকে প্রত্যাখ্যাত করে সমাজ-প্রগতির লড়াই এগিয়ে নেবে।
সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মিহির ঘোষ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ছিল বৈষম্যহীন সমাজ, যা মুক্তিযুদ্ধেরও আকাঙ্খা ছিল। তবুও অভ্যুত্থানের পরে মুক্তিযুদ্ধের উপর আঘাত এসেছে। ছাত্র ইউনিয়ন তার নিজস্ব গেরিলা বাহিনী নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। স্বভাবতই ছাত্র ইউনিয়ন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ছাত্র ইউনিয়নের এই নীতিনিষ্ঠ অবস্থানকে স্বাগত জানাই।
ছাত্র সমাবেশ শেষে সমাবেশ স্থল থেকে শুরু হয়ে একটি র্যালি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার সমাবেশস্থলে এসে শেষ হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ফারুকের
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালানো নারায়ণগঞ্জের এস এম রানাকে বিসিবিতে নিয়ে এসেছিলেন ফারুক আহমেদ। বিসিবির টাকায় তাঁকে র্যাডিসন হোটেলেও রাখা হয়েছিল। গত অক্টোবরে ফারুক-রানাকে প্রকাশ্যে মেলামেশা করতে দেখা গেছে। ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই সমালোচনার মুখে পড়েন বিসিবি সভাপতি। বিপিএলে স্পট ফিক্সিং ইস্যু, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে বিতর্কিত ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়োগ, মধুমতি ও মেঘনা ব্যাংকে অস্বাভাবিকভাবে ১১৮ কোটি টাকার এফডিআর করা এবং সম্প্রতি তাওহিদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা ও তামিম ইকবালের চাপ প্রয়োগের ইস্যুতে নতজানু হওয়ার ঘটনায় বিতর্কিত হচ্ছেন ফারুক।
জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক বিসিবির প্রথম ক্রিকেটার সভাপতি। তাঁর কাছে তাই প্রত্যাশাও বেশি ছিল ক্রীড়ামোদীদের। অথচ কিছু বিতর্কিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়া এবং একরোখা স্বভাবের কারণে আট মাসেই অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। বেশির ভাগ পরিচালকের অভিযোগ, রেগে গেলে সভাপতির আচরণ শালীন থাকে না। তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা মনে করেন, মেজাজ হারিয়ে দিন দিন শত্রুতা বাড়াচ্ছেন ফারুক। তাঁর সাংগঠনিক ক্যারিয়ারকে যেটা প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করেন ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টরা।
গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ফারুকের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার প্রেস সচিব মাহফুজুল আলম। মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিসিবি সভাপতি ফারুকের সঙ্গে কয়েকজন বিতর্কিত লোকের ওঠাবসার কারণে ঝামেলার সূত্রপাত। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো রানাকে বিসিবিতে সম্পৃক্ত করা, আওয়ামী লীগ সম্পৃক্ত জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার খন্দকার সাইদুর রহমান এফিকে নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখায় ক্ষুব্ধ ছিল মন্ত্রণালয়। এ দু’জনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ফারুক কয়েক মাস আগে বলেছিলেন, ‘রানার সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা ছিল নারায়ণগঞ্জের ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে। সে যে আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে, তা জানা ছিল না। এ ব্যাপারে অবগত হওয়ার পরই বাদ দেওয়া হয়েছে। খন্দকার সাইদুর রহমান এফি জাতীয় দলের ক্রিকেটার হিসেবে বিসিবিতে এসেছে। যখন জেনেছি তার ব্যাপারে আপত্তি আছে, তাকেও বাদ দিয়েছি।’
বিসিবি সভাপতি হওয়ার পর ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংক থেকে এফডিআর সরিয়ে নিরাপদ ব্যাংকে নেওয়ার কথা বলেছিলেন ফারুক। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংক থেকে ২৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে সবুজ ও হলুদ তালিকাভুক্ত ১৩টি ব্যাংক– মধুমতি ব্যাংক (হলুদ), ইস্টার্ন ব্যাংক (সবুজ), ব্র্যাক ব্যাংক (হলুদ), মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (হলুদ), প্রাইম ব্যাংক (সবুজ), সিটি ব্যাংক (সবুজ), মেঘনা ব্যাংক (সবুজ), পূবালী ব্যাংক (হলুদ), অগ্রণী ব্যাংক (লাল), বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক (হলুদ) ও সিটিজেন ব্যাংকে (হলুদ) ২৩৮ কোটি টাকা নতুন করে এফডিআর করা হয়েছে। এই ব্যাংকগুলো থেকে ২ থেকে ৫ শতাংশ বাড়তি মুনাফা পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এফডিআর করার ফলে অংশীদার ব্যাংক থেকে ১২ কোটি টাকা স্পন্সর পাওয়া নিশ্চিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। মধুমতি ব্যাংক ও মেঘনা ব্যাংক ঢাকা ও জাতীয় লিগের স্পন্সর ছিল। নতুন করে এফডিআর করায় সভাপতিকে কেউ দোষারোপ করছে না। সমস্যা হয়েছে, মধুমতি (৬৬ কোটি টাকা) ও মেঘনা (৫২ কোটি টাকা) ব্যাংকে ১১৮ কোটি টাকা এফডিআর করা নিয়ে। ১১টি ব্যাংকে রাখা হয়েছে ১২২ কোটি টাকা, কিন্তু দুই ব্যাংকে কেন প্রায় অর্ধেক টাকার এফডিআর? একজন পরিচালকের কাছে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নাম গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেন, ‘সাধারণত মোটা অঙ্কের টাকা এফডিআর করা হলে কমিশন পাওয়া যায়। এই কমিশন বৈধ। সভাপতি সেটি নিয়েছেন কিনা, জানি না। তবে যেটুকু শুনেছি, মধুমতি ও মেঘনা ব্যাংকে সভাপতির বন্ধু আছেন। সে কারণে সেখানে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।’ বিপিএল ও আন্তর্জাতিক সিরিজের টিকিট বিক্রির পার্টনারও মধুমতি ব্যাংক। এ বিষয়ে ফারুকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘পুরোপুরি স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজগুলো করেছি। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছিলাম, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংক থেকে এফডিআর নিরাপদ ব্যাংকে নেওয়া হবে। বোর্ড সভায় অনুমোদন নিয়ে কাজটি করা হয়েছে। এ ছাড়া ফিন্যান্স ও লজিস্টিক কমিটির চেয়ারম্যানরা স্বাক্ষর করেছেন। মূলত আমার ইমেজ ক্ষুণ্ন করতে এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে।’ তবে বিসিবি পরিচালক মাহবুবুল আনাম বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাক্ষর করি কোনো কিছু অনুমোদন করার পর। তখন ফিন্যান্স কমিটির সভাপতি ছিলেন সভাপতি নিজে। নিজস্ব ক্ষমতাবলে এফডিআর ১৩টি ব্যাংকে নিয়েছেন। তিনি সেটি পারেনও। যে ব্যাংকগুলোতে নেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে বিসিবি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এ কারণে নেওয়া হয়েছে।’
কে এই এসএম রানা
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গত ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সামনে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালানোর সময় আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান ও তাঁর সহযোগীদের সঙ্গে ছিলেন এসএম রানা। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় করা মামলার আসামি রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি জামিন পেয়েছেন। এ ছাড়া ফতুল্লা থানায়ও ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা আছে।
অভিযোগ রয়েছে, শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু, বিসিবির বর্তমান চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন, নগরীর নিতাইগঞ্জ বাপ্পী চত্বর এলাকার এসএম রানা মিলে ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। এই সিন্ডিকেট জমি দখলসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিল। শামীম ওসমান পরিবারের সহযোগিতায় রানা নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহসভাপতি ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সদস্য হন।