শুধু কাজেরই উদ্বোধন হয় ফুট ওভারব্রিজ হয় না
Published: 26th, April 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের সিটি গেট। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে এক গবেষণায় জায়গাটিকে সড়ক দুর্ঘটনার ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিন বছরে সড়ক পারাপার হতে গিয়ে শুধু এই জায়গাতেই প্রাণ হারিয়েছেন আটজন। পথচারী পারাপারে এখানে দুটি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের কথা ছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক)। কিন্তু তিন বছরেও তা নির্মাণ হয়নি।
শুধু সিটি গেট নয়, নগরের এমন ৩১টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ৩৮টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের একটি প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্প পাসের তিন বছর পার হয়েছে। এই সময়ে একটি ফুট ওভারব্রিজও নির্মাণ করতে পারেনি চসিক। ফলে এসব স্থানে দ্রুতগামী গাড়ির ফাঁক গলে সড়ক পার হতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন পথচারী।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প পাস হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আওতায় নগরের ৩১টি মোড়ে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৮টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের কথা ছিল। প্রকল্প অনুমোদনের তিন বছর পার হয়েছে। এক দফা প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদও শেষ। এই সময়ে আটটি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেছেন সিটি করপোরেশনের সাবেক ও বর্তমান মেয়র। কিন্তু একটির কাজও শেষ হয়নি। ১৮টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণে টেন্ডার হয়েছে বলে দাবি প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর নগরের দুই নম্বর গেটে একটি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। একই বছরের নগরের কেইপিজেড ও কাঠগড় মোড়ে দুটি ফুট ওভারব্রিজের কাজ উদ্বোধন করেন তিনি। এ ছাড়া ২০২৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জিইসি মোড়ে চতুর্মুখী একটি ফুট ওভারব্রিজ, ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ সড়ক সংযোগস্থলে একটি এবং ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডের কাপ্তাই রাস্তার মোড়ে একটি ফুট ওভারব্রিজের কাজ উদ্বোধন করেন সাবেক মেয়র রেজাউল। ২০২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর নগরের দক্ষিণ পতেঙ্গায় বাংলাদেশ নেভি রেডি রেসপন্স বার্থের সামনে একটি ফুট ওভারব্রিজের কাজ উদ্বোধন করেন বর্তমান মেয়র শাহাদাত হোসেন। গত ৩ মার্চ নগরের চান্দগাঁও আরাকান সড়কে সানোয়ারা ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে আরেকটি ফুট ওভারব্রিজের কাজ উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রকল্প পরিচালক ও সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জসীম উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের প্রস্তুতি আছে। কিন্তু পিডিবিসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার ইউটিলিটি লাইন স্থানান্তর জটিলতায় এগুলো নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত কাজ শুরু করা যাবে।’
লালখান বাজারে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ নিয়ে রশি টানাটানি
নগরের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মোড়গুলোর একটি লালখান বাজার। এই মোড়ে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের প্রকল্প নেয় সরকারি দুই সংস্থা চসিক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। রশি টানাটানিতে এখানে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
প্রকৌশলী জসীম উদ্দিন বলেন, লালখান বাজার মোড়ে সিডিএ ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করবে বলেছিল। তাই আমরা আর করছি না। সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘বরাদ্দ না পাওয়ায় সিডিএ ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করবে না।’
সড়ক পার হতে গিয়ে ঝরছে প্রাণ
চট্টগ্রাম নগরের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে গবেষণা করে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সিটি রোড সেফটি রিপোর্ট প্রকাশ করে তারা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৬৯ জন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ন বছর প রকল প নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
অনন্তযাত্রা কি থেমে যাবে
তারা যেন পৃথিবীর নাড়ি-ছেঁড়া ধন। না ফেরার দেশে যতই ছুটে চলেছে, পৃথিবী উপলব্ধি করছে নাড়ির টান। কষ্টসাধ্য হলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে। এসবের মধ্যেই তাদের নিরন্তর পথচলা অব্যাহত। ক্রমেই তারা সৌরজগৎ ছেড়ে অনন্ত-অসীমে হারিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বার্তা, যদি কোনো দূর-গ্রহের কারও সাক্ষাৎ মেলে! তবে একটি প্রশ্ন এখন জোরালোভাবে সামনে আসছে, এভাবে আর কতকাল তারা পথ চলতে পারবে?
কথা হচ্ছিল দুই ‘ভয়েজার বোন’কে নিয়ে। এখন তারা পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে যাওয়া মনুষ্যসৃষ্ট বস্তু। প্লুটোনিয়াম পুড়িয়ে উৎপন্ন হচ্ছে তাপবিদ্যুৎ, যা তাদের চালিকাশক্তি। অসীমের যাত্রাপথে প্রতিবছর তারা প্রত্যেকে চার ওয়াট শক্তি হারায়। বিজ্ঞানীরা চান তাদের যাত্রা যেন না থামে। এ জন্য জ্বালানি যাতে দ্রুত ফুরিয়ে না যায়, পৃথিবী থেকে নাসার বিজ্ঞানীরা সে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে তারা এরই মধ্যে যান দুটির বিভিন্ন অংশের কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছেন।
১৯৭৭ সালে ভয়েজার-১ ও ভয়েজার-২ আকাশে ওড়ানো হয়। প্রাথমিকভাবে সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহের তথ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু একসময় তারা সৌরজগতের সীমা পেরিয়ে ছুটতে শুরু করে অনন্ত মহাশূন্যের পানে। বর্তমানে ভয়েজার-১ পৃথিবী থেকে আড়াই হাজার কোটি কিলোমিটার দূরে রয়েছে; আর ভয়েজার-২ আছে ২ হাজার ১০০ কোটি কিলোমিটার দূরে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতির। ভয়েজার-১ এর কাছে একটি সংকেত পাঠাতে সময় লাগে ২৩ ঘণ্টার বেশি। আর ভয়েজার-২ সংকেত পায় ১৯ ঘণ্টায়।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষণাগার থেকে নাসার বিজ্ঞানীরা ভয়েজার-১ এর একটি যন্ত্রাংশ বন্ধ করে দেন। ২৪ মার্চ ভয়েজার-২ এরও একাংশ বন্ধ করার কথা । ভয়েজাররা যখন যাত্রা শুরু করে, তখন সৌরজগতের শনি, বৃহস্পতি, ইউরেনাস ও নেপচুন নিয়ে গবেষণা চালানোর জন্য প্রতিটিতে ১০টি যন্ত্র সংযুক্ত করা হয়। এগুলোর প্রতিটির কাজ পৃথক।
২০১২ সালে ভয়েজার-১ ইন্টারস্টেলার বা সৌরজগতের বহির্মণ্ডল অতিক্রম করে। এর মধ্য দিয়ে মানব ইতিহাসে প্রথম কোনো মহাকাশযান অনন্ত মহাবিশ্বের পথে রওনা হয়; ছুটতে থাকে অজানা গন্তব্যে। ২০১৮ সালে ভয়েজার-২ একইভাবে, তবে ভিন্ন দিকে রওনা করে। এ দুটিই নিয়ে যাচ্ছে কিছু রেকর্ড– পাখির কূজন, শিশুর কান্না, সংগীতসহ জাগতিক নানা শব্দ। এগুলো কি আদৌ ‘কারও’ কাছে পৌঁছাবে? সেই ‘কারও’র কি আসলে অস্তিত্ব আছে?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভয়েজার-১ এর মেগনেটোমিটার ও প্লাজমা ওয়েব সাবসিস্টেম চলতি বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। পরে এটি বন্ধ হয়ে যাবে। অপরদিকে ভয়েজার-২ তার মেগনেটোমিটার ও প্লাজমা ওয়েব সাবসিস্টেম আগামী বছর পর্যন্ত চালু রাখবে। এসব যন্ত্র একে একে বন্ধ হওয়ায় ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে ‘ভয়েজার বোনেরা’। তবে আরও কয়েক বছর হয়তো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে।
ভয়েজার প্রকল্পের বিজ্ঞানী লিন্ডা স্পিলকার বলেন, ‘প্রতিদিন প্রতি মিনিটে ভয়েজাররা মহাশূন্যের নতুন এলাকায় প্রবেশ করছে, যেখানে অতীতে কোনো মহাকাশযান যায়নি।’ এ দুই ভয়েজার আর কতদূর যাবে, তাও সুনির্দিষ্ট নয়। সূত্র: নাসা, সায়েন্স অ্যালার্ট।