উচ্ছেদের মুখে বহুল পরিচিত জব্বার হোটেল
Published: 26th, April 2025 GMT
“আমি করোনার পরে দোকানটা নিয়েছি। শুরুতে ২-৩ লাখ টাকা লোকসান গুণেছি। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে ব্যবসা দাঁড় করাতে প্রায় ২ বছর লেগেছে। দোকান সরানোর জন্য আমাদের মাত্র ১ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। এখন সময় নেই, জায়গা নেই, দোকান কোথায় বসাব, সেটাও নিশ্চিত না। এখানে ১৪ জন লোক কাজ করত। এখন সবাই বসে আছে।”
এভাবেই হতাশা জর্জরিত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) জব্বার হোটেলের মালিক মাহবুব আলম। এ হোটেলের নাম থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র বহুল আলোচিত আব্দুল জব্বার মোড়ের নামকরণ করা হয়। কিন্তু উন্নয়নের নামে আব্দুল জব্বার মোড় থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে হোটেল সরিয়ে নিতে বলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেট (কেবি কলেজ) থেকে শুরু করে ফসিল মোড় পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে চার লেনের সড়ক। এই সড়ক আব্দুল জব্বার মোড় হয়ে যাবে বলে সড়কের দুই পাশে থাকা দোকানগুলো স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে বর্তমানে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শুধু জব্বার মোড়ের পূর্ব পাশের দোকানগুলোই জিমনেশিয়ামের সামনের স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে। আর মোড়ের পশ্চিম পাশের দোকানগুলো বর্তমান অবস্থান থেকে সামান্য পেছনে সরিয়ে দেওয়া হবে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) শেষ হয়েছে প্রশাসনের বেধে দেওয়া সময়। ফলে নিজেদের আয়ের একমাত্র উৎস নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জব্বার মোড়ের পূর্ব পাশের জব্বার হোটেল, মুদি দোকান, লাইব্রেরি, সেলুনসহ বিভিন্ন স্থাপনার অসহায় মালিকরা।
দোকান ভাঙা নিয়ে জব্বার হোটেলের মালিক মাহবুব আলম আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর দোকান এইটা, এখন রাস্তার ওই পাশে জিমনেশিয়ানমের সামনে যেতে হচ্ছে। দোকানটা বসার কথা মিলনের হোটেল আর জিমনেশিয়াম- এ দুইটার মাঝামাঝিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের হলগুলোর ছাত্ররা সাধারণত এ পাশের দোকানগুলোতে খাবার খেয়ে থাকে। আর পশ্চিম পাশের হলগুলোর ছাত্ররা রাস্তার অপর পাশে খায়। এখন যদি সব দোকান এক পাশে সরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে পূর্ব পাশের ছাত্ররাই মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
তিনি বলেন, “আমি করোনার পরে দোকানটা নিয়েছি। শুরুতে ২-৩ লাখ টাকা লোকসান গুনেছি। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে ব্যবসা দাঁড় করাতে প্রায় দুই বছর লেগেছে। এখন আবার নতুন জায়গায় গেলে কতদিনে জমে উঠবে বলা কঠিন। আগে যেমন সময় পেয়েছি, এবার তা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেওয়া সময় ও ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দোকান সরানোর জন্য আমাদের মাত্র ১ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন দোকান তো হুট করে হয় না। তিন-চার মাস সময় দিলে আমরা প্রস্তুতি নিতে পারতাম। এখন সময় নেই, জায়গা নেই, দোকান কোথায় বসাব, সেটাও নিশ্চিত না।”
রাস্তার একই পাশে থাকা এক মুদি দোকানদার বলেন, “আমাদের দোকান এখন রাস্তার অন্য পাশে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ওখানে গিয়ে কীভাবে দোকান চালাব, বুঝতে পারছি না। প্রথমত, ওই পাশে তেমন বেচাকেনা হয় না। দ্বিতীয়ত, আমার কাছে নতুন করে দোকান গড়ার মতো টাকাও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে আমাদের কোনো ক্ষতিপূরণও দেওয়া হচ্ছে না। এখন নিজের খরচে পুরনো দোকান ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। আমরা বলেছিলাম, দোকান পেছনে সরিয়ে দিলে খুশি হতাম। কিন্তু রাস্তার একদম অন্য পাশে নিয়ে যাওয়া হলে ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাবে, সেই চিন্তায় আছি।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.
ঢাকা/লিখন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
আজ সারাদেশে বিক্ষোভ করবে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা
ছয় দফা দাবিতে আজ রোববার সারাদেশে সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করবেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল শনিবার কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ফেসবুক পেজে এই কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানানো হয়।
ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, রোববার (২৭ এপ্রিল) সারাদেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে একযোগে বিক্ষোভ মিছিল পালিত হবে। পূর্বে প্রদানকৃত সব নির্দেশনা অব্যাহত থাকবে বলে ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো-
প্রথমত, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
তৃতীয় দাবি, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
আর ষষ্ঠ দাবি, পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতিতে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ কোটার রায় বাতিলসহ ছয় দাবি আদায়ে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছেন চার লাখের বেশি পলিটেকনিক শিক্ষার্থী। প্রথম দিকে স্মারকলিপি, মানববন্ধন, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করলেও গত ১৬ এপ্রিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। একই দিন সারাদেশেও অবরোধ হলে আলোচনায় আসে আন্দোলন।