দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ১২৫ পয়েন্ট বা প্রায় আড়াই শতাংশ কমে গেছে। তাতে সূচকটি ছয় মাসের ব্যবধানে আবারও ৫ হাজার পয়েন্টের মাইলফলকের নিচে নেমে এসেছে। গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৭৩ পয়েন্টে। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ২৮ অক্টোবর ডিএসইএক্স সূচকটি ৪ হাজার ৮৯৯ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।

এদিকে গত ৯ কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের প্রতিদিনই ডিএসইতে সূচক কমেছে। সূচকটি ৫ হাজার পয়েন্টের মাইলফলকের নিচে নেমে আসায় নতুন করে বাজারে আবারও আতঙ্ক ভর করেছে। এ অবস্থায় বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী লেনদেন থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। ফলে লেনদেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহ শেষে ঢাকার বাজারের লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৪ শতাংশ কমেছে। ডিএসইতে গত সপ্তাহ শেষে দৈনিক গড় লেনদেন কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪৪ কোটি টাকায়। আগের সপ্তাহে এই বাজারে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৩৯৯ কোটি টাকার। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ৫৫ কোটি টাকা বা প্রায় ১৪ শতাংশ।

ঢাকার বাজারে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া ৩৯৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩২৪টি বা ৮২ শতাংশেরই দাম কমেছে। দাম বেড়েছে ৫৭টির বা ১৪ শতাংশের, আর অপরিবর্তিত ছিল ১৫টির বা ৪ শতাংশের। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ছাড়া সব খাতের কোম্পানিরই দরপতন হয়েছে গত সপ্তাহে। ফলে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি ছাড়া কোনো শেয়ারে বিনিয়োগ করে লাভের দেখা পাননি বিনিয়োগকারীরা। সার্বিকভাবে বাজারে রিটার্ন ছিল ২ শতাংশের বেশি ঋণাত্মক।

মন্দা বাজারে গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি শাহজিবাজার পাওয়ার। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৬ টাকা বা প্রায় ১৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ টাকা ৪০ পয়সায়। মূল্যবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল একই খাতের কোম্পানি এনার্জিপ্যাক পাওয়ার। এটির শেয়ারের দাম ৫ দিনে ২ টাকা ৭০ পয়সা বা ১৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ টাকা ৪০ পয়সায়।

গত সপ্তাহে লেনদেনে শীর্ষ অবস্থানে ছিল বিচ হ্যাচারি। গত সপ্তাহে বাজারের মোট লেনদেনের প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশই ছিল কোম্পানিটির দখলে। প্রতিদিন গড়ে কোম্পানিটির প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যদিও সপ্তাহ শেষে দাম কমার শীর্ষে ছিল কোম্পানিটি। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সাড়ে ৩৮ টাকা বা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৫৮ টাকা ৩০ পয়সায়। আগের সপ্তাহে যার দাম ছিল প্রায় ৯৭ টাকা।

টানা দরপতনের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে রাজধানীর মতিঝিলে বিক্ষোভ করেছেন একদল বিনিয়োগকারী। তাঁরা দরপতন ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের(বিএসইসি) নেতৃত্বেরও অপসারণ দাবি করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল নদ ন অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধান করতে গিয়ে নতুন সমস্যা

শেয়ারবাজারে মার্জিন অ্যাকাউন্টে মূলধনি লোকসানি হিসাবগুলোর কী হবে এবং বিনিয়োগকারীদের জমা অর্থের বিপরীতে সুদ আয় কে পাবে– তার সমাধানে উদ্যোগী হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তবে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধান করতে গিয়ে বিএসইসি নতুন সমস্যা তৈরি করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএসহ সংশ্লিষ্টরা এমনটি জানিয়েছেন। 
তারা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের জমা করা অর্থের সমন্বিত ব্যাংক হিসাবের (সিসিএ) সুদ বাবদ আয় কে পাবে, সে বিষয়ে সমাধান দিতে গিয়ে বিএসইসি নতুন সংকট ও বিতর্ক তৈরি করছে। গত কমিশন এ আয়ের শতভাগ বিনিয়োগকারীদের ফেরত দিতে বলেছিল, যার বাস্তবতা বা বাস্তবায়ন উভয়ই ছিল অসম্ভব। বর্তমান কমিশন বলছে, সিসিএ থেকে সুদ আয়ের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিলে জমা দিয়ে বাকি ৭৫ শতাংশ বিনিয়োগ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে ব্যয় করতে হবে। আবার এ অর্থ আয় খাতে নেওয়া যাবে না।

কমিশনের এ আদেশ ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে মনে করেন প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি সমকালকে বলেন, প্রথমত সুদ আয়কে ‘অন্যান্য আয়’ ধরতে হবে, যা আন্তর্জাতিক আর্থিক রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড। তাছাড়া সুদ আয় অ্যাকাউন্টে জমার আগেই উৎসে ১০ শতাংশ কর কর্তন করে এনবিআর। আয়ের ক্ষেত্রে বিএসইসির এমন আদেশ সাংঘর্ষিক এবং বাস্তবায়নযোগ্য নয়।

ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, বিশ্বের সব দেশে সিসিএ অ্যাকাউন্টের সুদ আয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। বিনিয়োগকারীরা কখনও তা দাবি করেননি। গত নভেম্বরের বৈঠকে বর্তমান কমিশন বিষয়টি মেনে নিয়েছিল। এতদিন পর কেন ভিন্ন নিয়ম করতে যাচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে কমিশনের কাছে বাস্তবতা পুনরায় তুলে ধরা হবে। 
মার্জিন অ্যাকাউন্টে মূলধনি লোকসান (নেগেটিভ ইক্যুয়িটি) ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্যতে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে বিএসইসির কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ প্রস্তাব এক বছরের জন্য ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ব্রোকারদের। ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, সবা সঙ্গে আলোচনা করে ২০৩০ সালের মধ্যে ‘নেগেটিভ ইক্যুয়িটি’ শূন্যে নামাতে এ বছর থেকে কাজ শুরুর প্রস্তাব দিয়েছিলেন তারা। প্রস্তাবটি গ্রহণ না করে কমিশন লোকসানের বিপরীতে প্রভিশনিংয়ে এক বছর ছাড় দিয়েছে। আর ‘কেস-টু-কেস’ সিদ্ধান্ত নিতে জুনের মধ্যে আলাদাভাবে পরিকল্পনা চেয়েছে। সমস্যা হলো- ‘নেগেটিভ ইক্যুয়িটি’ সমস্যায় আটকে আছে প্রায় দেড়শ ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক। এত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করে কমিশন চলতি বছরের মধ্যে পৃথক পৃথক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। পারলেও তার বাস্তবায়ন এ বছর থেকে শুরু হবে কিনা, প্রশ্ন তাঁর।

শেয়ারবাজারে দীর্ঘ মন্দাবস্থার জন্য আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘ অমীমাংসিত ইস্যুর দ্রুত সমাধান প্রয়োজন মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের এমডির মতে, আইপিও খরা কাটানো, মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ১০ বছরের বেশি থাকবে কিনা, বেক্সিমকো এবং ইসলামী ব্যাংকের ফ্লোর প্রাইস কতদিন থাকবে, বিএফআইইউ যেসব বিও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে, তার কী হবে– এসব বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসা উচিত। 
ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান আরও বলেন, শেয়ারবাজার অত্যন্ত সংবেদনশীল বাজার। এখানে একটি ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত যেমন বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, তেমনি বিলম্বিত সিদ্ধান্তের ফলও ভালো হয় না। কমিশনের উচিত, সংবেদনশীলতাকে আমলে নিয়ে কাজ করা। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধান করতে গিয়ে নতুন সমস্যা
  • পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ১৩ হাজার ১৯ কোটি টাকা
  • ডিএসইতে পিই রেশিও কমেছে ১.৮৮ শতাংশ
  • স্বামীকে ১০ কোটি টাকার শেয়ার উপহার দিলেন স্ত্রী
  • আট মাসে ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ৮০২ পয়েন্ট
  • মুস্তাফিজকে ছাড়িয়ে রেকর্ডবুকে বুমরাহ