সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় দম্পতি নিহত
Published: 26th, April 2025 GMT
রাজধানীর উত্তরা কোর্টবাড়ি এলাকায় সেলফি তোলার সময় ট্রেনের ধাক্কায় এক দম্পতি নিহত হয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দু’জন হলেন মাসুম মিয়া (২৫) ও তার স্ত্রী ইতি খাতুন (১৯)।
দুর্ঘটনার পর পথচারীরা মুমূর্ষু অবস্থায় মাসুমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আর ঘটনাস্থলেই মারা যান ইতি।
প্রত্যক্ষদর্শী আল ইসলাম শুভ বলেন, সন্ধ্যার দিকে তারা দু’জন হাত ধরাধরি করে যাচ্ছিল। আবার মোবাইল ফোন দিয়ে সেলফি তুলছিল। হঠাৎ গাজীপুরগামী ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই নারী। আর আহত অবস্থায় ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো.
রেলওয়ের থানার বিমানবন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলী জানান, উত্তরা কোর্টবাড়ি এলাকার রেললাইনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছিলেন ওই দম্পতি। এ সময় কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে তাদের। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ইতি নামের ওই নারী। আর পথচারীরা ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত
দেশে ছোট-বড় ইস্পাত কারখানা অর্ধশত। এর ৬২ শতাংশ চট্টগ্রামে। শুধু ইস্পাত নয়; গার্মেন্ট সেক্টরেও ঢাকার পরে অবস্থান চট্টগ্রামের। সংকটে পড়ে গত সাত মাসে এসব কারখানার ৫০টি বন্ধ হয়ে গেছে। আর বিনিয়োগের পথে থাকা শতাধিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম থমকে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট এবং দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে শিল্পকারখানায়; বিশেষত টেক্সটাইল, সিরামিক ও ইস্পাত কারখানা। এগুলো গ্যাসনির্ভর। তাই গ্যাসের সরবরাহ ঠিকমতো না পাওয়া, কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় গ্যাসের চাপ না পাওয়া এবং দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
২০২৩ সালে শিল্পে গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৭৮ শতাংশ। চলতি মাসে (১৩ এপ্রিল) নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাসের দাম আরও ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, এতে নতুন বিনিয়োগকারীরা পিছিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি পুরোনো শিল্পমালিকরাও চাপে পড়েছেন। কারণ অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করলে তাদেরও গুনতে হবে বাড়তি দাম।
এর বাইরে গত ১৪ বছরে দেশে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৯ বার। এ সময়ে বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ আর গ্রাহক পর্যায়ে বেড়েছে ৯০ শতাংশ। সেটিও শিল্প উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম সমকালকে বলেন, সিস্টেম লস না কমিয়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে। এতে আবাসিকের গ্রাহক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে শিল্প মালিকদের। সিস্টেম লসের দায় ভোক্তার ওপর চাপানো অন্যায়। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করা দরকার। তাহলে কিছু দিন পরপর দাম বাড়ানোর চাপ আর নিতে হবে না গ্রাহককে।
বিইআরসি ১৩ এপ্রিল নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিটে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা করেছে। শিল্পে নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে (ক্যাপটিভ) ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ছিল ৩১ টাকা ৫০ পয়সা। এটি বেড়ে হয়েছে ৪২ টাকা। এখন যত গ্যাস সংযোগ অনুমোদন করা হবে, তাদের বাড়তি দাম দিতে হবে। এ জন্য হঠাৎ করে শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে।
জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুল বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম যেভাবে বাড়ছে, সেভাবে সেবার মান বাড়ছে না। বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লেও কিছু দিন পরপর দাম বাড়ছে। চাহিদা মতো মিলছে না গ্যাসও। আবার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা হলে তার প্রভাব পড়ছে চট্টগ্রামের শিল্পকারখানায়। এসব নিয়ে দায়িত্বশীলদের গভীরভাবে ভাবতে হবে। তা না হলে ক্রমবর্ধমান উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে বন্ধ হয়ে যাবে ছোট কারখানাগুলো।
বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, যে পদ্ধতিতে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটা ঠিক না। আমদানি ও সরবরাহকারী পর্যায়ে দুই দফায় ভ্যাট, পরিচালন খরচ ও উন্নয়ন খরচ যুক্ত করে দাম নির্ধারণ করছে। দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের দামও। সব চাপ দেওয়া হচ্ছে ব্যবসায়ীদের ওপর। অথচ সিস্টেম লসের নামে গ্যাস ও বিদ্যুৎ চুরি ঠেকাতে পারছেন না দায়িত্বশীলরা। তাদের অনিয়ম ও অদক্ষতার দায় নিতে হচ্ছে ১৬ কোটি মানুষকে। কারণ পণ্য উৎপাদনের ব্যয় বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবে তার প্রভাব পড়ে দেশের জনগণের ওপর।
নতুন চ্যালেঞ্জে ইস্পাত কারখানা
মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড কনসালটিংয়ের প্ল্যাটফর্ম বিগমিন্টের তথ্য অনুসারে, দেশে ছোট-বড় ইস্পাত কারখানার মধ্যে চট্টগ্রামে ৬২ এবং ৩২ শতাংশ ঢাকায়। দফায় দফায় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে এসব ভারী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। কেএসআরএমের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম বলেন, এক মিনিটের জন্যও ইস্পাত কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রাখা যায় না। তাই চাহিদা কমে গেলেও কারখানা সচল রাখতে হয়। এর মধ্যে কয়েক দফা বেড়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম। বাড়ছে কাঁচামালের দামও। এমন নানা কারণে গত দুই বছরে আমাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে অন্তত ২০ শতাংশ।
প্রতিদিন চার হাজার টন রড উৎপাদনক্ষমতার আবুল খায়ের স্টিলও মোকাবিলা করছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক ইমরুল কাদের ভূঁইয়া বলেন, উৎপাদন খরচ যেভাবে বাড়ছে, সেভাবে বাড়ছে না রডের দাম। কারণ, এটি বেশি বেড়ে গেলে আবার চাহিদা কমে যাবে। এমন উভয় সংকটের মধ্যে ব্যবসা চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
সার উৎপাদন ব্যাহত
আনোয়ারায় রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) গ্যাস সংকটে গত শুক্রবার সকাল থেকে সার উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। চালু থাকলে দৈনিক ১ হাজার ২০০ টন ইউরিয়া উৎপাদন করতে সক্ষম এই প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি বার্ষিক ৩ লাখ ১০ টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন করতে পারে সিইউএফএল। এর আগে কয়েক দফা উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছিল কাফকো ও ডিএপি সার কারখানাকেও।
সিইউএফএলের উৎপাদন বিভাগের প্রধান উত্তম চৌধুরী বলেন, ১১ এপ্রিল সকাল ৭টা থেকে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ। গ্যাস সংকটের কারণে আমরা এখনও উৎপাদনে যেতে পারিনি।
সিইউএফএলে প্রতিদিন গড়ে ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দরকার হয়। এক দিন বন্ধ থাকলে কারখানাটিতে গড়ে ৩ কোটি টাকার ইউরিয়া সার উৎপাদন বন্ধ থাকে।
চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ তদারকি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) আমিনুর রহমান এর আগে বলেছেন, চট্টগ্রামে দৈনিক ৩১২ মিলিয়ন থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে পাওয়া যায় ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ঘাটতি থাকলেও সার কারখানায় দেওয়া হয় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস। বিদ্যুৎকেন্দ্রে যাচ্ছে ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। সিএনজি ফিলিং স্টেশনে দিতে হচ্ছে ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট। বাকি গ্যাস দেওয়া হয় কেজিডিসিএলের ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহককে। গৃহস্থালি ছাড়াও ইস্পাত, কাচ, সিমেন্ট, শিপ ব্রেকিং, ঢেউটিন, গার্মেন্টের মতো ভারী শিল্প খাতেও সংযোগ রয়েছে।
সংকট বাড়ছে পোশাক কারখানায়
পোশাক মালিকরা বলছেন, উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তারা তাল মেলাতে পারছেন না। গত সাত মাসে এমন বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যা অন্তত ৫০টি।
তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানায়, গ্যাসের চাপ কম থাকলে টেক্সটাইল কারখানায় রঙের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। আবার বিকল্প জ্বালানি দিয়ে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে গেলে খরচ বেড়ে যায় দ্বিগুণের বেশি।
গত সাত মাসে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার মধ্যে বিজিএমইএর আওতাধীন ১৮টি, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) আওতাধীন দুটি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) একটি, বেপজার ৯টি ও অন্য সংগঠনের সদস্যপদে থাকা ২২টি কারখানা রয়েছে।
নতুন শতাধিক প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ
আনোয়ারার সাদ মুসা শিল্প পার্কে বিনিয়োগ করবে ৩২টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠান সেখানে উৎপাদন শুরু করেছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির নতুন সিদ্ধান্তে তাদের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। আবার মিরসরাইয়ের শিল্পনগরে হচ্ছে দেশের প্রথম অ্যালুমিনিয়াম ইনগট ও কপার ইনগট তৈরির কারখানা। বাংলাদেশ-জাপান যৌথ বিনিয়োগে কারখানাটি হবে ৫০ একর জমির ওপর। কাঁচামাল আসবে জাপান থেকে। এ জন্য বাংলাদেশি শিল্প গ্রুপকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে স্টার অ্যালাইড ভেঞ্চার লিমিটেড। বিপদে পড়বে এই প্রতিষ্ঠানও।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কুনমিং আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি এখানে ১৯ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। এ জন্য তাদের এক হাজার একর জমি দেওয়া হয়েছে। এই বিনিয়োগে থাকছে বাংলাদেশি ১৭টি কোম্পানির জোট ‘স্টার কনসোর্টিয়াম’। মিরসরাইয়ের শিল্পনগরে সবচেয়ে বড় প্রকল্প এনেছে পিএইচপি স্টিল ওয়ার্কস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগের প্রস্তাব প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া রুরাল পাওয়ার কোম্পানি ১২০ কোটি ডলার, বসুন্ধরা দেড়শ কোটি ডলার, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ৪০ কোটি, এসিআই ৩১ কোটি, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ২৬ কোটি এবং অনন্ত অ্যাপারেলস ২২ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব এনেছে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর নতুন সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এসব প্রতিষ্ঠানও।