সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় এনায়েতপুর কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালে খাতা দেখতে না দেওয়ায় সহপাঠীদের মারধরে আহত ইমন হোসেন (১৬) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী মারা গেছে। গত শুক্রবার খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল তাকে মারধর করা হয়েছিল। 

নিহত ইমন উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের ইমদাদুল মোল্লার ছেলে। সে স্থানীয় খুকনী উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। ঘটনার ১০ দিন অতিবাহিত হলেও দুটি থানার সীমানা এলাকা হওয়ায় এ ঘটনায় শনিবার বিকেল পর্যন্ত মামলা নেয়নি পুলিশ। এদিন পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে বেলকুচি থানায় মামলা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। 

নিহত ইমনের বাবা ইমদাদুল মোল্লা জানান, গত ১৭ এপ্রিল এনায়েতপুর ইসলামী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা চলাকালে কয়েকজন সহপাঠী ইমনের খাতা দেখে পরীক্ষা দিতে চায়। এতে সে রাজি হয়নি। পরদিন শুক্রবার দুই সহপাঠী তাকে ডেকে নিয়ে যায়। পাশের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর নতুনপাড়ায় নিয়ে গিয়ে কয়েকজন মিলে তাকে মারধর করে।

মারধরে ইমনের মাথার বাম পাশের খুলি ভেঙে যায়। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। বুধবার তাকে বাড়িতে আনা হয়েছিল। শুক্রবার অবস্থার অবনতি হলে তাকে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই সে মারা যায়।

ইমদাদুল মোল্লা বলেন, ‘আমার ছেলে ভদ্র এবং মেধাবী ছিল। নকল করতে না দেওয়ায় তাকে এভাবে হত্যা করা হবে, কখনও ভাবিনি।’ অভিযুক্তদের শাস্তি দাবির পাশাপাশি দুই থানা মামলা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

খুকনী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তোতা মিয়া বলেন, মারধরের ঘটনার পর কয়েকবার এনায়েতপুর ও বেলকুচি থানায় মামলা করতে যান স্বজনরা। দুই থানার সীমানা জটিলতা দেখিয়ে পুলিশ মামলা নেয়নি। এনায়েতপুর বলছে বেলকুচিতে মামলা হবে। আর বেলকুচি বলছে মামলা হবে এনায়েতপুরে থানায়।

এনায়েতপুর থানার ওসি রওশন ইয়াজদানি শনিবার বিকেলে বলেন, শিক্ষার্থী ইমনের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছে। মরদেহ উদ্ধারের পর শুক্রবার রাতে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশ সুপার বিষয়টি জেনে বেলকুচি থানায় মামলা করার জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

বেলকুচি থানার ওসি জাকেরিয়া ইসলাম শনিবার বিকেলে বলেন, শিক্ষার্থী ইমন বেলকুচিতে মারধরে আহত হলেও মারা যায় এনায়েতপুরে। তাদের বাড়ি এনায়েতপুর থানার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সেখানে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ সুপার বেলকুচিতে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন। দাফন শেষে স্বজনরা এলে অভিযোগ নেওয়া হবে। সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বেলকুচি থানায় মামলা করার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম রধর শ ক রব র ব লক চ র র পর পর ক ষ ইমন র সহপ ঠ ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্যাশন কোম্পানির আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরতের দাবিতে অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক ফ্যাশন কোম্পানি মোজাইক ব্র্যান্ডস লিমিটেড কর্তৃক আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত দেওয়াসহ পাঁচ দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ২২ কারখানার শ্রমিক ও প্রতিনিধিরা। শনিবার রাজধানীর গুলশানে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনের সামনে তাঁরা সমাবেশ করেন। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে হাইকমিশনের এক কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়।

দাবিগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে মোজাইক ব্র্যান্ডসের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও দেউলিয়া অবস্থায় ব্যবসা পরিচালনার জন্য ফৌজদারি তদন্ত শুরু করা, আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া, জড়িতদের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও ২২টি কারখানাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া। বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব খবর জানিয়েছে।

সমাবেশে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশের শ্রমিকেরা আশা করে শ্রমিকদের পাওনা ও জীবন-জীবিকা নিশ্চিতে এবং ২২ কারখানা রক্ষায় হাইকমিশনারের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া সরকার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। মোজাইক ব্র্যান্ডসকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এনে শ্রমিক ও ২২ কারখানার পাওনার প্রায় ২৫০ কোটি টাকা দ্রুত ফেরত আনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি মোজাইক ব্র্যান্ডস লিমিটেডের প্রতারণামূলক ব্যবসার কারণে বাংলাদেশের ২২ কারখানার শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে উল্লেখ করে তাসলিমা আখতার বলেন, গত তিন বছর ধরে মোজাইক ব্র্যান্ডস তাদের বকেয়া পরিশোধ না করায় জাস অ্যাপারেলস কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি অন্য কারখানাগুলো মজুরি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। অবিলম্বে কারখানাগুলোর পাওনা টাকা ফেরত আনতে হবে এবং ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি মোজাইক ব্র্যান্ডসের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত শুরু করতে হবে।

২২ কারখানার ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সহসভাপতি অঞ্জন দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহিম চৌধুরী, ২২ কারখানার শ্রমিক প্রতিনিধি মইন আহমেদ, নারী শ্রমিক প্রতিনিধি রিবন বেগম প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে পাঁচ দফা দাবির স্মারকলিপি পেশ করেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার ও ২২টি গার্মেন্ট কারখানার ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের প্রতিনিধি আবদুল মালেক। অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। তিনি শ্রমিক নেতাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। তবে এ জন্য জটিল আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে বলে তিনি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ