ত্রুটি সারাতে ৫ মিনিট, কর্মীর পৌঁছাতে লাগল দেড় ঘণ্টা
Published: 26th, April 2025 GMT
ঢাকার মেট্রোরেল দৈনিক চার লাখের বেশি যাত্রী পরিবহন করে—এই তথ্য বড় করেই প্রচার করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হুটহাট কারিগরি ত্রুটির কারণে চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে যাত্রীদের সময়মতো তথ্য দেয় না মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। এমনকি যে সমস্যা ১০ মিনিটে সমাধান করা সম্ভব, অব্যবস্থাপনার কারণে তা–ও দেড় ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে।
আজ শনিবার এমনই এক ছোট ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকে। এই দেড় ঘণ্টা যাত্রীরা কোনো তথ্যই জানতে পারেননি। স্টেশনগুলোর মাইকে বন্ধ থাকার কথা বলা হলেও কখন চালু হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারে না। স্টেশনের বাইরে থাকা যাত্রীরা থাকছেন পুরো অন্ধকারে।
ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে। রয়েছে ফেসবুক পেজ। ফেসবুক পেজে ফলোয়ার ১ লাখ ৬২ হাজার। আজ মেট্রোরেল বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং তা চালুর পর একটা ঘোষণা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। ডিএমটিসিএলের ফেসবুক পেজে সর্বশেষ পোস্ট ১৩ এপ্রিলের। তাতে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন দুটি বন্ধ থাকার ঘোষণা রয়েছে। ওয়েবসাইটে অস্বাভাবিকভাবে যাত্রীসেবা বিঘ্নিত হওয়ার কোনো তথ্য থাকে না।
ডিএমটিসিএল রাষ্ট্রায়ত্ত একটি কোম্পানি। এর প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জাতীয় বেতন স্কেলের তুলনায় ২ দশমিক ৩ গুণ বাড়তি বেতন পেয়ে থাকেন। ডিএমটিসিএলের নিচের দিকের কর্মীরা স্থায়ী নিয়োগ পাওয়া। গুরুত্বপূর্ণ ও উচ্চ পদে নিয়োগ পাওয়াদের একটা অংশ সরকারের প্রশাসন ও অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তা। আরও কিছু কর্মকর্তা রেল, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর থেকে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা। মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ কিংবা অন্য কোনো ত্রুটি দেখা দিলে প্রথমেই অপারেশন বা পরিচালন বিভাগ জানার কথা। কিন্তু এই বিভাগের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম বা যাত্রীদের তথ্য সরবরাহ করা হয় না।
আজ মেট্রোরেল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অপারেশন বিভাগের পরিচালক ও রেলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে বেশ কয়েকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। একই বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইফতিখার হোসেনও সাড়া দেননি। ডিএমটিসিএলের স্থায়ী জনসংযোগ কর্মকর্তা নেই। সংস্থাটির উপব্যবস্থাপক (প্রশাসন) একাধারে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এবং জনসংযোগের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁকে ফোন করা হলে তিনি জানান, বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, তিনিও মেট্রোরেল বন্ধ থাকার বিষয়টি অন্য মাধ্যমে জেনেছেন। এরপর বিদ্যুৎ বিভাগকে যুক্ত করেছেন। ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
ছোট সমস্যাতেও দীর্ঘ বিলম্বমেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সূত্র বলছে, বিজয় সরণি এলাকার সাবস্টেশন থেকে মেট্রোরেল লাইনে বিদ্যুৎ গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায় বিকেল ৫টা ৬ মিনিটে। দু-এক মিনিটের মধ্যেই কেন্দ্রীয়ভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায় যে বিজয় সরণিতে লাইনে বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। এর জেরে শাহবাগ ও শেওড়াপাড়া সাবস্টেশন থেকেও বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায় লাইনে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে এভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে গেলে কারিগরি কাজে যুক্ত কর্মীদের সশরীর গিয়ে তা পুনরায় চালু করতে হয়। বড় কোনো সমস্যা হলে মেরামত করতে হয়। নতুবা পুনরায় সংযোগ চালু করলেই চলে। এর জন্য বড়জোর ১০ মিনিট ট্রেন চলাচল বিঘ্ন হতে পারে। কিন্তু এর জন্য মেট্রোরেল পুনরায় চালু করতে সময় লেগে যায় প্রায় ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিট। এটাকে অস্বাভাবিক বলছেন মেট্রোরেল চলাচলে যুক্ত কর্মকর্তাদের কেউ কেউ।
এদিকে মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। রাজধানীর শাহবাগসহ কয়েকটি স্টেশনে টিকিট ফেরত নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। স্টেশনগুলোতে টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। এরপর অনেক যাত্রী স্টেশন থেকে বেরিয়ে যান।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মিরপুর যাওয়ার জন্য কারওয়ান বাজার স্টেশনে ছিলেন কামরুল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কখন ট্রেন চালু হতে পারে, সেই বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না স্টেশনের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা।
স্থায়ী কার্ডে যাতায়াত করা অনেকে ফোন দিয়ে জানান, তাঁরা একবার কার্ড পাঞ্চ করে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করেছেন। বেরিয়ে গেলে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে কি না, সেই বিষয়ে কোনো তথ্য পাচ্ছেন না।
সংশ্লিষ্ট কর্মীদের সশরীর এসে বিদ্যুৎ পুনরায় চালু করার জন্য দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লাগার পেছনে কিছুটা অব্যবস্থাপনার তথ্য পাওয়া যায়। ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, স্টেশনের বাতি, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য কাজ চালানো হয় অক্সিলারি বা সহযোগী বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে। আর বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে মেট্রো ট্রেন চালানোর বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এর জন্য উত্তরা উত্তর, উত্তরা দক্ষিণ, মিরপুর ১১, শেওড়াপাড়া, বিজয় সরণি, শাহবাগ ও মতিঝিলে ছয়টি সাবস্টেশন রয়েছে।
কিন্তু ত্রুটি দেখা দিলে সশরীর ঘটনাস্থলে গিয়ে তা চালু করা কিংবা মেরামতের জন্য যেসব কর্মী রয়েছেন, তাঁরা বসেন উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেলের ডিপোতে। ফলে উত্তরা থেকে সড়কপথে যানজট ঠেলে কর্মী বিজয় সরণি এসে বিদ্যুৎ চালু করেন এবং এরপর ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এতেই প্রায় দুই ঘণ্টার কাছাকাছি সময় লেগে যায়।
মেট্রোরেল পরিচালনায় যুক্ত দুজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, স্টেশনের বাতি কিংবা শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ অন্যান্য বিদ্যুতের সমস্যা হলে তা সমাধানের জন্য কয়েকটি স্টেশন পরপরই কর্মী রাখা হয়েছে। কিন্তু মেট্রোরেলের মূল লাইনের ত্রুটি সারানোর জন্য উত্তরা ছাড়া অন্য কোথাও কর্মী নেই। অথচ মাঝখানে আগারগাঁও ও শাহবাগসহ আরও কিছু স্থানে এ ধরনের কর্মী রাখা হলে দ্রুত ত্রুটি সারিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু করা যায়।
ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, আজ ৫টা ৬ মিনিটে মেট্রোরেলের লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ৬টা ২৮ মিনিটের দিকে কারিগরি কর্মী ঘটনাস্থলে পৌঁছান। অর্থাৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছাতেই সময় লেগে যায় ১ ঘণ্টা ২২ মিনিট। ঘটনাস্থলে কর্মী পৌঁছানোর পাঁচ মিনিটের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন শুরু হয়। দীর্ঘ বিরতির সময় ট্রেনগুলো একেক স্থানে আটকা পড়ে। সেগুলো পুনরায় প্রস্তুত করে চালু করতে করতে সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিট বেজে যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারিগরি কর্মী ঘটনাস্থলে গিয়ে পুনরায় চালুর (রিস্টার্ট) পরই বিদ্যুৎ সঞ্চালন শুরু হয়ে যায়। আর যদি পুনরায় চালু করলে সঞ্চালন না হতো, তাহলে বড় ত্রুটি ধরা পড়ত এবং মেরামতের প্রয়োজন হতো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোনো একটি সাবস্টেশন থেকে সাধারণ কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে অন্য সাবস্টেশন থেকে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরবরাহ করা হয়। এতে মেট্রোরেলের চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটে না। কিন্তু কোনো অস্বাভাবিক কারণে, অর্থাৎ কারিগরি ত্রুটি কিংবা সার্কিট পুড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে অন্য সাবস্টেশন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় না। কারণ, সতর্কতার অংশ হিসেবে ত্রুটিপূর্ণ স্টেশনের দুই পাশের আরও দুটি সাবস্টেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ আজ শেওড়াপাড়া, বিজয় সরণি ও শাহবাগ সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ থাকে। কেন বিজয় সরণি সাবস্টেশনের বিদ্যুৎ মেট্রোরেল লাইন গ্রহণ করতে পারছিল না, সেটির কারণ তাৎক্ষণিকভাবে ধরতে পারেনি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। তবে এর কারণ পরে বের করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
আরও পড়ুনবৈদ্যুতিক গোলযোগে মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগ৩ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব দ য ৎ সরবর হ কর মকর ত বন ধ থ ক সময় ল গ শ হব গ ত কর ম র জন য প রথম সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: পেঁপে ছাড়া ৫০ টাকার নিচে নেই কোনো সবজি
সরবরাহ কমের অজুহাতে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। অধিকাংশ সবজি কিনতে গুণতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সেই সঙ্গে দাম বেড়েছে মাছেরও। এতে অস্বস্তিতে পড়ছেন ক্রেতারা।
কয়েকজন ক্রেতা জানান, শীত মৌসুমের সবজি নিয়ে যে স্বস্তি ছিল, তা এখন আর নেই। বাজারে বেশিরভাগ সবজির দাম ৬০ টাকার ওপরে। কোনো কোনটির দাম একশো পেরিয়েছে।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি পটল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর চেয়ে কমে শুধু পেঁপে পাওয়া যাচ্ছে, তাও ৫০ টাকা কেজিতে। এছাড়া, করলা, বেগুন, বরবটি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।
সবচেয়ে বেশি দাম দেখা গেছে কাঁকরোলের। গ্রীষ্মকালীন এই সবজিটি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। সজনে ডাঁটা ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।
তবে ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদি পণ্যের দাম আগের মতোই আছে। পেঁয়াজের দামও কয়েক সপ্তাহ বেড়ে এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় আটকে আছে।
এদিকে, মাছের বাজারেও বাড়তি দাম দেখা গেছে। মা ইলিশ সংরক্ষণে নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ও চাষের মাছের সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এর মধ্যে, সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইলিশ ও চিংড়ির দাম।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ প্রতি পিস ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দাম হাঁকা হচ্ছে। অন্যদিকে, প্রতিকেজি চাষের চিংড়ি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, নদীর চিংড়ি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানান, স্বাভাবিক সময়ে এসব মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কম থাকে। এছাড়া কই, শিং, শোল, ট্যাংরা, চাষের রুই, তেলাপিয়া,পাঙাশ ও পুঁটি মাছও আগের চেয়ে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।
ঢাকা/সুকান্ত/রাজীব