কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার কিছু সময় পর এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল অখ্যাত সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। কিন্তু গতকাল শুক্রবার কাশ্মীরের বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে এবং আগের দাবির জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করেছে।

গোষ্ঠীটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেছে, টিআরএফকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়ানোর বিষয়টি মিথ্যা এবং কাশ্মীরি প্রতিরোধ আন্দোলনকে কলঙ্কিত করতে সাজানো একটি প্রচারের অংশ।

গোষ্ঠীটি আরও বলেছে, ‘পেহেলগামে হামলার কিছুক্ষণ পর আমাদের একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে সংক্ষিপ্ত এবং অনুমোদনহীন একটি বার্তা পোস্ট করা হয়েছিল। অভ্যন্তরীণ তদন্তের পর আমাদের কাছে এ কথা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে সমন্বিত সাইবার অনুপ্রবেশের ফলে এমনটি ঘটেছে, যা ভারতের ডিজিটাল যুদ্ধ কৌশলের একটি পরিচিত পদ্ধতি।’

গত মঙ্গলবার দুপুরে পেহেলগামের বৈসারানে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজন বিদেশি পর্যটকও রয়েছেন।

আরও পড়ুনপাকিস্তানি নাগরিকদের খুঁজে ফেরত পাঠাতে সব রাজ্য সরকারকে নির্দেশ অমিত শাহর২৫ এপ্রিল ২০২৫

সরকারি সূত্রগুলো দ্য হিন্দুকে জানিয়েছে, এ ঘটনায় আরও অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে কারও কারও অবস্থা গুরুতর। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। যদিও এখনো পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি।

কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা পর্যটকদের হত্যার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ভারত। সেসব ব্যবস্থার অন্যতম হচ্ছে পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করা। গতকাল পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা মানুষদের দেশত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে পাঞ্জাবের অমৃতসরের আটারি-ওয়াঘা স্থলপথ দিয়ে মোট ১৯১ জন পাকিস্তানি নাগরিক দেশে ফিরে গেছেন। এ নিয়ে ঘটনার পর থেকে মোট ২৮৭ পাকিস্তানি দেশে ফিরে গেছেন।

আরও পড়ুনকাশ্মীরে হামলা: কেবল সন্দেহের বশে কাশ্মীরের আরও দুই ব্যক্তির বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন৭ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীরে হামলা: ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ সম্পর্কে যা জানা গেল

ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে গত মঙ্গলবার যে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হয়েছে তার দায় স্বীকার করে আলোচনায় এসেছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)।

এই হামলায় কমপক্ষে ২৬ পর্যটক নিহত হন এবং আরও একাধিক ব্যক্তি আহত হন। হামলার খবর যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টেলিভিশনের পর্দায় ছড়িয়ে পড়েছে, তখন টেলিগ্রাম বার্তায় হামলার দায় স্বীকার করেছে সশস্ত্রগোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। সুত্র: আল-জাজিরা।

২০১৯ সালে কাশ্মীর অঞ্চলে স্বল্প-পরিচিতি সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। ভারত থেকে কাশ্মীরকে আলাদা করতে লড়াই করা সশস্ত্র বিদ্রোহীরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটকদের ওপর তেমন কোনো হামলা চালায়নি। 

হামলার প্রেক্ষাপট

মঙ্গলবার বিকেলে পেহেলগামের বৈসরণে ঘুরতে আসা পর্যটকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বন্দুকধারীরা পার্শ্ববর্তী জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। নিহতদের সকলেই পুরুষ এবং বহিরাগত পর্যটক ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ওই দিনই শ্রীনগরে পৌঁছান এবং গোটা অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীরা শোকবার্তা জানান এবং এই হামলার তীব্র নিন্দা জানান।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, এই জঘন্য হামলার পেছনে যারা আছে, তাদের কাউকেই ছেড়ে দেওয়া হবে না, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

তবে দায় স্বীকার করা সশস্ত্র গোষ্ঠী টিআরএফ এর হামলাকারীরা পলাতক রয়েছে।

টিআরএফ: একটি উত্থানশীল সশস্ত্র সংগঠন

‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) মূলত নতুন প্রজন্মের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠন। ২০১৯ সালে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বা ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির পর এই জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থেকে গোষ্ঠীটি নিজেদের পরিচিতি গড়ে তোলে। 

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, টিআরএফ আসলে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যা পাকিস্তান ভিত্তিক লস্কর-ই-তইবা ও হিজবুল মুজাহিদিনের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে। টিআরএফ তাদেরই ছদ্মবেশী রূপ, যা কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদের নামে ভারতে সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে।

টিআরএফের মূল দাবি

এদের মূল দাবি, কাশ্মীরকে ভারতের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনিক কাঠামোকে দুর্বল করতে তৎপর এই গোষ্ঠী। টিআরএফ এক বার্তায় জানিয়েছে, তারা বহিরাগতদের কাশ্মীরে স্থায়ী আবাসন অনুমোদনের বিরোধিতা করে। 

যদিও মঙ্গলবারের নিহতরা কেউ কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন না।

পূর্ববর্তী কার্যক্রম ও নিরাপত্তা হুমকি

২০২০ সাল থেকে টিআরএফ নিয়মিতভাবে টার্গেট কিলিং এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যার মতো হামলার দায় স্বীকার করে আসছে। এদের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে রাজনৈতিক কর্মী, অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা সদস্য এবং ভারত সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা ব্যক্তিরাই নিহত হয়েছে। 

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে টিআরএফকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করে।

২০২৪ সালের জুনে টিআরএফ জম্মুর রেয়াসি এলাকায় হিন্দু তীর্থযাত্রী বহনকারী একটি বাসে হামলার দায় স্বীকার করে। সেই হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত এবং ৩৩ জন আহত হন। হামলার পর বাসটি খাদে পড়ে যায়।

গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনটি বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে গোপন আস্তানায় অবস্থান করছে এবং ছোট অস্ত্র ব্যবহার করে আশেপাশের এলাকায় হামলা চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

পেহেলগামের এই হামলা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের কাশ্মীর নীতির ওপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। ২০১৯ সালের পর থেকে সরকার বারবার কাশ্মীরে ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতি’ ফিরে আসার দাবি করে আসছিল, যার অংশ হিসেবে পর্যটন উৎসাহিত করার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। হামলার পরদিন থেকেই পর্যটনখাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিপুল সংখ্যক পর্যটক তাদের বুকিং বাতিল করেন এবং এলাকাছাড়া করার জন্য ভিড় করেন। শ্রীনগর বিমানবন্দরের পথে যানজট সৃষ্টি হয় এবং বিমানের ভাড়া তিনগুণেরও বেশি বেড়ে যায়। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারত-পাকিস্তান নিজেরাই নিজেদের বিষয়গুলো মিটিয়ে ফেলবে: ট্রাম্প
  • পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার আন্তর্জাতিক তদন্ত চেয়েছে পাকিস্তান
  • পেহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার আন্তর্জাতিক তদন্ত চেয়েছে পাকিস্তান
  • কাশ্মীরে হামলা: ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ সম্পর্কে যা জানা গেল
  • কাশ্মীর হামলার পেছনে কারা এই ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’