স্থাপত্যবিদ্যার তরুণ শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে উদীয়মান তিন ভবিষ্যৎ স্থপতির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ‘কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড। আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর দূরদর্শিতা ও মেধার ভিত্তিতে তিনজন শিক্ষার্থীকে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় ষষ্ঠবারের মতো।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ স্থাপত্য ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক ও জনপথ এবং সেতু ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

শিক্ষার্থীদের উপস্থাপন করা বিভিন্ন প্রকল্প প্রদর্শন শেষে জুরি বোর্ডের বিবেচনায় প্রথম হয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) রিফাত আল ইব্রাহিম, দ্বিতীয় হয়েছেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিরা সারওয়াত ও তৃতীয় হয়েছেন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঁধন দাশ।

বিশেষ পুরস্কৃত করা হয় দুই প্রকল্প উপস্থাপককে। তারা হলেন-চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) খন্দকার মাহাতি ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারিয়া আহমেদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “কাজ করার জন্য আমাদের হাতে যে সময় আছে তা যথেষ্ট নয়। তবু আমরা কিছু কিছু কাজে হাত দিয়েছি নগরকে যানজটমুক্ত বাসযোগ্য করার জন্য। বিভিন্ন কাজে পেশাদারদের সম্পৃক্ত করার কাজও আমরা করে যাচ্ছি। উপযুক্ত জায়গায় উপযুক্ত ও যোগ্য ব্যক্তির নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “ঢাকা একটি চরিত্রহীন শহর। আমাদের মুগল ঐতিহ্য ছিল। সেটা আমরা ধরে রাখতে পারিনি। বাংলার আবহমান ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারিনি। আত্মপরিচয় ছাড়া টিকিয়ে থাকা সম্ভব না। স্থপতিরাই ঠিক করবেন আমাদের উপযোগী ও উপযুক্ত কোন ঐতিহ্যকে ধারণ করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে তরুণ স্থপতিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি) সভাপতি স্থপতি ড.

আবু সাঈদ এম আহমেদ।

তিনি বলেন, “কেএসআরএম-আইএবির যৌথ উদ্যোগে প্রতি বছর এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে নতুন পেশায় আগত সৃষ্টিশীলদের স্থাপত্য শিক্ষার মানোন্নয়ন হচ্ছে। তারা মনোযোগী হচ্ছে সৃজনশীল কাজে। প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে। শিক্ষার্থীর প্রতি বছর এমন দিনটির জন্য এক ধরনের অপেক্ষায় থাকে বলা যায়। যা তাদের চিন্তা ও মননকে শাণিত করে।

তিনি ধারাবাহিক ও সুন্দর আয়োজনের জন্য কেএসআরএম গ্রুপকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

কেএসআরএমের মহাব্যবস্থাপক (মার্কেট রিচার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) কর্নেল (অব.) আশফাকুল ইসলাম বলেন, “আমরা ধারাবাহিকভাবে ষষ্ঠবারের মতো কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড ভবিষ্যৎ স্থপতিদের হাতে তুলে দিতে পেরে আনন্দিত। উদীয়মান স্থপতিদের জন্য এটি একটি স্বপ্ন, দক্ষতা ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব বোধের স্বীকৃতি। আমরা দেখছি তরুণ স্থপতিরা তাদের কাজের মাধ্যমে একটি টেকসই, উদ্ভাবনী ও মাসবিক বাংলাদেশের কল্পনা রয়েছে।”

“কেএসআরলম ১৯৮৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন রড উৎপাদন ও সরবরাহ করে আসছে। আমরা বিশ্বাস করি দেশের সব স্থাপনা হবে দীর্ঘস্থায়ী ও  ভুমিকম্পন সহনশীল। কেএসআরএম রড ৫৫ লাখ সাইক্লিক লোডিং নিতে সক্ষম।”

জুরি বোর্ডের পক্ষে স্থপতি আসিফ মো. আহসানুল হক তার বক্তব্যে বলেন, “শিক্ষার্থীদের উপস্থাপনা করা প্রতিটি প্রকল্প অত্যন্ত সুন্দর ও সৃষ্টিশীল মননের সমন্বয়ে গড়া। প্রকল্পগুলো এতই দৃষ্টিনন্দন, সময়োপযোগী ও প্রাসঙ্গিক যে কোনটা রেখে কোনটা নির্বাচন করবো খুবই কঠিন। তবু এই কঠিন বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমাদের বিশ্লেষণের মাধ্যমে তিন জনকে নির্বাচিত করতে হয়েছে। জুরি বোর্ডের দৃষ্টিকোণ থেকে নিজ নিজ অবস্থানে প্রতিটি প্রকল্পই সেরা।”

স্বাগত বক্তব্য দেন অ্যাওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর স্থপতি সাকিব আহসান চৌধুরী।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইএবি সহ-সাধারণ সম্পাদক স্থপতি ড. মো. নওরোজ ফাতেমী, সম্পাদক (শিক্ষা) স্থপতি ড. মো. মারুফ হোসেন, সম্পাদক (প্রকাশনা ও প্রচার) স্থপতি মো. শফিউল আযম শামীম, কেএসআরএমের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম, উপ-মহাব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হক, নাজমুল হুদা, আলী কবির, উপ-ব্যবস্থাপক সৈয়দ তানভীরুল হাসান, ব্যবস্থাপক সাইফ মাওলা, প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা মিজান উল হক, মিথুন বড়ুয়া, মো. মুন রহমান মুন্নাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

‘কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ডস ফর ফিউচার আর্কিটেক্টস: বেস্ট আন্ডার গ্র্যাজুয়েট থিসিস’ কর্মসূচির আওতায় ১৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেরা গবেষণাপত্রের প্রকল্প প্রদর্শনীর মাধ্যমে জুড়িবোর্ড অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তদের নাম নির্বাচন করেন। কেএসআরএম ও  আইএবির সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে ২০১৯ সালে। চুক্তির আওতায় এবার ১৫ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ৪৪ গবেষণাপত্র প্রদর্শন করা হবে। রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে স্থপতি ইনস্টিটিউটে এসবের প্রদর্শনী হবে ২৭ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। এর মধ্যে নির্বাচিত তিন সেরা প্রকল্প উপস্থাপনকারী শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়।

ঢাকা/সাজ্জাদ/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প র জন য আম দ র উপস থ স থপত

এছাড়াও পড়ুন:

সারা রাত খুঁটিতে ভর দিয়ে ছেলের লাশের অপেক্ষায় বাবা

করাতকলে (স মিল) সামান্য বেতনের চাকরি করে ছেলেকে প্রকৌশলী বানিয়েছেন। চাকরিও পেয়েছিলেন প্রকৌশলী ছেলে। বাবা জহুর আহমেদ (৬৫) স্বপ্ন দেখছিলেন সচ্ছলতার। কিন্তু ছেলেকে ঘিরে তাঁর সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। সুখ–স্বাচ্ছন্দ্যের সব আশা গুঁড়িয়ে দিয়ে এল আদরের ছেলে মো. সোলাইমানের লাশ।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি কারখানার প্রকৌশলী মো. সোলাইমান (৩৩) গতকাল বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে একটি লরির চাপায় নিহত হন। ঘটনাস্থলেই নিহত এই প্রকৌশলীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ময়নাতদন্তের পর লাশ আনা হয় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের ভাটিয়ারী উত্তর বাজার এলাকায় নিহতের বাড়িতে। আর নিহত ছেলের অপেক্ষায় বাড়ির সামনে একটি খুঁটিতে ভর দিয়ে সারা রাত অপেক্ষায় ছিলেন বাবা জহুর আহমেদ। বাড়ির লোকজন-আত্মীয়স্বজন বুঝিয়েও তাঁকে ঘরে নিয়ে যেতে পারেননি।

আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে ভাটিয়ারীর উত্তর বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে দোকানের একটি খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন জহুর আহমেদ। সোলাইমানের লাশ তখনো আসেনি। জানালেন, ছেলেকে দেখে ঘরে ফিরবেন তিনি। বিষণ্ন মুখ, শূন্য দৃষ্টি। রাস্তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ছেলে আসবে। তাই দাঁড়িয়ে আছি।’ খবরটা শোনার পর থেকে সারা রাত সেখানেই ছিলেন জহুর আহমেদ।

পুলিশ জানিয়েছে, একই মালিকানাধীন কেএসআরএম ও রয়েল সিমেন্ট পাশাপাশি দুটি কারখানা। প্রকৌশলী সোলাইমান চাকরি করতেন রয়েল সিমেন্ট কারখানায়। কিন্তু কারখানাটির পাওয়ার প্ল্যান্ট ছিল কেএসআরএম কারখানার ভেতরে। ওই পাওয়ার প্ল্যান্টে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় তা মেরামত করতে যান সোলাইমান। কাজ শেষে তিনি কেএসআরএম কারখানার থেকে বের হয়ে নিজের কারখানায় ফিরে আসছিলেন। এ সময় রডবোঝাই একটি লরি পেছনের দিকে এসে তাঁকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালটির মর্গে রাখা হয়।

নিহত প্রকৌশলী সোলাইমান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সারা রাত খুঁটিতে ভর দিয়ে ছেলের লাশের অপেক্ষায় বাবা
  • কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ডস ফর ফিউচার আর্কিটেক্টস পাচ্ছেন তিন তরুণ
  • ষষ্ঠবারের মতো ‘অ্যাওয়ার্ডস ফর ফিউচার আর্কিটেক্টস’ দেবে কেএসআরএম