ভারতের মালিকাধীন এবং সে দেশ থেকে পরিচালিত উড়োজাহাজের জন্য আকাশ সীমা বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তানে। ভারতও প্রতিবেশী দেশের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। পাল্টাপাল্টি এই ব্যবস্থার ফলে পাকিস্তান যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতির মুখে যাচ্ছে ভারতের উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো।

পাকিস্তান আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে শত শত ভারতীয় ফ্লাইট চলাচল বিঘ্নিত হতে যাচ্ছে। এতে ভারতীয় এয়ারলাইনসের ফ্লাইট পরিচালনায় জ্বালানি  এবং ট্রানজিট খরচ উভয়ই বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে লম্বা পথের ফ্লাইটগুলোকে জ্বালানি নিতে মাঝপথে থামতে হবে, যা ফ্লাইট পরিচালনার খরচ আরও বাড়িয়ে দেবে।

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ ভারত সরকার। ভারতের অভিযোগ, ওই হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদ আছে।

ভারতের ব্যবস্থা গ্রহণের পর পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) একটি বৈঠক করে। এতে ভারতীয় উড়োজাহাজের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত ২৪ এপ্রিল থেকে ওই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে, আগামী ২৩ মে পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। বাণিজ্যিক ও সামরিক উভয় উড়োজাহাজের ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।

প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ ভারতীয় ফ্লাইট পাকিস্তানের আকাশসীমা অতিক্রম করে। সেগুলোর বেশ কয়েকটি লম্বা পথের ফ্লাইট। দিল্লি, মুম্বাই, অমৃতসর, আহমেদাবাদ থেকে ভারতীয় উড়োজাহাজ ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আমেরিকায় যেতে পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করে থাকে।

সেই তুলনায় ভারতের আকাশসীমা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে পাকিস্তানের একটিমাত্র পূর্বমুখী পথের ফ্লাইট চলাচল প্রভাবিত হবে। ওই ফ্লাইট চলাচলেও সহজেই ভারতকে এড়িয়ে চীনের আকাশসীমা ব্যবহার করা সম্ভব। আর পাকিস্তান আগে থেকেই তাদের অতি উত্তরের ফ্লাইট চলাচল উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে এনেছে। তাই, ভারতের আকাশসীমা বন্ধে পাকিস্তানের ওপর সামান্য বা হয়তো কোনো প্রভাবই পড়বে না।

পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বেশ কয়েকটি ভারতীয় ফ্লাইটকে ব্যয়বহুল ঘুর পথে যেতে হয়েছে, পথ বেড়ে যাওয়ায় আবার জ্বালানি নিতে মাঝপথে থামতে হচ্ছে। যেমন: এয়ার ইন্ডিয়ার টরন্টো-দিল্লি ফ্লাইটকে জ্বালানি নিতে কোপেনহেগেনে নামতে হয়েছে। প্যারিস ও লন্ডনের ফ্লাইট আবু ধাবিতে থামতে হচ্ছে।

শারজাহ-অমৃতসরের একটি ফ্লাইটকে পাকিস্তানে প্রবেশের আগে ঘুরে যেতে হয়েছে। এবং অন্যান্য উড়োজাহাজকে বাড়তি জ্বালানি নিতে আহমেদাবাদে নামতে হয়েছে।

ভারতের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা এই প্রথম বন্ধ হয়নি। এর আগে ১৯৯৯ সালে কারগিল সংঘাতের পর এবং ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর ভারতের ব্যবস্থা গ্রহণের পাল্টা হিসেবে পাকিস্তান একই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। উভয় সময়ই বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের তুলনায় ভারতকে বেশি ভুগতে হয়েছে।

আরও পড়ুনপাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ, যাত্রীদের সতর্ক করল ভারতের দুই বিমান পরিবহন সংস্থা২৪ এপ্রিল ২০২৫

২০১৯ সালে পাকিস্তান ওইসব বিদেশি ফ্লাইট, যারা ভারতের ভেতর দিয়ে উড়ে এসেছে তাদের জন্যও নিজেদের আকাশ সীমা বন্ধ করে দিয়েছিল।

এবার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুক হামলার কারণে। হামলায় হতাহতদের অধিকাংশই ভারতীয়।

নয়াদিল্লির অভিযোগ, এ ঘটনায় ইসলামাবাদ জড়িত আছে। যদিও এ দাবির পক্ষে নয়াদিল্লি এখনো কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। পাকিস্তান জোরালোভাবে ওই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।

পেহেলগামে হামলার পরদিন বুধবার পাকিস্তানের নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ দেশটির বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপ নেয় ভারত। এর মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণাও রয়েছে।

জবাবে বৃহস্পতিবার ভারতের নাগরিকদের ভিসা বাতিল, দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত, ভারতের উড়োজাহাজের জন্য দেশের আকাশসীমা বন্ধসহ বেশ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তান। উভয় দেশই পরস্পরের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকদেরও বরখাস্ত করেছে।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেছেন, আকাশসীমা বন্ধ করার ফলে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলি লাখ লাখ ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনপাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ২৪ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ফ ল ইট ব যবস থ পদক ষ প র জন য বন ধ ক র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

কখন দরুদ পাঠ করতে হয়

সাধারণভাবে দরুদ পাঠ করা পুণ্যের কাজ। তবে ৪টি স্থানে দরুদ পাঠ করা ইসলামে বিধিবিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

১. নামাজের শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পাঠের পরে। ফুজালা ইবনে ওবাইদ (রা.) হাদিস বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) শুনলেন, এক ব্যক্তি নামাজে এমনভাবে দোয়া করছে, যাতে আল্লাহর প্রশংসাও করে নি এবং নবীজির(সা.) প্রতি দুরুদও না। তিনি বললেন, ‘সে তাড়াহুড়া করেছে।’ তিনি তাকে ডাকলেন। এরপর তাঁকে বা অন্যদের বললেন, ‘আমাদের কেউ যখন নামাজ পড়ে, তখন সে যেন তার প্রতিপালকের প্রশংসা এবং স্তুতি বাক্য দিয়ে শুরু করে, তারপর নবীজির প্রতি দরুদ পড়ে। এবং শেষে তার খুশিমতো প্রার্থনা করে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১,৪৮১)

২. মসজিদে প্রবেশের সময়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সে যেন নবীজির (সা.) প্রতি সালাম পাঠায় আর বলে, ‘আল্লাহুম্মা-ফ্‌তাহ্‌লী আবওয়াবা রহমাতিক’ (আল্লাহ, আমার জন্যে আপনার রহমতের দুয়ার খুলে দিন)।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৭৭২)

আরও পড়ুন‘আত-তাহিয়্যাতু’র মর্মবাণী কী১১ এপ্রিল ২০২৫

৩. আজানের পরে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) নবীজিকে(সা.) বলতে শুনেছেন, ‘যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আহ্বান শোনো, তখন তোমরাও তা বলো, যা সে বলে। তারপর আমার ওপর দরুদ পড়ো। নিশ্চয় যে আমার প্রতি একবার দরুদ পড়ে, বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তাকে দশবার আশীর্বাদ করবেন। তারপর আমার জন্যে ‘ওসিলা’ প্রার্থনা করো। কেননা, তা জান্নাতের একটি অধিষ্ঠান, আল্লাহর বান্দাদের প্রত্যেকের তা কামনা এবং আশা করছি, আমি সেখানেই থাকব। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার জন্য ওসিলা প্রার্থনা করবে, তার জন্য আমার সাফায়াত থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩৮৩)

৪. এমন প্রতিটি সময় যখন নবীজির (সা.) নাম স্মরণ করা হয়। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ধ্বংস হোক সেই ব্যক্তির, যার সামনে আমার নাম উচ্চারিত হয়, অথচ সে আমার ওপর দরুদ পাঠ করে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৫৪৫)

আরও পড়ুনফজর নামাজ শয়তানের বিরুদ্ধে বিশ্বাসীদের বিজয়০৯ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ