আণবিক অস্ত্রে এগিয়ে পাকিস্তান, সার্বিক সক্ষমতায় ভারত
Published: 26th, April 2025 GMT
জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে গত মঙ্গলবার বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত-পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী এখন আলোচনায়। মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’ শুক্রবার এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক (জিএফপি) ২০২৫’ অনুসারে করা ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পারমাণবিক অস্ত্রে এগিয়ে আছে পাকিস্তান। তবে সার্বিক সক্ষমতায় ভারত বেশি শক্তিশালী।
কাশ্মীরে হামলায় পাকিস্তানের মদদ থাকার অভিযোগ তুলে নানা ব্যবস্থা নিয়েছে ভারত। দেশটির বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে পাকিস্তানও। এমন প্রেক্ষাপটে দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়েছে।
জিএফপি সূচকে জনশক্তি, সামরিক সরঞ্জাম, অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক অবস্থাসহ ৬০টির বেশি বিষয়ের ভিত্তিতে ১৪৫টি দেশকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সামগ্রিক র্যািঙ্কিংয়ে ভারত বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ ও সক্ষমতা সূচকে স্কোর ০ দশমিক ১১৮৪ (কম স্কোর মানে বেশি শক্তিশালী সেনাবাহিনী)। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান বিশ্বে ১২তম ও স্কোর ০ দশমিক ২৫১৩।
র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের এ অবস্থান দেশটির বড় জনসংখ্যা, বৃহত্তর প্রতিরক্ষা বাজেট ও বিস্তৃত পরিসরের সামরিক সম্পদের প্রতিফলন। অন্যদিকে, পাকিস্তান ছোট অর্থনীতির কারণে নানা সীমাবদ্ধতা ও বৈদেশিক সরবরাহকারী, বিশেষ করে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও ভারতকে মোকাবিলায় কৌশলগত বিষয়গুলোয় মনোযোগী। ফলে নির্দিষ্ট খাতগুলোয় প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে দেশটি।
সামরিক-বেসামরিক জনশক্তির দিক দিয়েও ভারত এগিয়ে রয়েছে। ভারতের বর্তমান জনসংখ্যা ১৪০ কোটি, যা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয়। সক্রিয় জনশক্তি ৬৬ কোটি ২০ লাখ ও সক্রিয় সেনা ১৪ লাখ ৬০ হাজার, যা বিশ্বে দ্বিতীয়। এ ছাড়া রিজার্ভ সেনা রয়েছে ১১ লাখ ৬০ হাজার (বিশ্বে সপ্তম)। আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য ২৫ লাখ ৩০ হাজার (বিশ্বে দ্বিতীয়)। মোট সামরিক (সক্রিয় ও রিজার্ভ সেনা এবং আধা সামরিক বাহিনী) জনবল ৫১ লাখ।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের জনসংখ্যা ২৫ কোটি ২০ লাখ (বিশ্বে পঞ্চম)। সক্রিয় জনবল ১০ কোটি ৮০ লাখ। সক্রিয় সেনা ৬ লাখ ৫৪ হাজার (বিশ্বে সপ্তম)। রিজার্ভ সেনা ৬ লাখ ৫০ হাজার। রেঞ্জার্স, ফ্রন্টিয়ার কোরসহ মোট সামরিক শক্তি ১৭ লাখ (সক্রিয়, রিজার্ভ ও আধা সামরিক বাহিনী)।
ভারতের জনবল পাকিস্তানের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি এবং রিজার্ভ ও আধা সামরিক বাহিনীও বড়। পাকিস্তান যদিও কম জনবল নিয়ে কাজ করে, তবে তাদের মধ্যে অনিয়মিত বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে।
প্রতিরক্ষা বাজেটেও এগিয়ে আছে ভারত। দেশটির বাজেট (২০২৫-২৬) ৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার (যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর তৃতীয়)। এটি জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। এ ব্যয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
পাকিস্তানের বাজেট ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার (অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শীর্ষ দেশের তালিকায় নেই)। এ ব্যয় জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বৈদেশিক সামরিক সহায়তা ১০ কোটি ডলার (মূলত চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে)।
ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট পাকিস্তানের ছয় থেকে আট গুণ। দেশ দুটির সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে স্থলবাহিনী। দেশ দুটির রয়েছে ৩ হাজার ৩২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। দু’দেশের মধ্যে ১৯৪৭, ১৯৬৫ ও ১৯৯৯ সালে প্রচলিত ঘরানার যুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে। ভারতের ট্যাঙ্ক ৪ হাজার ৬১৪টি। সাঁজোয়া যান ১ লাখ ৫১ হাজার ২৪৮টি। কামান ৯ হাজার ৭১৯টি। বিশেষ বাহিনীর মধ্যে আছে প্যারা এসএফ, ঘাতক ফোর্স, এমএআরসিওএস।
পাকিস্তানের ট্যাঙ্ক ৩ হাজার ৭৪২টি। সাঁজোয়া যান ৫০ হাজার (আনুমানিক)। কামান ৪ হাজার ৪৭২টি (৩৭৫ স্বয়ংক্রিয় হাউইটজারসহ)। ট্যাঙ্ক, সশস্ত্র যান ও কামানে সংখ্যাগত দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ভারত। পাকিস্তানেরও ট্যাঙ্কবহর প্রতিযোগিতামূলক।
ভারতের মোট বিমান ২ হাজার ২২৯টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৫১৩ থেকে ৬০৬টি। পাকিস্তানের মোট বিমান ১ হাজার ৩৯৯ থেকে ১ হাজার ৪৩৪টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৩২৮ থেকে ৩৮৭টি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস চার্জ কমছে, ১ জুলাই থেকে কার্যকর
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা ও অন্যান্য নগদ সহায়তা জিটুপি (গভমেন্ট টু পারসন) পদ্ধতিতে বিতরণের ক্ষেত্রে ক্যাশ আউট চার্জ ০.৭০ শতাংশ থেকে ০.৬০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা উপকারভোগী নিজেই মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক নির্বাচন করতে পারবেন।
সম্প্রতি অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের পাঠানো এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা ও অন্যান্য নগদ সহায়তা জিটুপি পদ্ধতিতে বিতরণে বিদ্যমান ক্যাশ আউট চার্জ ০.৭০ শতাংশ যৌক্তিক পর্যায়ে হাসের প্রস্তাব করা হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ মার্চ ২০২৫ তারিখে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-১) এর সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় এ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থা এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও অন্যান্য কার্যক্রমের নগদ অর্থ জিটুপি পদ্ধতিতে বিতরণের বিষয়ে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে-
(ক) সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও অন্যান্য নগদ অর্থ বিতরণের ক্ষেত্রে উপকারভোগী নিজে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান/ব্যাংক নির্বাচন করবে। এক্ষেত্রে বিতরণকারী মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থার কোন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান/ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া সমীচীন হবে না।
(খ) সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও অন্যান্য নগদ অর্থ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এবং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণের জন্য অভিন্ন ক্যাশ আউট চার্জ ০.৬০ (শূন্য দশমিক ছয়) শতাংশ নির্ধারণ করা যেতে পারে। এ হার অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে ইতঃপূর্বে সম্পাদিত চুক্তির ক্ষেত্রে এ হার ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা যেতে পারে।
(গ) সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও অন্যান্য নগদ অর্থ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এবং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণের ক্ষেত্রে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থা এ অভিন্ন ক্যাশ আউট চার্জ অনুসরণ করবে।
(ঘ) সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও অন্যান্য নগদ অর্থ ক্যাশ আউট চার্জসহ একসঙ্গে প্রেরণ করা সমীচীন হবে। নগদ অর্থ বিতরণের ক্ষেত্রে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান/ব্যাংক উপকারভোগীর ওপর কোনোরূপ চার্জ আরোপ করতে পারবে না এবং ইএফটি রিটার্নের ক্ষেত্রে ক্যাশ আউট চার্জসহ সরকারকে ফেরত প্রদান করতে হবে। এবং
উপকারভোগীর কাছে প্রেরিত ইএফটি’র রিয়াল টাইম ট্রাকিং এর জন্য অর্থ বিভাগের সিঙ্গেল রেজিষ্ট্রি সিস্টেম এর সঙ্গে প্রত্যেক মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের এপিআই সংযোগ স্থাপন করতে হবে। এপিআই সংযোগ স্থাপনের সময়সীমা আগামী ২৯ মে তারিখ নির্ধারণ করা যেতে পারে।
সিদ্ধান্তগুলো একটি পরিপত্র জারির মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও অন্যান্য কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের অবহিত করার কথাও অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে।
দেশে বর্তমানে বেশ কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানর কাজ করছে এরমধ্যে বিকাশ- ব্রাক ব্যাংক, নগদ - ডাক বিভাগ, রকেট - ডাচ-বাংলা ব্যাংক, এম ক্যাশ - ইসলামী ব্যাংক, শিওর ক্যাশ - রূপালি ব্যাংক, রেডি-ক্যাশ - জনতা ব্যাংক, টি-ক্যাশ - ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউ ক্যাশ- বর্তমানে উপায়- ইউসিবি ব্যাংক এবং মাই ক্যাশ।
জানা গেছে, মোবাইল র্যাংকিংয়ের বিদ্যমান ব্যবস্থার আওতায় দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ অর্থ লেনদেনের সেবা নিচ্ছে। কিন্তু এ সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর চার্জ এবং সেবার মান এবং গ্রাহক হয়রানির বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকার গ্রাহকসেবা এবং নির্ঝঞ্জাট সেবা নিশ্চিত করতে এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
ঢাকা/টিপু