রাজশাহী প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) প্রধান ফটকের সামনে মতিহার থানা বিএনপির কর্মী সম্মেলনের প্রস্তুতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার বেলা তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় বিএনপি প্রস্তুতি সমাবেশ সেখানে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রুয়েট শিক্ষার্থীরা জানান, আজ দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকে মতিহার থানা বিএনপির কর্মী সম্মেলনের জন্য ব্যানার, সাউন্ড সিস্টেম ও চেয়ার নিয়ে স্টেজ বানানোর প্রস্তুতি চলছিল। প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ফটকের সামনে এসে জড়ো হন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘রাজনীতির কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘রুয়েটে রাজনীতি, চলবে না চলবে না’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদি’, ‘রুয়েটে রাজনীতি কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ প্রভৃতি স্লোগান দিচ্ছিলেন।

শিক্ষার্থীরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের কাছে রুয়েট প্রাঙ্গণে সম্মেলন করার অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না, এ বিষয়ে জানতে চান। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তর্ক–বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে রুয়েট প্রাঙ্গণে সম্মেলন করবেন না বলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা চেয়ার ও ব্যানার খুলে নিয়ে চলে যান।

পরে শিক্ষার্থীরা রুয়েটের প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হন। এ সময় রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক এস এম আবদুর রাজ্জাক শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘প্রোগ্রামের বিষয়ে আমরা জানতাম না, আমাদের অনুমতি নেওয়া হয়নি। যখন জানতে পারি, আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করি। তোমরা নিশ্চিত থাকতে পারো, রুয়েটে রাজনীতি চালুর বিষয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় রুয়েটে রাজনীতি ফিরে আসবে না।’

রুয়েট ছাত্রকল্যাণ দপ্তর এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘আজ রুয়েটের প্রধান ফটকের সামনে একটি রাজনৈতিক দলের সভা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। রুয়েট প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হওয়ামাত্র তাৎক্ষণিকভাবে রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহযোগিতায় তা দ্রুত সরানোর কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। রুয়েট প্রশাসন স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে যে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বা তার সংলগ্ন এলাকায় কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম বা সভার অনুমতি নেই এবং রুয়েট প্রশাসন এই ধরনের কার্যক্রমের তীব্র বিরোধিতা করে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘রুয়েট একটি শিক্ষা এবং গবেষণার স্থান। এখানে রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ, কাজেই কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি চলার কোনো অবকাশ নেই। সবাইকে রুয়েটের শান্তিপূর্ণ শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ রক্ষায় সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে নগরের মতিহার থানা বিএনপির আহ্বায়ক একরাম আলীকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, থানা বিএনপি প্রথমে রুয়েটের সামনে কর্মীসভার প্রস্তুতি নিয়েছিল। পরে শিক্ষার্থীদের আপত্তি থাকায় ওখানে থেকে তা সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে রুয়েটের পাশে আরেকটি জায়গায় এটি করা হয়। রুয়েটের সামনে ছোট জায়গায় এটা করা ঠিক করেনি তাঁরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ত ব এনপ র র স মন র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ডেইলি স্টার-এইচএসবিসি সম্মাননা পেলেন কৃতী শিক্ষার্থীরা

ও-লেভেল এবং এ-লেভেল পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়েছে ডেইলি স্টার এবং এইচএসবিসি ব্যাংক। গতকাল শনিবার পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। এবারের আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘আগামীর রাষ্ট্রনির্মাতাদের অভিবাদন’ (স্যালুটিং দ্য নেশন বিল্ডার্স অব টুমোরো)।

অনুষ্ঠানে সংবর্ধনাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ছাড়াও তাদের অভিভাবক, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্‌ফুজ আনাম।

এ বছর এডেক্সেল এবং কেমব্রিজ কারিকুলামের অক্টোবর–নভেম্বর ২০২৩, জানুয়ারি ২০২৪, মে–জুন ২০২৪ এবং অক্টোবর–নভেম্বর ২০২৪ সেশনের মোট ২ হাজার ৩৭৫ জন শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ও-লেভেলে ১ হাজার ৮২৪ জন এবং এ-লেভেলে ৫৫১ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ও-লেভেলে বিশ্ব পর্যায়ে সেরা ৬৭ জন এবং দেশসেরা ৬২ জন রয়েছেন। এ ছাড়া এ-লেভেলে বিশ্ব পর্যায়ে সেরা ১৫ জন এবং দেশসেরা ৩২ জন শিক্ষার্থীকে সম্মান জানানো হয়।

সারা দেশের ১১২টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে। কেমব্রিজ পরীক্ষার ক্ষেত্রে পরপর দুটি ও-লেভেল সেশনে কমপক্ষে ছয়টি এ গ্রেড এবং এ-লেভেলে তিনটি এ গ্রেড অর্জনকারীরা সংবর্ধনা পেয়েছেন। এ ছাড়াও আইজিসিএসই পরীক্ষায় এক বা দুটি ধারাবাহিক সেশনে ছয়টি বিষয়ে সাত বা তার বেশি গ্রেড অর্জনকারী এবং আইএএল-এ এক বা দুটি ধারাবাহিক সেশনে তিনটি এ বা তার বেশি গ্রেড অর্জনকারীদের পুরস্কার দেওয়া হয়।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্‌ফুজ আনাম কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন।

এইচএসবিসি বাংলাদেশের হেড অব ইন্টারন্যাশনাল ওয়েলথ অ্যান্ড প্রিমিয়ার ব্যাংকিং /তানমি হক, আইডিপি এডুকেশন বাংলাদেশ লিমিটেডের কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজিব মাহবুবুল, পিয়ারসন এডেক্সেল, বাংলাদেশ ও নেপালের আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল মামুন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে আসিফ নজরুল বলেন, ‘বড় স্বপ্ন দেখো এবং সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য চেষ্টা করো। সব সময় নিজেকে জিজ্ঞেস করো আমি কি শুধু নিজের জন্যই বাঁচব, নাকি অন্যদের জন্যও? আর যদি অন্যদের জন্য বাঁচার সিদ্ধান্ত নাও, তবে সেটা যেন তোমার দেশের মানুষের জন্য হয়।’

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘তোমরা চাইলেই উন্নত কোনো দেশে গিয়ে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারো, কিন্তু যদি তা করো, তবে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি, তা কখনো বাস্তবায়িত হবে না। জাতি গঠনে আমাদের সবারই একটা ভূমিকা আছে, এটা আমাদের স্বীকার করতে হবে। আর আমার প্রধান অনুরোধ হলো, তোমরা দেশের সেবা করো।’

মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ‘তোমরা যদি সত্যিকার অর্থেই আগামীর জাতি-নির্মাতা হতে চাও, তবে প্রথমেই তোমাদের দেশকে ভালোবাসতে হবে।’

অনুষ্ঠানে শিখোর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও শাহির চৌধুরী, অ্যাঙ্করলেস বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা রাহাত আহমেদ এবং টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আয়মান সাদিক তিনটি পৃথক অনুপ্রেরণামূলক সেশনে অংশ নেন।

এই আয়োজনের টাইটেল স্পনসর এইচএসবিসি ব্যাংক। একাডেমিক পার্টনার হিসেবে পিয়ারসন এডেক্সেল এবং এডুকেশন পার্টনারের দায়িত্বে ছিল আইডিপি।

ডেইলি স্টার ১৯৯৯ সাল থেকে এই ব্যতিক্রমী বার্ষিক আয়োজনটি করে আসছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ