সিন্ধু নদের পানিবণ্টন নিয়ে স্বাক্ষরিত চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত কীভাবে কার্যকর করা সম্ভব, সে নিয়ে ভারত এখনো স্পষ্ট রূপরেখা ঠিক করতে পারেনি। তবে গতকাল শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ডাকা বৈঠকে যোগ দেওয়ার পর ভারতের জলশক্তিমন্ত্রী চন্দ্রকান্ত রঘুনাথ পাতিল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সিন্ধু উপত্যকা দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীগুলোর এক ফোঁটা পানিও যাতে পাকিস্তানে না যায়, আমরা তা নিশ্চিত করব।’

গুজরাটের নবসারি আসন থেকে চারবার লোকসভায় নির্বাচিত চন্দ্রকান্ত রঘুনাথ পাতিল গুজরাট রাজ্য বিজেপির সভাপতি। গতকাল ওই বৈঠকের পর তিনি ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে মোদি সরকারের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত আইনসংগত ও জাতীয় স্বার্থে গৃহীত। আমরা নিশ্চিত করব, এক ফোঁটা পানিও যাতে পাকিস্তানে প্রবাহিত না হয়।’

ওই বৈঠকে পানিপ্রবাহ বন্ধ নিয়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এখনই কী করা যায়, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকের পর ভারতের সিন্ধু জল কমিশনারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার সাক্সেনা গণমাধ্যমকে শুধু বলেছেন, উঁচু অববাহিকার দেশ হিসেবে ভারতের কাছে একাধিক বিকল্প রয়েছে।

সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানাজানির পর পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিল, ‘পানিচুক্তি স্থগিত রাখা যুদ্ধের শামিল।’ গতকাল এক কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে পাকিস্তানের বিরোধী দল পিপিপির নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেন, ‘সিন্ধু নদ আমাদের, আমাদেরই থাকবে। সেখানে হয় জল বইবে, নয়তো তাদের (ভারত) রক্ত।’

সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তির বয়স ৬৫ বছর। ১৯৬০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ুব খানের মধ্যে ওই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিল বিশ্বব্যাংক। সেই থেকে দুই দেশের মধ্যে তিন–তিনটি যুদ্ধ হয়েছে। চুক্তি কিন্তু ব্যাহত হয়নি। এই প্রথমবার, পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠী পর্যটকদের নির্বিচারে হত্যার পর ভারত ওই চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করে। ঘোষণা কীভাবে কার্যকর করা যায়, সেই বিষয়েই ভারতীয় নেতৃত্ব এখন চিন্তাভাবনা করছে।

চুক্তি অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশ দিয়ে প্রবাহিত সিন্ধু, ঝিলম, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী, বিপাশা ও শতদ্রুর পানি ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশেরই প্রাপ্য। এই ছয় নদ-নদী ছাড়া তাদের শাখা নদীর পানিপ্রবাহের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখা হয়নি। শাখা নদীগুলোর পানিপ্রবাহে কোনো বাধাও নেই।

ঘটনা হচ্ছে, প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে বিপুল জলাধার নির্মাণ প্রয়োজন, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে যা সহায়ক, তেমন বড় প্রকল্প ভারত তৈরিও করেনি। ওই ছয় নদ-নদীর পানি প্রধানত দুই দেশের কৃষিপ্রধান অঞ্চলের সেচের কাজেই ব্যবহৃত হয়। কিছুটা ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। পাকিস্তানকে সেই পানি থেকে বঞ্চিত করতে গেলে যে বিশাল প্রকল্প ভারতের তৈরি করা প্রয়োজন, তার দ্রুত রূপায়ণও সম্ভব নয়। সেই কারণে তিন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণের বিষয় গতকালের বৈঠকে আলোচিত হয়। এখনই কী করণীয়, তার পাশাপাশি আলোচিত হয় মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।

এই পানি–বিতর্কে অংশ নিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহও। গতকাল তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত অন্যতম। সত্যি বলতে কী, আমরা কাশ্মীরি জনতা কখনো ওই চুক্তির পক্ষে ছিলাম না। সমর্থনও করিনি। এখন দেখতে হবে, ওই চুক্তি স্থগিত রাখা নিয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কেমন হতে পারে।’

মুখ্যমন্ত্রী ওমর আরও বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের কাছে ওই পানিচুক্তি সবচেয়ে অন্যায্য নথি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ওই চ ক ত প রব হ গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

এক ফোঁটা পানিও যাতে পাকিস্তানে না যায়, তা নিশ্চিত করব আমরা: ভারতের জলমন্ত্রী

ভারতশাসিত কশ্মীরের পেহেলগামে গুলি করে পর্যটকদের হত্যা করেছে বন্দুকধারীরা। এ ঘটনায় প্রতিশোধের আগুনে ফুঁসছে গোটা দেশ। কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে ভারত সরকারও। ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে হওয়া সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত সরকার। পাকিস্তান যাতে সিন্ধু নদের এক ফোঁটা পানিও না পায়, তার জন্য আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে নয়াদিল্লি। 

গতকাল শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী সি আর পাতিল জানান, পাকিস্তানকে এক বিন্দু পানিও দেওয়া হবে না। আর সেজন্য ভারত সরকারের ‘তিনটি’ পৃথক পরিকল্পনা রয়েছে।

শুক্রবার দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘স্বল্প, দীর্ঘমেয়াদি এবং মধ্যবর্তী পরিকল্পনা রয়েছে ভারত সরকারের। পরিস্থিতি অনুযায়ী যে কোনো একটি পরিকল্পনা নেওয়া হবে, যাতে পাশ্ববর্তী দেশ এক ফোঁটা জলও না পায় তা নিশ্চিত করতে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গতকাল নিজ বাসভবনে বৈঠক করেন। অনেকের সঙ্গেই সেখানে ছিলেন পাটিলও। ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে হওয়া সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত রাখা নিয়ে পরবর্তী কী পদক্ষেপ করা হবে সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। 

সরকারি এক সূত্রের দাবি, এ দিনের বৈঠকে পেহেলগামের ঘটনার পর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি পরবর্তীতে আর কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে বিষয়েও বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়। জানা যাচ্ছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আইনি মোকাবিলা করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে ভারত সরকার। যদি পাকিস্তান বিশ্বব্যাংকের কাছে আবেদন করে, সেক্ষেত্রে আইনিভাবে তার বিরোধিতা করার প্রস্ততিও নিচ্ছে নয়াদিল্লি।

এরপর নিজের এক্স হ্যান্ডেলেও পোস্ট করে মন্ত্রী লেখেন, ‘সিন্ধু পানি চুক্তির বিষয়ে মোদি সরকারের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত, যা আইনসঙ্গত এবং জাতীয় স্বার্থে নেওয়া হয়েছে। আমরা নিশ্চিত করব যে, সিন্ধু নদের এক ফোঁটাও জল পাকিস্তানে প্রবাহিত না হয়।’

বিজেপি নেতা আরও বলেন, ‘ভারত পাকিস্তানকে একটি ‘কড়া বার্তা’য় কার্যত জানিয়েছে যে, তারা সন্ত্রাসবাদকে মোটেও সহ্য করবে না।’

গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে ২৬ জন পর্যটককে নৃশংসভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা। এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করার কথা জানায় নয়াদিল্লি। এর মধ্যে ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া, পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশে ফেরার নির্দেশ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত। আর ভারতের এমন সিদ্ধান্তের পরই পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও একাধিক সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। 

সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার পদক্ষেপকে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণার সমান চোখে দেখছে বলে এক বিবৃতিতে জানায় করাচি। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এমন হুঙ্কার। এর পর পরিস্থিতি কোন দিকে এগুরো সেটাই এখন দেখার বিষয়। 

বিশ্বের সব থেকে বেশি পানি সংকটে ভোগা দেশগুলোর অন্যতম পাকিস্তান। সেদেশের বড় বড় শহর এবং গ্রামীণ এলাকা পানীয় এবং গোসলের জন্য সিন্ধু নদের দলের ওপর নির্ভর করে। ‍সিন্ধু চুক্তি স্থগিত হওয়ায় পাকিস্তানের বাসিন্দারা সংকটে ভোগবে। দেশটির সরকার জানিয়েছে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করাকে ‘অ্যাক্ট অব ওয়ার’ বলা হয়েছে। এই পানি বন্ধ হলে নদী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে পাঞ্জাব এবং সিন্ধু প্রদেশের কিছু অংশে মরুভূমি তৈরির শঙ্কা রয়েছে। পাকিস্তানে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। তারবেলা বা মঙ্গলার মতো পাকিস্তানের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সিন্ধু নদের জল প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল। জলস্তর কমে গেলে বিদ্যুতের ঘাটতি বাড়বে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এক ফোঁটা পানিও যাতে পাকিস্তানে না যায়, তা নিশ্চিত করব: ভারতের জলমন্ত্রী
  • এক ফোঁটা পানিও যাতে পাকিস্তানে না যায়, তা নিশ্চিত করব আমরা: ভারতের জলমন্ত্রী