বগুড়ায় টোলের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদলের নেতা-কর্মীদের পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ
Published: 26th, April 2025 GMT
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় কৃষিপণ্য বেচাকেনার টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদল ও বিএনপির পাঁচ নেতা-কর্মীকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয় লোকজন। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের মানিকদীপা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে তাঁদের ছেড়ে দিয়েছে।
অভিযুক্ত যুবদল নেতার নাম শাহাদৎ হোসেন (৪২)। তিনি আড়িয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সহসভাপতি এবং আড়িয়া বাজারের ইজারাদার। আড়িয়া বাজার থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মানিকদীপা গ্রামে কৃষিপণ্য কেনাবেচা করায় সেখানে গিয়ে টোল দাবি করলে মারধরের ঘটনা ঘটে। আহত অন্যরা হলেন আড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ও বিএনপির কর্মী মুরাদ কোরাইশী, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সদস্য শহিদুল ইসলাম, বিএনপির কর্মী আনোয়ার হোসেন ও যুবদল নেতা শাহাদতের ছোট ভাই আল আমিন।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াদুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে মানিকদীপা গ্রামে ইজারাদার শাহাদৎ হোসেন ও তাঁর কয়েকজন সহযোগীকে আটকে রেখে স্থানীয় লোকজন মারধর করছেন—এমন খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায় ও মামলা না হওয়ায় কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উন্মুক্ত ডাকে ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকায় আড়িয়া বাজারের ইজারা পেয়েছেন যুবদল নেতা শাহাদৎ হোসেন। তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবুল বাশারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আড়িয়া বাজার থেকে মানিকদীপা গ্রামের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। প্রতিদিন বিকেলে সেখানে গ্রামীণ বাজার বসে। গ্রামের কৃষকেরা সারা বছর তাঁদের খেতের কৃষিপণ্য বেচাবিক্রি করেন। খবর পেয়ে শাহাদৎ হোসেন গতকাল সন্ধ্যার পর গাড়ি ও মোটরসাইকেলবহর নিয়ে ওই গ্রামে যান। এ সময় তিনি কৃষকদের থেকে আলুসহ কৃষিপণ্য বেচাবিক্রির জন্য টোল দাবি করলে স্থানীয় লোকজন বাধা দেন।
স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মানিকদীপা গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে কেনা চার ট্রাক আলু ঢাকায় পাঠানোর খবর পেয়ে শাহাদৎ লোকজন নিয়ে সেখানে যান। হাটের সীমানার বাইরে হলেও এক বস্তা আলুর (৬৫ কেজি) জন্য তিনি ১৫ টাকা টোল দাবি করেন। আলুর দাম সস্তা হওয়ায় এমনিতেই কৃষকেরা ক্ষুব্ধ। তার ওপর টোল দাবি করায় উত্তেজিত হয়ে জনতা শাহাদৎ ও তাঁর সহযোগীদের ওপর চড়াও হন।
অভিযোগের বিষয়ে শাহাদৎ হোসেন বলেন, এত দিন মানিকদীপা গ্রামের কৃষকেরা আড়িয়া বাজারে তাঁদের কৃষিপণ্য বিক্রি করতেন। জামায়াতের ইন্ধনে কৃষকেরা আড়িয়ায় পণ্য না এনে আড়াই কিলোমিটার দূরে মানিকদীপা বাজারে পণ্য বেচাকেনা করছিলেন। আলোচনার জন্য গতকাল গাড়ি নিয়ে সেখানে যান। তাঁর সঙ্গে আরও সাত থেকে আটজন ছিলেন। সেখানে গিয়ে আশপাশে যেকোনো হাটে কৃষিপণ্য বিক্রি করলে বস্তাপ্রতি ৮ টাকা টোল দাবি করলে তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, কোনো হাটে তাঁরা পণ্য তুলবেন না এবং কাউকে টোলও দেবেন না। এ নিয়ে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন, আক্কাস, সাইফুল ও তালেবের নেতৃত্বে লোকজন তাঁদের ওপর হামলা করেন এবং তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, আড়িয়া বাজার থেকে মানিকদীপার দূরত্ব তিন কিলোমিটার। হাটের নির্ধারিত সীমানার বাইরে টোল আদায় অবৈধ। ইজারাদার শাহাদৎ গাড়িবহর নিয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কাছে টোলের নামে চাঁদা দাবি করেন। পাশাপাশি গ্রামবাসীদের হুমকি দেন ও ভয়ভীতি দেখান। এ কারণে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র সদস য ল কজন গতক ল য বদল উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
খাতা দেখতে না দেওয়ায় সহপাঠীদের মারধরে আহত পরীক্ষার্থীর মৃত্যু
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় এনায়েতপুর কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালে খাতা দেখতে না দেওয়ায় সহপাঠীদের মারধরে আহত ইমন হোসেন (১৬) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী মারা গেছে। গত শুক্রবার খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল তাকে মারধর করা হয়েছিল।
নিহত ইমন উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের ইমদাদুল মোল্লার ছেলে। সে স্থানীয় খুকনী উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। ঘটনার ১০ দিন অতিবাহিত হলেও দুটি থানার সীমানা এলাকা হওয়ায় এ ঘটনায় শনিবার বিকেল পর্যন্ত মামলা নেয়নি পুলিশ। এদিন পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে বেলকুচি থানায় মামলা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
নিহত ইমনের বাবা ইমদাদুল মোল্লা জানান, গত ১৭ এপ্রিল এনায়েতপুর ইসলামী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা চলাকালে কয়েকজন সহপাঠী ইমনের খাতা দেখে পরীক্ষা দিতে চায়। এতে সে রাজি হয়নি। পরদিন শুক্রবার দুই সহপাঠী তাকে ডেকে নিয়ে যায়। পাশের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর নতুনপাড়ায় নিয়ে গিয়ে কয়েকজন মিলে তাকে মারধর করে।
মারধরে ইমনের মাথার বাম পাশের খুলি ভেঙে যায়। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। বুধবার তাকে বাড়িতে আনা হয়েছিল। শুক্রবার অবস্থার অবনতি হলে তাকে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই সে মারা যায়।
ইমদাদুল মোল্লা বলেন, ‘আমার ছেলে ভদ্র এবং মেধাবী ছিল। নকল করতে না দেওয়ায় তাকে এভাবে হত্যা করা হবে, কখনও ভাবিনি।’ অভিযুক্তদের শাস্তি দাবির পাশাপাশি দুই থানা মামলা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
খুকনী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তোতা মিয়া বলেন, মারধরের ঘটনার পর কয়েকবার এনায়েতপুর ও বেলকুচি থানায় মামলা করতে যান স্বজনরা। দুই থানার সীমানা জটিলতা দেখিয়ে পুলিশ মামলা নেয়নি। এনায়েতপুর বলছে বেলকুচিতে মামলা হবে। আর বেলকুচি বলছে মামলা হবে এনায়েতপুরে থানায়।
এনায়েতপুর থানার ওসি রওশন ইয়াজদানি শনিবার বিকেলে বলেন, শিক্ষার্থী ইমনের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছে। মরদেহ উদ্ধারের পর শুক্রবার রাতে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশ সুপার বিষয়টি জেনে বেলকুচি থানায় মামলা করার জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
বেলকুচি থানার ওসি জাকেরিয়া ইসলাম শনিবার বিকেলে বলেন, শিক্ষার্থী ইমন বেলকুচিতে মারধরে আহত হলেও মারা যায় এনায়েতপুরে। তাদের বাড়ি এনায়েতপুর থানার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সেখানে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ সুপার বেলকুচিতে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন। দাফন শেষে স্বজনরা এলে অভিযোগ নেওয়া হবে। সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বেলকুচি থানায় মামলা করার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।