গাজীপুরে নির্মাণাধীন হ্যাচারিতে চাঁদা দাবি, কাজ বন্ধ
Published: 26th, April 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় একটি নির্মাণাধীন হ্যাচারিতে ‘বিএনপির নেতাকর্মী’ পরিচয়ে চাঁদা দাবি এবং কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর এলাকায় ম্যাক হ্যাচারি (ইউনিট-২) নামের ওই প্রতিষ্ঠানে কয়েক দিন ধরে নির্মাণকাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দেশীয় অস্ত্রসহ একদল যুবক সেখানে গিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কারখানার নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুল বারী জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীর আলম (৪০), ইব্রাক একান্ত (২৬), মো.
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, দলীয় সমন্বয়ের অভাবে এটা হয়েছে। ছাত্রদলকর্মী সামিউল ইসলাম একাই নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করায় স্থানীয় কিছু নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ হয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে, তারা পরে আলোচনার মাধ্যমে পুনরায় কাজ শুরু করেছেন।
এদিকে, ছাত্রদলের কর্মী সামিউল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি বৈধ কার্যাদেশের ভিত্তিতে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করছেন। অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে তাকে বাধা দিচ্ছেন এবং সম্প্রতি চাঁদা দাবি করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে বরমী ইউনিয়ন বিএনপি ও শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।
শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহবুব জানিয়েছেন, অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা/রফিক সরকার/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক জ বন ধ ন ত কর ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
একমাত্র এমআরআই যন্ত্র ঠিক করতে ৪২ বার চিঠি
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের লাখো রোগীর দুর্দশা কোনোভাবেই কাটছে না। চার বছর ধরে অচল পড়ে আছে অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাগনেটিক রিজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) যন্ত্রটি। এ যন্ত্রের রোগ সারাতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চার বছরে ৪২ বার চিঠি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতবার চিঠি দেওয়ার পরও ঘুম ভাঙেনি প্রশাসনের।
এদিকে বছরের পর বছর যন্ত্রটি নষ্ট থাকায় প্রতিদিন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক রোগী। সরকারিভাবে মাত্র ৩ হাজার টাকায় যে এমআরআই পরীক্ষা চমেকে করানো যায়, বেসরকারি হাসপাতালে সেটি করতে গুনতে হয় ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা, যা একজন স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে বহন করা অসম্ভব। এ পর্যন্ত একাধিক টিম যন্ত্রটি দেখে গেলেও হয়নি সমস্যার সমাধান। এখন এটি সচলে প্রয়োজন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ব্যাটারি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সেটি চীন থেকে এসেছে, এখন অপেক্ষা প্রতিস্থাপনের।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১৭ সালে ১০ কোটি টাকা মূল্যের জাপানি হিটাচি ব্র্যান্ডের এমআরআই যন্ত্রটি চমেক হাসপাতালে বরাদ্দ দেয়। পরে ঢাকার মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড মেশিনটি সরবরাহ করে। ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিলে শুরু হয় এটির সেবা কার্যক্রম। তিন বছরের ওয়ারেন্টির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই এটি ২০২০ সালের অক্টোবরে অচল হয়ে পড়ে। প্রায় সাত মাস পর ২০২১ সালের মে মাসে এটি মেরামত করে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এর এক মাস না যেতেই ফের অকেজো হয়ে পড়ে যন্ত্রটি। সেই থেকে এখনও অচল পড়ে আছে। এর পর থেকে এমআরআই কক্ষে ঝুলছে তালা। তাই একাধিকবার গিয়েও পরীক্ষা না করে ফিরে যেতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনকে। আবার তাদের কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, যন্ত্রটি সচল করতে গত চার বছরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ নিমিউ অ্যান্ড টিসি, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক দপ্তরে ৪২ বার চিঠি পাঠানো হয়েছে। এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে ফাইল যেতে বিলম্ব হওয়া, অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নানা ছলচাতুরী, দায়িত্বশীলদের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে যন্ত্রটি এখনও সচল করা সম্ভব হয়নি।
হাসপাতালের পক্ষ থেকে পাঠানো একাধিক চিঠিতে ‘বিষয়টি অতীব জরুরি’ বলেও উল্লেখ করা হয়। যন্ত্রটি মেরামতে প্রায় ৭ কোটি টাকা প্রয়োজন।
এই অঞ্চলের কয়েক লাখ রোগীর একমাত্র ভরসার ২ হাজার ২০০ শয্যার চমেক হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় চার হাজার। প্রতিদিন শুধু বহির্বিভাগেই চিকিৎসা নেন আরও তিন হাজার রোগী। এর মধ্যে প্রতিদিন দুই শতাধিকের বেশি রোগীকে এমআরআই পরীক্ষার জন্য রেফার করেন বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকরা।
মায়ের এমআরআই করাতে আসা ছেলে বখতিয়ার হোসেন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পাওয়ায় চিকিৎসক মায়ের এমআরআই পরীক্ষার পরামর্শ দেন। পরীক্ষাটি করাতে গিয়ে একাধিকবার ফিরে আসতে হয়েছে। যন্ত্রটি কখন সচল হবে, সেটিও নিশ্চিত করতে পারছে না কেউ। আমার মতো অনেক রোগীর পক্ষে বাড়তি খরচে বেসরকারিতে পরীক্ষা করানো অসম্ভব।
চিকিৎসকদের মতে, মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্নায়ু, টিউমার, স্ট্রোক, মেরুদণ্ড, লিগামেন্টসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের সূক্ষ্ম রোগ নির্ণয়ের জন্য এমআরআই পরীক্ষা জরুরি। এটির রিপোর্ট পাওয়া সাপেক্ষেই মুমূর্ষু রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিমিউ অ্যান্ড টিসি বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এটি সচলে আর্থিক, প্রশাসনিক অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একাধিকবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে নানাভাবে গড়িমসি করা হয়েছে। এ কারণেই সারানো সম্ভব হয়নি।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন সমকালকে বলেন, কয়েকদিন আগে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি এসেছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা যন্ত্রটি সচলে এরই মধ্যে যাবতীয় কাজ শুরু করেছেন। তারা পরীক্ষামূলকভাবে কিছুদিন এটির কার্যক্রম তদারকি করবেন। তাদের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পাওয়া সাপেক্ষে তা রোগীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। নতুন ব্যাটারির পাশাপাশি এমআরআই যন্ত্রটিতে আরও বেশ কিছু যন্ত্রপাতি সংযোজনের প্রয়োজন হচ্ছে। টানা কয়েক বছর এটি বন্ধ থাকায় পুরোপুরি সচলে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আশা করছি সপ্তাহের মধ্যে এটি আবারও সচল হবে। এটি যত তাড়াতাড়ি সচল হবে, তা রোগী-স্বজনদের মতো আমাদের মাঝেও স্বস্তি ফিরবে।
জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সভাপতি ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের কোটি মানুষের প্রধান ভরসার কেন্দ্রে এমআরআই মেশিন আছে মাত্র একটি, যা চার বছর ধরে নষ্ট পড়ে আছে। যে কারণে প্রতিদিন শত শত গরিব-অসহায় রোগী সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মাত্র কয়েক কোটি টাকার অভাবে এত রোগীর প্রয়োজনীয় যন্ত্রটি নষ্ট থাকাটি চরম দুর্ভাগ্যের। এটি দায়িত্বশীলদের অবহেলা ও গাফিলতির বহিঃপ্রকাশ।