পহেলগাম হামলা: পাঁচ সন্দেহভাজনের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল ভারত
Published: 26th, April 2025 GMT
পেহেলগামে ২৬ জন পর্যটককে হত্যার কয়েক দিন পর গতকাল শুক্রবার রাতে জম্মু ও কাশ্মিরজুড়ে পাঁচ সন্দেহভাজনের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী। তবে হামলার ঘটনার পর এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি তারা।
কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, শোপিয়ান, কুলগাম ও পুলওয়ামা জেলায় অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। গত কয়েক দিনে সন্দেহভাজনদের ওপর দমন অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে।
শোপিয়ানের চোপোটিপোরা গ্রামে শাহিদ আহমেদ কুট্টের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে লস্কর কমান্ডার বলে দাবি করছে ভারত। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কুট্টে গত তিন-চার বছর ধরে সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ সমন্বয় করার ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
কুলগামের মাতালম এলাকায় আরেক সন্দেহভাজন জাহিদ আহমেদের বাড়িও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলওয়ামার মুররান এলাকায় বিস্ফোরক দিয়ে আহসান উল হক নামে একজনের বাড়ি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতের দাবি, আহসান ২০১৮ সালে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন এবং সম্প্রতি উপত্যকায় ফিরে আসেন।
এহসান আহমেদ শেখ নামে একজন সন্দেহভাজনের দোতলা বাড়িও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তিনি লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য বলে দাবি করা হচ্ছে, যিনি ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে সক্রিয় ছিলেন।
পঞ্চম সন্দেহভাজন হারিস আহমেদের বাড়িও বিস্ফোরক পেতে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলওয়ামার কাচিপোরা এলাকার ওই বাসিন্দা ২০২৩ সাল থেকে সক্রিয় বলে দাবি করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে, পেহেলগাম হামলার মূল সন্দেহভাজন আদিল হুসেন ঠোকর এবং আসিফ শেখের বাড়ি বিস্ফোরণে ধ্বংস করা হয়।
বৃহস্পতিবার অনন্তনাগ পুলিশ পেহেলগাম হামলায় জড়িত সন্দেহে ঠোকর এবং আরও দুইজনের স্কেচ প্রকাশ করেছিল। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অন্য দুই সন্দেহভাজন—হাশিম মুসা ওরফে সুলেমান এবং আলি ভাই ওরফে তালহা আপন ভাই। তারা পাকিস্তানি নাগরিক এবং তাদের গ্রেপ্তারের জন্য ২০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের পেহেলগামের বৈসরণ তৃণভূমিতে পর্যটকদের ওপর অতর্কিতে গুলি চালায় একদল সন্ত্রাসী। এই হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে একজন নেপালি নাগরিকও ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুলির শব্দ শুনে পর্যটকরা প্রাণে বাঁচার জন্য ছুটোছুটি শুরু করেন, কিন্তু খোলা প্রান্তরে কোথাও লুকানোর সুযোগ ছিল না।
হামলার পর, সেনাবাহিনী, সিআরপিএফ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ যৌথভাবে ওই এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে।
পহেলগাম হামলার কঠোর জবাবে ভারত সরকার ইন্দাস পানি চুক্তি স্থগিত করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যারা এই বর্বর হামলার পেছনে রয়েছে, তাদের এবং তাদের মদতদাতাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
ফিনটেক ও ই-কমার্স ইকোসিস্টেম: বাংলাদেশের নতুন বাণিজ্যবিপ্লব
পর্ব–৩
একসময় যেখানে নগদ লেনদেনই ছিল প্রধান মাধ্যম, আজ সেখানে মোবাইল ফোনে ক্লিক করলেই কেনাকাটা, লেনদেন—সব সম্ভব। এই রূপান্তরের মূলে রয়েছে ফিনটেক এবং ই-কমার্সের অদ্ভুত এক সমন্বয়। বাংলাদেশেও এই নতুন বাণিজ্যবিপ্লবের ঢেউ লেগেছে। কিন্তু এই সম্ভাবনাকে কতটা কাজে লাগাতে পেরেছি আমরা?
বাংলাদেশে ফিনটেক ও ই-কমার্সের বর্তমান চিত্র
বাংলাদেশে ই-কমার্স লেনদেনের ৮০ শতাংশের বেশি হয় মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে (সূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক, ২০২৩)। বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়—এ চারটি মাধ্যম এখন গ্রাহকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়। পাশাপাশি এসএসএলকমার্জ, সূর্যপে, আমারপের মতো গেটওয়েগুলো এসএমই থেকে করপোরেট পর্যন্ত অনলাইন লেনদেনের একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছে।
কোভিড-১৯ ও ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার
কোভিড-১৯ মহামারির সময় অনলাইন কেনাকাটার পাশাপাশি ডিজিটাল লেনদেনের প্রবৃদ্ধি হয় প্রায় ৪৫ শতাংশ (সূত্র: লাইটক্যাল পার্টনারস ২০২৩)। বাজারে গিয়ে নগদে কেনাকাটার পরিবর্তে ঘরে বসে মোবাইলে লেনদেন করার প্রবণতা বেড়ে যায়। এই পরিবর্তন ই-কমার্স খাতকে দ্রুত প্রসারিত করেছে এবং একই সঙ্গে ফিনটেক সেবা গ্রহণের হার বাড়িয়েছে।
ফিনটেকের মাধ্যমে ই-কমার্সের সুবিধা
২৪/৭ লেনদেন সুবিধা।
নগদ ব্যবহারের ঝামেলা ছাড়া কেনাকাটা।
সুরক্ষিত পেমেন্ট সিস্টেম।
দ্রুত রিফান্ড ও ক্যাশব্যাক অফার।
গ্রামীণ অঞ্চলেও ডিজিটাল ব্যবসার সুযোগ বৃদ্ধি।
মূল চ্যালেঞ্জসমূহ
আন্তর্জাতিক লেনদেন সীমাবদ্ধতা: বাংলাদেশে পেপ্যাল, স্ট্রাইপের অনুপস্থিতি এখনো বড় বাধা।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ফিন্যান্সিং চ্যালেঞ্জ: অনেক এসএমই এখনো সহজ শর্তে ঋণসুবিধা পায় না।
সাইবার নিরাপত্তাঝুঁকি: অনলাইন লেনদেনে হ্যাকিং ও প্রতারণার ঝুঁকি রয়েছে।
ইন্টারঅপারেবিলিটি ঘাটতি: এক মাধ্যম থেকে আরেক মাধ্যমে লেনদেনে এখনো জটিলতা।
বিশ্ব অভিজ্ঞতা: শেখার মতো দৃষ্টান্ত
চীন: আলিপে ও উইচ্যাট পের মাধ্যমে পুরো ই-কমার্স ও সামাজিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ।
ভারত: ইপিআইয়ের (ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস) মাধ্যমে প্রতিদিন ৩০ কোটির বেশি লেনদেন।
ইন্দোনেশিয়া: গোজেক ও টোকোপিডিয়ার ডিজিটাল ওয়ালেট ইকোসিস্টেম।
বাংলাদেশের সম্ভাবনা
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৮ কোটির বেশি মোবাইল ব্যবহারকারী ও ১২ কোটির বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে (সূত্র: বিটিআরসি, ২০২৪)। এই বিশালসংখ্যক ব্যবহারকারীই বাংলাদেশের ফিনটেক, ই-কমার্স ইকোসিস্টেমের মূল শক্তি। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ই-কমার্স বাজার দেড় হাজার কোটি ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যদি ডিজিটাল লেনদেন ও ই-কমার্সের সংযোগ আরও শক্তিশালী হয়।
ভবিষ্যৎ করণীয়
ওপেন ব্যাংকিং চালু করে এসএমই উদ্যোক্তাদের সহজতর ঋণসুবিধা নিশ্চিত করা।
ফিনটেক স্টার্টআপদের জন্য ফিনটেক স্যান্ডবক্স (পরীক্ষাগার) তৈরি করা।
ডিজিটাল পরিচিতি ও ই-কেওয়াইসি ব্যবস্থার বিস্তার ঘটানো।
মোবাইল লেনদেন ব্যবস্থার মধ্যে ইন্টারঅপারেবিলিটি বাড়ানো।
আন্তর্জাতিক গেটওয়ে ও ক্রস-বর্ডার ট্রান্সফার সহজীকরণ।
ফিনটেক ও ই-কমার্স সংযোগের উদ্ভাবনী দিক
বাই নাউ পে লেটার (বিএনপিএল) মডেল চালু করা।
ইনভয়েসভিত্তিক ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা বৃদ্ধি।
গ্রাহকভিত্তিক ডিজিটাল ক্রেডিট স্কোরিং চালু করা।
ওয়ালেটভিত্তিক লয়্যালটি ও টাকা ফেরত কর্মসূচির সম্প্রসারণ।
বাংলাদেশের ই-কমার্স ও ফিনটেক এখন একে অপরের পরিপূরক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দুই খাতের সমন্বয় কেবল ব্যবসার প্রসার নয়, বরং পুরো দেশের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার হাতিয়ার হতে পারে।
(চলবে)
ড. মোহাম্মদ নূরুজ্জামান: ড্যাফোডিল ফ্যামিলির গ্রুপ সিইও ও গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ
আরও পড়ুনবাংলাদেশের ই-কমার্স: কোথায় আছি, কোথায় যেতে চাই২২ এপ্রিল ২০২৫