রাষ্ট্রপতি ও সংসদের মেয়াদের বদল চায় না জামায়াত
Published: 26th, April 2025 GMT
জাতীয় সংসদ এবং রাষ্ট্রপতির মেয়াদ অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন চার বছর মেয়াদের প্রস্তাব দিলেও জামায়াত চায়, এই মেয়াদ পাঁচ বছরই থাকুক।
আজ শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জামায়াতে ইসলামীর এই অবস্থানের কথা জানান দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সকাল থেকে আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
আলোচনার বিরতিতে সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের জানান, ‘ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ এবং রাষ্ট্রপতির মেয়াদ কমিয়ে চার বছর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা মনে করছি, এটি যৌক্তিক হবে না।’
দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী একমত হয়েছে বলে জানান তিনি। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের রূপ, কাঠামো এবং নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা শেষে বিস্তারিত জানাতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
সংবিধান সংস্কার, বিচারব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন এবং নির্বাচন কমিশন সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করছে জামায়াতে ইসলামী।
সংবিধান সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের আরও বলেন, যেকোনো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে জনস্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে জামায়াতে ইসলামী।
সকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারের নয়। এটা বাংলাদেশের গণমানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার ফলাফল। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনার উদ্দেশ্য থাকবে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন, কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন রাজনৈতিক দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জামায়াতের আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির। প্যানেল সদস্য হিসেবে আছেন মহিউদ্দিন সরকার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির বিপরীত মেরুতে জামায়াত
সংস্কারের মৌলিক বিষয়গুলোতে বিএনপির বিপরীত অবস্থানে থাকা জামায়াতে ইসলামী জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কমিশন কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হবে।
সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কারে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন ১৬৬ সুপারিশ করেছে। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপর আলোচনা চলছে। জামায়াত ঐকমত্য কমিশনের ৭৭ সুপারিশে একমত, ৩৬ সুপারিশে আংশিক একমত জানিয়েছে। একমত নয় ৫৩ সুপারিশে। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সুপারিশে আংশিক একমত এবং একমত নয়, সেগুলো নিয়ে বৈঠক করছে কমিশন। কেন একমত না তাও জানতে চাইছেন তারা।
প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমাতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। এটিকে মৌলিক সুপারিশ বলা হচ্ছে। বিএনপি এতে একমত না হলেও, প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তের পরিবর্তে এনসিসির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের সুপারিশে একমত জামায়াত। যদিও প্রস্তাবিত এনসিসিতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতিকে চায় না। সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে এনসিসিও বিলুপ্ত হবে বলে মতামত দিয়েছে জামায়াত।
সংসদ নির্বাচনের ভোটের অনুপাতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব করেছে জামায়াত। নির্বাচনে যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, উচ্চকক্ষে তত শতাংশ আসন পাবে। বিএনপি দ্বিকক্ষের সংসদ গঠনে রাজি হলেও, ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষে রাজি নয়। জামায়াত উচ্চকক্ষের মতো নিম্নকক্ষও ভোটের অনুপাতে গঠনের মতামত দিয়েছে। নবগঠিত এনসিপি ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ চাইলেও, দলটি বিদ্যমান আসন ব্যবস্থা অনুযায়ী নিম্ন কক্ষ নির্বাচন চায়।
কমিশন সুপারিশ করেছে, ৪০০ আসনের নিম্নকক্ষের ১০০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত থাকবে। জামায়াত এতে রাজি নয়। দলটি মতামত দিয়েছে, ৫০টি নারী আসন ভোটের অনুপাতে ভাগ হবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বয়স কমিয়ে ২১ নির্ধারণেও একমত জামায়াত।
জামায়াত সংবিধান সংস্কার কমিশনের ৭০ সুপারিশের ৩১ সুপারিশে একমত, ১৬ সুপারিশে আংশিক একমত এবং ২৩ সুপারিশে একমত নয় বলে জানিয়েছে। দলটি বিচার বিভাগ সংস্কারের ২৩ সুপারিশের একটি বাদে বাকিগুলোতে একমত বা আংশিক একমত। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের ২৭ সুপারিশের ১০টিতে একমত নয় বলে জানিয়েছে। সুপারিশে মতামত দেওয়া ছাড়া জামায়াত নিজে থেকে কিছু প্রস্তাব দিয়েছে কমিশনে। বিএনপির মতো জামায়াতও ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে, সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ চায় না। উভয় দল মূলনীতি হিসেবে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহাল চায়।
বিএনপির সঙ্গে ১৭ এপ্রিল, ২০ এবং ২২ এপ্রিল তিন দিনব্যাপী বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। জামায়াতের সঙ্গেও একাধিক বৈঠক হতে পারে। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ সমকালকে বলেন, জামায়াত দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠে সংস্কার চায়। এমনভাবে সংস্কার হতে হবে, আর যাতে ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসন ফিরতে না পারে। নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগ-রাষ্ট্রের তিন স্তম্ভের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।