কাশ্মীরে হামলা নিয়ে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত পাকিস্তান: শাহবাজ শরিফ
Published: 26th, April 2025 GMT
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আজ শনিবার বলেছেন, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় যেকোনো ‘নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ’ তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত আছে তাঁর দেশ। এ হামলার ঘটনা নিয়ে প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে চলা চরম উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এমন মন্তব্য করলেন।
পেহেলগামে ২২ এপ্রিল ওই হামলার ঘটনা ঘটে। নিহত ২৬ জনের বেশির ভাগই পর্যটক। ২০০০ সালের পর থেকে হিমালয়ঘেঁষা উপত্যকাটিতে এটাকে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সশস্ত্র হামলা বিবেচনা করা হচ্ছে। হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ বা টিআরএফ। যদিও এই সংগঠন খুব একটা পরিচিত নয়।
আরও পড়ুনসিমলা চুক্তি কী, এই চুক্তি স্থগিত হলে ভারতের ওপর কী প্রভাব পড়বে১৪ ঘণ্টা আগেএ ঘটনার পর থেকে পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশ ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে নানা কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিচুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত করা হয়েছে। পাকিস্তান পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সিমলা চুক্তি স্থগিত করেছে। ভারতীয় উড়োজাহাজের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে পাকিস্তানের আকাশসীমা।
ভারতের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, পেহেলগামে হামলাকারীদের সঙ্গে আন্তসীমান্ত সংযোগ রয়েছে। যদিও পাকিস্তান এমন সম্পৃক্ততার কথা জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে।
কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে আজ শনিবার একটি প্যারেড পরিদর্শনের সময় ভাষণ দিতে গিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘পেহেলগামের সাম্প্রতিক এই হৃদয়বিদারক ঘটনার দায় চাপানোর খেলার আরেকটি জ্বলন্ত উদাহরণ। এটা অবশ্যই বন্ধ হওয়া দরকার। একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান যেকোনো নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ আর বিশ্বাসযোগ্য তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত আছে।’
আরও পড়ুনকাশ্মীরে হামলার আন্তর্জাতিক তদন্ত চান পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ১ ঘণ্টা আগেভারতের সমালোচনা করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশটি ধারাবাহিকভাবে বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে এবং বাস্তব প্রমাণহীন অপপ্রচারের পথ বেছে নিয়েছে।
এ সময় শাহবাজ শরিফ আরও বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই কাশ্মীরের গুরুত্ব তুলে ধরা প্রয়োজন। আমাদের জাতির পিতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঠিকই বলতেন, “কাশ্মীর হলো পাকিস্তানের ঘাড়ের শিরার মতো।” দুর্ভাগ্য হলো, জাতিসংঘের বহু প্রস্তাবনা থাকা সত্ত্বেও এই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিরোধ আজও মীমাংসা করা যায়নি।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, পাকিস্তান কাশ্মীরি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে আছে। সংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে অর্জন করা বিজয়ের আগপর্যন্ত সব সময় তাঁদের পাশে থাকবে। পাকিস্তান সব সময় সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের কঠোর নিন্দা জানিয়ে এসেছে।’
শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত সম্মুখসারির একটি রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। ৯০ হাজারের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন এবং কল্পনারও বাইরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
আরও পড়ুনভারত–পাকিস্তানের মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখায় আবারও গোলাগুলি২ ঘণ্টা আগেপ্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের এমন বক্তব্যের এক দিন আগে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মাধ্যমে পরিচালিত যেকোনো তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে পাকিস্তান।’
খাজা আসিফ আরও বলেন, ‘ভারত এই হামলাকে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করার অজুহাত এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। দেশটি কোনো ধরনের তদন্ত ও প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে।’
আরও পড়ুনপাকিস্তানি নাগরিকদের খুঁজে ফেরত পাঠাতে সব রাজ্য সরকারকে নির্দেশ অমিত শাহর১৯ ঘণ্টা আগে‘আমরা চাই না, শুধু শুধু যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ুক। কেননা সেটা পুরো অঞ্চলের জন্য এক বিপর্যয় বয়ে আনবে’—যোগ করেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি ভারতের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন লস্কর-ই-তইয়্যেবা এখন ‘অকার্যকর’ হয়ে পড়েছে। পাকিস্তান থেকে হামলা চালানোর মতো সক্ষমতা সংগঠনটির নেই।
স্কাই নিউজকে দেওয়া আরেকটি সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘পাকিস্তানের মাটিতে ভারত হামলা চালালে নিশ্চিতভাবে “পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ” শুরু হয়ে যাবে। আর এ অঞ্চলে এমন একটি যুদ্ধের বিষয়ে বিশ্বের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।’
আরও পড়ুনকাশ্মীরে হামলা: ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি২৫ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ত মন ত র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
সংস্কারের পক্ষে ‘মার্চ ফর ঢাকা’ কর্মসূচি দেবে ইসলামী আন্দোলন
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে সময় দিতে চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিভিন্ন কর্মসূচিতে দলটির নেতারা একাধিকবার জানিয়েছেন, সংস্কারের আগে নির্বাচন মেনে নেবেন না তাঁরা। সংস্কারের পক্ষে দলটি শিগগিরই ‘মার্চ ফর ঢাকা’ কর্মসূচি দেবে বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম।
আজ শনিবার বিকেলে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে আয়োজিত এক সমাবেশে মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অচিরেই মার্চ ফর ঢাকা ঘোষণা দেব। লাখ লাখ, কোটি কোটি মানুষ ঢাকায় জমায়েত করব। (আমরা জানতে চাই) কারা সংস্কারের পক্ষে আর কারা বিপক্ষে। জনগণই নির্ধারণ করবে আগে সংস্কার হবে নাকি নির্বাচন হবে।’
ভারতের ওয়াক্ফ আইনের প্রতিবাদ এবং নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিতে ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা এই সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ শেষে একটি গণমিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কাকরাইল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। কেবলই নির্বাচন, নির্বাচন। আগে সংস্কার হবে, তারপর নির্বাচন হবে। সংস্কারের বাইরে বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন মানবে না। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে টেস্ট হিসেবে আমরা স্থানীয় নির্বাচন চাই। স্থানীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারলে বুঝব জাতীয় নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে। নাহলে বুঝতে হবে, নির্বাচনের পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি।’
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম। তিনি বলেন, ‘শুধু কমিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান এবং কমিশন বাতিল করলেই হবে না; বরং সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’ ভারতে ওয়াক্ফ আইন পরিবর্তন করে সে দেশে মুসলমানদের নির্মূল করার অপচেষ্টা চলছে জানিয়ে এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, জাতিসংঘ, ওআইসিসহ সব সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান।
গণমিছিল–পূর্ববর্তী এই সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনূস আহমদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, দপ্তর সম্পাদক লোকমান হোসাইন জাফরী, সংখ্যালঘুবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা মকবুল হোসাইন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ ফজলে বারী মাসউদ প্রমুখ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম।