ভারতের জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের পেহেলগামে সাম্প্রতিক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার আন্তর্জাতিক তদন্ত চেয়েছে পাকিস্তান। যদি সত্যিই আন্তর্জাতিক তদন্ত শুরু হয়, সেক্ষেত্রে তদন্তকারী দলকে সহায়তা করতেও প্রস্তুত আছে দেশটি। সূত্র: এনডিটিভি

মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। 

সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, ভারত সিন্ধু নদের পানিচুক্তি বাতিলের অজুহাত হিসেবে পেহেলগাঁওয়ে হামলাকে ব্যবহার করছে এবং কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ, তদন্ত ছাড়াই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

“আমরা চাই না যে যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠুক। কারণ এমন পরিস্থিতি দেখা দিলে সেটি এই পুরো অঞ্চলের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে,” দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন খাজা আসিফ।

প্রসঙ্গত, এক সপ্তাহ আগে ইসলামাবাদে এক অনুষ্ঠানে কাশ্মিরকে পাকিস্তানের ‘গলার ধমনী’ বলে উল্লেখ করে দেশটির সেনাপ্রধান বলেছিলেন, পুরো জম্মু ও কাশ্মির অবশ্যই একদিন পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হবে।

তার এই বক্তব্যের কয়েক দিনের মধ্যে, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামের বৈসরণ উপত্যকায় পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ জঙ্গি হামলা ঘটে। এতে নিহত হন ২৫ জন ভারতীয় এবং ১ জন নেপালি পর্যটক।

হামলার দায় স্বীকার করে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, কাশ্মিরের বৃহত্তম বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বা’র (এলইটি) একটি উপশাখা এই টিআরএফ। প্রসঙ্গত, লস্কর-ই তৈয়বার সঙ্গে একসময় আঁতাত ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর।

তবে সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ জানিয়েছেন, লস্কর-ই তৈয়বা এখন সম্পূর্ণ পঙ্গু ও অকার্যকর একটি গোষ্ঠী এবং পাকিস্তানের ভূখণ্ড থেকে ভারতে এত বড় হামলা সংগঠিত করার মতো ক্ষমতা আর গোষ্ঠীটির নেই।

“লস্কর-ই তৈয়বার যারা এখনও জীবিত আছেন, তাদের কেউ কারাগারে আছেন, কেউ বা গৃহবন্দি। এই গোষ্ঠীটির কেউই এখন আর সক্রিয় নয় এবং পাকিস্তানে তাদের কোনো সাংগঠনিক তৎপরতাও নেই,” দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন খাজা আসিফ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীরে হামলা: ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ সম্পর্কে যা জানা গেল

ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে গত মঙ্গলবার যে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হয়েছে তার দায় স্বীকার করে আলোচনায় এসেছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)।

এই হামলায় কমপক্ষে ২৬ পর্যটক নিহত হন এবং আরও একাধিক ব্যক্তি আহত হন। হামলার খবর যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টেলিভিশনের পর্দায় ছড়িয়ে পড়েছে, তখন টেলিগ্রাম বার্তায় হামলার দায় স্বীকার করেছে সশস্ত্রগোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। সুত্র: আল-জাজিরা।

২০১৯ সালে কাশ্মীর অঞ্চলে স্বল্প-পরিচিতি সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। ভারত থেকে কাশ্মীরকে আলাদা করতে লড়াই করা সশস্ত্র বিদ্রোহীরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটকদের ওপর তেমন কোনো হামলা চালায়নি। 

হামলার প্রেক্ষাপট

মঙ্গলবার বিকেলে পেহেলগামের বৈসরণে ঘুরতে আসা পর্যটকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বন্দুকধারীরা পার্শ্ববর্তী জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। নিহতদের সকলেই পুরুষ এবং বহিরাগত পর্যটক ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ওই দিনই শ্রীনগরে পৌঁছান এবং গোটা অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীরা শোকবার্তা জানান এবং এই হামলার তীব্র নিন্দা জানান।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, এই জঘন্য হামলার পেছনে যারা আছে, তাদের কাউকেই ছেড়ে দেওয়া হবে না, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

তবে দায় স্বীকার করা সশস্ত্র গোষ্ঠী টিআরএফ এর হামলাকারীরা পলাতক রয়েছে।

টিআরএফ: একটি উত্থানশীল সশস্ত্র সংগঠন

‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) মূলত নতুন প্রজন্মের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠন। ২০১৯ সালে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বা ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির পর এই জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থেকে গোষ্ঠীটি নিজেদের পরিচিতি গড়ে তোলে। 

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, টিআরএফ আসলে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যা পাকিস্তান ভিত্তিক লস্কর-ই-তইবা ও হিজবুল মুজাহিদিনের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে। টিআরএফ তাদেরই ছদ্মবেশী রূপ, যা কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদের নামে ভারতে সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে।

টিআরএফের মূল দাবি

এদের মূল দাবি, কাশ্মীরকে ভারতের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনিক কাঠামোকে দুর্বল করতে তৎপর এই গোষ্ঠী। টিআরএফ এক বার্তায় জানিয়েছে, তারা বহিরাগতদের কাশ্মীরে স্থায়ী আবাসন অনুমোদনের বিরোধিতা করে। 

যদিও মঙ্গলবারের নিহতরা কেউ কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন না।

পূর্ববর্তী কার্যক্রম ও নিরাপত্তা হুমকি

২০২০ সাল থেকে টিআরএফ নিয়মিতভাবে টার্গেট কিলিং এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যার মতো হামলার দায় স্বীকার করে আসছে। এদের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে রাজনৈতিক কর্মী, অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা সদস্য এবং ভারত সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা ব্যক্তিরাই নিহত হয়েছে। 

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে টিআরএফকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করে।

২০২৪ সালের জুনে টিআরএফ জম্মুর রেয়াসি এলাকায় হিন্দু তীর্থযাত্রী বহনকারী একটি বাসে হামলার দায় স্বীকার করে। সেই হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত এবং ৩৩ জন আহত হন। হামলার পর বাসটি খাদে পড়ে যায়।

গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনটি বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে গোপন আস্তানায় অবস্থান করছে এবং ছোট অস্ত্র ব্যবহার করে আশেপাশের এলাকায় হামলা চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

পেহেলগামের এই হামলা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের কাশ্মীর নীতির ওপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। ২০১৯ সালের পর থেকে সরকার বারবার কাশ্মীরে ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতি’ ফিরে আসার দাবি করে আসছিল, যার অংশ হিসেবে পর্যটন উৎসাহিত করার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। হামলার পরদিন থেকেই পর্যটনখাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিপুল সংখ্যক পর্যটক তাদের বুকিং বাতিল করেন এবং এলাকাছাড়া করার জন্য ভিড় করেন। শ্রীনগর বিমানবন্দরের পথে যানজট সৃষ্টি হয় এবং বিমানের ভাড়া তিনগুণেরও বেশি বেড়ে যায়। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাশ্মীরে হামলার আন্তর্জাতিক তদন্ত চান পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ
  • পেহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার আন্তর্জাতিক তদন্ত চেয়েছে পাকিস্তান
  • কাশ্মীরে হামলা: ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ সম্পর্কে যা জানা গেল
  • কাশ্মীর হামলার পেছনে কারা এই ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’