পেহেলগাম ঘটনার পর পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত বলে মনে করেন সাবেক ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। ভবিষ্যতে আইসিসি টুর্নামেন্টেও পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ না খেলতে চাইলে সেটিকেও সমর্থন করেন সৌরভ। শুক্রবার কলকাতায় সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন তিনি।

২২ এপ্রিল ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এ ঘটনায় পাকিস্তানের মদদ আছে বলে অভিযোগ ভারতের। গত কয়েক দিনে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, শুক্রবার কলকাতায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে সৌরভকে পেহেলগাম ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত বলে সব মহল থেকে যে আওয়াজ উঠেছে, সেটি নিয়ে জানতে চাইলে ভারত ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘১০০ ভাগ, এটা (পাকিস্তানের সম্পর্ক ছিন্ন) করা উচিত। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এটা কোনো তামাশা নয় যে বছর বছর এ রকম ঘটনা ঘটে চলবে।’

ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ক্রিকেট সম্পর্ক নেই এক দশকের বেশি সময়। ২০১৩ সালের পর দুই দেশ শুধু আইসিসি বা এসিসি টুর্নামেন্টে মুখোমুখি হয়েছে। ভারত–পাকিস্তানের ম্যাচে আয়ের সুযোগ বেশি থাকে বলে দুই দলকে একই গ্রুপেও রাখা হয়।

আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান নতুন সংঘাত: আইসিসি ও এসিসির সামনে কী অপেক্ষা করছে১৯ ঘণ্টা আগে

তবে পেহেলগাম ঘটনার পর বিসিসিআই নাকি বৈশ্বিক ও মহাদেশীয় টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বেও পাকিস্তানের সঙ্গে খেলার পক্ষপাতী নয়। এ নিয়ে ভারতের বোর্ড থেকে আইসিসির কাছে চিঠি পাঠানোর খবরও জানিয়েছে কোনো কোনো গণমাধ্যম।

২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো সৌরভের আরেকটি পরিচয়—বিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি। ২০১৯ থেকে ২০২২ সময়ে বোর্ড প্রধানের দায়িত্বে থাকা সৌরভ মনে করেন, বিসিসিআইয়ের বর্তমান কমিটি পাকিস্তানের সঙ্গে আইসিসি টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে না খেলার চেষ্টা চালালে সেটি ভুল হবে না, ‘বোর্ড (আইসিসিকে) চিঠি দিলে ঠিক করবে। সন্ত্রাসবাদ কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।’

চলতি বছরই আইসিসি ও এসিসির দুটি টুর্নামেন্ট আছে। সেপ্টেম্বরে হওয়ার কথা রয়েছে ছেলেদের এশিয়া কাপ, যার ভেন্যু এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ ছাড়া সেপ্টেম্বর–অক্টোবরে ভারতেই হওয়ার কথা মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। দুটি টুর্নামেন্টেরই গ্রুপিং এখনো ঠিক হয়নি।

আরও পড়ুনপাকিস্তানি অ্যাথলেটকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তোপের মুখে ভারতীয় অ্যাথলেট, দিলেন ব্যাখ্যা১৬ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইস স ম ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব ভাগ করার দাবি

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়াসহ বিভিন্ন পৃথক মন্ত্রণালয় থাকলেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয় দেখা হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাই প্রতিবন্ধীদের বিষয়গুলো দায়িত্ব ও অধিকারের চেয়ে কল্যাণ হিসেবে বেশি বিবেচিত হয়। যার ফলে এই জনগোষ্ঠী সমাজে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না।

আজ শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। ডিজঅ্যাবিলিটি রাইটস ওয়াচের (ডিআরডব্লিউ) উদ্যোগে এবং টিআইবির সহযোগিতায় ‘প্রতিবন্ধী নাগরিকদের আইনি অধিকার, সুরক্ষা, সকল প্রকার অবহেলা বঞ্চনা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধের দাবিতে’ এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারের বিষয়টি কল্যাণ বা চ্যারিটি নয়, এটা অধিকার। এ বিষয়ে মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। গত ৫৪ বছরে যে পরিবর্তন হয়েছে তা প্রত্যাশিত নয়। সরকারি অর্থায়নে যেসব ভবন, চলাচলের অবকাঠামো হয়েছে তা এখনো প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা হচ্ছে তা এই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রযোজ্য। কারণ, আন্দোলনের চেতনাই ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ডিআরডব্লিউ মো. জাহাঙ্গীর আলম। সেখানে তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সমস্যা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষা সংক্রান্ত দুটি মন্ত্রণালয় থাকলেও প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার বিষয়টি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এই শিশুদের শিক্ষাকে অধিকার হিসেবে না দেখে কল্যাণের দৃষ্টিতে দেখা হয়। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের জন্য কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করেনি, এমনকি বিদ্যমান কর্মসূচিগুলোতে তাদের সম্পৃক্ত করেনি। একইভাবে যুব মন্ত্রণালয়ও প্রতিবন্ধী যুবাদের নিয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করে না। ক্রীড়া, স্বাস্থ্যগত বিষয়ে মন্ত্রণালয় থাকলেও প্রতিবন্ধীদের এই বিষয়গুলো পরিচালিত হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এ বিষয়গুলো ভাগ করে পুনর্বিন্যাস না করলে প্রতিবন্ধীরা করুণার পাত্র হিসেবেই বিবেচিত হতে থাকবে। ডিআরডব্লিউ বলেছে, ২০০৮ সালে পেশ করা সুপারিশ অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ভাগ করে সংশোধন করতে হবে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি আচরণগত পরিবর্তন আনতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাখার দাবিও জানায় সংগঠনটি।

তাদের সুপারিশে আরও রয়েছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইনে বাস্তবায়নের জন্য  কমিটিগুলো সচল করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদ (সিআরপিডি) বাস্তবায়ন, এসডিজি কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের হিস্যা নিশ্চিতকরণ, প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক বাজেট প্রকাশ করা, সরকারি চাকরিতে শুধু প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা, প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন পুনর্গঠন করা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ক্রীড়া পরিষদ গঠন।

ডিআরডব্লিউর সভাপতি মনসুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ দেশে ২ কোটির বেশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে। যার মধ্যে অর্ধেক ভোটার। দেশে অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে এবং নতুন নতুন দল আসছে। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের পাশ কাটিয়ে উন্নয়ন হবে না। তাদের বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকা উচিত দলগুলোর ইশতেহারে। প্রতিবন্ধীরা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজে বাস করতে চায়।

গত ২ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ডিআরডব্লিউর প্রতিনিধিদল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়গুলো নিয়ে দেখা করেন। এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির সদস্যসচিব খন্দকার জহুরুল আলম বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো দেখবেন বলে তাঁদের জানানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কিছু জানে না এবং জানার চেষ্টাও করে না। মন্ত্রণালয় এখন আত্মতৃপ্তিতে আছে তারা ভাতা ৮৫০ টাকা করেছে। এই টাকায় জীবন চলে না এবং এই নির্ভরশীলতা খুব খারাপ। এটাকে দক্ষতা বৃদ্ধি করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রতিবন্ধী উন্নয়নবিষয়ক বিশেষজ্ঞ নাফিসুর রহমান বলেন, সমাজকল্যাণ যত দিন কল্যাণ মন্ত্রণালয় থাকবে তত দিন তারা কল্যাণ হিসেবেই নেবে, দায়িত্ব হিসেবে নয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ