জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারের নয়। এটা বাংলাদেশের গণমানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার ফলাফল। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনার উদ্দেশ্য থাকবে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা।

আজ শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের শুরুতে আলী রীয়াজ এ কথা বলেন।

চব্বিশের আন্দোলনে দেশ কতটা স্বাধীন হয়েছে, সেটা সময় বলে দেবে উল্লেখ করে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ৫৪ বছরে দেশের মানুষের ব্যাপক হতাশা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে মানুষ বঞ্চনার প্রতিবাদ জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চায়।

সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, চব্বিশের আন্দোলনের যারা এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে, তাদের পুনর্বাসনে অন্তর্বর্তী সরকার আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে পারত। সরকারের আরও অনেক কিছুই করার ছিল।

সংস্কারের জন্য গঠিত পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে আজ শনিবার জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

আরও পড়ুনপ্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ছিল বলেই ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল: আলী রীয়াজ২৪ এপ্রিল ২০২৫

অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা একটা সাম্যের বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছি। তাই আমাদের আলোচনার উদ্দেশ্য থাকবে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা।’

আরও পড়ুনআওতার মধ্যে থাকা প্রয়োজনীয় সংস্কার ইসি নিজেই করবে: সিইসি২৪ এপ্রিল ২০২৫

সংস্কারের উদ্যোগ শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নয় উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশের গণমানুষ সংস্কারের এই গুরুদায়িত্ব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমসহ প্রতিটি দায়িত্বশীল পক্ষকে অর্পণ করেছে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করতে চাই। যেখানে কোনো মানুষকে দ্বিতীয়বার বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুনের শিকার হতে হবে না।’

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন রাজনৈতিক দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জামায়াতের আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির। প্যানেল সদস্য হিসেবে আছেন মহিউদ্দিন সরকার।

আরও পড়ুনসংস্কার কি কোনো নির্দিষ্ট দলের এজেন্ডার বিষয়২৪ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনস্বল্প সময়ের মধ্যে ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি করতে চায় ঐকমত্য কমিশন১০ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ত য় সনদ ম হ ম মদ ইসল ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির বিপরীত মেরুতে জামায়াত

সংস্কারের মৌলিক বিষয়গুলোতে বিএনপির বিপরীত অবস্থানে থাকা জামায়াতে ইসলামী জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কমিশন কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হবে। 

সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কারে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন ১৬৬ সুপারিশ করেছে। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপর আলোচনা চলছে। জামায়াত ঐকমত্য কমিশনের ৭৭ সুপারিশে একমত, ৩৬ সুপারিশে আংশিক একমত জানিয়েছে। একমত নয় ৫৩ সুপারিশে। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সুপারিশে আংশিক একমত এবং একমত নয়, সেগুলো নিয়ে বৈঠক করছে কমিশন। কেন একমত না তাও জানতে চাইছেন তারা। 

প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমাতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। এটিকে মৌলিক সুপারিশ বলা হচ্ছে। বিএনপি এতে একমত না হলেও, প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তের পরিবর্তে এনসিসির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের সুপারিশে একমত জামায়াত। যদিও প্রস্তাবিত এনসিসিতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতিকে চায় না। সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে এনসিসিও বিলুপ্ত হবে বলে মতামত দিয়েছে জামায়াত। 

সংসদ নির্বাচনের ভোটের অনুপাতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব করেছে জামায়াত। নির্বাচনে যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, উচ্চকক্ষে তত শতাংশ আসন পাবে। বিএনপি দ্বিকক্ষের সংসদ গঠনে রাজি হলেও, ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষে রাজি নয়। জামায়াত উচ্চকক্ষের মতো নিম্নকক্ষও ভোটের অনুপাতে গঠনের মতামত দিয়েছে। নবগঠিত এনসিপি ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ চাইলেও, দলটি বিদ্যমান আসন ব্যবস্থা অনুযায়ী নিম্ন কক্ষ নির্বাচন চায়। 

কমিশন সুপারিশ করেছে, ৪০০ আসনের নিম্নকক্ষের ১০০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত থাকবে। জামায়াত এতে রাজি নয়। দলটি মতামত দিয়েছে, ৫০টি নারী আসন ভোটের অনুপাতে ভাগ হবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বয়স কমিয়ে ২১ নির্ধারণেও একমত জামায়াত। 

জামায়াত সংবিধান সংস্কার কমিশনের ৭০ সুপারিশের ৩১ সুপারিশে একমত, ১৬ সুপারিশে আংশিক একমত এবং ২৩ সুপারিশে একমত নয় বলে জানিয়েছে। দলটি বিচার বিভাগ সংস্কারের ২৩ সুপারিশের একটি বাদে বাকিগুলোতে একমত বা আংশিক একমত। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের ২৭ সুপারিশের ১০টিতে একমত নয় বলে জানিয়েছে। সুপারিশে মতামত দেওয়া ছাড়া জামায়াত নিজে থেকে কিছু প্রস্তাব দিয়েছে কমিশনে। বিএনপির মতো জামায়াতও ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে, সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ চায় না। উভয় দল মূলনীতি হিসেবে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহাল চায়। 
বিএনপির সঙ্গে ১৭ এপ্রিল, ২০ এবং ২২ এপ্রিল তিন দিনব্যাপী বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। জামায়াতের সঙ্গেও একাধিক বৈঠক হতে পারে। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ সমকালকে বলেন, জামায়াত দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠে সংস্কার চায়। এমনভাবে সংস্কার হতে হবে, আর যাতে ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসন ফিরতে না পারে। নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগ-রাষ্ট্রের তিন স্তম্ভের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। 

 


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ সব স্তরের মানুষের কাছ থেকে এসেছে: আলী রীয়াজ
  • রাষ্ট্রপতি ও সংসদের মেয়াদের বদল চায় না জামায়াত
  • বিএনপির বিপরীত মেরুতে জামায়াত
  • কিছু সংস্কার প্রস্তাবে অভিন্ন অবস্থান ইসি ও বিএনপির
  • সংস্কার কি কোনো নির্দিষ্ট দলের এজেন্ডার বিষয়
  • ঐকমত্য সংস্কার কমিশনের দিকে তাকিয়ে থাকবে না ইসি: সিইসি
  • আওতার মধ্যে থাকা প্রয়োজনীয় সংস্কার ইসি নিজেই করবে: সিইসি
  • ইসি ঐকমত্য সংস্কার কমিশনের দিকে তাকিয়ে থাকবে না: সিইসি 
  • ইসি ঐক্যমত্য সংস্কার কমিশনের দিকে তাকিয়ে থাকবে না: সিইসি