বাস্তবসম্মত সংস্কারে সহযোগিতা করবে জামায়াত: আব্দুল্লাহ তাহের
Published: 26th, April 2025 GMT
গঠনমূলক, ইতিবাচক, বাস্তবসম্মত সংস্কারে জামায়াতে ইসলামী পূর্ণ সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেছেন, দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর বিষয়ে আমরা দলীয় ও ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে চাই না। দেশ ও জাতির জন্য যেটা কল্যাণকর সেই কাজে, সেই পরিবর্তন ও সংস্কারে জামায়াত পরিপূর্ণভাবে ঐকমত্য পোষণ করে। আলোচনার ভিত্তিতে আরও কিছু প্রয়োজন হলে আমরা করবো। শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।
জাতি নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায় মন্তব্য করে সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ৫৪ বছরের বাংলাদেশের ব্যাপারে মানুষের ভেতরে ব্যাপক হতাশা আছে। তারা কিছুটা হলেও বঞ্চিত। বাংলাদেশিরা বীর জাতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যখনই বঞ্চিত হয়েছি, তার প্রতিবাদে প্রতিরোধ হয়েছে। মানুষ রক্ত ও জীবন দিয়ে পরিবর্তন করেছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হলেও স্বাধীনতা পায়নি। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ সংগ্রাম, লড়াই যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম কিন্তু স্বাধীন হইনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু আসলেই স্বাধীন হয়েছি কিনা সময় বলে দেবে।
তিনি বলেন, আমরা যারা নেতৃত্বে ছিলাম তারা মানুষের ত্যাগ ও প্রয়োজনকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আশা করি, নতুন যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা যেন অতীতের মতো হারিয়ে না যায়। সে জন্য আমাদের অনেক বেশি সাবধান হতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। মৌলিক বিষয়গুলো সংশোধনের জন্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছে উল্লেখ করেন আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামী দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ মন্তব্য করে তাহের বলেন, আমরা কোনো রাষ্ট্রের রক্তচক্ষুকে ভয় করি না। আমাদের স্বাধীনতার প্রশ্নে কারও হস্তক্ষেপ করতে কাউকে দেব না।
গ্রহণযোগ্য ও টেকসই গণতন্ত্রের চর্চা জামায়াতে ইসলাম সাংগঠনিকভাবে করে থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দলে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হয়, সেটা প্রচারণা, প্রার্থী ছাড়া এবং প্যানেল ছাড়া গোপন ব্যালেটে হয়। আমাদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নো ক্যাম্পেইন, নো ক্যান্ডিডেট।
তিনি বলেন, আমরা দেশে এমন নির্বাচন চাই যাকে দেশের মানুষ নির্বাচন বলবে, দুনিয়া নির্বাচন বলবে। গত তিন মেয়াদে দেশে কোনো ধরনের নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় থাকায় দেশে নৈরাজ্য হয়েছে, যার পরিণতি সমগ্র জাতি ভোগ করছি। আমরা এটার পুনরাবৃত্তি চাই না। আমরা স্বচ্ছ ও সঠিক নির্বাচন চাই। এ ব্যাপারে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।
জামায়াত দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চায় জানিয়ে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বাংলাদেশের আজকের দুরাবস্থার পেছনে দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি দায়ী। মানুষ দুর্নীতি না করলে দেশে নৈরাজ্য হওয়ার সুযোগ নেই। ভোট ছাড়া নির্বাচিত হওয়া হচ্ছে বড় দুর্নীতি। পরিশ্রম ছাড়া টাকা আয় করা দুর্নীতি। উন্নয়নের নামে টাকা পকেটস্থ করা দুর্নীতি। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ জামায়াতের অঙ্গীকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলে আছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, কার্যনিবার্হী সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আজাদ, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, শিশির মুনির, মহিউদ্দিন সরকার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ম য় ত ইসল ম স ব ধ নত আম দ র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
কিছু সংস্কার প্রস্তাবে অভিন্ন অবস্থান ইসি ও বিএনপির
নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দায়বদ্ধ করতে কয়েকটি নতুন বিধান করার প্রস্তাব দিয়েছিল নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এসবে আপত্তি জানিয়ে ইসি বলেছিল, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা খর্ব হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচন কমিশনের দায়দায়িত্ব নির্ধারণ–সংক্রান্ত এসব প্রস্তাবে বিএনপিও একমত হয়নি। এ ক্ষেত্রে বিএনপি ও ইসির অবস্থান অভিন্ন।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনার লক্ষ্যে প্রস্তাব তৈরির জন্য গত অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর একটি ছিল বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এ কমিশন গত ১৫ জানুয়ারি সুপারিশের সারসংক্ষেপ এবং ৮ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়। তারা ১৬টি ক্ষেত্রে দুই শতাধিক সুপারিশ করেছে।
আরও পড়ুন২০২৫-এর মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপি ও বিভিন্ন দল ২২ ডিসেম্বর ২০২৪সংস্কার কমিশনের সুপারিশের একটি ক্ষেত্র ছিল ‘নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা’। বিদ্যমান আইনে কোথাও সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতার বিষয়টি সেভাবে স্পষ্ট করা নেই। নির্বাচন কমিশনের আইনি, আর্থিক ও প্রশাসনিক প্রস্তাব কোনো মন্ত্রণালয়ের বদলে জাতীয় সংসদের স্পিকারের নেতৃত্বে একটি সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির কাছে উপস্থাপনের বিধান করার সুপারিশ করে সংস্কার কমিশন। এতে বলা হয়, সংসদীয় কমিটি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রস্তাবগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠাবে।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশের একটি ক্ষেত্র ছিল ‘নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা’। বিদ্যমান আইনে কোথাও সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতার বিষয়টি সেভাবে স্পষ্ট করা নেই।এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের মেয়াদকালে কমিশনারদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে তা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে সুরাহা করার বিদ্যমান বিধান কার্যকর করা এবং মেয়াদ-পরবর্তী সময়ে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা বা শপথ ভঙ্গের অভিযোগ এলে তা তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করার জন্য সংসদীয় কমিটিকে ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করে সংস্কার কমিশন।
সংস্কার কমিশনের এসব সুপারিশ বা প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি আছে নির্বাচন কমিশনের। সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সারসংক্ষেপ প্রকাশের পর গত ২৬ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছিলেন, সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে ইসির স্বাধীনতা খর্ব হবে। সেদিন তিনি মূলত ইসির অর্থ বরাদ্দ, মেয়াদ-পরবর্তী সময়ে ইসির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে, তা তদন্তে সংসদীয় কমিটিকে ক্ষমতা দেওয়া এবং সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন।
পরে ১৭ মার্চ সংস্কার কমিশনের ২৮টি সুপারিশের বিষয়ে নিজেদের ভিন্নমত তুলে ধরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে চিঠি দেয় ইসি। সেখানেও দায়বদ্ধ করার সুপারিশের সঙ্গে ভিন্নমত জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইসি চিঠিতে বলেছে, তাদের অর্থনৈতিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে সংসদীয় কমিটিকে ক্ষমতা দেওয়া হলে উদ্দেশ্যমূলক প্রভাব বাড়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া এটি সংসদীয় কমিটির কাজ নয়, এটি নির্বাহী কাজ। আর সংসদীয় কমিটিকে তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হলে ইসির স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে। মেয়াদ–পরবর্তী সময়ে অভিযোগ এলে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।
নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছিলেন, সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে ইসির স্বাধীনতা খর্ব হবে। সেদিন তিনি মূলত ইসির অর্থ বরাদ্দ, মেয়াদ-পরবর্তী সময়ে ইসির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে, তা তদন্তে সংসদীয় কমিটিকে ক্ষমতা দেওয়া এবং সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন।বিএনপির অবস্থানইসিকে দায়বদ্ধ করার প্রস্তাবের বিষয়ে বিএনপির অবস্থানও ইসির মতো। গত মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো নিয়ে বিএনপির আলোচনা হয়। সেখানে দলটি ইসিকে সংসদীয় কমিটির কাছে দায়বদ্ধ করার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়নি। বিএনপি বলছে, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের নতুন করে সংসদীয় কমিটির কাছে দায়বদ্ধ করা ঠিক হবে না। আর এমন কোনো বিধান করাও উচিত হবে না, যাতে ইসির স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হতে পারে।
সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে ভবিষ্যতে আলাদা একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছিল সংস্কার কমিশন। এ প্রস্তাবে ভিন্নমত দিয়ে ঐকমত্য কমিশনে দেওয়া চিঠিতে ইসি বলেছিল, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। এটি সরিয়ে নিলে ইসির সাংবিধানিক ক্ষমতা খর্ব হবে। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপিও একই ধরনের অবস্থান তুলে ধরে।
ইসিকে দায়বদ্ধ করার প্রস্তাবের বিষয়ে বিএনপির অবস্থানও ইসির মতো। গত মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো নিয়ে বিএনপির আলোচনা হয়। সেখানে দলটি ইসিকে সংসদীয় কমিটির কাছে দায়বদ্ধ করার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়নি।গত মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, সংসদীয় কমিটির কাছে ক্ষমতা দেওয়া হলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন সত্তায় আঘাত আসতে পারে। নির্বাচন কমিশনের মেয়াদকালে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে এবং মেয়াদ-পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। আর সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ ইসির সাংবিধানিক এখতিয়ার। এখানে আরেকটি বডি করা হলে একসঙ্গে দুটি সত্তা হয়ে যাবে।
ইসির দায়িত্ব–সংক্রান্ত প্রস্তাবে আপত্তিনির্বাচন কমিশনের কিছু দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার প্রস্তাব ছিল সংস্কার কমিশনের। একটি হলো নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সত্যায়ন করা। এ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জাতীয় নির্বাচন শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে (ফলাফল গেজেটে প্রকাশের আগে) ইসি নির্বাচনের সুষ্ঠুতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে ‘সার্টিফাই’ করে তা গণবিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশের বিধান করতে হবে।
ইসির এ ঘোষণায় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো রাজনৈতিক দল সংক্ষুব্ধ হলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে অভিযোগ করতে পারবে। কাউন্সিল বা আদালত সর্বোচ্চ সাত কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করবে।
এ প্রস্তাবের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনে লিখিতভাবে ভিন্নমত জানায় ইসি। তারা মনে করে, এ প্রস্তাব অপ্রয়োজনীয়। কারণ, কমিশন সন্তুষ্ট হয়েই ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে। এ ধরনের বিধান করা হলে রাজনৈতিক দল অহেতুক নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ পাবে।
এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে, তারা নিজেরা চর্চা করে। তাই তারা রাজনৈতিক দলের চেয়ে এসব ভালো বোঝে। সংস্কার প্রস্তাবগুলো বিএনপি নিজেদের মতো করে বিশ্লেষণ করেছে। বিশ্লেষণে হয়তো ইসির সঙ্গে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি মিলেছে। অন্য কিছু নয়।সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপি নেতাবিএনপির সূত্র জানায়, সংস্কার কমিশনের এ প্রস্তাবের সঙ্গে তারাও একমত হয়নি। দলটির যুক্তি হলো, ভোট গ্রহণের দিন প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা কেন্দ্রভিত্তিক তাৎক্ষণিক ফলাফল ঘোষণা করেন এবং রিটার্নিং কর্মকর্তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে এবং নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিক নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে চূড়ান্ত ফলাফল প্রাপ্তিসাপেক্ষে ইসি সন্তুষ্ট হয়ে গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রার্থীর নাম–ঠিকানা প্রকাশ করে থাকে। এই গেজেটই ‘সার্টিফিকেশন’। এ ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফলের সত্যায়নের বিধান করা হলে অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
বিএনপি আরও বলেছে, নির্বাচনের সুষ্ঠুতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে কোনো রাজনৈতিক দল সংক্ষুব্ধ হলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলে বা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে অভিযোগ দায়েরের সুযোগ সৃষ্টি করা হলে নির্বাচনী কার্যক্রম চূড়ান্তকরণে জটিলতা দেখা দেবে। রাজনৈতিক দল এ ধরনের অভিযোগ দাখিলের আইনি সুবিধা পেলে নির্বাচনী কার্যক্রম চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে না। নির্বাচনে প্রার্থী বা সংক্ষুব্ধ পক্ষের অভিযোগ দায়েরের বিধান আছে, রাজনৈতিক দলের নয়।
ইসিকে দায়বদ্ধ করা ও তাদের দায়দায়িত্ব–সংক্রান্ত সুপারিশের বিষয়ে বিএনপি ও ইসির অবস্থান অনেকটা অভিন্ন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে, তারা নিজেরা চর্চা করে। তাই তারা রাজনৈতিক দলের চেয়ে এসব ভালো বোঝে। সংস্কার প্রস্তাবগুলো বিএনপি নিজেদের মতো করে বিশ্লেষণ করেছে। বিশ্লেষণে হয়তো ইসির সঙ্গে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি মিলেছে। অন্য কিছু নয়।
সংস্কার কমিশনের একটি সূত্র জানায়, অতীতের নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ইসি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ওপর দায় চাপিয়ে দেয়। নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট হয়ে যাওয়ার পর কিছু করার থাকে না, এই যুক্তি দিয়ে এসেছে ইসি। এ কারণে তারা ‘সার্টিফিকেশন’ এর প্রস্তাব করেছে।সংস্কার কমিশনের সুপারিশ কেননির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। ওই কমিশনের সূত্র জানায়, বিদ্যমান আইনে ইসিকে দায়বদ্ধ করার স্পষ্ট কোনো বিধান না থাকায় অতীতে, বিশেষ করে সর্বশেষ তিনটি জাতীয় নির্বাচনে অনেক অন্যায় করেও ইসি পার পেয়ে গেছে। এ কারণে সংস্কার কমিশন ইসিকে দায়বদ্ধ করার বিষয়ে কয়েকটি সুপারিশ করেছে।
সংস্কার কমিশনের একটি সূত্র জানায়, অতীতের নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ইসি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ওপর দায় চাপিয়ে দেয়। নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট হয়ে যাওয়ার পর কিছু করার থাকে না, এই যুক্তি দিয়ে এসেছে ইসি। এ কারণে তারা ‘সার্টিফিকেশন’ এর প্রস্তাব করেছে।
সংসদীয় কমিটির কাছে তদন্তের ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ইসির জন্য এ ধরনের দায়বদ্ধতার কাঠামো অনেক দেশেই আছে। কারণ, একটি গণতান্ত্রিক দেশে কেউই দায়বদ্ধতার ঊর্ধ্বে নয়। আর দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠানকে অন্যায় আচরণ থেকে দূরে রাখে।