যুক্তরাজ্যের প্রিন্স অ্যান্ড্রু এবং কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক ও নারী পাচারকারী জেফরি এপস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনা নারী ভার্জিনিয়া জিউফ্রির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৪১ বছর বয়সী এই নারী আত্মহত্যা করেছেন।

যৌন নিপীড়নের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত জেফরি এপস্টেইন ও তাঁর সাবেক প্রেমিকা জিসলেন ম্যাক্সওয়েলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে জোরালো ও প্রকাশ্য অভিযোগকারীদের একজন ছিলেন জিউফ্রি। তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁর বয়স যখন ১৭ বছর ছিল, তখন তাঁকে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রুর কাছে নেওয়া হয়েছিল। তবে প্রিন্স অ্যান্ড্রু এসব অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন।

জিউফ্রির পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল শুক্রবার একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘তিনি (জিউফ্রি) যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একজন সাহসী যোদ্ধা ছিলেন এবং নির্যাতনের চাপ সহ্য করাটা তাঁর পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল না। জীবনভর যৌন নিপীড়ন ও পাচারের শিকার হয়ে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।’

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় নিজের খামারবাড়িতে মারা গেছেন এই নারী। তিনি তিন সন্তানের মা ছিলেন।

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ বলছে, শুক্রবার রাতে নিরগ্যাবি এলাকার একটি বাড়িতে এক নারীর অচেতন অবস্থায় থাকার খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যায়।

পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৪১ বছর বয়সী ওই নারীকে ঘটনাস্থলেই মৃত ঘোষণা করা হয়।’

জিউফ্রির মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ‘এটি সন্দেহজনক মৃত্যু নয়।’

তিন সপ্তাহ আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট দেন জিউফ্রি। সেখানে তিনি একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার কথা লিখেছিলেন। যদিও পরিবার পরে জানায়, এটা প্রকাশ করার ইচ্ছা তাঁর ছিল না। স্থানীয় পুলিশ পরে দুর্ঘটনার তীব্রতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে।

প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে আনার পর আলোচনায় এসেছিলেন জিউফ্রি। তিনি মি টু আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

জিউফ্রি অভিযোগ করেছিলেন, এপস্টেইন ও জিসলেন ম্যাক্সওয়েল তাঁকে কিশোর বয়সে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর কাছে পাচার করেছিলেন।

আরও পড়ুনকিশোরীদের নিয়ে এপস্টেইনের ব্যক্তিগত দ্বীপে সময় কাটান প্রিন্স অ্যান্ড্রু০৬ জানুয়ারি ২০২৪

যদিও প্রিন্স অ্যান্ড্রু সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ২০২২ সালে তিনি জিউফ্রির সঙ্গে আদালতের বাইরে রফাদফা করেন। এর অংশ হিসেবে এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রিন্স অ্যান্ড্রু দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে তিনি কোনো দোষ স্বীকার বা ক্ষমা প্রার্থনা করেননি।

মার্কিন নাগরিক জিউফ্রি বলেছিলেন, ২০০০ সালে ব্রিটিশ অভিজাত সমাজের পরিচিত মুখ ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। এরপর তিনি এপস্টেইনের সঙ্গে পরিচিত হন এবং বহু বছর ধরে তাঁর ও তাঁর সহযোগীদের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হন।

যুক্তরাজ্যের বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লসের ছোট ভাই প্রিন্স অ্যান্ড্রু। প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপ তাঁর মা-বাবা। যৌন অপরাধের মামলায় বিচারের অপেক্ষায় থাকা জেফরি এপস্টেইন ২০১৯ সালে আত্মহত্যা করেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র কর ছ ন র বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

অন্য অভিবাসীদের আটকে দিলেও দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আনতে চান ট্রাম্প

যেখানে অন্য শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে অথবা প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে, সেখানে দেশটির কর্মকর্তারা দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন যাচাই–বাছাই করার জন্য তাঁদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। শ্বেতাঙ্গদের দাবি, তাঁরা দক্ষিণ আফ্রিকায় ভূমি নিয়ে বিরোধ, অপরাধ ও বর্ণবাদের শিকার হচ্ছেন।

এ কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার এসব শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনা করছেন। এমন কয়েকজন আবেদনকারী প্রিটোরিয়ায় প্রথম দফা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওই সাক্ষাৎকার তাঁদের কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে। কর্মকর্তারা তাঁদের এবং তাঁদের নিপীড়নের বর্ণনার প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানা আছে এমন এক ব্যক্তি বলেছেন, ৩০ জনের বেশি আবেদনকারী এরই মধ্যে অনুমোদন পেয়েছেন।

মার্ক নামে দক্ষিণ আফ্রিকার একজন কৃষক বলেছেন, ‘দূতাবাসের কর্মীরা অসাধারণ বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন। আমি তাঁদের মধ্যে থাকা সহানুভূতি অনুভব করতে পারছিলাম।’

যেহেতু প্রক্রিয়াটি গোপনীয়, তাই মার্ক চাননি তাঁর পুরো নাম প্রকাশ করা হোক।

ট্রাম্প প্রশাসন ও প্রিটোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে বা কতজনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে এবং কতজনকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। ওই আদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানার শরণার্থীদের পুনর্বাসনের আহ্বান জানানো হয়। ওই আদেশে বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানাররা অন্যায্য জাতিগত বৈষম্যের শিকার।

দক্ষিণ আফ্রিকার যেসব নাগরিকের আদিপুরুষ ইউরোপ, বিশেষ করে নেদারল্যান্ডস থেকে এসে দেশটিতে বসতি স্থাপন করছেন, তাঁদের আফ্রিকানার বলা হয়। দেশটিতে বাণিজ্যিকভাবে কৃষি উৎপাদনের অনেকটাই আফ্রিকানারদের নিয়ন্ত্রণে।

দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানারদের নিয়ে ওই আদেশ জারির আগে নিরাপত্তা ও ব্যয় কমানোর কথা বলে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়ার সব আবেদনপ্রক্রিয়া স্থগিত করে দেন। এতে আবেদন যাচাই করা হয়েছে এবং অনুমোদন দেওয়া হয়েছে—এমন অনেক আফগান ও গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোর নাগরিকসহ অন্যান্যের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ আটকে যায়। এসব আশ্রয়প্রার্থী নিজ দেশের লড়াই-সংঘাত থেকে প্রাণে বাঁচতে শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন।

তাঁদের আবেদনপ্রক্রিয়া স্থগিত করে কেন দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়ার আবেদনের দিকে ট্রাম্প প্রশাসন অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

ট্রাম্পের প্রভাবশালী উপদেষ্টাদের একজন ইলন মাস্ক। মাস্ক দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ বংশোদ্ভূত। মাস্কের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়, শৈশবও সেখানেই কাটিয়েছেন।

আরও পড়ুনদক্ষিণ আফ্রিকার নিপীড়িত শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের নিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক শ্বেতাঙ্গের মতো মাস্কও দাবি করেন, দেশটিতে শ্বেতাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। এমনকি তাঁরা ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যার’ শিকার। কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় উগ্র ডানপন্থীদের মধ্যে এই দাবি ছড়িয়ে পড়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘দীর্ঘ দিন ধরে যাঁরা কৃষিকাজ করছেন, তাঁদের সঙ্গে ভয়ংকর আচরণ করা হচ্ছে’—এমন অভিযোগ তুলে ট্রাম্প দেশটির জন্য ত্রাণসহায়তা বন্ধ করে দিয়েছেন। এখানে দীর্ঘদিনের চাষি বলতে ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানার কৃষকদের কথা বলেছেন।

আরও পড়ুনআফ্রিকার সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের প্রস্তাব ট্রাম্পের০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার বলছে, দেশটির শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের মধ্যে ৬০ শতাংশ আফ্রিকানার। তাঁরা দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ৭ দশমিক ২ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক একাডেমিক জার্নাল দ্য রিভিউ অব পলিটিক্যাল ইকোনমির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকায় গড়ে একটি শ্বেতাঙ্গ পরিবার একটি কৃষ্ণাঙ্গ পরিবার থেকে ২০ গুণ বেশি সম্পদের মালিক। শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বেকারত্বের হারও কয়েক গুণ বেশি।

দক্ষিণ আফ্রিকার তিন-চতুর্থাংশ ব্যক্তিমালিকানার ভূমি এখনো শ্বেতাঙ্গদের মালিকানায় এবং তাদের উচ্ছেদের চেষ্টার কোনো লক্ষণও নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘চার্মিং’ থাকার উপায় জানালেন জয়া আহসান
  • রাঙামাটিতে অটোরিকশা-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৫
  • রাঙামাটিতে অটোরিকশা ও পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৫
  • এক্সপ্রেসওয়েতে ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়লেন দুই মোটরসাইকেল আরোহী, একজনের মৃত্যু
  • প্যারিস জ্যাকসনের জীবনের করুণ অধ্যায় সম্পর্কে জানেন?
  • নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ
  • লেখক যখন শল্যচিকিৎসক
  • ফেরার ইঙ্গিত দিলেন শুভ
  • অন্য অভিবাসীদের আটকে দিলেও দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আনতে চান ট্রাম্প