শ্রমিকের জন্য স্বাস্থ্য কার্ড, আবাসনের জন্য তহবিল গঠনের সুপারিশ
Published: 26th, April 2025 GMT
শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য শিল্পাঞ্চলে হাসপাতাল স্থাপন ও ‘শ্রমিক স্বাস্থ্য কার্ড’ চালুর সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া স্বল্পমূল্যে আবাসন নিশ্চিতে ‘শ্রমিক আবাসন তহবিল’ গঠনের পাশাপাশি স্বল্পসুদে গৃহঋণ ও আবাসন ভর্তুকির জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে কমিশন।
রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) ও বাইরের শ্রমিকদের জন্য একক শ্রম আইন প্রণয়নের কথাও বলা হয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে। কমিশন বলেছে, ইপিজেডের জন্য যদি আলাদা শ্রম আইন করতেও হয়, তবে সেটি যেন সাধারণ শ্রম আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদের নেতৃত্বাধীন শ্রম সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেয় ১৮ সদস্যের শ্রম সংস্কার কমিশন। ‘শ্রম জগতের রূপান্তর-রূপরেখা: শ্রমিক অধিকার, সুসমন্বিত শিল্প সম্পর্ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে মোট ২৫টি সুপারিশ রয়েছে।
শ্রম সংস্কার কমিশন বিভিন্ন খাতের শ্রমিকের মজুরি তিন বছর পরপর মূল্যায়ন ও পুনর্নির্ধারণ, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মজুরি না দিলে ক্ষতিপূরণ, মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের জন্য আপৎকালীন তহবিল, ট্রেড ইউনিয়ন করার শর্ত শিথিল, স্থায়ী কাজের জন্য আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধ, নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস, স্থায়ী শ্রম কমিশন প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সুপারিশ করেছে।
শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও আবাসনসুবিধা
শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের জন্য নির্দিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসা, সঠিক পরামর্শ ও সেবা নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রমিকের প্রয়োজন বিবেচনায় হাসপাতালে বিনা মূল্যে সন্ধ্যাকালীন সেবা থাকতে হবে। শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য শ্রমিক স্বাস্থ্য কার্ড চালু করতে হবে, যা তাঁদের স্বাস্থ্যতথ্য ও প্রাপ্য সুবিধাদি গ্রহণে সাহায্য করবে; পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টা টোল ফ্রি টেলিমেডিসিন সেবা দিতে হবে, যাতে শ্রমিকেরা যেকোনো সময় স্বাস্থ্যসংক্রান্ত পরামর্শ নিতে পারেন। এ ছাড়া শ্রমিকেরা যাতে কম খরচে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারেন, সে জন্য সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যবিমা চালু করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
আমরা কোনো অবাস্তব সুপারিশ করিনি। সব শ্রমিকের জন্য ন্যূনতম সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করেছে কমিশন। শুরুতে কোন কাজগুলো বাস্তবায়ন করা যায় এবং কোন মন্ত্রণালয় কীভাবে সেগুলো করতে পারে, তার একটি রূপরেখা আমরা দেবসৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধানস্বল্পমূল্যে আবাসন নিশ্চিতে ‘শ্রমিক আবাসন তহবিল’ গঠনের পাশাপাশি স্বল্পসুদে গৃহঋণ ও আবাসন ভর্তুকির জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে। কমিশন বলছে, শ্রমিকদের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বল্পসুদে গৃহঋণের সুবিধা চালু করা দরকার; পাশাপাশি শ্রমিকের আবাসন নিশ্চিতে শিল্পমালিককে উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেওয়ার জন্য একটি নীতিমালা করতে হবে। এ ছাড়া ‘শ্রমিক আবাসন নীতি’ করে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে শিল্পাঞ্চল ও শ্রমঘন এলাকায় সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা দরকার।
সব কর্মস্থল বা অঞ্চলভিত্তিক শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র বা ডে-কেয়ারের ব্যবস্থা চালু করতে আইন সংশোধনের সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। এ বিষয়ে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারখানা বা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ডে-কেয়ারের পাশাপাশি শিল্পাঞ্চল ও শ্রমিকের বসবাসের এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে কমিউনিটি-ভিত্তিক ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করতে হবে। ডে-কেয়ার পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান, স্থানীয় সরকার ও সমবায় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি সমন্বিত কাঠামো তৈরিরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
শিশুশ্রম নিরসনে রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে কর্মে নিয়োজিত হওয়ার বয়স ১৬ বছরে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর–তরুণদের এমন কাজে নিয়োগের সুযোগ থাকা উচিত, যা তাদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়ক। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে শ্রম মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
ক্ষতিপূরণের শর্ত শিথিল
বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। এটি অপ্রতুল উল্লেখ করে ক্ষতিপূরণের হার বৃদ্ধি করে সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে কমিশন। এ ছাড়া মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণের জন্য দুই বছরের চাকরির শর্ত বাতিল করে এক বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। চাকরি থেকে বরখাস্তের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার বিধান বাতিল শ্রমিকের পূর্ববর্তী চাকরির ভিত্তিতে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ বা গ্র্যাচুইটি ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিতেরও প্রস্তাব করা হয়। কমিশন বলেছে, শ্রমিকের চাকরি যেভাবেই শেষ হোক না কেন, সবার জন্য গ্র্যাচুইটি বা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আইনি নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে হবে।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেকোনো শিল্প খাত, বিশেষায়িত শ্রম অঞ্চল, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক এবং কাজের ধরন–নির্বিশেষে সব শ্রমিকের জন্য সমানভাবে শ্রম আইনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এই লক্ষ্য অর্জনে বিদ্যমান শ্রম আইনের ব্যাপক সংস্কার অথবা নতুন ও সমন্বিত এক বা একাধিক শ্রম আইন প্রণয়ন করতে হবে। শ্রম আইনের সবক্ষেত্রে ‘মালিক’ শব্দের পরিবর্তে ‘নিয়োগকারী’ শব্দটি ব্যবহার করতে হবে।
রাইড শেয়ার করা চালকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে শ্রম অধিকার, ন্যায্য মজুরি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে কমিশন। একই সঙ্গে রাইড শেয়ারিংয়ে কোম্পানিগুলোর কমিশনের হার যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনা, বিশেষ মজুরি কাঠামো নির্ধারণ, শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট স্থগিত বা বাতিল করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।
এসব সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা কোনো অবাস্তব সুপারিশ করিনি। সব শ্রমিকের জন্য ন্যূনতম সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করেছে কমিশন।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুরুতে কোন কাজগুলো বাস্তবায়ন করা যায় এবং কোন মন্ত্রণালয় কীভাবে সেগুলো করতে পারে, তার একটি রূপরেখা আমরা দেব। সেই রূপরেখায় বর্তমান সরকার কী কী বাস্তবায়ন করতে পারে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স প র শ কর ছ ন শ চ ত কর র র জন য ন সমন ব ত লক ষ য র পর খ সরক র তহব ল
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে পানের বরজ থেকে কৃষকের লাশ উদ্ধার
রাজশাহীর দুর্গাপুরে পানের বরজ থেকে রাসেল মোল্লা (২৫) নামের এক কৃষকের গলায় ফাঁস লাগানো লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকালে মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
এর আগে, গত রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। রাসেল মোল্লা উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের নাছের মোল্লার ছেলে। স্বজনদের অভিযোগ, রাসেলকে হত্যার পর গলায় ফাঁস লাগিয়ে মরদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, রাসেলের নিজের পানের বরজ আছে। তবে, লাশ পাওয়া গেছে তার চাচা আব্বাস মোল্লার বরজে। গত রাতে নিখোঁজের পরে পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি করেন। আজ সকালে তার মরদেহ পাওয়া যায়। নিহতের গলায় ফাঁস লাগানো থাকলেও তার পা মাটিতে লাগানো ছিল।
রাসেল মোল্লার চাচাত ভাই রিপন মোল্লা বলেন, ‘‘ধারণা করছি, গত রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা রাসেল মোল্লাকে হত্যার পর লাশ পানের বরজে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমরা হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, ‘‘রাসেল খুব সহজ সরল মানুষ ছিল। এলাকায় তার সঙ্গে কারো শত্রুতার কথা শোনা যায়নি।’’
দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দুরুল হোদা বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পরে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।’’
ঢাকা/কেয়া/রাজীব