গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত প্রাণ হারালেন ২১২ ফিলিস্তিনি সাংবাদিক
Published: 26th, April 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে এ পর্যন্ত ২১২ ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি।
গাজাভিত্তিক সরকার পরিচালিত গণমাধ্যম অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সাংবাদিকদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১২ জনে। সর্বশেষ নিহত সাংবাদিক হলেন সাঈদ আবু হাসানেইন, যিনি দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে ইসরায়েলি এক বিমান হামলায় আহত হয়ে মারা যান।
বিবৃতিতে বলা হয়, আবু হাসানেইন স্থানীয় আল-আকসা রেডিওতে সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ইসরায়েলের সাংবাদিকদের ওপর ধারাবাহিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলার তীব্র নিন্দা জানায় গণমাধ্যম অফিসটি। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ফেডারেশন, আরব সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বিশ্বজুড়ে সব সংবাদ সংস্থাকে ইসরায়েলি অপরাধের নিন্দা জানাতে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরও ১৮ মার্চ ইসরায়েল গাজায় পুনরায় হামলা শুরু করে।
অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ৫১ হাজার ৪০০-এর বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
গত নভেম্বরেই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এছাড়া, গাজায় পরিচালিত যুদ্ধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলাও চলছে।
এদিকে শুক্রবার ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বিমান হামলায় অন্তত ৮৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৬৮ জন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৪৩৯ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬৮ জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, ফলে আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৪১৬ জনে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
আসছে ঘূর্ণিঝড় মৌসুম, কতটা প্রস্তুত আমরা?
আমাদের চারপাশে সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ডসহ নানা দুর্যোগ প্রতিনিয়ত ঘটছে। তাই নাগরিক জীবনে এগুলো প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। তবে যতক্ষণ এ ধরনের বিপর্যয় আমাদের ব্যক্তিজীবনে নেমে না আসে, ততক্ষণ তা নিয়ে আমরা ভাবি না। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় এক ভয়াবহ বাস্তবতা। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য এটি এক আতঙ্কের নাম।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার (ন্যাপ) তথ্যমতে, দেশে ১৫টি দুর্যোগের হার সময়ের সঙ্গে বাড়বে। এর মধ্যে জলবায়ু ঝুঁকি ছাড়াও রয়েছে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, খরা, নদনদীতে বন্যা, নদীভাঙন, আকস্মিক বন্যা ও শহরাঞ্চলের বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, তীব্র তাপপ্রবাহ, তীব্র শীত, বজ্রপাত, ভূমিধস, সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি ও অম্লতা। সময়ের পরিক্রমায় আবারও আসছে ঘূর্ণিঝড় মৌসুম। কিন্তু আমরা এ নিয়ে কতটা সচেতন?
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে বাতাসের প্রচণ্ড ঘূর্ণায়মান গতি ও বায়ুমণ্ডলীয় উত্তাল অবস্থার ফলে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। সাধারণত মার্চ থেকে জুলাই এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে। এর মধ্যে মে এবং নভেম্বরে সবচেয়ে বেশি ঝড় আঘাত হানে। একটি গবেষণায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ১৯৪৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৭৫ বছরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও নিম্নচাপ বিশ্লেষণ করেছে। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, এই সময়ে বঙ্গোপসাগরে ১৫১টি প্রবল ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে নভেম্বরে সর্বোচ্চ ৫১টি, মে মাসে ৩০টি এবং অক্টোবরে ২৯টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে।
এ ছাড়া ১৯৭০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৫৫ বছরে বাংলাদেশে মোট ৪২টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। সময় অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়: ১৯৭০ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত (৩০ বছর) → ২১টি ঘূর্ণিঝড়, গড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ১৩৮ কিমি/ঘণ্টা এবং ২০০০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত (২৫ বছর) → ২২টি ঘূর্ণিঝড়, যেখানে গড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ১৪১ কিমি/ঘণ্টা। উপরোক্ত পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা দুটোই বেড়েছে। বিশেষ করে ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ চারটি ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়েছে, যা অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় বেশি। এ ছাড়া ১৯৭১, ২০০৭ এবং ২০২৪ সালে তিনটি করে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। বাংলাদেশ একাধিক উচ্চ তীব্রতার ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ১৯৭০, ১৯৯১, ২০০৭, ২০১৯ এবং ২০২৩ সালের ঘূর্ণিঝড়, যেগুলো ছিল অত্যন্ত বিধ্বংসী। বিশেষ করে ২০১৭ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রভাব নির্দেশ করে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে বিশ্বের অন্যান্য সাগরের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ঘূর্ণিঝড় আগের তুলনায় আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং ভূমিতে আঘাত হানার পর ক্ষতির মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সমুদ্রপৃষ্ঠ এবং ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা একসঙ্গে বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসছে, যা ভবিষ্যতে আরও বিধ্বংসী ঝড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষত বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য এই ক্রমবর্ধমান শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ প্রশমন এবং অভিযোজনের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।
প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় আমাদের অর্থনীতি, পরিবেশ ও জনজীবনকে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে ফেলে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই দুর্যোগের মাত্রা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। আমরা যদি এখন থেকেই যথাযথ ব্যবস্থা না নিই, তাহলে ভবিষ্যতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। এখন আমাদের সামনে দুটি পথ খোলা– ১. আমরা কি প্রতিবার দুর্যোগের পরে ক্ষতি সামলাতে ব্যস্ত থাকব? ২. নাকি আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে জানমাল রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেব?
দেশের কৃষির ওপর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব এতই ব্যাপক, এর ফলে খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদন, কৃষকের জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দারিদ্র্য বিমোচনসহ সামাজিক নিরাপত্তা অর্জনে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ সারাবিশ্বে প্রশংসিত। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দায় না যতটা আমাদের, তার চেয়ে বেশি বৈশ্বিক। আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশকে বাঁচাতে উন্নত দেশগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে। তেমনি ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই জানমাল রক্ষায় সরকার থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরি। এতে দেশের মানুষ যেমন নিরাপদ থাকবে, তেমনি অর্থনীতিও রক্ষা পাবে।
লেখক: প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কৃষি পরিসংখ্যানবিদ, আবহাওয়ার তারতম্য ও জলবায়ু পরিবর্তন গবেষক) এবং সদস্য, এগ্রোমেট ল্যাব, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)
niaz.sust@gmail.com