এটা সত্যি যে [গাজা] যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে যেসব চিঠি লেখা হয়েছে, সেগুলো সবই স্বীকৃতিযোগ্য। তবে এটাও ঠিক যে বড্ড দেরি করে চিঠিগুলো লেখা হয়েছে এবং তা-ও খুব ভীত ও দুর্বলভাবে। এসব চিঠি পড়ার পর যে কারও মনে হতে পারে যে মাত্র ৫৯ জন গাজা উপত্যকায় ভুগছেন। আর কারও কোনো অস্তিত্ব নেই। সেখানে নেই ৫০ হাজার লাশ। নেই হাজার হাজার এতিম, ভীতসন্ত্রস্ত ও আহত শিশু। নেই বাস্তুচ্যুত ও বিপর্যস্ত ২০ লাখ ফিলিস্তিনি। আছেন শুধু জীবিত ও মৃত ৫৯ জন ইসরায়েলি জিম্মি, যাঁদের রক্ত খুবই পবিত্র এবং যাঁদের মুক্তির বিষয়টা আর সবকিছুকে ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে উঠেছে।

এসব চিঠির ভাষ্য অনুসারে, যুদ্ধের একমাত্র ভুক্তভোগী কেবল জিম্মিরাই। যে কেউ এসব তথাকথিত সাহসী চিঠি পড়লে বিকৃত ও বাছাইকৃত নৈতিক বোধসম্পন্ন এক ইসরায়েলি সমাজের সাক্ষাৎ পাবেন। এসব চিঠির মূল সুরটি ভয়াবহ: যদি জিম্মিরা সব মুক্তি পায় (এবং যদি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করা হয়), তাহলে গাজায় যে রক্তগঙ্গা বয়ে যাচ্ছে, তা বাধাহীনভাবে চলতে পারে। হাজার হোক, এটা তো ন্যায়ের যুদ্ধ!

অনেকেই এসব চিঠির প্রশংসা করছেন, প্রশংসা করছেন পত্রলেখকদের সাহস ও গণসম্পৃক্ততার। তবে এটা দেখে মর্মাহত না হয়েও কোনো উপায় নেই যে তাদের একজনও মানবতার ও মানব মর্যাদার বিরুদ্ধে অপরাধ ঘটিয়ে চলার দায়েই সবার আগে এই যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানাননি। জিম্মিদের পরিণতি অবশ্যই প্রত্যেক ইসরায়েলি এবং প্রত্যেক মানুষকেও চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন করা উচিত। কিন্তু যখন শুধু তাঁদের ওপরই আলোকপাত করা হয় বা ২০ লাখের বেশি মানুষের চরম দুর্দশা উপেক্ষিত হয়, তখন এটা বুঝতে কারও অসুবিধা হয় না যে এটা হলো জাতীয়তাবাদী নৈতিকতা, যেখানে ইসরায়েলি রক্ত ও মুক্তি সবার ওপরে।

কোনো সন্দেহ নেই যে প্রত্যেক জাতিই সর্বপ্রথম ও সর্বাগ্রে তার নিজের বিষয়কে সবচেয়ে গুরুত্ব দেবে। তাই বলে অন্য ভুক্তভোগীদের—আমাদের [ইসরায়েলিদের] কারণে সৃষ্ট ভুক্তভোগীদের দিক থেকে পুরোপুরি মুখ ঘুরিয়ে রাখা ভীষণ মর্মপীড়াদায়ক। সত্যিকারের বিবেকসম্পন্ন কোনো মানুষ এ রকম কোনো চিঠিতে স্বাক্ষর করতে পারে না।

কিছু চিঠিতে গাজার ভুক্তভোগীদের প্রতি শুধু মৌখিক সমবেদনা জানানো হয়েছে। পাইলটরা তাঁদের চিঠিতে ‘নিরীহ বেসামরিক নাগরিক’ উল্লেখ করলেও তারা কারা, তা স্পষ্ট করেননি। তারা সম্ভবত গাজার সীমান্ত অঞ্চলে বসবাসকারী ইসরায়েলি, তাই কি? লেখকেরা অবশ্য আরেকটু সাহস দেখিয়ে ‘গাজার বাসিন্দাদের অসমানুপাতি ক্ষতি’ হয়েছে বলেছেন এবং ‘অসহায় মানুষদের ভয়াবহরকম ক্ষতির’ কথা উল্লেখ করেছেন, যা তাঁদের করাই উচিত। তারপরও এ ক্ষেত্রে এটা পরিষ্কার যে যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বানের প্রধান তাগিদটা হলো জিম্মিদের পরিণতির চিন্তা।

ইসরায়েলি সেনা প্যারাট্রুপার ও ইনফ্যানট্রি ব্রিগেডের দুই হাজার রিজার্ভ সেনা, সাঁজোয়া বাহিনীর ১ হাজার ৭০০ সদস্য, ১ হাজার ৫৫ জন পাইলট ও বিমানকর্মী এবং তালপিয়ট প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ২০০ রিজার্ভিস্ট এসব চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় সামরিক বাহিনীর প্রধান তাঁদের বরখাস্ত করার হুমকি দিয়ে একটি মৃদু প্রতিবাদকে অযথা নাটকীয় ও গাল ভারী করে তুলেছেন।

শিল্পী, স্থপতি ও চিকিৎসকদের কথায় আসা যাক এবার। তাঁরা সবাই যেন দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ভয়াবহতা ও নীরবতা থেকে হঠাৎ করেই জেগে উঠলেন। ‘জিম্মিদের রক্ষায় যুদ্ধ বন্ধ করো’—এই দাবিসংবলিত চিঠি লিখলেন তাঁরা সবাই একে অপরকে অনুকরণ করে। এটা তো সতর্ক ও পরিমাপকৃত প্রতিবাদের একটি রূপ। পত্রলেখকেরা ভালোভাবেই জানতেন যে তাঁরা কী করছেন। এসব চিঠিতে যদি আক্রান্ত ফিলিস্তিনিদের খানিকটা হলেও সামনে আনা হতো, তাহলে অনেক স্বাক্ষরকারীই সরে যেতেন।

হ্যাঁ, চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা ঠিকই বলেছেন যে জিম্মিদের বাঁচাতে অবশ্যই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। কিন্তু এটা একমাত্র বা প্রাথমিক কারণ হতে পারে না। ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনির সঙ্গে যা করা হচ্ছে, সে জন্যই যুদ্ধ বন্ধ করতে। আর এদের সিংহভাগই নিরীহ ও প্রতিরক্ষাহীন। সত্যকে উপলব্ধির জন্য তাঁদের ভোগান্তি ও যন্ত্রণার কোনো ক্রমমান নির্ধারণ করার বা অন্য কোনো যন্ত্রণার সঙ্গে তুলনা করার কোনো প্রয়োজন নেই।

জিম্মি ও তাঁদের পরিবারগুলো যে অকল্পনীয় যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার তাৎক্ষণিক অবসান হওয়া দরকার। কিন্তু আমাদের একই সঙ্গে সাংবাদিক ও চিকিৎসাকর্মীদের হত্যার বিরুদ্ধে (যেসব ইসরায়েলি চিকিৎসাজীবী জোরালোভাবে ইতিমধ্যে কথা বলেছেন, তাঁরা অবশ্যই ধন্যবাদ পেতে পারেন), হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বোমাবর্ষণের বিরুদ্ধে, গোটা একটি সম্প্রদায়কে কোনো গেম বোর্ডের পুতুলের মতো উৎখাতের বিরুদ্ধে এবং লক্ষ্যহীনভাবে সেনাবাহিনী দ্বারা সৃষ্ট সামগ্রিক ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হতে হবে।

৫৯ জন জিম্মি গাজায় ধুঁকছেন। তাঁদের অবিলম্বে মুক্ত করতে হবে। তবে লোকপ্রিয় ইসরায়েলি জনমতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বলতে হয়, তাঁরাই গাজার একমাত্র মানুষ নন, যাঁদের অশেষ যন্ত্রণা থেকে এক্ষুনি উদ্ধার করতে হবে।

গিডিয়ন লেভি ইসরায়েলি সাংবাদিক ও লেখক

হারেৎজ থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ তানিম আসজাদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এসব চ ঠ ইসর য় ল সব চ ঠ অবশ য

এছাড়াও পড়ুন:

কলেজের অ্যাডহক কমিটিতে চিকিৎসক-প্রকৌশলী-আইনজীবী রাখার নির্দেশ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর গভর্নিং বডি ও অ্যাডহক কমিটির সভাপতি বা বিদোৎসাহী সদস্য পদে পেশাজীবীদের মনোনীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২৪ এপ্রিলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আরও পড়ুনটাইমস হায়ার এডুকেশন র‌্যাঙ্কিং: দেশসেরা বুয়েট ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবির অবস্থান কোথায়২৫ এপ্রিল ২০২৫

সব বেসরকারি কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষদের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের গভর্নিং বডি/অ্যাডহক কমিটির সভাপতি বা বিদোৎসাহী সদস্য পদে পেশাজীবী হিসেবে এমবিবিএস ডাক্তার, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও আইনজীবী মনোনীত হতে পারবেন।

আরও পড়ুনজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে জেলায় জেলায় হচ্ছে স্বতন্ত্র পরীক্ষাকেন্দ্র২৪ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ