প্রশাসন আগের মতো দলবাজি শুরু করছে: নুরুল হক
Published: 26th, April 2025 GMT
প্রশাসন আগের মতো দলবাজি শুরু করছে বলে অভিযোগ করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। প্রশাসন নিয়ে তিনি বলেছেন, দু–একটি দলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তাদের কাজ চালাতে চাচ্ছে। যারা দলবাজি করবে, তাদের পরিণতি বেনজীর–হারুনের মতো হবে।
জুলাই আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে গণহত্যার বিচার এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল হক এসব কথা বলেন। শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা বাসস্ট্যান্ডের পাশে এই সমাবেশের আয়োজন করে গণ অধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা।
গণ–অভ্যুত্থানের আট মাসেও গণহত্যার বিচার ও গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন নুরুল হক। গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত ও আধিপত্য কায়েমে ব্যস্ত হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন নুরুল হক। তিনি বলেন, এসব কারণে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা রাজপথে নেমে হুংকার দিচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের পর দলগুলো নিজেদের সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সে কারণেই অভ্যুত্থানের আট মাস পার হলেও তাদের বিচার করা সম্ভব হয়নি।
ফ্যাসিবাদ নির্মূলে শুক্রবার থেকে গণ অধিকার পরিষদের প্রতিরোধ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে নুরুল হক বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের অংশীদার রাজনৈতিক দলগুলোকে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। তিনি বলেন, গণ–অভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিয়েও রাজনীতি চলছে, যা মোটেও কাম্য নয়।
সড়ক-পরিবহন, কলকারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনো চাঁদাবাজি-দখলবাজি চলছে বলে অভিযোগ করেন নুরুল হক। তিনি বলেন, কিশোর গ্যাং, মাদক ব্যবসায়ীসহ অপরাধীদের রাজনৈতিক নেতারা আশ্রয়–প্রশয় দিচ্ছেন। জনগণ এগুলো পছন্দ করছে না।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণ অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান। দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজিম উদ্দীন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি রকিবুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক সবুজ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারজানা কিবরিয়া প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পোপ ফ্রান্সিসের শেষ আহ্বান কেউ কি শুনবেন
দীর্ঘ অসুস্থতার পর পোপ ফ্রান্সিস গতকাল ৮৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুর ঠিক আগের দিন ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে ইস্টার সানডের ভাষণে রোমান ক্যাথলিকদের এই শীর্ষ ধর্মগুরু বলেছিলেন, তিনি ‘ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের খ্রিষ্টানদের কষ্ট এবং ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি সব মানুষের দুঃখের’ সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করছেন।
এই বক্তব্য ছিল গাজায় ইসরায়েলের চলমান নিধনযজ্ঞ নিয়ে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫১ হাজার ২০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন সেখানে। এই ভয়াবহ সংঘাত নিয়ে পোপের শেষ বার্তা ছিল, ‘আমি যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে আহ্বান জানাই, যুদ্ধবিরতি করুন, জিম্মিদের মুক্ত করুন এবং শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ কামনা করছে যে ক্ষুধার্ত জনগণ, তাদের পাশে দাঁড়ান।’
গাজায় চলমান বিভীষিকার চিত্র তুলতে পোপ ফ্রান্সিস যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তাকে যথাযথ বলা যায় না। কারণ, গণহত্যাকে ‘সংঘাত’ বলা যায় না। যেমনভাবে ইসরায়েলি ঘাতক বাহিনী ও ফিলিস্তিনি গণহত্যার শিকার জনগণকে এককথায় ‘যুদ্ধরত পক্ষ’ বলা যায় না। তা সত্ত্বেও পোপের প্রশংসা প্রাপ্য। কারণ, তিনি জীবনের শেষ মুহূর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। এমন একসময়ে এই আহ্বান তিনি জানিয়েছেন, যখন বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো যেন ফিলিস্তিনিদের নির্বিচার হত্যাকে চিরস্থায়ীভাবে মেনে নিতে প্রস্তুত।
পোপ সরাসরি দায়ী পক্ষের নাম উল্লেখ না করলেও ‘ক্ষুধার্ত মানুষদের’ জন্য সাহায্যের প্রয়োজনের যে কথা তিনি বলেছেন, তা স্পষ্টতই ইঙ্গিত করে ইসরায়েলের দিকে। কারণ, মার্চের শুরুতে ইসরায়েল গাজায় সব মানবিক সহায়তা প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। এটা পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল।
১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। জাতিসংঘের এক তদন্তে উঠে আসে যে এরপর ৯ এপ্রিল পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৩৬টি ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সবাই ছিলেন নারী ও শিশু। এমন বাস্তবতায় পোপের ভাষ্যমতে ‘একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা’ যেন কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ।১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। জাতিসংঘের এক তদন্তে উঠে আসে যে এরপর ৯ এপ্রিল পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৩৬টি ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সবাই ছিলেন নারী ও শিশু। এমন বাস্তবতায় পোপের ভাষ্যমতে ‘একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা’ যেন কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ। কারণ, যখন কোনো সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে উঠেপড়ে লাগে, আর সেই সেনাবাহিনীর পেছনে থাকে বিশ্বের প্রধান পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ দ্বিদলীয় সমর্থন, তখন ভবিষ্যতের কোনো স্বপ্নই টিকে থাকা কঠিন।
পোপ ফ্রান্সিসের জীবনের শেষ দিনটিতেই তাঁর সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎ হয় যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে। এই একই মার্কিন সরকারের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকে পোপ অতীতেও একাধিকবার প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিকে তিনি ‘একটি বড় সংকট’ বলে আখ্যা দেন। কারণ, এই অভিবাসন নীতি ‘নারী-পুরুষের মর্যাদাকে পদদলিত করে’। এ মন্তব্য তিনি ফেব্রুয়ারির এক ভাষণে দিয়েছিলেন।
ইস্টার ভাষণে পোপ ফ্রান্সিস চলমান বিপর্যয়ের মুখে মানুষের দুর্দশার কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘দুর্বল, প্রান্তিক মানুষ আর অভিবাসীদের প্রতি কী অবহেলা আর কী পরিমাণ ঘৃণা ছড়ানো হয়!’ এরপর পোপ ফ্রান্সিস আবারও শান্তির প্রতি নিজের আশাবাদের কথা বলেন, ‘শান্তি এখনো সম্ভব। চলুন, এই আশা আমরা নতুন করে গড়ে তুলি।’
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ঘৃণা ও মানবতাবিরোধী আচরণই আজকের বৈশ্বিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। আর এই পৈশাচিক ব্যবস্থার নেতৃত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যবস্থা মুনাফা ও শাসকশ্রেণির কর্তৃত্ব ছাড়া আর কোনো কিছু গুরুত্ব দেয় না। মানবিকতা সেখানে তুচ্ছ। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার পেছনে অস্ত্র ব্যবসা লাভবান হচ্ছে। তেমনি যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের মধ্যে সেসব ‘অবৈধ’ শ্রমিককে দমন করছে, যাঁদের শ্রমেই চলে তাদের অর্থনীতি। এই অবহেলা ও বৈষম্য ব্যবসার জন্য লাভজনক। তাই একে টিকিয়ে রাখা হয়।
আরও পড়ুনশান্তি অসম্ভব, যত দিন অস্ত্রের ঝনঝনানি পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে৫ ঘণ্টা আগেএবারের ইস্টার সপ্তাহে ‘শান্তি সম্ভব’ এমন আশাবাদ ফিলিস্তিনের খ্রিষ্টানদের জন্যও যেন অর্থহীন এক কথা। গাজার ধ্বংসস্তূপে, ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরে কিংবা জেরুজালেমে, যেখানে বাইবেলের মতে যিশুকে ক্রুশে চড়ানো হয়েছিল—কোথাও কেউ নিরাপদ নয়।
গাজা শহরের সেন্ট পোরফিরিয়াস গির্জায় এবারের ইস্টার সানডেতে ভয়ে ভয়ে প্রার্থনায় অংশ নেন খ্রিষ্টানরা। কারণ, এ গির্জাই ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলার শিকার হয়। সেই হামলায় অন্তত ১৮ জন গৃহহীন ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাঁদের মধ্যে কয়েকজন খ্রিষ্টানও ছিলেন। তাঁরা সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
অন্যদিকে পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বহু খ্রিষ্টানকে পবিত্র স্থানগুলোতে প্রবেশে বাধা দিয়েছে। খ্রিষ্টানরা ক্রমাগত ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের হামলা ও রাষ্ট্র-সমর্থিত নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।
চলতি বছর ইস্টার উপলক্ষে পূর্ব জেরুজালেমের অধিকৃত এলাকায় অবস্থিত ‘চার্চ অব দ্য হোলি সেপালখার’-এ অংশ নিতে ইসরায়েল পশ্চিম তীরের মাত্র ছয় হাজার ফিলিস্তিনিকে অনুমতি দিয়েছে। সেখানে ইস্টারকে ঘিরে পুরো পরিবেশ ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর চাদরে মুড়ে দেওয়া এক সামরিক চেহারায়। এমনকি ফিলিস্তিনে ভ্যাটিকানের প্রতিনিধি পর্যন্ত ওই গির্জায় ঢোকার অনুমতি পাননি।
এর ঠিক এক দিন পর পৃথিবীর বুকে রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রতিনিধি পোপ ফ্রান্সিস নিজেই বিদায় নিলেন। মৃত্যুর আগে রেখে গেলেন এক আবেগঘন আবেদন—গাজায় যুদ্ধবিরতি হোক।
প্রশ্ন এখন একটাই, এই আহ্বানে কেউ কি সাড়া দেবে?
● বেলেন ফার্নান্দেজ লেখক
আল–জাজিরা থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ