পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলায় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ভালো ফলন হওয়ায় জেলায় পেঁয়াজের আবাদও দিন দিন বেড়ে চলেছে। অথচ সংরক্ষণের অভাবে প্রায় ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এতে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েন। আবার পেঁয়াজ সংরক্ষণের পদ্ধতি ভালো না হওয়ায় অনেক সময় তাদের বাধ্য হয়ে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়। কৃষকের এ সমস্যা দূর করতে সাঁথিয়া ও বেড়ায় পল্লীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় প্রোগ্রামস ফর পিপলস ডেভেলপমেন্ট (পিপিডি) সংস্থার কৃষি ইউনিট (কৃষি খাত) প্রোগ্রামের উদ্যোগে উন্নত পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ ঘর স্থাপন করা হয়েছে।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক থেকে দেশের মধ্যে পাবনা জেলা প্রথম স্থানে রয়েছে এবং জেলার মধ্যে সাঁথিয়া, বেড়া ও সুজানগর উপজেলার অবস্থান শীর্ষে। জেলায় প্রতিবছরই বাড়ছে পেঁয়াজের আবাদ ও উৎপাদন। দেশের মোট চাহিদার ৭ শতাংশ চাহিদা সাঁথিয়ার পেঁয়াজ দিয়ে মেটানো হয়।
সরেজমিন বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক মোন্নাফ আলীর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তিনি বাড়ির পাশে প্রায় ৫ শতাংশ জমিতে এ ঘর নির্মাণ করেছেন। ঘরটির দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট, প্রস্থ ১০ ফুট ও উচ্চতা ১২ ফুট। ঘর নির্মাণে সিমেন্টের বড় ১৪টি খুঁটি ও মাটি থেকে ওপরে ৫ ফুটের সিমেন্টের ১০টি খুঁটি এবং বাঁশের বাতা ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘরের মেঝে থেকে ৩ ফুট উঁচুতে ২টি চাতাল বা মাচা তৈরি করা হয়েছে। ঘরের নিচে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। পেছনে ও সামনে রাখা হয়েছে ৪টি একজস্ট ফ্যান। এই ফ্যান ঘরের গরম বাতাস বের করে দেয়। ঝড়-বৃষ্টি থেকে পেঁয়াজ রক্ষা করতে চারপাশে রাখা হয়েছে ত্রিপল বা পলিথিন পেপার। এ ছাড়া তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পরিমাপের জন্য ১টি থার্মোমিটারও রাখা হয়েছে।
মোন্নাফ আলী বলেন, চাহিদার থেকে বেশি উৎপাদন হওয়ার পরও দেশে প্রতিবছর ৬-৭ লাখ টন পেঁয়াজ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এর ফলে পেঁয়াজ যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য পিকেএসএফ ও পিপিডির সহযোগিতায় এই দেশীয় প্রযুক্তিতে ঘর নির্মাণ করেছি। এটি নির্মাণ করতে আমার বাঁশ, কাঠ, ঢেউটিন, সিমেন্টের পিলার, ত্রিপল, শ্রমিক খরচ লেগেছে। বর্তমানে আমি এই ঘরে দেশি তাহেরপুরী জাতের ১৫০ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছি। এই ঘরে ৬ থেকে ৯ মাস পেঁয়াজ ভালো থাকবে বলে আশা করছি।
ঘর নির্মাণে আমার খরচ হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা।
পিপিডি বেড়া শাখার কৃষি কর্মকর্তা অনুপ কুমার ঘোষ বলেন, ‘পেঁয়াজ সংরক্ষণের এ পদ্ধতিতে অল্প খরচে নিজ বাড়িতে পেঁয়াজ রাখা যায়। এ পদ্ধতিতে পেঁয়াজে ছত্রাকের উপদ্রব কম হয় এবং পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করায় ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত পেঁয়াজের গুণাগুণ ভালো থাকে। এ ছাড়া সহজে প্রতিনিয়ত পেঁয়াজ দেখাশোনা বা নাড়াচাড়া করে পচনের হাত থেকে রক্ষা করা যায় এবং এতে কৃষকের অতিরিক্ত শ্রমিক খরচ লাগে না। ফলে কৃষক পরবর্তী সময়ে ভালো দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেন।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঘর ন র ম ণ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকা শক্তি হতে পারে ক্ষুদ্র উদ্যোগের বিকাশ
অর্থনীতিবিদ সেলিম জাহান বলেছেন, দেশের অর্থনীতির অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি হতে পারে ক্ষুদ্র উদ্যোগের বিকাশ। ক্ষুদ্রঋণ উদ্যোগ উন্নয়নের অন্যতম অনুষঙ্গ হলেও ক্ষুদ্র উদ্যোগ ও ক্ষুদ্রঋণ এক কথা নয়। ক্ষুদ্র উদ্যোগ উন্নয়নের জন্য মানুষের ভাবনা ও চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে, সুযোগের বৈষম্য দূর করতে হবে।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ভবনে আয়োজিত ‘ছোট উদ্যোগ, বড় ভবিষ্যৎ: বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি হিসেবে ক্ষুদ্র উদ্যোগ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সেলিম জাহান।
অবকাঠামোগত অগ্রগতিকে উন্নয়নের সমার্থক হিসেবে বিবেচনা করার প্রবণতা সঠিক নয় মন্তব্য করে সেলিম জাহান বলেন, স্কুলে ভর্তির হার বৃদ্ধি বা নতুন অবকাঠামো নির্মাণ হলো অগ্রগতি। কিন্তু উন্নয়ন হলো শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি এবং পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর শিশুদের মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ লাভ। অগ্রগতিকে উন্নয়নের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পিকেএসএফ চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেন, পিকেএসএফ বর্তমানে দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিবিধ প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক আয়োজিত সৌদি আরবে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পিকেএসএফের একটি প্রকল্পের সাফল্য বিশেষভাবে প্রদর্শন করা হয়।
স্বাগত বক্তব্যে পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, দেশের প্রায় ৪০ লাখ ক্ষুদ্র উদ্যোগের অর্থায়ন করছে পিকেএসএফ। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত অর্থায়ন, কারিগরি সহায়তা ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে ভ্যালু চেইন উন্নয়ন, মূল্য সংযোজিত সনদে পণ্য উৎপাদন ও বিপণনে বিস্তৃত সেবা প্রদান করছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফিন্যান্সের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কে মুজেরী, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক কাজী ইকবাল, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসেন প্রমুখ।