বিষখালী ও বলেশ্বর নদী বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কোলঘেঁষে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মিলেছে। এ দুটি নদীর সঙ্গে যুক্ত ৩২টি খাল পাথরঘটার বিভিন্ন জনপদ দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে। অসংখ্য মাছ ধরার ট্রলার এসব খাল দিয়ে নদী হয়ে সাগরে আসা-যাওয়া করে। দখলের কবলে খালগুলো দিন দিন সংকুচিত হওয়ায় ট্রলার 
চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। খাল দখল অব্যাহত থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে পাথরঘাটার মৎস্যনির্ভর অর্থনীতি। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। 
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার খলিফারহাট, মুন্সীরহাট, বাদুরতলা, হরিণঘাটা পর্যটনকেন্দ্র এলাকার খালগুলো দখল ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। দখলের কারণে বর্ষা ও অতি জোয়ারে খাল উপচে লোকালয় প্লাবিত হয়। খাল সংকুচিত হওয়ায় বাদুরতলা বাজারে ট্রলার যাতায়াত বন্ধ হয়েছে। একই সংকট দেখা দিয়েছে খলিফারহাট খালে। এসব খালকে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে বড় বাজার গড়ে উঠেছিল। ট্রলার চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রামীণ এ বাজারগুলো প্রাণ হারিয়েছে। 
সরেজমিন দেখা যায়, শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত সাত কিলোমিটার দীর্ঘ ভাড়ানির খালটির এক প্রাপ্ত বিষখালী নদীতে ও  অপর প্রান্ত বলেশ্বর নদীতে মিলেছে। খালটির মাঝ বরাবর মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। এ খাল দিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রলার সাগরে আসা-যাওয়া করে।  দখলবাজদের কবল থেকে এ খালটিও রেহাই পায়নি। 
 চরদোয়ানী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাহফুল হাওলাদার জানান, এক সময় চরদোয়ানী বাজারের অনেক নামডাক ছিল। দখল ও নাব্য হারানোয় খাল দিয়ে ট্রলার চলাচল বন্ধ হওয়ায় বাজারটির আগের প্রাণচাঞ্চল্য নেই। প্রভাবশালীদের বরফকলের জেটি খালের অনেকখানি ভেতরে স্থাপন করা হয়েছে। এতে খালটি সরু হয়ে গেছে। 
বরফকল মালিক পাথরঘাটার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এনামুল হোসাইন জানান, তিনি খাল দখল করেননি। এ অবস্থাতেই আগের মালিক খান বাবুলের কাছ থেকে কিনেছেন। খাল সংস্কার করলে নিজ উদ্যেগে স্থাপনা সরিয়ে নেবেন তিনি। 
বরগুনা জেলা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দুলাল মাঝি বলেন, বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর সঙ্গে যুক্ত ৩২ খালই হলো পাথরঘাটার প্রাণ। খালগুলোর ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন এলাকায় মাছের আড়ত ব্যবসা গড়ে উঠেছিল। গ্রামীণ এ বাজারগুলো দিনরাত জমজমাট থাকত। দখলে ট্রলার চলাচল বন্ধ হওয়ায় এ বাজারগুলোতে আগের মতো জৌলুস নেই। তিনি জানান, উপজেলার প্রধান ভারানির খাল সংকুচিত হয়ে এমন হয়েছে যে, একটি ট্রলারের পাশ দিয়ে অপর ট্রলার অতিক্রম করতে পারে না।  ট্রলার চলাচল বাধামুক্ত করা না হলে মাছ বোঝাই ট্রলার পাথরঘাটায় না এসে অন্যত্র চলে যাবে। এটা হলে পাথরঘাটার অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। 
পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ফকির আলম প্রভাবশালীদের খালের জমি দখলে সহযোগিতার জন্য পাউবোর কার্যসহকারী মামুন হোসেনকে দায়ী করে বলেন, মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে খাল ও বেড়িবাঁধের ওপর স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেন মামুন। 
অভিযোগ অস্বীকার করে মামুন বলেন, তিনি চার বছর পাথরঘাটায় কর্মরত। আগে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দখলবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেননি। এখন খাল দখলে বাধা দিচ্ছেন। 
পাউবোর বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হাসান বলেন, পাউবোর লোকবল কম হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না। কোথাও অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে বেড়িবাঁধসংলগ্ন খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।   
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প থরঘ ট র খ ল দখল মৎস য উপজ ল হওয় য়

এছাড়াও পড়ুন:

কীভাবে দরুদ পড়বেন

আবু হোরায়রা (রা.)-এর বর্ণনায় একটি হাদিস আছে, যাতে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘর গুলিকে কবরস্থান বানিয়ো না। আমার কবরকে বানিয়ো না উৎসব-স্থান। আমার ওপর দরুদ পড়ো। তোমরা যেখানেই থাকো, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,০৪২)

দরুদ পাঠের এই নির্দেশের পর পর সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর রাসুলকে জিজ্ঞেস করেছেন, কীভাবে তারা দরুদ পড়বেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) একেক সময় একেক জনকে ভিন্ন ভিন্ন রকমের দরুদ শিখিয়েছেন। কাউকে সংক্ষেপে, কাউকে বা একটু বিস্তারিত। আমরা এখানে কয়েকটি দরুদ উল্লেখ করছি।

আবদুর রহমান ইবনে আবু লাইলা (রা.) বলেন, একবার আমার সঙ্গে কা’ব ইবনে উজরার (রা.) সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাকে একটি উপহার দেব না, যা রাসুল (সা.) থেকে আমি পেয়েছি?’ আমি বললাম, ‘অবশ্যই দিন।’ তিনি বললেন, ‘আমরা রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আল্লাহর রাসুল, আপনার, আপনার পরিবারবর্গের প্রতি দরুদ কীভাবে পড়ব? আল্লাহ তো শুধু আমাদের সালাম পাঠানোর ধরন শিখিয়েছেন। তিনি বললেন, তোমরা বলো: আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন্, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন্, কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইব্‌রা-হীম, ইন্নাকা হামিদুম্ মাজীদ। ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন্, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন্, কামা বারাক্‌তা ‘আলা আ-লি ইব্‌রা-হীম, ইন্নাকা হামিদুম্ মাজীদ। (অর্থ: ‘আল্লাহ, আপনি মুহাম্মদ এবং মুহাম্মদের পরিবার-পরিজনের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইব্রাহিমের প্রতি রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, মহান। আল্লাহ, আপনি মুহাম্মদ(সা.) এবং তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর বরকত দিন, যেমন আপনি ইবরাহিমের পরিবার-পরিজনের ওপর বরকত দিয়েছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, মহান।) (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৩৮০)

আরও পড়ুনকেন দরুদ পাঠ করব১৫ মার্চ ২০২৫

আবু হামিদ সায়িদি (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, লোকেরা বলল, আল্লাহর রাসুল(সা.), আপনার প্রতি কীভাবে দরুদ পড়ব? রাসুল (সা.) বললেন, তোমরা বলো: আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন্, ওয়া আযওয়াজিহী ওয়া জুররিয়্যাতিহী, কামা সাল্লাইতা ‘আলা আ-লি ইব্‌রাহীম। ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন্, ওয়া আযওয়াজিহী ওয়া জুররিয়্যাতিহী, কামা বারাক্‌তা ‘আলা আ-লি ইব্‌রাহীম। ইন্নাকা হামিদুম্ মাজীদ। (অর্থ: আল্লাহ, আপনি মুহাম্মাদ, তাঁর স্ত্রীগণ এবং তাঁর সন্তানসন্ততির ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহিমের পরিবার-পরিজনের ওপর রহমত বর্ষণ করেছেন। আর মুহাম্মাদ, তাঁর স্ত্রীগণ এবং সন্তানসন্ততির ওপর বরকত দিন, যেমন আপনি ইবরাহিমের পরিবার-পরিজনের ওপর বরকত দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, মহান।) (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪০৭)

আবু সায়িদ খুদরি (রা.) বলেন, আমরা বললাম, আল্লাহর রাসুল(সা.), আপনাকে সালাম দেওয়ার পদ্ধতি তো আমরা জেনেছি। আপনার প্রতি দরুদ কীভাবে পড়ব? তিনি বললেন, তোমরা বলো: আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন্ ‘আবদিকা ওয়া রাসূলিকা, কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইব্‌রাহীম। ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন্ ওয়া আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বারাক্‌তা ‘আলা ইব্‌রাহীম। (অর্থ: আল্লাহ, আপনি আপনার বান্দা ও রাসুল মুহাম্মদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহিমের ওপর রহমত বর্ষণ করেছেন। আর মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দিন, যেমন আপনি ইবরাহিমের ওপর বরকত দান করেছেন।) (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৫৮)

আরও পড়ুননামাজের ভেতরে দরুদ পড়ার নিয়ম০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আবু মাসউদ আনসারি (রা.) বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা বলো: আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন্ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা আ-লি ইব্রাহীম। ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন্ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বারাক্‌তা ‘আলা আ-লি ইবরাহীম ফিল ‘আলামীন। ইন্নাকা হামীদুম্ মজীদ। (অর্থ: আল্লাহ, মুহাম্মদ ও মুহাম্মদের পরিবারবর্গের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহিমের পরিবারবর্গের প্রতি রহমত বর্ষণ করেছেন। আর মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দিন, যেমন আপনি ইবরাহিমের পরিবারবর্গের ওপর দুনিয়ার সকল জাতির মধ্যে বরকত দান করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহিমান্বিত। আর সালাম তেমনই, যেমন তোমাদের জানা আছে।) (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪০৫)

নবীজির (সা.) এই শেষবাক্য ‘সালাম তেমনই, যেমন তোমাদের জানা আছে’, এর মানে হলো, ‘আত্তাহিয়্যাতু’র মধ্যে যে-সালামের কথা আছে। অর্থাৎ, ‘আস্‌সালামু ‘আলাইকা আইয়ুহান্ নবীয়্যু, ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকা তুহু (আপনার প্রতি সালাম, হে নবী, আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত আপনার প্রতি বর্ষিত হোক)। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৩৫; মুসলিম, হাদিস: ৪০২)

জায়েদ ইবনে খারেজা (রা.) বর্ণিত হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার ওপর দরুদ পড়ো, বেশি বেশি দোয়া করো এবং বলো: ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন্ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ (আল্লাহ, মুহাম্মদ ও মুহাম্মদের পরিবারবর্গের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন)।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ১,২৯১)

নবীজির (সা.) প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশনা ব্যাপক। বিভিন্ন গ্রন্থে বহু দুরুদের বর্ণনা আছে। তবে বিশুদ্ধ হাদিসে যেসব শব্দে দরুদ বর্ণিত রয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে দরুদ পড়াই উত্তম।

আরও পড়ুনদরুদ শরিফ পড়ার ফজিলত২৩ নভেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ