‘মিল চালু করবে বলি চাষ কইরবার কইল, এলাও কোনো খবর নাই’
Published: 25th, April 2025 GMT
‘চিনিকল বন্ধ করি আগের সরকার তো হামার কপাল খাইছে। আখ চাষ কইরবার না পায়া খ্যায়া না খ্যায়া দিন কাটাওছি। মিল চালু করবে বলি ইউনূস সরকার আসি আখ চাষ কইরবার কইল। কিন্তুক সময় আসি গেইল, এলাও ক্যানবা খবরে নাই।’ কথাগুলো রংপুরের শ্যামপুর চিনিকল এলাকার আখচাষি দবির আলীর। ফের আখ চাষের আশায় জমি ফেলে রেখেছেন তিনি। মিল চালুর লক্ষণ না দেখে হতাশা প্রকাশ করে তিনি এসব কথা বলেন।
শ্যামপুর চিনিকল বন্ধ থাকলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আখ রোপণের অনুমতি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এতে ফের আশার আলো দেখেছিলেন কৃষক। অনুমতির প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে দবির আলীর মতো আখচাষিরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার রংপুরের শ্যামপুর, পাবনা, পঞ্চগড়, সেতাবগঞ্জ, রংপুর ও কুষ্টিয়া সুগার মিলে চিনি উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। সে সময় সংস্কার ও আধুনিকায়নের উদ্দেশ্যে বন্ধ করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছিল। এরপর পাঁচ বছর পার হলেও চালুর কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিগত সরকার। বন্ধ চিনিকলগুলো চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠালেও সে সময় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার বন্ধ কলগুলো চালু করতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। সে অনুযায়ী চিনিকল এলাকায় আখ চাষের অনুমতি দেওয়া হয়। এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শ্যামপুরের আখচাষি সামছুজ্জামানের ভাষ্য, ‘সরকার চিনিকল এলাকায় আখ রোপণের সিদ্ধান্ত দিয়েছে শুনে শ্যামপুর এলাকার আখচাষিদের মধ্যে আশার আলো জেগেছিল। দীর্ঘদিনেও বীজ-সারসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না থাকায় আমরা হতাশ।’
শ্যামপুর চিনিকল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আখ চাষের আশায় অনেক জমি ফেলে রেখেছেন কৃষক। তারা চারা রোপণের অপেক্ষায় রয়েছেন। অনেকে নিজ উদ্যোগে কিছু জমিতে চারা রোপণও করেছেন। কৃষকরা বলছেন, বাপ-দাদার আমল থেকে আখ চাষ করছেন। বিগত সরকার চিনিকল বন্ধ করে দেওয়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েন। পাঁচ বছর ধরে বিকল্প ফসল উৎপাদনের চেষ্টা করেও লোকসান গুনতে হয়েছে। এখন নতুন করে অনুমতির খবরে তারা জমি ফেলে রেখেছেন।
স্থানীয়ভাবে বড় আখচাষি হিসেবে পরিচিত আব্দুস সোবহান ও সাহেব আলী। তারা বলছিলেন, আগে চিনিকল এলাকায় ৭০টি ইক্ষু উন্নয়ন সহকারী পদ ছিল। তারা চাষিদের আখ চাষে উদ্বুদ্ধসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন। এবার তাদের এখনও মাঠ পর্যায়ে দেখা যায়নি। ছয়টি সাবজোন ছিল, যেখান থেকে চাষিদের বীজ-সার সরবরাহ করা হতো। এখনও সাবজোন গঠন করা হয়নি।
আব্দুল কুদ্দুস, রওশন আলীসহ অন্য কৃষকরা জানান, আখের জমিতে অন্য ফসল ভালো হয় না। তারপরও বেঁচে থাকার তাগিদে বিগত পাঁচ বছর বিকল্প ফসল উৎপাদনের চেষ্টা করেছেন। লাভ হয়নি। কয়েকদিন পরে আখ রোপণের মৌসুম শুরু হবে। এখন পর্যন্ত বীজ-সার সহায়তার বিষয়ে কেউ যোগাযোগ করেনি। মিল চালু থাকাকালে ছয় হাজারের বেশি আখচাষি থাকলেও এখন সে সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তের ফলে শ্যামপুর চিনিকল পাঁচ বছর ধরে বন্ধ আছে বলে অভিযোগ করেছেন আখচাষি ও চিনিকল রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ রংপুর জেলার আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বাবলু। তিনি বলেন, এ চিনিকল হাজারো আখচাষি, শ্রমিক এবং শ্যামপুর এলাকার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল। এটি বন্ধ হওয়ায় এ অঞ্চলের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। অবিলম্বে চিনিকল চালুসহ চাষিদের আখ চাষের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
জানা গেছে, চিনিকল চালু রাখতে ৬০ হাজার টন আখের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত আখ পাওয়া যাবে কিনা, এ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্ধ থাকা শ্যামপুর চিনিকল জনমানবহীন ভূতুড়ে অবস্থায় রয়েছে। যন্ত্রপাতি-যানবাহন পাহারা দেওয়ার জন্য রয়েছেন হাতেগোনা কয়েকজন গার্ড। সঙ্গে রয়েছেন দুই-একজন কর্মকর্তা। বন্ধ হওয়ার আগে ৪৪৭ জন শ্রমিক কাজ করতেন। একজন এমডিসহ অন্তত ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন। তাদের অন্য চিনিকলে বদলি করা হয়েছে।
কেউ কেউ স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে ১৬ থেকে ১৭ জন গার্ড রয়েছেন পাহারা দেওয়ার জন্য। টাস্কফোর্স সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শ্যামপুর চিনিকল এলাকায় আড়াই হাজার একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরের বছর চার হাজার একরে চাষ হবে। এ সিদ্ধান্ত শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে বন্ধ ছয় চিনিকল চালু করতে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য আলতাফ হোসেন বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিবসহ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকের পর আখ চাষের অনুমতি দেওয়া হয়। চাষ করতে যেসব প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার, তার কিছুই হয়নি। বন্ধ চিনিকল চালু করতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে একটি বাজেট অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ ছাড় দিলে চাষ শুরু হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ ন কল চ ন কল চ ল কর ছ ন চ বছর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
হঠাৎ চারজনকে উদ্ধারের আলোচনা, নিশ্চিত নয় পুলিশ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে চারজনের খোঁজ মিলেছে– সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন আলোচনা থাকলেও এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। তাদের ভাষ্য, আজকালের মধ্যে এমন তথ্যের বিষয়টি আরও পরিষ্কার হতে পারে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল সমকালকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকজনের খোঁজ মিলেছে– এমন প্রচার আছে। তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা এখনও উদ্ধার বিষয়ে নিশ্চিত নই। আজকালের মধ্যে পরিষ্কার হতে পারব।
পাহাড়ের বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চবি ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে জেলা সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে ১৬ এপ্রিল সকালে পাঁচ শিক্ষার্থীকে দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে। অপহৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রিশন চাকমা, দিব্যি চাকমা ও মৈত্রীময় চাকমা রাঙামাটি এবং অন্য দু’জন লংঙি ম্রো ও অলড্রিন ত্রিপুরা বান্দরবানের বাসিন্দা। তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
সন্তু লারমা সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি নিপণ ত্রিপুরা এ অপহরণের ঘটনায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করেছেন। তবে ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
একাধিক অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে চাপের মুখে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে চারজনকে গত সোমবার রাতে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার সর্বোসিদ্ধিপাড়া এলাকা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।