Samakal:
2025-04-25@22:14:29 GMT

সিমলা চুক্তি কী

Published: 25th, April 2025 GMT

সিমলা চুক্তি কী

ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। দুই পক্ষই প্রতিশোধমূলক পাল্টপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে।

মঙ্গলবারের ঘটনার পর দ্রুত কতগুলো সিদ্ধান্ত জানায় দিল্লি। এই তালিকায় সিন্ধু জল বণ্টন চুক্তি স্থগিত, প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া, পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা বন্ধ এবং কূটনীতিকদের বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্তও রয়েছে।

জবাবে পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। জানানো হয়েছে ভারত আর পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না। সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ থাকবে। এছাড়া ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিও স্থগিতের ঘোষণা করেছে পাকিস্তান।

ভারতের দিক থেকে সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের পরপরই অবশ্য পাকিস্তানের ভেতরে সিমলা চুক্তি স্থগিতের দাবি ওঠে।

সিমলা চুক্তি এমন একটা আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছিল যেটিকে দুই দেশের মধ্যে ‘শত্রুতা’ অবসানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের পর ১৯৭২ সালের জুলাইতে স্বাক্ষরিত হয়েছিল এই চুক্তি।

তার মাস ছয়েক আগেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। পাকিস্তানের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৪৫ হাজার সৈন্য এবং আধাসামরিক বাহিনীসহ ৭৩ হাজার যুদ্ধবন্দি ভারতের কারাগারে ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রায় পাঁচ হাজার বর্গমাইল এলাকাও ভারতের দখলে ছিল।

এই পটভূমিতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো ভারতের হিমাচল প্রদেশের সিমলায় বৈঠক করছিলেন। সেখানে যে সমঝোতা হয় তার নাম সিমলা চুক্তি।

চুক্তির দলিল স্বাক্ষরের তারিখ রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৭২ সালের দোসরা জুলাই। তবে বাস্তবে তেসরা জুলাই সকালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল এই চুক্তি।

দুই দেশের মধ্যে ‘শত্রুতার’ অবসানের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমঝোতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও সিমলা চুক্তির বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল।

সিমলা চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশ দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে সব সমস্যার সমাধান করবে।

সিমলা চুক্তির অধীনে দুই দেশের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) গঠিত হয়। সেই সময় ভারত-পাকিস্তান দুইপক্ষই এই নিয়ন্ত্রণ রেখাকে সম্মান জানাতে রাজি হয়। তারা এই বিষয়েও সম্মত হয়েছিল যে দুইপক্ষই কোনোরকম একতরফা সিদ্ধান্ত নেবে না।

নিয়ন্ত্রণ রেখাকে স্কেল হিসেবে বিবেচনা করে একে অপরের ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান।

কিন্তু দুই দেশই একে ওপরের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ রেখাকে ‘না মানার’ অভিযোগ তুলে এসেছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হয় ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

১৯৭২ সালে ম্যাট্রিক, ২০০১ সালে এইচএসসি পাস করা আবদুল হাইয়ের আজ বার কাউন্সিলের পরীক্ষা

১৯৭২ সালে ম্যাট্রিক পাস। এরপর সংসারের দায়িত্ব কাঁধে পড়ে। তাই আর পড়ালেখা হয়নি। তবে পড়াশোনার কথা ভুলে যাননি। দীর্ঘ সময় পরে হলেও ২০০১ সালে এসে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেন তিনি। ২০১০ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেন বিএ ডিগ্রি। এরপর ২০১৯ সালে আইনের ডিগ্রিও নিয়েছেন। আজ শুক্রবার তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির (এনরোলমেন্ট) পরীক্ষা দেবেন।

শিক্ষানুরাগী এই মানুষটির নাম মো. আবদুল হাই মিয়া। বয়স ৭৫ বছর। বাড়ি পাবনা জেলা সদরের দোগাছি ইউনিয়নের কুলুনিয়া গ্রামে। দীর্ঘ ৫৫ বছর তিনি আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। ইচ্ছা ছিল নিজে আইনজীবী হবেন। আর সে ইচ্ছা থেকেই কাজের পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন। আইনজীবী হতে যাচ্ছেন। এতে যেমন তাঁর পরিবার গর্বিত, তেমনি প্রতিবেশী ও সহকর্মীরাও।

আবদুল হাই মিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবদুল হাই মিয়ার জন্ম ১৯৫১ সালের ৩০ এপ্রিল। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি মা–বাবার তৃতীয় সন্তান। বাবা মরহুম আব্দুর রহমান মিয়া ছিলেন মসজিদের ইমাম। সংসারের টানাপোড়েনে তখন খুব বেশি পড়ালেখা করতে পারেননি আবদুল হাই মিয়া। স্কুলে পড়া অবস্থাতেই ১৯৬৯ সালে আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর ১৯৭২ সালে ম্যাট্রিক পাস করে পুরোপুরি পেশায় জড়িয়ে পড়েন। ফলে আর পড়ালেখা করতে পারেননি।

এর মধ্যেই বিয়ে–সংসার শুরু হয়। দুই কন্যাসন্তানের বাবা হন তিনি। মেয়েরা বড় হয়ে পড়ালেখা শুরু করে। তখন আবদুল হাই মিয়া নিজের মধ্যে নতুন করে পড়ালেখার অনুপ্রেরণা অনুভব করতে থাকেন। এরপর ছোট মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে পড়ালেখা শুরু করেন। ২০০১ সালে বাবা-মেয়ে একসঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে এইচএসসি পাস করেন। এতে আরও উৎসাহিত হন আবদুল হাই মিয়া। পরে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি পাস কোর্সে ভর্তি হন। ২০১০ সালে বিএ পাস করে ২০১২ সালে ভর্তি হন পাবনার আমিন উদ্দিন আইন কলেজে। এরপর ২০১৯ সালে আইন পাস করে বার কাউন্সিল সনদের জন্য আবেদন করেন। আজ শুক্রবার তাঁর আইনজীবী হওয়ার জন্য শেষ পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হবে।

আবদুল হাই মিয়া বলেন, কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ৫০ পয়সা হাজিরায় কাজ শুরু করেছিলেন। এখন সেই রোজগার বহুগুণ বেড়েছে। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন। তবে পড়ালেখার বিষয়টি তাঁকে সব সময় তাগিদ দিয়েছে। নিজেকে একজন আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছা জেগেছে। তাই তিনি বয়সের কথা চিন্তা না করে পুনরায় পড়ালেখা শুরু করেছেন। দিনে কর্মক্ষেত্র, রাতে পড়ালেখা করেছেন। স্ত্রী ও দুই কন্যা তাঁকে সহযোগিতা করেছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। সফলতাও পেতে যাচ্ছেন। এখন তিনি নিজেকে সার্থক মনে করছেন।

আবদুল হাই মিয়া ভালো ভালো আইনজীবীর সঙ্গ পেয়েছেন। তিনি খুব অভিজ্ঞ একজন মানুষ। সাদামাটা জীবনযাপন করেন। নিজেকে আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা তাঁর একটি লক্ষ্য ছিল।আলমগীর হোসেন, আইনজীবী, পাবনা

সম্প্রতি আবদুল হাই মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বাড়ি বলতে ঠিক যেমন বোঝায় তেমনই বাড়িটি। তেমন কোনো জৌলুশ নেই। দুটি টিনের ঘর, একটি রান্নাঘর নিয়েই আবদুল হাই মিয়ার বাড়ি। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বাড়িটিতে এখন স্ত্রীর সঙ্গে তিনি থাকেন। মাঝেমধ্যে মেয়ে-জামাতা ও নাতি-নাতনিরা বেড়াতে আসেন। বাড়ির বারান্দায় একটি পুরোনো সাইকেল। এটিই আবদুল হাই মিয়ার চলার বাহন।
প্রতিবেশীরা জানান, আবদুল হাই মিয়া আপাদমস্তক একজন সাদামাটা মানুষ। খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন। সকালে সাইকেলটি নিয়ে কাজে বেরিয়ে যান। বিকেলে বাড়ি ফেরেন। গ্রামের মানুষদের সঙ্গে হেসে কথা বলেন। কোনো দিন তাঁকে কোনো অন্যায় করতে দেখা যায়নি।

প্রতিবেশী মধু বিশ্বাস বলেন, অনেক অল্পবয়সী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ফেল করেন। কিন্তু আবদুল হাই বৃদ্ধ বয়সে এসেও একটি পরীক্ষাতেও ফেল করেননি। তিনি তাঁর ধৈর্যশক্তি দিয়ে পড়ালেখা করে গেছেন। বৃদ্ধ বয়সে এসে নিজেকে আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছেন। এটা এই গ্রামের জন্যও গর্বের।

আবদুল হাইয়ের স্ত্রী মোছা. রওশন আরা বলেন, তিনি ১৫ বছর বয়সে বউ হয়ে এসেছিলেন। অনেক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে তাঁদের সংসার চলেছে। কিন্তু স্বামীকে কোনো দিন অবৈধ পথে কোনো অর্থ রোজগার করতে দেখেননি। শেষ বয়সে এসে তিনি পড়ালেখা শুরু করেছেন। রাত জেগে পড়েছেন, দিনে কাজ করেছেন। তিনি যতটুকু সম্ভব স্বামীকে সহযোগিতা করেছেন। এখন স্বামী আইনজীবী হবেন, এটা ভেবেই আনন্দ পাচ্ছেন।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আবদুল হাই মিয়া ও তাঁর পরিবার। সম্প্রতি পাবনা জেলা সদরের কুলুনিয়া গ্রামে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিমলা চুক্তি কী, এই চুক্তি স্থগিত হলে ভারতের ওপর কী প্রভাব পড়বে
  • ১৯৭২ সালে ম্যাট্রিক, ২০০১ সালে এইচএসসি পাস করা আবদুল হাইয়ের আজ বার কাউন্সিলের পরীক্ষা