কুমিল্লায় ছুটির বিকেলে তিন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের অস্ত্রের মহড়া, ককটেলের শব্দে আতঙ্ক
Published: 25th, April 2025 GMT
কুমিল্লা নগরে কাছাকাছি সময়ে তিনটি এলাকায় দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ সময় একটি এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা গেছে। এ ঘটনায় আজ শুক্রবার ছুটির দিনের পুরো বিকেল নগরবাসীর কেটেছে আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। প্রকাশ্যে কিশোর গ্যাংয়ের অস্ত্রের মহড়া দেখে সাধারণ মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত নগরের কান্দিরপাড় এলাকার রানীর দিঘির পাড়, তালপুকুরপাড় ও আদালতপাড়া এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক গ্রুপের সদস্যরা মহড়া দেয়। বিকেলে নগরের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অস্ত্রের মহড়ার কারণে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নগরের কান্দিরপাড় এলাকার রানীর দিঘির পাড়ে অবস্থিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শাখায় কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শুক্রবার রাতে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের মহড়ার খবর পেয়ে এরই মধ্যে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযানে নেমেছে। এখন পর্যন্ত দেশীয় অস্ত্রসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করছেন।
ওসি বলেন, ‘বিগত সময়ে ধারাবাহিকভাবে অভিযানের কারণে কিশোর গ্যাং প্রায় নিষ্ক্রিয় ছিল। তবে নতুন করে তারা মাথাচাড়া দিতে চাইছে। আজকে কাছাকাছি সময়ে বিভিন্ন স্থানে কিশোর গ্যাংয়ের মহড়ায় সেটিই মনে হচ্ছে।’
আরও পড়ুনকুমিল্লায় আবার বেপরোয়া ‘কিশোর গ্যাং’, ছোটদের হাতে ঘটছে বড় অপরাধ০৫ জানুয়ারি ২০২৫প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন জানান, শুক্রবার বিকেলে নগরের কান্দিরপাড় এলাকা পার হয়ে রানীর দিঘির দক্ষিণ পাড়ে শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্য দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়েছে। তাদের মহড়ার সামনে অন্তত ১৫ মোটর সাইকেল বিকট আওয়াজ তুলে সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অভিভাবকেরা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বাইরে রানীর দিঘির পাড়ে অবস্থান করছিলেন। কয়েক শ অভিভাবক চরমভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিকেল চারটায় পরীক্ষা শুরুর আগমুহূর্তে অস্ত্রের মহড়া দেওয়ায় পরীক্ষার্থীদের মধ্যেও কিশোর গ্যাং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বারান্দায় গিয়ে দেখি তারা দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দিচ্ছে। তাদের হাতে ছেনি, রামদা, চাপাতি, হকিস্টিক, রডসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র। এ সময় কয়েকটি ককটেলও বিস্ফোরণ ঘটলে গোটা এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েশাহনাজ আক্তার, ভাড়াটিয়া, তালপুকুরপাড় এলাকা, কুমিল্লাচাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থেকে মেয়েকে পরীক্ষার জন্য নিয়ে আসা জাহানারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই কিশোর-তরুণেরা যখন অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়ে যাচ্ছিল, তখন মনে হয় প্রাণটা সঙ্গে ছিল না। বারবারই মনে হচ্ছিল এই বুঝি কুপিয়ে আমাকে মেরে ফেলবে। এমন অবস্থার সম্মুখীন আর জীবনেও হইনি। কতটা আতঙ্কে ছিলাম বলে শেষ করতে পারব না। এই অবস্থা হলে কীভাবে চলবে?’
নোয়াখালীর মাইজদী থেকে ছেলের ভর্তি পরীক্ষার জন্য আসা আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি দেখে আমরা আতঙ্কিত। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তীর্ণ হলেও ছেলেকে ভর্তি করাব কি না, সেটিও এখন চিন্তা করতে হবে। এভাবে তারা প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দিল। তাদের মধ্যে ন্যূনতম কোনো ভয় দেখলাম না।’
নগরের তালপুকুরপাড় এলাকার একটি বাসার ভাড়াটে শাহনাজ আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাসা ৫ তলায়। কিশোর গ্যাংয়ের চিৎকার শুনে বারান্দায় গিয়ে দেখি তারা দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দিচ্ছে। তাদের হাতে ছেনি, রামদা, চাপাতি, হকিস্টিক, রডসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র। এ সময় কয়েকটি ককটেলও বিস্ফোরণ ঘটলে গোটা এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।’
প্রায় একইভাবে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নগরের আদালতপাড়া এলাকায় কিশোর গ্যাং মহড়া দিয়েছে বলে প্রথম আলোকে জানান স্থানীয় বাসিন্দা তৌহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে কিশোর গ্যাং অতীতের চেয়ে এখন বেশি বেপরোয়া। তাদের অস্ত্রের মহড়ার কারণে মুহূর্তের মধ্যেই পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।’
এর আগে গত ৩ জানুয়ারি বিকেলে নগরের কান্দিরপাড় এলাকায় ভিক্টোরিয়া কলেজ–সংলগ্ন রানীর দিঘির পাড়ে অস্ত্রের মহড়া দেয় কিশোর গ্যাংয়ের অর্ধশতাধিক সদস্য। এ সময় ককটেলের বিস্ফোরণও ঘটানো হয়। পরবর্তী সময়ে এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কুমিল্লা নগরে কমপক্ষে ১৫টি কিশোর গ্যাং গ্রুপ রয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে। ২০১৭ সালের পর গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের হাতে আট বছরে অন্তত ১২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া মাদক কারবার, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ইভ টিজিংয়ের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে এসব গ্যাং।
আরও পড়ুনকুমিল্লায় প্রকাশ্যে ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ অস্ত্রের মহড়া, ককটেল বিস্ফোরণ০৩ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনকুমিল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের দুই পক্ষের দেশি অস্ত্রের মহড়া, ককটেল বিস্ফোরণ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক শ ক রব র পর ক ষ র এল ক য় ক এ সময় ক র মহড় র এল ক র সদস য অবস থ ককট ল
এছাড়াও পড়ুন:
সীমান্তে গোলাগুলি, ফিরছেন ভিসা বাতিল হওয়া নাগরিকেরা
কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে সীমান্তে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর এ গোলাগুলি হয়। এই পরিস্থিতিতে পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী দুই দেশকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এদিকে পাল্টাপাল্টি ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্তের পর ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকেরা নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন। দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।
কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে ভারত। এ ঘটনায় পাকিস্তানকে জড়িয়ে ভারতের দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে গতকাল শুক্রবার পাকিস্তানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে সর্বসম্মতভাবে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারতকে সতর্কও করেছে পাকিস্তান। এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ সব সময়ই উদ্বেগের। যদি পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়, তাহলে এই সংঘাত একটি করুণ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
পেহেলগামে হামলার পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি সরেজমিন খতিয়ে দেখতে গতকাল কাশ্মীর গেছেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি তিনি হামলার স্থলও পরিদর্শন করেন। আগের দিন সর্বদলীয় বৈঠকে কাশ্মীরে নিরাপত্তাব্যবস্থায় যথেষ্ট গাফিলতি ছিল বলে স্বীকার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
গত মঙ্গলবার বিকেলে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র বৈসারণ উপত্যকায় বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামে স্বল্প পরিচিত একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।
এই হামলায় পাকিস্তানের মদদ আছে অভিযোগ তুলে গত বুধবার প্রতিবেশী দেশটির নাগরিকদের ভিসা বাতিল ও সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতসহ পাঁচটি পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে পরদিন ভারতের নাগরিকদের ভিসা বাতিল, দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিত, আকাশসীমা বন্ধসহ বেশ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তান।
পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে অব্যাহত উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়। ভারতের সেনাবাহিনীর সূত্রগুলো দাবি করেছে, পাকিস্তানের সেনারা প্রথম গুলি করেছেন। পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কর্মকর্তা সৈয়দ আশফাক গিলানি গোলাগুলির খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন পক্ষ আগে গুলি চালিয়েছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
পাকিস্তান থেকে ফিরে স্বজনদের সঙ্গে ভারতের এক নাগরিক (মাঝে)। গতকাল ভারতের অমৃতসর শহরের ওয়াঘা সীমান্তে