প্রশাসনে আ.লীগের লোকদের পুনর্বাসন পক্রিয়া চালু হয়েছে: আসাদুজ্জামান রিপন
Published: 25th, April 2025 GMT
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, “প্রশাসনে ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগের লোকদের পুর্নবাসন পক্রিয়া চালু হয়েছে। সরকারের মধ্যে নানাভাবে কখনো উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী নামে আওয়ামী লীগের লোকদের পুর্নবাসন করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “যারা শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন, দুর্নীতির সঙ্গে ছিলেন এবং যারা গণতান্ত্রিক পক্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন সেই সমস্ত লোকদের আমরা ক্রমেই দেখতে পাচ্ছি তারা ইউনূস সরকারের প্রশাসনে যুক্ত হয়ে যাচ্ছেন।”
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জ লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাটে সারা দেশে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ, নদী শাসন এবং শিমুলিয়া ঘাটে আন্তর্জাতিক কন্টেইনার পোর্ট স্থাপনসহ ১১ দফা দাবিতে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
আ.
ইশরাকের মেয়র পদের মেয়াদ নিয়ে যা জানা গেল
আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ভুল তথ্য দিয়ে এবং বাস্তবতা আড়াল করে পতিত স্বৈরাচার সরকারের লোকজনকে প্রশাসনে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে দেশের ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে এবং ৫ আগস্টের চেতনা নষ্ট হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “৫ আগস্ট শুধু স্বৈরাচার সরকারের পতনের জন্য হয়নি। ৫ আগস্ট হয়েছে, স্বৈরাচারী ব্যবস্থাকে কবর দেওয়ার জন্য।”
আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “অপরিকল্পিত, অবৈধ বালু উত্তোলনের করে দেশকে বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে বালু সন্ত্রাসীরা। নদী শেষ হয়ে যাচ্ছে, গ্রাম শেষ হয়ে যাচ্ছে।” বালু সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সামাজিক আন্দোলনে যাওয়ার পাশাপাশি উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হলুদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল খা। এতে মুন্সীগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জাকারিয়া মোল্লা বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা/রতন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
স্মৃতি ও শ্রদ্ধার অনন্য আয়োজন
তাঁর শারীরিক উপস্থিতি ছিল না অনুষ্ঠানে। তবে তাঁর উপস্থিতি ছিল আরও ব্যাপক বিপুল বিস্তারে। ‘নতুন করে পাব বলে’ নামে অনুষ্ঠান হলো তাঁকে স্মরণ করে, তাঁরই হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ছায়ানট মিলনায়তনে। তিনি সন্জীদা খাতুন। বাংলাদেশের সংস্কৃতির অন্যতম বিনির্মাতা, সংগীতজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, সংগঠক সন্জীদা খাতুনকে স্মরণ করে যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ছায়ানট, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, নালন্দা উচ্চবিদ্যালয়, কণ্ঠশীলন ও ব্রতচারী।
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল ‘কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে’ সম্মেলক কণ্ঠে গানের সঙ্গে সমবেত নৃত্যের পরিবেশনা দিয়ে। মঞ্চ সাজানো হয়েছিল অনাড়ম্বর, কিন্তু শুচিস্নিগ্ধ সজ্জায়। সবুজ গাছ আর ফুল দিয়ে। মঞ্চের নেপথ্যে বড় ডিজিটাল পর্দায় একের পর এক হচ্ছিল পরিস্ফুটিত সন্জীদা খাতুনের তারুণ্যের কাল থেকে বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবির পর ছবি।
সংগীতজ্ঞের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনে গান তো থাকবেই। সেই সঙ্গে আরও ছিল তাঁর না থাকার শূন্যতার বোধ, তিনি যে চেতনার আলো জ্বালিয়ে গেলেন, তা প্রাণে প্রাণে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়। তাঁর জীবনী আলোচনা, তাঁর নিজের লেখা থেকে পাঠ, তাঁর নিজের গাওয়া গান, স্মৃতিচারণা, কবিতা আবৃত্তি, গীতি-আলেখ্যর সমন্বয়ে সাজানো টানা তিন ঘণ্টার অনুপম পরিবেশনা। সন্জীদা খাতুন তাঁর জীবিতকালে ছায়ানটের অনুষ্ঠানগুলো বরাবরই ত্রুটিহীন ও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করার রীতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতা থাকল তাঁর অনুপস্থিতিতেও। অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা থেকে পরিবেশনা অবধি, যাঁরাই যে কাজে ছিলেন সবাই যেন নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন এই অনুষ্ঠানে।
প্রথম পরিবেশনার পর ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী বললেন, ‘আমরা যেন এক মহিরুহের ছায়া থেকে বঞ্চিত হয়েছি। সংস্কৃতির মধ্যমে সর্বজনের মধ্যে বাঙালি জাতিসত্তার জাগরণের অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তিনি। সেই কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।’ সব বাধা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সবাইকে হাতে হাত মিলিয়ে সন্জীদা খাতুনের দেখিয়ে যাওয়া পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানালেন তিনি।
এরপর সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হলো ‘পান্থ তুমি পান্থ জনের সখা হে’। সন্জীদা খাতুনের জীবনী তুলে ধরেন জয়ন্ত রায়। এরপর মঞ্চ আঁধার করে নেপথ্যে সন্জীদা খাতুনের ছবি রেখে পরিবেশন করা হলো তাঁর রেকর্ড করা গান ‘এখনো গেল না আঁধার’। ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় পড়ে শোনালেন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণা করে সন্জীদা খাতুনের লেখা ‘একুশ আমাকে ভাষা দিয়েছে’।
ছায়ানটের উপদেষ্টা মফিদুল হক আলোচনা করলেন সন্জীদা খাতুনের বহুমাত্রিক জীবন ও কর্ম নিয়ে। তিনি বললেন, শিক্ষা, গবেষণা, সংগঠন পরিচালনাসহ বহুবিধ কাজে সন্জীদা খাতুন আত্মনিয়োগ করলেও গান নিয়েই মূলত তিনি পথ চলেছেন। গানের ভেতর দিয়েই সংস্কৃতিকে উপলব্ধি করেছেন। মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন মঙ্গলের চেতনা। ষাটের দশকে আইয়ুব খানের কঠিন সামরিক শাসনের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন করেছেন তিন দিনের অনুষ্ঠান করে। সেই সূত্রে ছায়ানট ও পরে রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখে নববর্ষের অনুষ্ঠান। বাঙালি সংস্কৃতির জাগরণে তাঁর ভূমিকা অম্লান থেকে যাবে।
আলোচনার পর তানিয়া মান্নান গেয়েছেন ‘মালা হতে খসে পড়া’। কণ্ঠশীলনের জহিরুল হক আবৃত্তি করেন ‘পুরস্কার’ কবিতার অংশবিশেষ। এভাবেই একক ও সম্মেলক গান, ব্রতচারীর গান, আবৃত্তি পাঠ, স্মৃতিচারণার পরিবেশনা দিয়ে এগিয়েছে অনুষ্ঠান।
নালন্দার শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেছে সন্জীদা খাতুনের প্রবন্ধ অবলম্বে গীতি-আলেখ্য ‘সবারে বাস রে ভালো’। ত্রপা মজুমদার পড়েছেন মুক্তিযুদ্ধকালের স্মৃতিচারণা করে সন্জীদা খাতুনের লেখা, তাঁর সংস্কৃতি ভাবনা নিয়ে প্রবন্ধ পড়েছেন সুমনা বিশ্বাস। স্মৃতিচারণা ও গান করেছেন লিলি ইসলাম। একক গান পরিবেশন করেছেন রোকাইয়া হাসিনা নীলি, মহিউজ্জামান চৌধুরী, খায়রুল আনাম শাকিল, ইফফাত আরা দেওয়ান, শারমিন সাথী ইসলাম, প্রমীলা ভট্টাচার্য, এ টি এম জাহাঙ্গীর, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, বুলবুল ইসলাম ও লাইসা আহমদ লিসা।
সম্মেলক কণ্ঠে ‘শেষ নাহি যে শেষ কথা কে বলবে’ গানটির পর জাতীয় সংগীত দিয়ে শেষ হয়েছিল স্মৃতি ও শ্রদ্ধার এই অনন্য আয়োজন।