জিঞ্জিরাম নদী হয়ে ভারতের ভেতরে মাছ ধরতে গিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগে দীর্ঘ ছয় মাস ধরে দেশটির হাজতে বন্দি রয়েছেন কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুরের সাত জেলে। কীভাবে তাদের ফেরানো যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় সাত জেলের পরিবার।
 
গত ৪ নভেম্বর তাদের আটক করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এরপর থেকে তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সম্প্রতি ভারতের আমপাতি জেলার মাহিন্দগঞ্জ থানার তুরা মেঘালয় থানা এলাকার এক বাসিন্দার মাধ্যমে গোপনে পাঠানো চিঠিতে তাদের সন্ধান মেলে। 

আটক জেলেরা হলেন-  চিলমারী উপজেলার হরিনের বন্দ এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫), রমনা ব্যাপারী পাড়া এলাকার বাহাদুর মিয়ার ছেলে বিপ্লব মিয়া (৪৫), শামছুল হকের ছেলে মীর জাহান আলী (৪৫), মৃত এছাহক আলীর ছেলে বকুল মিয়া (৩২), পকের আলীর ছেলে আমির আলী (৩৫),  রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারী ব্যাপারী পাড়ার জরিপ উদ্দিনের ছেলে আঙ্গুর হোসেন (২০) ও রৌমারী উপজেলার যাদুর চর বকবান্ধা এলাকার ছলিম উদ্দিনের ছেলে চাঁন মিয়া (৬০)।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রুকুনুজ্জামান স্বপন বলেন, হাজতে আটকরা পেশায় জেলে। তারা কয়েক বছর ধরে বৈধভাবে ভারতে গিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তারা বৈধভাবে যেতে না পেরে, অবৈধভাবে মাছ ধরতে গিয়ে আটক হন। জানা গেছে, বর্তমানে তারা মেঘালয়ের কালাইর চর পেট্রোল থানা আমপাতিতে রয়েছেন। চলতি মাসে হাজত থেকে তাদের ছাড়িয়ে নিতে না পারলে, স্থায়ী সাজা দেওয়া হবে। এদিকে হাজতে আটক জানার পর থেকে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে জেলে পরিবারগুলো। 

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক জানান, বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। জেলেদের ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এল ক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির স্পন্দন অনুভব করতে হবে

আজ বিশ্ব বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি (ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি-আইপি) দিবস। এই দিবসে আমরা স্রষ্টা, উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তাদের অবদান উদযাপন করছি উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতার সীমানা অতিক্রম করে পেটেন্ট, ট্রেডমার্ক, শিল্প নকশা, কপিরাইট ইত্যাদি আইপি অধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষ্যে। আইপি অধিকার এমন একটি উপায়, যার মাধ্যমে গবেষক, উদ্ভাবক, ব্যবসা, ডিজাইনার, শিল্পী ও অন্যরা তাদের উদ্ভাবনী এবং সৃজনশীল ফলাফলকে আইনত রক্ষা এবং তা থেকে অর্থনৈতিক লাভ নিশ্চিত করতে পারেন। একটি সুষম আইপি সিস্টেম উদ্ভাবক ও স্রষ্টাদের কাজের জন্য স্বীকৃতি দেয়, পুরস্কৃত করে এবং নিশ্চিত করে– সমাজ তাদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন কুশলতা থেকে উপকৃত হয়। এমন সংগীত তৈরি করতে হলে, যা মানুষকে একত্র করে, শক্তিশালী আবেগে ভাসায়, পরিবর্তন আনে এবং আরও উদ্ভাবনী ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রাণিত করে– সংগীতশিল্পে নতুন ধারণা আনা দরকার। একই সঙ্গে গীতিকার, সুরকার, অভিনয়শিল্পী এবং যারা অনুপ্রেরণাদায়ক সংগীতকে রূপ দেয়, সবার কাজকে সুরক্ষিত করা প্রয়োজন। 

বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি (আইপি) নিয়ন্ত্রণকারী একটি বিস্তৃত আইনি কাঠামো রয়েছে। এই কাঠামোতে বেশ কয়েকটি মূল আইন ও বিধি রয়েছে: ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯, পেটেন্ট এবং নকশা আইন ২০০৩ (মূলত ১৯১১ সালে প্রণীত), বাংলাদেশ পেটেন্ট আইন ২০২২, কপিরাইট আইন ২০২৩, উদ্ভিদ সুরক্ষা আইন (২০১৯), ভৌগোলিক নির্দেশক নিবন্ধন এবং সুরক্ষা আইন ২০১৩ এবং ২০১৯ সালের জিআই বিধিমালা। এ ধরনে আইন আন্তর্জাতিক চুক্তির পরিপূরক। বিশেষ করে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আইপি অধিকারের বাণিজ্য-সম্পর্কিত দিকগুলোর চুক্তি (ট্রিপস)।

কপিরাইট আইন ২০২৩ মূলত সাহিত্য, নাটক, সংগীত এবং শৈল্পিক কাজের কপিরাইট বা মালিকানা রক্ষা করে। যার মধ্যে চলচ্চিত্র, আলোকচিত্র, শব্দ রেকর্ডিং এবং কম্পিউটার প্রোগ্রাম অন্তর্ভুক্ত। ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯ ব্যবসায়ে ব্যবহৃত পণ্য ও সরঞ্জামের ট্রেডমার্ক নিবন্ধনকে রক্ষা করে। বাংলাদেশ পেটেন্ট আইন ২০২২ ‘পেটেন্ট’কে একটি উদ্ভাবন রক্ষা করার জন্য প্রদত্ত একচেটিয়া অধিকার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে, যা পেটেন্ট ধারককে অন্যদের বেআইনিভাবে তার উদ্ভাবন ব্যবহার থেকে বিরত রাখার আইনি অধিকার দেয়। ভৌগোলিক নির্দেশক এবং উৎপত্তির নামকরণ বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি কাঠামো তার অনন্য সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের সুরক্ষার দিকেও মনোযোগ দেয়। এটি একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও বৈচিত্র্যময় ভূগোলসমৃদ্ধ একটি দেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বিস্তৃত জৈবিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বৌদ্ধিক সম্পত্তি সুরক্ষা সম্পর্কে কী বলা যায়? এটি কি শুধু জিআই আইন দ্বারা সুরক্ষিত হতে পারে? 

জিআই আইন ‘জিআই’কে ভৌগোলিক নির্দেশকসহ যে কোনো কৃষি, প্রাকৃতিক বা উৎপাদিত পণ্য হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে, যা একটি নির্দিষ্ট দেশ, অঞ্চল বা এলাকা থেকে উদ্ভূত; যেখানে পণ্যের বিশেষ গুণাবলি, খ্যাতি বা অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো তার ভৌগোলিক উৎপত্তির জন্য দায়ী। উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ বা উৎপাদন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ভৌগোলিক নৈকট্য এবং বিভাগ-পূর্ব ইতিহাসের কারণে সাংস্কৃতিক বিনিময় ঘটেছে। ফলস্বরূপ কিছু পণ্যের ‘সমজাতীয় ইঙ্গিত’ হিসেবে নিবন্ধন শুধু তখনই অনুমোদিত হয়, যদি এটি পণ্যের উৎপত্তি সম্পর্কে ভোক্তাদের বিভ্রান্ত না করে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক তাঁত কারিগর বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যান, যা দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ে অবদান রাখে। অতএব শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে পেটেন্ট, নকশা ও ট্রেডমার্ক বিভাগের জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই), সমজাতীয় ভৌগোলিক ইঙ্গিত এবং উৎপত্তির উপাধিগুলোর মধ্যে পার্থক্য করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হলো এমন একটি চিহ্ন, যা পণ্যগুলোতে ব্যবহৃত হয়। যার একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক উৎপত্তি রয়েছে এবং সেই উৎপত্তির কারণে গুণাবলি বা খ্যাতি রয়েছে। ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ নামটি নিজেই টাঙ্গাইল থেকে এর উৎপত্তি নির্দেশ করে এবং এর গুণমান, বৈশিষ্ট্য এবং খ্যাতি স্পষ্টভাবে পণ্যটিকে বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের উৎপাদন স্থানের সঙ্গে সংযুক্ত করে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়, ভৌগোলিক নৈকট্য এবং একই ইতিহাসের কারণে দুটি দেশে উৎপাদিত পণ্য শনাক্ত করার জন্য সমজাতীয় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) দেওয়া হয়। তবে শুধু যদি এটি পণ্যের প্রকৃত উৎপত্তি সম্পর্কে ভোক্তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে।

যা হোক, দেশের নদী, বন, সমুদ্র, পাহাড়, সমভূমি, দ্বীপ, তৃণভূমি, বাস্তুতন্ত্র আজ উন্নয়নের ক্ষত বহন করে। এই ভৌগোলিক মিথস্ক্রিয়া বাংলাদেশের অসংখ্য ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের জন্ম দিয়েছে। যেমন জামদানি শাড়ি, যা শীতলক্ষ্যা নদী ও তিলবাজল চালের সঙ্গে অন্তর্নিহিতভাবে যুক্ত এবং টাঙ্গাইল শাড়ি, যা লাউজং নদী ও পোড়াবিন্নি চালের সঙ্গে সম্পর্কিত। একটি জিআই প্রকৃতি ও সংস্কৃতি উভয়ের চলমান সৃজনশীল রূপান্তরকে প্রতিনিধিত্ব করে। আজ আমরা গর্বের সঙ্গে এই রূপান্তরমূলক প্রক্রিয়াটি প্রদর্শন করি; আমাদের ঐতিহ্যকে গর্ব ও পরিচয়ের উৎস হিসেবে উপস্থাপন করি।
বিশ্ব আইপি দিবসে উদ্ভাবনের ছন্দ অনুভব করতে হবে। বৃদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির শক্তিকে আলিঙ্গন করতে হবে। এগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের মৌলিক উপাদান, তাই উন্নয়নের জন্য ওই ছন্দকে ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর আইপি আইন এবং প্রয়োগ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তির স্পন্দন সারাদেশে অনুরণিত হয়। যাতে সত্যিকার অর্থে ‘আইপির তাড়না অনুভব করা যায়’ এবং একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য এর শক্তিকে কাজে লাগানো যায়।

তাসনুভা শেলী: নির্বাহী পরিচালক, মেধাসম্পদ সুরক্ষা মঞ্চ, মেধাসুম

সম্পর্কিত নিবন্ধ