নারী কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবনা প্রত্যাখান করতে মামুনুল হকের আল্টিমেটাম
Published: 25th, April 2025 GMT
আগামী ৩ তারিখের পূর্বে নারী কমিশন প্রস্তাবনা প্রত্যাখান করার আল্টিমেটাম জানিয়ে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেন, যদি এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হব।
আল্লাহর কুরআনের বিরুদ্ধে ইসলামকে কটাক্ষপূর্ণ এই ধরনের সুপারিশ করার দায়ে নারী কমিশনে থাকা প্রতিটি সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। কুরআন বিরোধী কোনো অপশক্তির ঠায় বাংলাদেশে হবে না।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়াস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জেলা হেফাজত ইসলামের উদ্যোগে আয়োজিত গণজমায়েতে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এই আল্টিমেটাম দেন।
আগামী ৩ মে নারী কমিশন বাতিলের দাবীতে আয়োজিত মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে এই গণজমায়েতের আয়োজন করা হয়।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী এই সময়ে ব্যাপক সংস্কারের একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিগত দিনে সংবিধানে অনেক সংশোধনী এসেছে কিন্তু কখনও সংবিধান সংস্কারের আওয়াজ উঠেনি।
জুলাই এবং আগস্ট বিপ্লবের দুই হাজার তাজা প্রাণের বিনিময়ে গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে এবং অন্তবর্তীকালিন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সরকারের অন্যতম একটি মহতী উদ্যোগ হলো সংবিধান সহ বিভিন্ন ধরণের সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা।
তিনি বলেন, আমরা এই সকল সংস্কার কার্যক্রমকে শুরু থেকেই সাধুবাদ জানিয়েছি। ৬ টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রস্তবনাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। এতে প্রতীয়মান হয় ফেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ এবং দেশের আলেম সমাজ বাংলাদেশের বর্তমান সংস্কার কার্যক্রমের সবচেয়ে বড় সহযোগী শক্তি।
কিন্তু দুঃখের বিষয় বিগত ১৯ এপ্রিল নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে, এটাকে আমরা স্বাগত জানাবো দূরের কথা বাংলাদেশের আলেম সমাজ বিস্মিত হয়েছি। আমরা এখন পর্যন্ত কল্পনা করতে পারছি না, আগস্ট বিপ্লব পরবর্তী সময়ে এ ধরণের কুরআন বিরোধী প্রদক্ষেপের প্রস্তাব উত্থাপিত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, তাদের প্রস্তাবনায় বাংলাদেশে নারীর প্রতি বৈষম্যের জন্য কুরআনের আইনকে এবং ইসলামের আইনকে বেশি দায়ী করেছে। অথচ সকল বৈষম্য দূর করে ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কুরআন নাযিল হয়েছে। আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করার ধৃষ্টতাবরদাশত করতে প্রস্তুত নই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, কিছুদিন আগে ড.
নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজত ইসলামের সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা সহ-সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, মহানগর সভাপতি মুফতি হারুনুর রশিদ প্রমুখ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ প রস ত ব ইসল ম র ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
চ্যালেঞ্জ থাকলেও মৎস্য খাতে বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা
দেশে স্থানীয়ভাবে মাছের উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি এবং এই খাতের বিকাশে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থার (ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন-এফএও) ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জল ধারণ উৎপাদনে ৩য় এবং বৈশ্বিক জলজ চাষ উৎপাদনে ৫ম স্থান অর্জন করেছে। এই খাতে প্রায় ১৭ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। তবে রপ্তানি বাড়ানোর বিপুল সম্ভাবনা সত্ত্বেও এই খাত বিকাশে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে-মৎস্যসহ জলজ চাষে সীমিত জায়গা ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা, খামারীদের জলজ প্রাণীর মানসম্মত খাবার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব ও ক্রয় ক্ষমতা না থাকা, খামার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকা, মানসম্মত বীজের অভাব, খাদ্য নিরাপত্তা ও খামারীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলি বিবেচনায় না নেওয়া, মাছ চাষ-পরবর্তী ক্ষতির কারণসমূহ সম্পর্কে চাষীদের অজ্ঞতা, মাছের আধুনিক সংরক্ষণাগারের সংকট, মাছ আনা-নেওয়ায় পরিবহন সমস্যা ও ‘কোল্ড চেইন কাঠামো’ না থাকা ইত্যাদি।
সম্প্রতি খুলনার রুপসীতে সেন্টার অফ অ্যাকোয়াকালচার এক্সিলেন্সে (সিওই) অনুষ্ঠিত ‘ট্রেন দ্য ট্রেইনারস' শীর্ষক প্রশিক্ষণে এক উপস্থাপনায় এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক আন্তর্জাতিক কনসালটিং প্রতিষ্ঠান লারিভ ইন্টারন্যাশনাল ও ঢাকাভিত্তিক আন্তর্জাতিক কনসালটিং প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনারস যৌথভাবে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে।
শুক্রবার লাইটক্যাসল পার্টনারসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
কর্মশালায় জেমিনি সি ফুডস লিমিটেড, ফিশটেক (বিডি) লিমিটেড এবং লাইটক্যাসল পার্টনার্সসহ বিভিন্ন অংশীদার সংস্থার ২০জন প্রশিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার লক্ষ্য ছিল আধুনিক মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধি করা। যাতে তারা এটি গ্রহণ করে পরবর্তীতে দেশের মৎস্য চাষীদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। এই প্রশিক্ষকরা পরবর্তীতে ১৮০০ জন মৎস্য খামারীকে প্রশিক্ষণ দিবেন।
অনুষ্ঠানে মৎস্য চাষীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন মডেল ও উপস্থাপনা তুলে ধরেন নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক ডি হিউস অ্যানিমেল নিউট্রিশন প্রতিষ্ঠানের ভিয়েতনাম এবং এশিয়ার পুষ্টি ও সহায়তা পরিচালক ড. আলেকজান্দ্রোস সামার্টজিস; একই প্রতিষ্ঠানের পুষ্টি সহায়তা ও অ্যাকোয়া খাতের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ড. জুলিয়া মাস মুনোজ; প্রতিষ্ঠানটির এশিয়া অঞ্চলের রপ্তানি পরিচালক এশিয়া মি. জর্ডি ড্রিয়েটেলার; লাওসের ব্যবসা উন্নয়ন ব্যবস্থাপক মি. সাইমন সাঙ্গুইন; আন্তর্জাতিক পণ্য ব্যবস্থাপক মি. ফাম মিন হিয়েন (পার্সি) প্রমুখ।
কর্মশালায় জানানো হয়, খুলনা, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার ও পটুয়াখালীতে সিওই কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। উল্লিখিত মৎস্য চাষীদেরকে নেদারল্যান্ডসের আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে এই দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় রিসার্কুলেটিং অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেমের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি খামার পদ্ধতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এতে চাষের সর্বোচ্চ আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ছোট পুকুরে মাছ চাষের অনুশীলন সম্ভব হবে।
‘ফুডটেকবাংলাদেশ’ নামে এই প্রকল্পের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ইতিধ্যে চারটি সেন্টার অফ এক্সিলেন্স কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকায় নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত এই উদ্যোগটি বাংলাদেশে জলজ চাষের উন্নয়নের লক্ষ্যে পাঁচ বছর মেয়াদী সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পটির মেয়াদ হচ্ছে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত।
এই প্রকল্পে ডাচ এবং বাংলাদেশি অংশীদারদের মোট ৬ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ রয়েছে। ফুডটেক বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের মধ্যে রয়েছে নেদারল্যান্ডসের ভিকন ওয়াটার সলিউশন এবং ডি হিউস অ্যানিমাল নিউট্রিশন এবং বাংলাদেশের জেমিনি সিফুড অ্যান্ড ফিশটেক লিমিটেড। ফুডটেক প্রকল্প ও অংশীদারদের লক্ষ্য: উন্নত প্রযুক্তি, উন্নত খামার ব্যবস্থাপনা অনুশীলন এবং মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে কৃষকদের তথ্য প্রদান ও জ্ঞান সমৃদ্ধকরণ এবং কৃষকদের প্রযুক্তিগত কর্মক্ষমতা বাড়ানো।
ঢাকা/হাসান/সাইফ